ধরে নেওয়া যাক ভ্যান গখ

ধরে নেওয়া যাক, ভ্যান গখ এই জন্মে এক কফি শপের মালিক। মালিক অবশ্য নাম কা ওয়াস্তে। সে কেবলই সুযোগ খোঁজে ছোট্ট টাউনটা ছেড়ে বেরিয়ে পড়তে। ওর যে কফিশপ সেটা বড় শহরের লাগোয়া আরেকটা শহর। নদীর এপার ওপার। ওর কাফেটা থেকে বেরিয়ে  মিনিট কুড়ি সড়ক পথ ধরে এগিয়ে সেতু পেরলেই বড় শহর। সেতুর নীচ দিয়ে বয়ে গেছে মজে যাওয়া নদী। ধরা যাক, ভ্যান গখের নাম এই জন্মে অর্পণ সরখেল। অর্পণ সরখেলের নাম যে ভ্যান গখ সেটা অবশ্য সে নিজে জানে না। ওর খুব কাছের বন্ধু যেমন মহুল, জানে। প্রায় বছর তেরো’র…

Read More

আমার সমর্পণ

রবীন্দ্রনাথের সমর্পণ, সমর্পণের রবীন্দ্রনাথ  ‘আমার হৃদয়বৃত্তিগুলো যদি আমাকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাত আর যাই হোক কোনও রূপসৃষ্টি সম্ভব হত না’ — কিছুদিন আগে দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ও অতুলপ্রসাদ সেনের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের একটা কথোপকথনে পড়লাম এই কথাটা। সেই থেকে আগ্রহের পায়চারি আর সন্ত্রাস যুগপৎ খেলে যাচ্ছে আমার ভিতরে। আগ্রহ – কেননা কথাটি মাত্র এক লাইনের হলেও তার গায়ে লেগে আছে একজীবনের পরিশীলনের ছায়া। তার মন। সেই মনের আলো-হাওয়া-চরিত্র। আসলে কথাটা সব শিল্পীর, সারাজীবনের। ভাবি, হৃদয়বৃত্তি যদি প্রবল না হত তবে কী করে লিখলেন সেইসব গান যা পূজার ঘরে কাটাকুটি খেলতে খেলতে আসলে…

Read More

অল আই হ্যাভ ইজ আ ভয়েস

প্রতি মুহূর্তে রাষ্ট্রের এমন এমন চিল-ঠোক্কর মানুষ শেষ কবে দেখেছে? আমাদের যাদের বয়স ত্রিশের কোঠায়, তারা এই প্রথমবার, এই দেশে। এমন অ্যাটেনশান সিকার রাষ্ট্র-ব্যবস্থা আমরা এর আগে নাৎসি জার্মানির ইতিহাসে দেখেছি, সিনেমায়, গল্পে। সত্যি বলতে এক ত্রাসের অনুভূতি ছাড়া বাকি অনুভূতিগুলো কেমন যেন বসে যাওয়া গলার মতো মোটা আর ক্ষীণ হয়ে আসছে। ভয় হচ্ছে। সত্যিকারের ভয়। ভাবি, এই তো একটাই মানবজীবন! তাকে কি তবে এবার থেকে এই এইমাত্র ত্রাসের অনুভূতি নিয়েই বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে হবে, বা জীবনের বড় একটা অংশ এই ভয় ত্রাসের ঘরে যুঝতে যুঝতে ফুরিয়ে যাবে! লক্ষ…

Read More

ইউরেকা!

জাফরির ফাঁকে তখন দুপুরের আলোখেলা। জানলা দিয়ে সোজা তাকালে তখন আশেপাশের চুনকাম করা হাল্কা রঙের বাড়িগুলোয় পাকারঙ লাগতে শুরু করেছে। আহিরা সেদিকে তাকিয়ে ছিল। কিন্তু আহিরা সেদিকে দেখছিল না। তার সমস্ত ইন্দ্রিয় তখন ঘড়ির কাপড় কাচার শব্দে আস্তে আস্তে বুঁদ হয়ে আসছিল। ঘাড় ফিরিয়ে যে ঘড়িটার দিকে তাকাবে, সে শক্তিও প্রায় ছিল না। তবু সে একসময় ঘাড় থেকে প্রায় পাথর সরানোর মতো শক্তি প্রয়োগ করে ঘুরে তাকায় আস্তে করে ঘড়িটার দিকে। তার আস্ত শরীর তখন নিজেই নিজেকে ছেড়ে দিচ্ছে। কোনওমতে ও দেখল, মানে দেখতে পেল– ওর সমান্তরাল দুই হাত মিনিট…

Read More

সঙ্ঘমিত্রা হালদারের কবিতাগুচ্ছ

ভেংচি পুরোটা মনে আসছ না, তবে পেশীতে, শরীরে? অন্তত কোনও ভাঁজে ঢেউ কিংবা খাদের মতো অপেক্ষা করছ? নেই হাওয়ায় পাতা নড়লে, ভূত নয়, নিজেকে কিংবদন্তী লাগে ও উহ্য তোমাকে রপ্ত করবার আকাঙ্ক্ষায় থাকি চারিদিকে চরিত্ররা বাজারে যায়, পার্স খোয়ায় এসে দেখি বাঁকের কাছাকাছি কেউ বা হাঁটা নকল করছে তোমার অনুসরণ করার দূরত্বে এলে দেখি কোথাও আসল নেই তোমার তুমি-ই নেই এই লেখাটুকু হবে বলে পেশীতে বসে ভেংচি কাটছিলে   শব্দের বদলে শব্দের বদলে মুখ থেকে উঠে আসছে থকথকে কাদা একমনে কোনও অন্ধ ধৃতরাষ্ট্রের বাগান থেকে উঠে আসছে প্রিয় কলহ যার…

Read More

সুখ নেই, দুঃখও নেই

নিজের আত্মজীবনীমূলক বই ‘অক্ষয় মালবেরি’তে জীবনের প্রথম স্মৃতির অনুভূতি নিয়ে বলতে গিয়ে লিখেছেন– ‘পরিত্যক্ত থাকার কষ্ট এবং অসহায় ক্রোধ—এই দ্বৈতই বোধ হয় আমার সারা জীবনের সারসংকলন।’ তিনি মণীন্দ্র গুপ্ত। এই পরিত্যক্ত থাকার কষ্ট, অসহায় ক্রোধের অভিমুখ নিজে হাতে তিনি ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন। পরিণত করেছিলেন মিত্রশক্তিতে। পজিটিভ এনার্জিতে। তাঁর ‘হয়ে ওঠা’য়, তাঁর কবিতা আর গদ্যের মন ও ইন্দ্রিয়ের সর্বাত্মক ব্যবহারে। নিজের মধ্যে এক ‘আমি’ হয়ে ঢুকে, বহু ‘আমি’ হয়ে প্রবেশ করে তিনি নিজেকে দূর থেকে দেখার আশ্চর্য কৌশলটি রপ্ত করেছিলেন। যেকোনও দেখায়—দেখার প্রয়োজনীয় দূরত্বটি অবিচল রাখতে পেরেছেন তিনি। জীবনের নানা গলি- চোরাপথ-…

Read More