১৪. কুয়াশা কাটছে। সোমেশ্বরী নদী, দূরে গারো পাহাড়, নদীর বুকে এই শীতে ধু ধু বালুচর। মধ্যিখানে শীর্ণ জলরেখা। নদীর বুকে বালি তোলার লরি। নদী পার হয়ে দুর্গাপুরে প্রবেশ করছে তারা। সুসঙ্গ। রাজার সঙ্গ ছিল অতি মধুর, রাজা ছিলেন প্রজাপালক, তাই সুসঙ্গ। রাস্তা সংকীর্ণ। টোটো, অটো, ম্যাটাডোর, মিনি লরি, গরুর গাড়ি এক সঙ্গে লাইন মেরেছে, মুখোমুখি হয়েছে। অতীনের কথায় বিপুল জিজ্ঞেস করল, প্রজা পালক রাজা সিমসাং নদীর নাম নিজের নামে করতে সম্মতি দিলেন কেন ? অতীন বললেন, একই নদীর নাম স্থানে স্থানে আলাদা হয়, আপনাদের ব্রহ্মপুত্র আরো পুবে অনেক উপরে, চিন…
Read Moreঅমর মিত্র
স্বদেশযাত্রা গল্পের জন্য তিনি ১৯৯৮ সালে পেয়েছেন সর্বভারতীয় কথা পুরস্কার। হারানো নদীর স্রোত গল্পের জন্য ২০০২ সালে পেয়েছেন আনন্দ-স্নোসেম পুরস্কার। কথার বেস্ট অফ নাইনটিজ - গত শতাব্দীর নয়ের দশকে প্রকাশিত শ্রেষ্ঠ ভারতীয় ভাষার গল্প সংকলনে একমাত্র বাংলা গল্প তাঁর স্বদেশযাত্রা। ছোট গল্পের জন্য পেয়েছেন সমরেশ বসু এবং সমতট পুরস্কার(১৯৯০), বর্ণ পরিচয়-প্রতিদিন পুরস্কার(২০১১)। ২০১০ সালে পেয়েছেন মিত্র ও ঘোষ প্রকাশন সংস্থার পুরস্কার, গজেন্দ্রকুমার মিত্র-সমথনাথ ঘোষ সম্মান।
লেখক ২০০১ সালে তাঁর অশ্বচরিত উপন্যাসের জন্য পেয়েছেন বঙ্কিম পুরস্কার। ২০০৬ সালে ধ্রুবপুত্র উপন্যাসের জন্য সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পেয়েছেন। ২০১৭ সালে সমস্ত জীবনের সাহিত্য কৃতির জন্য যুগশঙ্খ পুরস্কার পেয়েছেন।
কলকাতার সুখ্যাত নাট্যদল সায়ক (পরিচালকঃ মেঘনাথ ভট্টাচার্্য) তাঁর গল্প নিয়ে পরপর চারটি মঞ্চসফল নাটক প্রযোজনা করেছেন, পিঙ্কি বুলি, দামিনী হে, পাসিং শো এবং পুনরুত্থান। কল্যাণী নাট্যচর্চা কেন্দ্রে তাঁর দুই উপন্যাস অশ্বচরিত এবং ধ্রুবপুত্র মঞ্চে নিয়ে এসেছেন।
উপন্যাসের সংখ্যা - চল্লিশ। প্রধান উপন্যাসের কয়েকটিঃ ধ্রুবপুত্র। অশ্বচরিত । আগুনের গাড়ি। ধনপতির চর। শূন্যের ঘর শূন্যের বাড়ি। দশমী দিবসে। বহ্নিলতা। পুনরুত্থান। কুমারী মেঘের দেশ চাই। জননী সমুদ্র। সবুজ রঙের শহর। প্রান্তরের অন্ধকার। নিসর্গের শোকগাথা ইত্যাদি।
গল্প গ্রন্থঃ শ্রেষ্ঠ গল্প, সেরা ৫০টি গল্পম ৫১ গল্প, প্রিয় পঞ্চাশটি গল্প ইত্যাদি।
শিশু-কিশোর গ্রন্থঃ পাঁচ।
প্রবন্ধ গ্রন্থঃ এক
মৈমনশাহী উপাখ্যান – ৭
১২. বিপুল অবাক হয়ে শুনছিল অস্থির মিঞার কথা। অতীন হতবাক। বিপুলের মনে হলো এ সেই অথৈচন্দ্র, হাতিখেদা থেকে বেঁচে আছে এতকাল ধরে। তা না হয়ে হয় না। সুধীন্দ্রর কাহিনি আর অতীনের কাহিনি যেভাবে এক হয়ে যায়, ঠিক সেই ভাবে এর কাহিনি আরো কিছু উপাদান যোগ করে দিল মৈমনশাহী পালায়। অস্থির মিঞা বলছে সেই মেয়ে লীলাবতী না লীলাময়ীর রোষ ছিল খুব। তার মা জননী গারো পাহাড়ের মেয়ে, এই কংস নদীর ধারের এক বামুনের পোলার হাত ধরে নেমে আসে, তার ভিতরে পাহাড় ছিল। সেই কইন্যা ডাকসিল হস্তী, তুমু ঠিক বলতিস ? চন্দ্রকুমার…
Read Moreমৈমনশাহী উপাখ্যান – ৬
১০. বিপুল আছে অনেক পুরোন এক জেলা পরিষদ গেস্ট হাউসে। বাড়িটার চারদিকে নানান গাছ-গাছালি। রোদ এখানে ওঠে অনেক বেলায়। শীতের দিনে এমনিই চলে। গেস্ট হাউস বেজায় ঠান্ড, যাকে বলে হিম শীতল। একটি ঘরে চন্দ্রকুমার, অন্যটিতে বিপুল। গেস্ট হাউসে একজন কেয়ার টেকার আছে। যুবক। বিনু বৈরাগী। চাঁদবিনোদ বৈরাগী। বয়স বছর পঁচিশ। মোহনগঞ্জ হাওর এলাকায় বাড়ি। তার বাবা জেলা পরিষদে ডি-গ্রুপ কর্মচারী ছিল। বাবার মৃত্যুর পর সে চাকরিটা পেয়েছে, কিন্তু পার্মানেন্ট নয়। মাসে আট হাজার পায়। পাকা হয়ে গেলে মাইনে পনের হয়ে যাবে। কিন্তু কবে পাকা হবে জানে না। চন্দ্রকুমার বলল,…
Read Moreমৈমনশাহী উপাখ্যান – ৫
৮. হায় হায় কী কয় নতুন বৌ। কানে দিতে দিতে হাত কান অবধি পৌঁছায় না। কথায় বিষ হইলেও, তা বড় মিঠা। কচি মেয়ের মুখে এহেন কথা শুনে বড় মেজ, দুই বৌয়ের অবাক ভাব যায় না। ছোট বউ যেন গনগনে আগুন। এই বয়সে এমনই হয়। তাদের কুড়ি পেরিয়েছে। বুড়ি না হয়েও বুড়ি। বড়র তো তিরিশ হতে যায়। বড় একেবারের বুড়ি গিন্নি। মেজর তেজ বেশি, সে বলল, ও মা, মা, বুঝি নে, সবে তো একদিন, এক বাসর, তুই ওঁরে জাগাইয়া দে, না জাগাইলে যৈবন তুর কেমন সি যৈবন ! মু ও লকের…
Read Moreমৈমনশাহী উপাখ্যান – ৪
৭. লীলাবতী রাতে খায়নি। লীলাবতী ক্রুদ্ধ মারজারিকার মতো ফুঁসতে থাকে। হাত-পা ছুঁড়তে থাকে। লীলাবতী রাগ করে। লীলাবতী কাঁদে। তার সন্দেহ হচ্ছিল। তার জীবন নষ্ট করে দেবে বাবা শীতলচন্দ্র। মা খেত না। মা নীরবে কাজ করে যেত। লীলাবতীকে বলত, তার বাবা বলে পাহাড়িয়া বিবাহ করে পতিত হয়েছে, কুনকি। মা ছিল নাকি কুনকি। যে হস্তিনী ভুলিয়ে ভালিয়ে বন্য হস্তিকে গড়ে বন্দী করে ফেলে তার স্বাধীনতা হরণ করে। কুনকি হাতি তার বাবাকে ভুলিয়ে গড়ে বন্দী করেছে। মা মরলে ব্রাহ্মণের আবার উত্থান হবে। না খেয়ে খেয়ে মা রোগে পড়েছিল। সেই রোগেই মা মরে যায়।…
Read Moreমৈমনশাহী উপাখ্যান – ৩
৫. পাহাড় পিছিয়ে যেতে লাগল। কে কইসে পাহাড় পিছিয়ে গেছে ? কংস নদীর ওপারে যাও, একটু বাদে আর পাহাড় দেখা যাবে না। আগে দেখা যেত। মৈমনসিং নগর থেকেও দেখা যেত। এখন নেত্রকোনা থেকে দেখা যায় না। কিন্তু পাহাড় তো নিশ্চল। সে কী করে পিছিয়ে যায় ? তা কখনো হয়। এই যে তোমার ক্ষেত-জমি, তা তো তার জায়গাতেই থাকে। এই যে তোমার ভিটে-বাড়ি, তা কি মাইল মাইল দূরে চলে যায়। রাজার বাড়ি, রাজার বাড়ি তো রাজার বাড়িতেই থাকে। সেই যে কমলা সায়র, সে কি তার নিজের জায়গায় নেই? কংস নদী পার…
Read Moreমৈমনশাহী উপাখ্যান – ২
৩. ট্রেন রাত এগারটা পঞ্চাশে। বসেই যেতে হবে। সিটিং রিজারভেশন পেয়েছে তারা। না, স্লিপিং বার্থ খালি নেই। ইন্ডিয়ার মতো ট্রেনের ব্যবস্থা নয় এদেশে। হাওর-বাওর, নদী-নালার দেশ, ট্রেন লাইন বসানই কষ্টের। বছর বছর বন্যা। লাইন ভেসে যায়, উপড়ে যায় বন্যার জলের তোড়ে। আর বাস কোম্পানির কলকাঠি। ট্রেন হলে বাস বসে যাবে। তাদের ট্রেনের নাম হাওর এক্সপ্রেস। ঢাকা থেকে নেত্রকোনা হয়ে মোহনগঞ্জ যাবে। মোহনগঞ্জে হাওর আছে মস্ত, তা পেরিয়ে গেলে অবিভক্ত সিলেট জেলা। সুনামগঞ্জ। সুনামগঞ্জ নিজেই এখন জেলা হয়ে গেছে। চন্দ্রকুমার বলেছে, সন্ধে থেকে একটু ঘুমিয়ে নিন দাদা, রাত্তিরে ঘুম হবে…
Read Moreমৈমনশাহী উপাখ্যান – ১
লেখকের সূচনাকথাঃ শোনা যায় পীর মৈমনশাহর নামেই মৈমনসিংহ। অবিভক্ত বাংলার সব চেয়ে বড় জেলা ছিল মৈমনসিংহ। পূর্ববঙ্গ গীতিকার সিংহভাগ রচিত হয়েছিল এই জেলায়। গীতিকার কাহিনি আমাকে মুগ্ধ করেছিল বহুদিন। প্রেম আর বিরহই কাহিনিগুলির মূল সুর। ্তার ভিতরে লুকিয়ে আছে চলমান জীবন এবং সামাজিক চিত্র। মহুয়া, মলুয়া, কমলা, কাজলরেখা, কঙ্ক ও লীলা, আয়না বিবি……কত যে অপরূপ কাহিনিমালা। ময়মনসিংহ বা মৈমনসিংহ গীতিকা এপারের রঙ্গমঞ্চে এসেছে কয়েকটি। সেই সব নাটক গীতিকার অংশ বিশেষ। কিন্তু গীতিকার বাইরে যায়নি। সুরটি ধরেছে। গীতিকার ভিতরে চলিষ্ণু বঙ্গ দেশের রূপ খুঁজে পাওয়া যায়। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম সেই গীতিকার…
Read More