শিশির আজমের কবিতাগুচ্ছ

    গোল্লা   স্কুলের পরীক্ষায় রচনা লিখন এসেছিল ‘গরু’ আমি কিছুই লিখিনি টিচার আমায় গোল্লা দিয়েছিলেন আমি আদৌ ঘুমিয়ে ছিলাম না আর গরু বিষয়ে আমি জানি যদিও এখনো আমার মাথায় আসেনি টিচার আমায় গোল্লা দিলেন কেন গরু নিরীহ আর মহৎ একটা প্রাণি ওকে নিয়ে কী লিখবো আমি আচ্ছা আমাকে নিয়ে যদি রচনা লিখতে বলা হয় গরু কী লিখবে তাহলে টিচার ওকে কত নম্বর দেবেন ওই গরুকে না কি ও-ও পাবে আস্ত এক গোল্লা     যে কথাটা বেমালুম চেপে যাওয়া হয়   উয়ারী আর বটেশ্বর দুটো গ্রাম অথবা একটাই…

Read More

ফৌজি কওয়াল

(আজিজ মিঁয়া: ১৯৪২ – ২০০০)   দৃশ্য ১: করাচির জৈনাব মার্কেট, আটের দশক। জুম্মার নামাজ শেষে কাওয়ালির আসরে ভিড় করেছেন কয়েকশ মানুষ৷ ‘কওল’ দিতে আসছেন আজিজ মিঁয়া, কওয়ালির ‘বেতাজ বাদশা’। তাঁর কওয়ালি শুনতে ভেঙে পড়েছে শহরের মানুষ। কিন্তু একি! কওয়ালির আসরে পুলিশ কেন? বিস্ময়ে সবাই দেখে, বিরাট পুলিশ বাহিনী ঘিরে রেখেছে গোটা অঞ্চল, যেন কোনও যুদ্ধের প্রস্তুতি। তারাও বুঝি কওয়ালি শুনতে এসেছে! নাহ, সে রাতে পুলিশ এসেছিল পরিস্থিতি সামলাতে৷ আজিজ মিঁয়ার সুরের এমনই জাদু, লোকেরা পাগল হয়ে যায়, শুরু হয় মাতলামো, ভাঙচুর, চরম বিশৃঙ্খলা। সেই অপ্রীতিকর পরিস্থিতি আটকাতেই পুলিশের আগমন।…

Read More

ব্লীডিং হার্ট

    দুপুরের খাওয়া সেরে ইরার চোখে যখন ক্লান্ত দুপুরের আলস্য, সেই সময় পাঁচিলের ছায়া যতটুকু গড়ায়, বাগানের সীমানা সেইটুকুই । একচিলতে। একসময় আগাছায় ভরে ছিল, এখন সেখানে অনেক রং। ইরার হাতের নির্যাস থেকে এই রং ছড়িয়ে পড়েছে, এমনটা ভেবে ইরার বুকে একটা পাখি ডানা ঝাঁপটায় । যত গাছ লাগাতে চায়, ততো আর পারে কোথায়? অমূল্য বলে প্রতিটা গাছের বাড়ার জন্য একটা জায়গা ছাড়া চাই । শুধু তাই? সব গাছ সবার পাশে বাড়তেও চায় না দিদি। অমূল্যর নার্সারি আছে। সবুজপাতা নার্সারি, সেখান থেকেই চারা কেনে ইরা। সেটা কিরকম? শুধু আলো…

Read More

কিস্যা কাহানি কা

  ‘ভাদ্র মাস যায় মিছে মিছে কথা না শুনে’ – এ জনশ্রুতি, জনসংস্কৃতি জনজীবনের এক খাঁটি আয়নার মতো। মিছে কথা। শুনতেই হয় ভাদ্রমাসে। তার মানে কি আশ্বিন থেকে শ্রাবণ সব সত্য কথা? অসত্য শুধুই ভাদ্র মাসে! মনে পড়ে ‘এ মাহ ভাদর এ ভরা বাদর? হ্যাঁ, ভাদ্রের ভরা বর্ষায় কাদা প্যাচপ্যাচে পথঘাট, টইটম্বুর মাঠপাথার। বুড়ি অঞ্জুমান বানু বলছিলেন এ সময় নদী বড়ো  ফেঁপে ওঠে, পোয়াতির মতো ভরে যায়। সে সময় ছেলে-বুড়ো মেয়ে-মদ্দ সব ঘরবন্দী। কাজহীন নিস্তরঙ্গ জীবনে তখন রঙ্গরসিকতা, শোলোক-কাহানি, আলকাপ, কবিগান। মিছে কথা মানে গল্প কথা, কিস্যা, কাহানি… শোলোক বলা…

Read More

টমাস ট্রান্সট্রোমারের কবিতা

বাংলা অনুবাদ: নান্নু মাহবুব অনুবাদকের কথা ভাষা রিয়েলিটিকে বর্ণনা করতে পারে না। তবু কবি নামের আলকেমিস্ট সেটাই করার চেষ্টা করেন। ট্রান্সট্রোমারের কবিতা সেই অসম্ভব প্রক্রিয়ার একটি সর্বোত্তম ফসল। সারাক্ষণই তিনি সেই দিগন্তে অবস্থান করেন, সারাক্ষণই তিনি ঝড়-জল-দুর্যোগ ঠেলে এগোতে থাকেন দূর সমুদ্রে অপেক্ষমাণ কাব্যদেবীর ক্যানভাসে অসম্ভব সেই ছবিটি আঁকবেন বলে। পাতালের অতলে তাঁর আত্মার ধূমকেতু ভেসে যায়। অসীম নির্জন আকাশে কান পেতে তিনি তারকাপুঞ্জের খুরাঘাত শোনেন। ২০১১ সালে ট্রান্সট্রোমারকে (১৯৩১-২০১৫) নোবেল পুরস্কার দেবার সময় নোবেল কমিটি লিখেছিল, “২০১১ সালের সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের প্রাপক তিনি, কারণ তিনি আমাদেরকে তাঁর ঘনবদ্ধ, স্বচ্ছ…

Read More

বর্ণালী কোলের কবিতাগুচ্ছ

  চন্দ্রের আকর্ষণ ও প্রহার   ফসল জোয়ারের প্রবল জলস্রোত। চন্দ্রের আকর্ষণ ও প্রহার। ধুইয়ে দিয়ে গেছে। অজস্র নতুন পলি জমেছে আমার দেহে। অবিরাম ঢেউ শেষে উর্বর শস্যভূমির মতো জেগে আমার শরীর। আবাদ করো।     মানচিত্র কথারা সব চুপ আর্তিরা চুপ কেন এটা হল, কেন,কেন ভুল বুঝেছ, সব অভিযোগ স্তব্ধ শীত রাত্রির মতো যেন রাতের সায়েন্স সিটি বুকের মধ্যে অজস্র স্পন্দন নিয়ে ঘুমে যেন অঘ্রানের মাঠ ফসল কাটার শব্দ নিয়ে নিদ্রিত যেন মহাকাশ থেকে দেখা রাতের পৃথিবী কয়েকটি আলোর অগ্রসর নিয়ে ঘুমিয়ে     সম্পর্ক ইউরেনাস, নেপচুন গ্রহের মতো…

Read More

পায়ে পায়ে ফ্রেঞ্চ আল্পস

  ফ্রেঞ্চ আল্পস ১ : মর্জিনের পথে  শুরুটা মোটেও সুখকর ছিলনা। বার্মিংহাম থেকে আমস্টারডাম হয়ে জেনিভা পৌঁছনোর কথা দুপুর দুটোর মধ্যে। সেখান থেকে বাসে করে মর্জিন (Morzine)। ফ্রান্স আর সুইজারল্যান্ডের সীমান্তে অবস্থিত মর্জিন ফ্রেঞ্চ আল্পস ঘেরা একটা ছোট্ট শহর । আমরা যাচ্ছি কয়েকদিন আল্পসকে এই প্রথম কাছ থেকে ছুঁয়ে দেখার এবং চেনার আশায়। আল্পস হিমালয় নয়। অত সুউচ্চ পর্বত শিখরের দাবিও করে না। কিন্তু নিজের স্বমহিমায় পৃথিবীতে বিরাজ করছে।  হিমালয় সৃষ্টির ২৫০ মিলিয়ন বছর আগে সৃষ্ট এই ভঙ্গিল পর্বতমালা দক্ষিণ ইউরোপের ফ্রান্স থেকে আলবেনিয়া অবধি ১২০০ কিলোমিটার জুড়ে বিরাজ করছে…

Read More

হাসনাত শোয়েবের কবিতাগুচ্ছ

    হারানো সন্তানদের জন্য প্রার্থনা   ৩৭ পিটার বিকসেলের গল্প থেকেই বেরিয়ে এসেছিল সে বুড়ো। যে চেয়েছিল সব কিছুর নাম বদলে দিতে। ইতিহাসকে সে বদলে দিয়েছিল পৌরনীতিতে৷ তার গল্পে কবিরা হয়ে উঠেছিল সর্বনাশা জুডাস৷ রাজ্যের পর রাজ্য দখল করে নিয়েছিল তারা। হলদে পাখির গায়ে সে পরিয়েছিল কালাশনিকভের জামা। রোদকে সে ডাকত নমরুদ আর তার পৃথিবীতে যুদ্ধগুলো সব ছিল প্রার্থনা। ভাষার এই প্যাচে সে দেবদূতদেরও ফেলে দিয়েছিল বিভ্রান্তিতে৷ দুনিয়াজুড়ে স্থায়ী হতে শুরু করল নিপীড়কদের অত্যাচার। রাষ্ট্রের পর রাষ্ট্র আচ্ছাদিত হয়ে গেল বিষণ্ণ দেবদারু গাছে। হত্যা, যুদ্ধ, প্রতারণা, জিঘাংসা সবকিছুই লেখা…

Read More

মণিশংকর বিশ্বাসের কবিতাগুচ্ছ

    মুনমুন আপনার সঙ্গে আমার কখনও যৌনতা হয়নি হওয়া সম্ভবও ছিল না তবু আপনার সঙ্গে আমার যে কত যৌনস্মৃতি কত যে স্মৃতিকাতরতা! আপনার নামের ভিতর দু’ দু’বার ‘চাঁদ’ শব্দটা আছে সেটা আমি বুঝি ঠিক এভাবে: একটা ট্রেন টানেলের ভিতর ঢুকছে আর আলোয় ভরে উঠছে কামরার ভেতরটা তারপর ট্রেনটা যখন বাইরে বেরিয়ে আসছে বাইরেটা আবার আলোঝলমলে     দুঃখ ২ ইমতিয়াজ মাহমুদ ভাই লিখেছেন, “অসুখী মানুষ যখন ঘুমায় তখনও তার চেহারায় দুঃখ জেগে থাকে।” এটা পড়েই আমার মনে পড়ল, মৃত্যুর পরে বাবার মুখখানা— বাবা যেন হাসছেন! মানুষ মরে গেলে তাহলে…

Read More

দেবাঞ্জন দাসের কবিতাগুচ্ছ

  ঐ পথ জন্মের   ১. ঐ পথ জন্মের বলে বিকেল ছুঁয়ে অমল চিনেছে ওরা আলোর শিশুদের নাচে যখন মোরগ রঙ হল রক্ত হল মাংস থেকে ইমানের ছবি উঠেছিল আকাশে বলো, ভালো লাগছে না কাঁচের গুলিতে মিশে যাওয়া চোখ এই প্রসব দেখছে লাল হচ্ছে আঙুরের বিভ্রম…     ২. না থেমে চলেছে মাঠ এ’ভাবে সব ভালো থাকা ঝরে শীতে এগুলো সত্যি হবে ভেবে ডিম থেকে পাখিরা ফেরে পাখনায় রাত হয় বিপাশার মুখে চাঁদ ওঠে ঝড়ের স্বপ্নে এক দ্রুত ফড়িং দেখি যেন শেষ পাফের কাশিতে এই পৃথিবীর যত শব্দ জল-জঙ্গল-যুদ্ধের যত…

Read More

ফ্ল্যাশ ফিকস

    প্রচারক   উদাত্ত গলার আওয়াজে তারা মন্দির-প্রাঙ্গণের বাইরে এল। রুক্ষ পাথুরে রাস্তাটার উপর সাদা কাপড়ে মাথা ঘাড়। চোখে শেডস। অনাঘ্রাত সেই যুবতীর দল বিস্ময়ে ভেবেছিল তাকে কোনো সন্ত বা প্রচারক, নিদেন তীর্থক। তার পিছন দিক থেকে যখন বেরিয়ে যখন ঘিরে ধরল ছায়ামূর্তিরা তখনও তারা শঙ্কিত হয়নি। প্রচারক ঠান্ডা গলায় তাদের বলল, সঁপো – তারা বোঝেনি – জংলি পোশাকের হাতগুলো তাদের বুক, পাছা থেকে ছিঁড়ে নিতে লাগল আবরণ, দেওয়ালের গা থেকেও যেমন প্রত্যেকটা ইঁট। একখান চেয়ার মাঝখানে রেখে কনচার্তো-র সফল কন্ডাক্টরের মতো ব্যস্ত ছিল সে, উত্তেজিত ও মগ্ন। সার্চ…

Read More

কৌশিক ভট্টাচার্য-র কবিতাগুচ্ছ

    সন্ধ্যায়, আনমনে   ১ হাওয়ার মর্মবেদনার গায়ে চুম্বনটুকুর রেখে আসে যে রেশ তারে তুমি বীজের সম্ভাবনা দিও প্রেম শিশিরের নিশিডাক শুনে যে জীবন ব্রাত্য রয়ে গেল তার হৃদকমলে তুমি ফুটে উঠবে সন্ধ্যামণি ফুল? এদিকে এ দেহে কৃষিকাজের সম্ভাবনা নেই বলে পাড়ায় পাড়ায় কী ভীষণ বদনাম রটে গেছে বদনখানি তার আলুথালু পড়ে থাকছে বস্ত্রহীনের ডেরায় চোখে একদিন ঘুঙুর বেজেছিল এই তার অপরাধ নিঃশ্বাসে একদিন নদী ডেকেছিল এই তার অপরাধ? আলোর আস্তানা দেখে মাটির ময়লা যে ঝেরে ফেলেনি তার খোঁপায় তুমি একদিন তারা হয়ে দুলো, দুলে উঠবে তো জোনাকি?  …

Read More

সহোদরা

    আমাদিগের চক্ষুলজ্জা নাই। দয়িত আলোয় যে অশ্রুকণার দপদপা তাহা গড়াইয়া পড়িলে উৎপন্ন হয় শব্দগুচ্ছ। উহার না আছে আঁধার, না আছে অতল। অক্ষর ছিন্নবস্ত্রা হেতু আপোষে বহন করিতেছে শুধুমাত্র অর্থ; তাও গুটিকতক। ফলত স্নানরতা রাজিয়াকে ‘সুলতানা’ উপাধিতে ভূষিত করিয়া রাবেয়া ভাবিতেছিল ইয়ার্কি। ঠেঁস। যাহার গঠন নভিস নিবন্ধের মতো শীর্ণ, টীকা ও টিপ্পনী নাই; ফলত স্নানঘরে জলের শব্দছটায় সে অনুমান করিতে পারে মাই-এর কাঠামোতে কুঞ্চিত চামড়ার ব্যাভিচার, দুই কুড়ি পেরোয়নি এখনো, ইতোমধ্যে কাষ্ঠ – জলকণা গাত্রে আটকাইয়া যায়, যেন বা বনস্পতির কাণ্ডে পিপিলিকার সারিবব্ধ গমন; ফাটাফাটা রোঁয়া ওঠা সোয়েটার যেমন…

Read More

তন্ময় ভট্টাচার্য-র কবিতাগুচ্ছ

    সময়জ্ঞান চোখ বুজলেই মৃত একটা শরীর। হাত বাড়িয়ে বলছে টেনে তোলার কথা। মৃত, অথচ দেখে মনে হয় ঘুমন্ত—এমন ভুলচুক দিন আমাদেরও কেটেছে অনেক। তালু থেকে ছিটকে পড়েছে জলের ঝাপট। সাড়া না-পেলে সন্দেহ গাঢ় হয়। কান গিয়ে হাজির হয় বুকের ওপর। যে শরীর মৃত, সে কি টেনে তুললে বসে থাকতে পারে? ভাবতে পারে, হাসপাতালের পথেই জীবের ক্রমমুক্তি? সাতপাঁচ ভেবে চোখ বুজে ফেলি। কেউ এসে হাত ধরে টানুক, আমি জানি, বসতে পারব ঠিক। বন্ধুরা পৌঁছয় ঠিকই, দেরি করে খুব—     সীমাবদ্ধ শুরুর খানিক পরই বোঝা যায়, এ কোনো নতুন…

Read More

Poems of Barrina South

Cockatoos my eyes caress his limbs diaphanous droplets glisten like a crown on the canopy I press against the cool bark from the valley floor whee-la whee-la whee-la a mournful cry that has circled all day bringing more makarra some land heavy loosen the jewels that shower down onto the nape of my neck others crack pinecones a glimpse of a yellow blush cheek I eavesdrop on clicks and chatter envious of their gentle allopreening as they leave believing I can touch their sombre underbellies reach out I am home…

Read More