যে জীবন দায়ের

হঠাৎ করে নয়,পাড়ার চেহারাটা  খোল নলচে সহ ভেতর থেকেই  ধীরে ধীরে পাল্টে গেছে গত কয়েক বছরে। এমন পাল্টেছে যে এদের জীবন সংশ্লিষ্ট মূল যে জীবিকা,তার পরিচয় ধীরে ধীরে লীন হতে হতে পাড়ার বিশেষত্বটা একটা মজা ডোবায় পরিণত হয়েছে। যে ডোবায় যে কোন সময় কয়েক ঝাঁকা মাটি ঢেলে দিলেই  তার আর কোন নাম নিশানা থাকে না, তেমন। ধুঁকতে ধুঁকতে যে কয় ঘর এখনো পাড়ায় আছে যে কোন অজুহাতে যে কোন দিন নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলে পরদিনই পাড়াটির কথা সবাই বেমালুম ভুলে যাবে। মনে রাখার সংগত কোন কারণের মতো মোটেই প্রয়োজনীয় নয় এরা।…

Read More

খোদাবক্সপিরের মোজেজা

“লাইলাহা ইল্লালা…লাইলাহা ইল্লালা…, আল্লাহ, আল্লাহ, আল্লাহ…।“ সবেমাত্র ‘জিকির’ শুরু হয়েছে, আর তাতেই পিরহুজুর ধ্যানে মগ্ন হয়ে গেছেন! তাঁর ফর্সা মুখটা চাঁদের মতো জ্বলছে! এ আলোকেই মেজালরা বলে ‘নূরের আলো’। মেজাল খুউব চালাক। ‘জিকির’ তুলতে তুলতে একবার চোখ বন্ধ করছে, আর একবার আঁড় চোখে পিরহুজুরের দিকে ফিক করে তাকাচ্ছে। তার উল্টো দিকে মুখ করে বসে থাকা সাদেক রেজা ব্যাপারটা লক্ষ্য করছে। আর মনে মনে খিস্তি দিচ্ছে। গোলাম আর ইজাজুল তখন জিকিরের বোলে ঘোর হয়ে আসমানি হয়ে গেছে। এরা সবাই আইবুড়ো টগবগে তরুণ। কারোরই বয়স কুঁড়ি পার হয়নি। তবে বিছানায় স্বপ্নদোষের ঠেলাই…

Read More

কমরেড

‘শেষ খেয়া; কে যাবে গো?’ একজন চাপ দাড়িওয়ালা লোক ডাক দিচ্ছে। পরনে হাঁটু পর্যন্ত গোটানো প্যান্ট। আগে হয়তো প্যান্টটার কোনো রং ছিল, এখন তাকে কেবল সাদা-কালো বলেই চালিয়ে দেওয়া যাচ্ছে। গায়ে ফ্যাকাসে লাল রঙের গেঞ্জি। তাতে চারটে ফুটোও আছে। ভালোভাবে খেয়াল করলে আরও ফুটো চোখে পড়ত মনে হয়। কিন্তু সে ডাক দিতে দিতে এদিক-ওদিক ঘুরছে। এত চলমান দৃশ্যকে ধরে রাখা যায় না। লোকটার চুল হাওয়াতে হাওয়াতে ঝাউবন হয়ে গেছে। গায়ের রঙের সাথে চুলের রঙের ফারাক কেবল এটুকুই যে চুলে কিছুকাল আগে লোকটি মেহেন্দি লাগিয়েছিল, তার লালচে কমলা রং খেয়াল করলে…

Read More

দ্রষ্টা

লিখতে না পারার ভেতর একটা চিলেকোঠা আছে। লেখকের উদ্‌ভ্রান্ত মন তখন অনন্ত শূন্যের ভেতর ভাসতে থাকা ওই চিলেকোঠায় একা বসে থাকে। লেখক হয়তো সেইসময় সকালবেলা চা খেতে খেতে একবার রোদ্দূরের দিকে তাকালেন। দু’-একবার গাছপালার রঙ পেরিয়ে, আরও দূরে যেতে চাইল তাঁর চোখ। বাইরের আলতো হাওয়া ছুঁয়ে যাচ্ছে ঘরদোর। প্রাত্যহিক কাজকর্মও নিয়ম মেনে গড়িয়ে চলেছে। কিন্তু মন? মন বসে আছে, সেই নির্জন ঘরে। অন্যমনস্ক। কখনো আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে ভাবছে: ‘আর কোনোদিন একলাইনও লেখা হবে?’ দূর থেকে কখনো দেখা যায়, লেখক নামছেন ট্রাম থেকে। কাউকে হাত নেড়ে বলার চেষ্টা করছেন: ‘হ্যাঁ, কাল…

Read More

ভগীরথ

  ১.   মশাটার দিকে ভাল করে তাকাল সৃজিত,  তারপর মশারির দিকে আর তারপর প্লাগে গোঁজা মসকুইটো অয়েলের দিকে এবং দেখল প্লাগ অন রয়েছে, ঘাতক রাসায়নিকের মিষ্টি জুঁই গন্ধে ঘর ম ম করছে। মশারিতে কোথাও ফুটো নেই! তাহলে কোত্থেকে এল এই লস্কর-ই-তৈবা? বাইরে অঝোরে বৃষ্টি চলছে।  জুন জুলাইয়ের মাথা খেয়ে বৃষ্টি শুরু হয়েছে আগষ্টের বারো তারিখ। আজ এখন চোদ্দোর মধ্য রাত, রাত কাবারেই স্বাধীনতা দিবস। এরমধ্যে এই সশস্ত্র জঙ্গি তার ফর্সা থাইয়ের ওপর এলওসি কার্গিলের সেনাদের মত মাটি কামড়ে বসে রয়েছে। একে স্ত্রী মশা তায় গর্ভবতী! পেট ভর্তি লার্ভা নিয়ে…

Read More

নিউটন – ৮

  নিউটনের অ্যালকেমি চর্চা   ১৬৭০-এর দশক। নিউটনের আলোর নতুন থিয়োরি ঘিরে ক্রমশ বাড়ছে জল্পনা, ইউরোপের বিজ্ঞানীরা নিঃসংশয় হতে পারছেন না। তাঁদের তীব্র সমালোচনায় বিদ্ধ কেমব্রিজের তরুণ বিজ্ঞানী। রয়্যাল সোসাইটির জার্নাল, ফিলজফিক্যাল ট্রানজাকশন-এ প্রকাশ পাচ্ছে সেসব সমালোচনা পত্র। সোসাইটির সেক্রেটারি হেনরি ওল্ডেনবার্গকে একের-পর-এক পত্র পাঠিয়ে নিজের তত্ত্বের স্বপক্ষে যুক্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন নিউটন। আবার কখনো-বা ক্ষোভে অভিমানে ভাবছেন আর কখনোই তিনি তাঁর গবেষণার ফলাফল প্রকাশ্যে আনবেন না। এমন-কি র‍য়্যাল-সোসাইটির সদস্য পদ ত্যাগ করার কথাও জানাচ্ছেন ওল্ডেনবার্গকে।  এরকমই এক সময় ওল্ডেনবার্গকে লেখা এক চিঠিতে (২১ শে সেপ্টেম্বর, ১৬৭২) নিউটন জানালেন – ‘…এই…

Read More

খুঁজতে খুঁজতে যতদূর

প্রাচীন দুনিয়ার দিকে একটি ভূমিকা  ফিরি ইউরোপে। ২০০২ সাল থেকে যে সম্পর্ক তৈরি হয়েছে এই মহাদেশের সঙ্গে ২০০৭ সালে গিয়ে সে পৌঁছলো এক প্রত্যক্ষতায়। এই বিষয়ে নানা লেখা ছড়িয়ে আছে, কৌরবের পাতায়, অন্যান্য জায়গায়। এই গদ্যমালায় আমি লিখতে চাই কীভাবে ইউরোপে রচিত এস্পানিওল ভাষার কবিতা এবং সরাসরি এস্পানিয়া নামক দেশের পাঠ সংস্কৃতি আমার সামনে এক অন্য দুনিয়া খুলে দিয়েছে। আর সেই প্রসঙ্গে ফিরতেই হয় ২০০৭ সালে। খুয়ান রামোন খিমেনেস এর একটি প্রকাশিত কবিতার বই প্রকাশ পাচ্ছে। সে বই বিস্ফোরক কারণ সে এক তীব্র মাংসল প্রেমের কবিতা, কবির উত্তুঙ্গ যৌবনের চিহ্ন।…

Read More

উলটপুরাণ

দিল্লী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামলে মনে হয়, ইন্দ্রপ্রস্থে এলাম। চারিদিকে হাতি ঘোড়া নৃত্যরতা তন্বীর সোনালী মূর্তি, কাজু বরফি, চন্দন কাঠের দোকান। পারলে একটা রাধামাধবের মন্দিরও গড়ে ফেলে! ইনক্রেডিবল ইন্ডিয়া নাম দিয়ে এরকম একটা দেখনদারি ভারতবর্ষ গড়ে তোলা হয়েছে হচ্ছে কয়েক দশক ধরে তিলেতিলে। যে ভারত আসলে নেই, কখনো ছিল না, শুধু দেখানোর জন্য আছে। পেটোয়া শিল্পী, ইতিহাসবিদ, সংগীতজ্ঞ, দার্শনিক, আর্কিটেক্ট, রেস্তোরাঁ মালিক, ক্রিকেটার, সাহিত্যিক সবাই মিলে এই মিথ্যে ভারত গড়ে তুলেছে। খাঁটি নির্ভেজাল ভারতীয় মিথ্যা তথা মিথ। মিথ মানেই মিথ্যা আখ্যান। একদা কামধেনু নামের গরু বা রাম নামে প্রজাবৎসল রাজা ছিল…

Read More

নিউটন – ৭

লুকাসিয়ান প্রফেসর ১৬৬৯ সাল। নিউটনের জীবনের সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বছর। ওই বছরের একেবারে গোড়ার দিকে লন্ডন নিবাসী এক ভদ্রলোক সদ্য প্রকাশিত একখানি গণিত বই প্রফেসর ব্যারোকে ডাক মারফত পাঠালেন। ভদ্রলোকের নাম জন কলিন্স। ব্যারোর পূর্বপরিচিত। কলিন্স এক অদ্ভুত  চরিত্রের মানুষ। পেশায় সরকারি কেরানি, কিন্তু গণিত তাঁর নেশা। রয়্যাল সোসাইটির সদস্যও তিনি। ইউরোপের কোথায় গণিতে নতুন কি আবিষ্কার হল, নতুন কি প্রকাশ পেল, সেসবের সমস্ত খবরাখবর সংগ্রহ করে বেড়ান। ইউরোপের প্রথম সারির প্রায় সব গণিতজ্ঞের সাথেই নিয়মিত যোগাযোগও রাখেন। ব্যারোকে অঙ্কের যে বইটি পাঠিয়েছেন, তার লেখক নিকোলাস মার্কেটর। মার্কেটর, তাঁর এই…

Read More

বন্ধুর কথায় বন্ধু

(গৌতম বসুর স্মরণসভায় স্মৃতিচারণা) শহরটা তখন বদলে যাচ্ছে। শহরের দেওয়ালে চেয়ারম্যান মাও এর ছবি ক্রমশ মলিন হয়ে আসছে, তার বদলে এশিয়ার মুক্তিসূর্য’র ছবি। কলেজ স্ট্রিটে রোজই গণ্ডগোল লেগে থাকে, নকশালদের সঙ্গে কংগ্রেসের। তার আঁচ কলেজের (প্রেসিডেন্সি কলেজ) ভেতরেও টের পাই। এইসময়, প্রথম প্রায় দেড় বছর, গৌতমের সঙ্গে আমার অতটা বন্ধুত্ব হয়নি। এটার একটা কারণ সম্ভবত এই যে, তখন কলেজে পরিষ্কার দুটো রাজনৈতিক দল ছিল – একটা বামভাবাপন্ন দল, পুরনো নকশালরা অনেকেই ছিল তার মধ্যে, আরেকটা অবাম, কংগ্রেসই বলা যায়। আমি সেই অ-বাম দলটিতে ছিলাম, ইলেকশনেও দাঁড়িয়েছিলাম, ছাত্র পরিষদের হয়ে। এবং…

Read More

বিচ্ছেদ

ট্রেন যখন আলিপুরদুয়ার ষ্টেশনে থামল ঝড়ঝড়িয়ে বৃষ্টি হচ্ছে। বাইরে গাড়ি থাকার কথা। তানবীর তার জিন্সের পকেট থেকে ফোন বার করে ড্রাইভার রামচন্দ্র কে ফোন করলো। গাড়ি বাইরেই আছে, কিন্তু বৃষ্টি না ধরলে তার কাছে পৌঁছতে গেলে তারা কাক ভেজা ভিজবে। অক্টোবরের শেষের দিক, কলকাতার থেকে তাপমাত্রা এখানে বেশ কম। তারসাথে আবার বৃষ্টি। ষ্টেশনের শেডের ভেতরের একটা স্টল থেকে দু’কাপ কফি নিলো কিংশুক আর তানবীর।  একটু বৃষ্টি ধরতে ষ্টেশনের বাইরে বেরিয়ে গাড়িতে উঠলো দু’জনে। গাড়িটা দুজনের জন্য বেশ বড়, একটা এসইউভি। ড্রাইভার ছাড়াও অনায়াসে ছ’জন বসা যায়। গাড়িতে উঠে ট্রলির চেন…

Read More

আমেরিকা এক হিমায়িত চিৎকার

২০০৪ সালের কলকাতা বইমেলার সময় আমার বয়স ২৫, ছটফটে, রক্তে স্বভাবকবিত্ব, যেকোনও কথায় মিলিয়ে দিতে পারি অন্ত্যমিল, যেমনটা হয় বা হত নয়ের দশক ও তার অব্যবহিত পরের কফিহাউসতুতো কবিদের, একশ বছর আগেকার রিলকে কে নকল করে কবিতার আদর্শ স্থির করা, দূর মফস্বলের গ্রন্থাগারিক কবি, শহরের করণিক কবি, অধ্যাপক কবি কেউই আসলে কবিতার ২১ শতকের বিশ্বের সন্ধান দিতে পারছিল না, যদিও তাঁরা সকলেই সেই শতকের বাসিন্দা (নাকি নন, তাঁরা আরও বেশি করে ব্রত পুজো পার্বণ হাতে তাগা তাবিজ মা দিয়েছে আংটি)। বহু পরে বুঝেছি পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি আসলে শুধুই প্রাচীনে আস্থা রাখে,…

Read More

নিউটন – ৬

‘মার্ভেলাস টেলিস্কোপ অফ মিস্টার নিউটন’ ১৬৬৭-র বসন্তের মাঝামাঝি কেমব্রিজে ফিরে এলেন উলসথর্পের বছর পঁচিশের সেই যুবক। যুবকটি কি বুঝতে পারছেন যে তিনি একজন বিরল প্রতিভার অধিকারি? প্লেগ মহামারির আগের নিউটনের কাছে নিজের ঐশ্বর্য অনাবিষ্কৃত থাকারই কথা। কিন্তু আঠার মাস গৃহবন্দী দশায় যে-সমস্ত অভিনব ভাবনার, ‘গ্রাউন্ড ব্রেকিং’  আবিষ্কারের ভিত্তি স্থাপনের কাজ সেরে কেমব্রিজে এবার এলেন, তারপর নিশ্চয়ই নিজের বৈজ্ঞানিক সত্ত্বার অস্তিত্ব টের পেয়েছেন তিনি।      কেমব্রিজে ফিরে এসে প্রথমেই, ইউনিভার্সিটির ব্যাচেলর গাউন ও দু-জোড়া জুতো বানিয়ে নিলেন নিউটন এবং বেশ কিছু প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কিনলেন। ওই সময় তাঁর হিসাবের খাতা (Fitzwilliam Notebook) থেকে…

Read More

ধরে নেওয়া যাক ভ্যান গখ

ধরে নেওয়া যাক, ভ্যান গখ এই জন্মে এক কফি শপের মালিক। মালিক অবশ্য নাম কা ওয়াস্তে। সে কেবলই সুযোগ খোঁজে ছোট্ট টাউনটা ছেড়ে বেরিয়ে পড়তে। ওর যে কফিশপ সেটা বড় শহরের লাগোয়া আরেকটা শহর। নদীর এপার ওপার। ওর কাফেটা থেকে বেরিয়ে  মিনিট কুড়ি সড়ক পথ ধরে এগিয়ে সেতু পেরলেই বড় শহর। সেতুর নীচ দিয়ে বয়ে গেছে মজে যাওয়া নদী। ধরা যাক, ভ্যান গখের নাম এই জন্মে অর্পণ সরখেল। অর্পণ সরখেলের নাম যে ভ্যান গখ সেটা অবশ্য সে নিজে জানে না। ওর খুব কাছের বন্ধু যেমন মহুল, জানে। প্রায় বছর তেরো’র…

Read More

স্ট্যাচু

ভোররাত। নীলার খুব শীত করছিল। সূর্যের আলো চোখে পড়তে ঘুম ভাঙল। চোখ খুলে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের মাথায় পরীটার মধ্যে নিজেকে দেখতে পেল। পিঠের ডানা হাতের বাজনা সমেত পাথরের শরীর। শীতল। আশ্চর্যের বিষয় হল যে গোটা ব্যাপারটা তে তার যতটা  চমকে যাওয়ার কথা ছিল তার ভগ্নাংশ ও সে চমকাল না। যেন এমনটাই হওয়ার কথা ছিল। এমন কিছুর স্বপ্নই সে দেখেছিল  নীলাঞ্জনের সঙ্গে ভিক্টোরিয়া চত্বরে প্রেম করে বেড়ানোর দিনগুলোয়। তফাৎ শুধু নীলাঞ্জনকে আর সে আশপাশে দেখতে পেল না। একটা চিল কোথাথেকে এসে তার হাতে ধরা বাজনাটার ওপর বসলো। চিলের সঙ্গে চোখাচোখি হতেই নীলার…

Read More

জ্বলন্ত অন্তরঙ্গতার পৃথিবী ও কোরাল ব্রাচো

ভাবনার ইঙ্গিত পথেই চালিত হয়। গত কয়েক বছর ধরে স্পষ্ট হচ্ছে আমাদের মাথায় গেঁথে থাকা ঔপনিবেশিক মানচিত্রের স্পষ্টতা। এই যে আমাদের ভাললাগা মানেই ইউরোপ বা তদৃশ ভূদৃশ্যে সৌন্দর্য অনুধাবনা থেকে শুরু করে বাংলা ভাষার ক্রমশ লোগোসেনট্রিক হয়ে ওঠা এবং আমাদের তা মেনে নেওয়া। সুধীর স্পষ্ট হয়ে ওঠে এই দুনিয়ার আসল মেরুকরণ — ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র এবং অধীনস্ত উপনিবেশ। এই অধীনস্ত উপনিবেশ যত দূরেই চলে যাক তার প্রাক্তন প্রভুর থেকে গায়ে লেগে থাকে উপনিবেশের অনপনেয় দাগ। তার চলন সারাজীবনের অধমর্ণের। আর এইখানেই তার প্রকৃত সংগ্রাম। তার ভাষাকে প্রভুর প্রতীক ব্যবস্থা ( লোগোস)…

Read More

নিউটন-৫

‘থিয়োরি অফ কালারস্‌’ কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির সদ্য গ্র্যাজুয়েট, তরুণ নিউটন আলোর নতুন এক থিয়োরি পেশ করলেন। একান্ত নিভৃতে নোটবুকের পাতায় রচিত হল অভিনব সেই আলোক তত্ত্ব। সুদীর্ঘকালের লালিত মানুষের যে বিশ্বাস – সূর্য থেকে আগত শুভ্র আলো সবচেয়ে খাঁটি, সবচেয়ে বিশুদ্ধ, অর্থাৎ, মৌলিক চরিত্রের, আর তা অন্ধকার ও ছায়ার প্রভাবে ভিন্ন ভিন্ন বর্ণের বলে প্রতিভাত হয় মাত্র, এবং নানা বর্ণের আলো যা প্রকৃতিতে দেখা যায়, সেগুলি সাদা আলোর ‘মডিফিকেশন’ অর্থাৎ অপর কোনো রূপে প্রকাশ ভিন্ন আর কিছু নয় – নিউটন বুঝলেন, এ-সমস্তই ভ্রান্ত ধারণা। সূর্যালোক আদৌ বিশুদ্ধ নয়। সাদা আলো, আদতে…

Read More

নববারোক নির্মাণ অন্তঃভাষাভূগোল ও আমেরিকা

আমেরিকা এক হিমায়িত চিৎকার বলে চিহ্নিত করার পর একটা কাজ আরও বেড়ে যায় এক অদ্ভুত দায় ও সচেতনতা। যে আমি অন্ধের মত স্পর্শে চিনেছি আমেরিকা পণ্ডিতের মত নয় তার কাছে এই অনুভূতি আর কজন বন্ধুর সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া খুবই প্রয়োজন। মার্কিন দেশে এত বাঙালি থাকা সত্ত্বেও এই বিষয়টা আমাদের মত গোদা লোকেদের সামনে কেউ তুলে ধরেছেন বলে মনে পড়ে না। কবিতার ক্ষেত্রে কেউ হয়তো ধরিয়ে দিয়েছেন নতুন ধরনের কবিতার আঙ্গিক এর কথা। কিন্তু কেউ ধরিয়ে দেননি ইউরোপীয় ভাষায় লেখা হওয়া সত্ত্বেও আমেরিকা মহাদেশের কবিতা একেবারে তাদের ঔপনিবেশিক দাগ ঘষে-মেজে…

Read More

নিউটন-৪

আপেল পড়ার গল্প ১৬৬৫-র জুন-জুলাই মাস নাগাদ উলস্‌থর্প ম্যানর-এ ফিরে এলেন আইজাক  নিউটন।  মহামারির প্রকোপ এড়িয়ে নিরাপদে  পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবেন এই খামার বাড়িতে। কেমব্রিজ থেকে সঙ্গে এনেছেন বাক্সভর্তি বই। সেগুলি রাখার জন্য দোতলার একটি ঘরে পাইন কাঠের সেলফ্‌ বানিয়ে নিলেন নিউটন। এখন তাঁর সর্বক্ষণের সঙ্গী হল সৎপিতা বারনাবাস স্মিথের থেকে পাওয়া সেই ‘ওয়েস্ট বুক’। ক্রমশ যা ভরে উঠতে থাকল নানা রকম সাংকেতিক চিহ্নে, গাণিতিক সংখ্যায় ও জ্যামিতিক চিত্রে।    তেইশ বছরের এই যুবক আর আগের সেই গ্রাম্য আইজাকের মধ্যে এখন বিস্তর ফারাক। নিউটন নিজেকে এখন ‘আইজাক নিউটন অফ উলস্‌থর্প, জেন্টল্‌ম্যান’…

Read More

প্রকৃত সারস

অমলতাস নিতান্ত নিরীহ নয়, সেকথা জানা ছিল। তবুও তো সে বৃক্ষ। সে যে এমন অকস্মাৎ ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে, ধারণা ছিল না শুভ্রার। অথচ সে দেখেছে গ্রীষ্ম দুপুরের একাকী ব্যাঙ, কেমন সে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লাফে পুকুরের ঢাল বেয়ে উঠে আসতে আসতে হঠাৎ নেই হয়ে যায়… সহসা সাপের মুখ একবার খোলে, বন্ধ হয়… ধীরে ধীরে ফুলে ওঠে তার গলা, ফোলাটা নামতে থাকে ঘাড় বেয়ে, বুক বেয়ে পেটের দিকে আর ক্রমশ ব্যাঙের স্মৃতি মুছে যায় পুকুরের মানচিত্র থেকে। অশ্রান্ত কাঠঠোকরার পার্কাশনেও এমন গ্রীষ্ম শুনেছে শুভ্রা, বুঝতে শিখেছে কখন অদৃশ্য হয় ছাল-বাকলের আড়াল থেকে…

Read More