উত্তরাধিকার

জানুয়ারির শেষ বিকেল। সূর্য ডুববে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই। গত কয়েকদিনে বেশ গরম পড়েছে এই অঞ্চলে। হলদেটে ঘাসের রঙে যেন আরও বেশি আগুনের পরত। মেলুলি সাবি নদীর চড়ায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছিল। তার পাশে তার জ্যেষ্ঠ সৎভাই জেঞ্জো। দুই সৎভাইয়ের মধ্যে মেলুলি একবছরের বড়ো। জেঞ্জোকে বলা যায় তার রাইট-ইন কমান্ড। তাদের সংগঠনে এবং এলাকায় মেলুলির পরেই জেঞ্জোর অঘোষিত স্থান।  তবে, সেইসব দিন আর নেই। সাবি নদীর গায়ে যেটুকু অল্প জল রয়েছে, সেখানে অস্তগামী সূর্যের ছায়া পড়েছে। মেলুলি সেদিকে তাকিয়ে ছিল। একঝাঁক পোকা তার চোখে-নাকে উড়ে বেড়াচ্ছে, সে বারবার মাথা নাড়িয়ে তাদের সরানোর…

Read More

নিউটন – ১৩

মানসিক বিপর্যয় কাল ও টাকশালের ওয়ার্ডেন পদ-প্রাপ্তি     ১৬৯৬-এ পাকাপাকি ভাবে কেমব্রিজ ছাড়েন নিউটন। বসবাস শুরু করেন লন্ডনে। কিন্তু কেমব্রিজ ছেড়ে যাওয়ার আগে, ১৬৯০-এর দশকের প্রথম কয়েক বছর ছিল তাঁর জীবনের বৌদ্ধিক চর্চার চূড়ান্ত অধ্যায়। এমন নিমগ্নতা, এমন আলোর ঝলকানি, এমন আত্মবিস্মৃতি, আবার গভীর অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া আগে কখনো ঘটেনি। আর কখনো ঘটবেও না পরবর্তী জীবনকালে।  পার্লামেন্টে সদস্য পদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর, দ্বিতীয়বারের জন্য ১৬৯০-এ যখন নতুন করে উইলিয়াম ও মেরির পার্লামেন্ট গঠন করা হচ্ছে, তাতে সদস্য হতে চাইলেন না নিউটন। পার্লামেন্ট-কক্ষের অন্দরে তেরো মাসের যে অভিজ্ঞতা তা উল্লেখযোগ্য…

Read More

নেকলেস

 রাতে নার্সিং হোম থেকে ফিরে বাথরুমের বিরাট আয়নাটার সামনে নগ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলে আস্তে আস্তে তার ক্লান্তিটা কেটে যায়। তখন ও নিজের চেহারাটার ওপর খুব তীক্ষ্ণ একটা পর্যবেক্ষণ চালায়। সে আর পাঁচটা সুন্দরী মেয়েদের মত রূপবতী হয়ত নয় কিন্তু তার চেহারার মাপজোক এমনই অসামান্য যে পথফিরতি পুরুষদের চোরা নজর সে সবসময় আকর্ষণ করে।    তবু যত দিন যায় তত যেন আয়নাটাকে সে কখনও কখনও এড়িয়ে যেতে পারলে বাঁচে। প্রতিদিন যারা অত্যন্ত যত্ন নিয়ে নিজেদের চেহারার দিকে তাকায় ছোটখাট পরিবর্তন কিছুতেই তাদের নজর এড়ায় না। সে যেমন কিছুদিন ধরে লক্ষ্য করছে তার…

Read More

অপেক্ষা

অপেক্ষা হর্হে লুই বোর্হেস অনুবাদ  ; গৌতম  সেনগুপ্ত [ ১৯৪৯ এ  দি আলেফ বলে বোর্হেসের গল্প গ্রন্থের লা এস্পারা গল্পটি এন্দ্ড্র ু হার্লি ইংরিজিতে অনুবাদ করেন দ্য ওয়েট ্নামে  ।এটা তারই তরজমা । বোর্হেসের জন্ম ২৪ অগাস্ট ১৮৯৯ বুয়েন্স এয়ার্সে  ,মৃত্যু জুন ১৪ ১৯৮৬ ভিয়েনায় । ছোটবেলা থেকেই চোখের সমস্যা ,শেষ জীবনে প্রায় অন্ধ হয়ে যান ।গল্প ছাড়াও লিখেছেন অজস্র কবিতা ,প্রবন্ধ ।অনুবাদ করেছেন একাধিক ধ্রুপদী সাহিত্যের । আর্জেন্টিনার লোক হলেও বোর্হেসের লেখার সঙ্গে ল্যাটিন আমেরিকান ঘরানার কোনও মিল নেই । প্রায় সবসময়ই তাঁর লেখার বিষয় বই ,পুরনো বই ,বইয়ের…

Read More

প্রস্ফুটিত দুপুর

প্রবাসের অন্যতম অপেক্ষক স্বজনহীনতা। প্রবাসের দূরত্ব ও প্রকৃতিভেদে এই স্বজনের সংজ্ঞাও বদলে যায়, তার জড়তা ও প্রাত্যহিকতা একে অপরকে নেগেট করতে থাকে অহরহ। এ যেন তারকোভস্কির Stalker (১৯৭৯)-এর এক বিশ্বপ্রিয় স্টিল, পরিত্যক্ত দালানে মরুভূমির মত বালিয়াড়ি জমে রয়েছে, ইতস্তত দাঁড়িয়ে রয়েছে বিয়োগান্ত দাবার ছকের মত গোটাতিনেক গুটিমানুষ। দুজন খুব কাছাকাছি, চোখ থেকে দূরে, দরজার কাছে। একজন দৃষ্টিসীমার মধ্যেই। তিনজনের শামুকসদৃশ রসায়ন পুরো ছবির গতিকেই মরুভূমির মত মন্থর করে রাখছে। তাদের স্বজনহীনতার মন্তাজ-ই তাদের স্বজন হয়ে উঠবার ব্লু-প্রিন্ট রচনা করছে বারবার, আবহ জুড়ে। তাই তারকোভস্কির ছবির বৈশিষ্ট্য তার স্লথতায় নয়, বরং…

Read More

ফৌজি কওয়াল

(আজিজ মিঁয়া: ১৯৪২ – ২০০০)   দৃশ্য ১: করাচির জৈনাব মার্কেট, আটের দশক। জুম্মার নামাজ শেষে কাওয়ালির আসরে ভিড় করেছেন কয়েকশ মানুষ৷ ‘কওল’ দিতে আসছেন আজিজ মিঁয়া, কওয়ালির ‘বেতাজ বাদশা’। তাঁর কওয়ালি শুনতে ভেঙে পড়েছে শহরের মানুষ। কিন্তু একি! কওয়ালির আসরে পুলিশ কেন? বিস্ময়ে সবাই দেখে, বিরাট পুলিশ বাহিনী ঘিরে রেখেছে গোটা অঞ্চল, যেন কোনও যুদ্ধের প্রস্তুতি। তারাও বুঝি কওয়ালি শুনতে এসেছে! নাহ, সে রাতে পুলিশ এসেছিল পরিস্থিতি সামলাতে৷ আজিজ মিঁয়ার সুরের এমনই জাদু, লোকেরা পাগল হয়ে যায়, শুরু হয় মাতলামো, ভাঙচুর, চরম বিশৃঙ্খলা। সেই অপ্রীতিকর পরিস্থিতি আটকাতেই পুলিশের আগমন।…

Read More

ব্লীডিং হার্ট

    দুপুরের খাওয়া সেরে ইরার চোখে যখন ক্লান্ত দুপুরের আলস্য, সেই সময় পাঁচিলের ছায়া যতটুকু গড়ায়, বাগানের সীমানা সেইটুকুই । একচিলতে। একসময় আগাছায় ভরে ছিল, এখন সেখানে অনেক রং। ইরার হাতের নির্যাস থেকে এই রং ছড়িয়ে পড়েছে, এমনটা ভেবে ইরার বুকে একটা পাখি ডানা ঝাঁপটায় । যত গাছ লাগাতে চায়, ততো আর পারে কোথায়? অমূল্য বলে প্রতিটা গাছের বাড়ার জন্য একটা জায়গা ছাড়া চাই । শুধু তাই? সব গাছ সবার পাশে বাড়তেও চায় না দিদি। অমূল্যর নার্সারি আছে। সবুজপাতা নার্সারি, সেখান থেকেই চারা কেনে ইরা। সেটা কিরকম? শুধু আলো…

Read More

কিস্যা কাহানি কা

  ‘ভাদ্র মাস যায় মিছে মিছে কথা না শুনে’ – এ জনশ্রুতি, জনসংস্কৃতি জনজীবনের এক খাঁটি আয়নার মতো। মিছে কথা। শুনতেই হয় ভাদ্রমাসে। তার মানে কি আশ্বিন থেকে শ্রাবণ সব সত্য কথা? অসত্য শুধুই ভাদ্র মাসে! মনে পড়ে ‘এ মাহ ভাদর এ ভরা বাদর? হ্যাঁ, ভাদ্রের ভরা বর্ষায় কাদা প্যাচপ্যাচে পথঘাট, টইটম্বুর মাঠপাথার। বুড়ি অঞ্জুমান বানু বলছিলেন এ সময় নদী বড়ো  ফেঁপে ওঠে, পোয়াতির মতো ভরে যায়। সে সময় ছেলে-বুড়ো মেয়ে-মদ্দ সব ঘরবন্দী। কাজহীন নিস্তরঙ্গ জীবনে তখন রঙ্গরসিকতা, শোলোক-কাহানি, আলকাপ, কবিগান। মিছে কথা মানে গল্প কথা, কিস্যা, কাহানি… শোলোক বলা…

Read More

পায়ে পায়ে ফ্রেঞ্চ আল্পস

  ফ্রেঞ্চ আল্পস ১ : মর্জিনের পথে  শুরুটা মোটেও সুখকর ছিলনা। বার্মিংহাম থেকে আমস্টারডাম হয়ে জেনিভা পৌঁছনোর কথা দুপুর দুটোর মধ্যে। সেখান থেকে বাসে করে মর্জিন (Morzine)। ফ্রান্স আর সুইজারল্যান্ডের সীমান্তে অবস্থিত মর্জিন ফ্রেঞ্চ আল্পস ঘেরা একটা ছোট্ট শহর । আমরা যাচ্ছি কয়েকদিন আল্পসকে এই প্রথম কাছ থেকে ছুঁয়ে দেখার এবং চেনার আশায়। আল্পস হিমালয় নয়। অত সুউচ্চ পর্বত শিখরের দাবিও করে না। কিন্তু নিজের স্বমহিমায় পৃথিবীতে বিরাজ করছে।  হিমালয় সৃষ্টির ২৫০ মিলিয়ন বছর আগে সৃষ্ট এই ভঙ্গিল পর্বতমালা দক্ষিণ ইউরোপের ফ্রান্স থেকে আলবেনিয়া অবধি ১২০০ কিলোমিটার জুড়ে বিরাজ করছে…

Read More

ফ্ল্যাশ ফিকস

    প্রচারক   উদাত্ত গলার আওয়াজে তারা মন্দির-প্রাঙ্গণের বাইরে এল। রুক্ষ পাথুরে রাস্তাটার উপর সাদা কাপড়ে মাথা ঘাড়। চোখে শেডস। অনাঘ্রাত সেই যুবতীর দল বিস্ময়ে ভেবেছিল তাকে কোনো সন্ত বা প্রচারক, নিদেন তীর্থক। তার পিছন দিক থেকে যখন বেরিয়ে যখন ঘিরে ধরল ছায়ামূর্তিরা তখনও তারা শঙ্কিত হয়নি। প্রচারক ঠান্ডা গলায় তাদের বলল, সঁপো – তারা বোঝেনি – জংলি পোশাকের হাতগুলো তাদের বুক, পাছা থেকে ছিঁড়ে নিতে লাগল আবরণ, দেওয়ালের গা থেকেও যেমন প্রত্যেকটা ইঁট। একখান চেয়ার মাঝখানে রেখে কনচার্তো-র সফল কন্ডাক্টরের মতো ব্যস্ত ছিল সে, উত্তেজিত ও মগ্ন। সার্চ…

Read More

সহোদরা

    আমাদিগের চক্ষুলজ্জা নাই। দয়িত আলোয় যে অশ্রুকণার দপদপা তাহা গড়াইয়া পড়িলে উৎপন্ন হয় শব্দগুচ্ছ। উহার না আছে আঁধার, না আছে অতল। অক্ষর ছিন্নবস্ত্রা হেতু আপোষে বহন করিতেছে শুধুমাত্র অর্থ; তাও গুটিকতক। ফলত স্নানরতা রাজিয়াকে ‘সুলতানা’ উপাধিতে ভূষিত করিয়া রাবেয়া ভাবিতেছিল ইয়ার্কি। ঠেঁস। যাহার গঠন নভিস নিবন্ধের মতো শীর্ণ, টীকা ও টিপ্পনী নাই; ফলত স্নানঘরে জলের শব্দছটায় সে অনুমান করিতে পারে মাই-এর কাঠামোতে কুঞ্চিত চামড়ার ব্যাভিচার, দুই কুড়ি পেরোয়নি এখনো, ইতোমধ্যে কাষ্ঠ – জলকণা গাত্রে আটকাইয়া যায়, যেন বা বনস্পতির কাণ্ডে পিপিলিকার সারিবব্ধ গমন; ফাটাফাটা রোঁয়া ওঠা সোয়েটার যেমন…

Read More

নিউটন – ১২

  প্রথমবার পার্লামেন্টের সদস্য হলেন নিউটন প্রিঙ্কিপিয়া প্রকাশ পাওয়ার খবর হ্যালির চিঠি পড়ে জানতে পারেন নিউটন। ৫ জুলাই, ১৬৮৭-তে লেখা সেই চিঠি। হ্যালি জানান, নিউটনের তরফ থেকে প্রিঙ্কিপিয়ার কপি, রয়্যাল সোসাইটিকে এবং লন্ডনের বিশিষ্ট বিজ্ঞানী মিস্টার বয়েল, মিস্টার প্যাগেট ও মিস্টার ফ্ল্যামস্টিডকে প্রদান করবেন তিনি।     হ্যালি তাঁর চিঠির সাথে কুড়ি কপি প্রিঙ্কিপিয়া পাঠান, যাতে কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটিতে পরিচিত জনদের উপহার দিতে পারেন নিউটন। হ্যালির প্রতি তাঁর কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। সে-কথা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ব্যক্তও করেছেন প্রিঙ্কিপিয়ার মুখবন্ধে। নিউটন লিখেছেন, ‘মিস্টার এডমন্ড হ্যালি শুধুমাত্র যে ছাপার ত্রুটি সংশোধনে আমায় সাহায্য করেছেন অথবা প্রকাশনার…

Read More

নিউটন – ১১

প্রকাশ পেল ‘ফিলসফিয়াই ন্যাচারালিস প্রিঙ্কিপিয়া ম্যাথেমেটিকা’   মায়ের মৃত্যুর পর উলস্‌থর্প থেকে কেমব্রিজে ফিরেই নিউটন হাতে পেলেন রবার্ট হুকের একটি চিঠি। ১৬৭৯-র একেবারে শেষদিক। বিগত কয়েক বছর ডুবে ছিলেন থিয়লজি ও অ্যালকেমির গবেষণায়। হুকের চিঠি, বাধ্য করল থিয়লজি ও অ্যালকেমি চর্চায় সাময়িক বিরতি টানতে। গ্রহ-উপগ্রহদের কক্ষীয় গতির অন্তর্নিহিত কারণানুসন্ধান ও সেই সংক্রান্ত গণিত নির্মাণে ব্যস্ত হয়ে গেলেন নিউটন।  প্রায় একই সময়ে ঘটল এক বিরল মহাজাগতিক ঘটনা। ১৬৮০-৮১-র সন্ধ্যার আকাশে সুদীর্ঘ পুচ্ছ-বিশিষ্ট এক ধূমকেতুর আবির্ভাব, নতুন করে আকৃষ্ট করল নিউটনকে জ্যোতির্বিদ্যা চর্চায়।   এর কয়েক বছর পর (১৬৮৪), তরুণ জ্যোতির্বিজ্ঞানী, এডমন্ড হ্যালি,…

Read More

ডলি জুম

  আপাতত তার মুখটাই শুধু দেখা যাবে ক্যামেরার সামনে । ঠোঁটের কোণে একটু হতাশা লেগে থাকবে। দু চোখে থাকবে স্থির দৃষ্টি। সেই দৃষ্টি  নিষ্পলক , ভিতর পড়ে নেবে  যেন। কোথায় যেন গ্রন্থি গুলো শিথিল হয়ে যাবে , সেই চোখের দিকে তাকিয়ে।  তার এই মুখ আপাতত থাকবে আমাদের ক্যামেরার সামনে। আমরা সবাই এসে গেছি, হিরোইন মেক আপ করে এসে গেলই , মালবিকাদি শট টা আরেকবার তাকে ভালো করে বুঝিয়ে দেবে। সব সেট হয়ে গেলে, তারপরে আমাদের কাজ শুরু হবে।  সিনেমাটোগ্রাফার হিসেবে আমার এটা দ্বিতীয় কাজ। এখনও ইন্ডাস্ট্রির অনেককে ভালো করে চিনিনা।…

Read More

বুধা

বুধা আমাদের জঙ্গলে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখায়। স্বপ্ন দেখায় সূর্যোদয় দেখানোর। বুধা আমাদের খাম্বা থৈবির কাহিনি শোনায় তার আরোপিত ইংরেজি উচ্চারণে। দুপুরের দিকে আমি লেকটার সামনে চুপ করে বসে থাকি চিল ওড়া রোদের গায়ে গা লাগিয়ে। ঘরে অমলেন্দু ঘুমোয়, তাকে বিরক্ত করতে মন চায় না, অথচ একটা রামধনু এমন উঠেছে যে না ডাকলেই নয়। নৈঃশব্দ্য নিয়ে নয় ছয় খেলি, দরজার কাছে দাঁড়িয়ে একবার রামধনু একবার অমলেন্দু দেখি, ডাকার আগেই যদি রামধনু মিলিয়ে যায়? ডাকার আগেই অমলেন্দু ডাকে, “কিছু বলবি?” আঙুল তুলি আকাশে, রামধনুকে যে রামধনু বলা হয় সেটা ভাবতে সময়…

Read More

নিউটন – ১০

প্রিঙ্কিপিয়ার প্রেক্ষাপট          ১৬৮৪-র আগস্ট মাস। ঘোড়াটানা একখানি গাড়িতে লন্ডন থেকে কেমব্রিজের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন বছর আটাশের এক যুবক। জ্যোতির্বিজ্ঞানী হিসাবে ইতিমধ্যে কিছু নাম-ডাক হয়েছে এই যুবকের। লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটির একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য তিনি। জ্যোতির্বিজ্ঞানী যুবকটির নাম এডমন্ড হ্যালি। ভিতরে-ভিতরে বড় অস্থির হয়ে আছেন। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটিতে তাঁর কিছু জরুরী কাজ আছে। কিন্তু সে-সব নয়, এমন এক প্রশ্ন মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে যা শান্তি দিচ্ছে না। এ-প্রশ্নের সমাধান তাঁর কাছে নেই। এমন-কি রয়্যাল সোসাইটির সভায় উপস্থিত প্রায় সকল বিজ্ঞানীই নিজেদের অপারগতার কথা জানিয়েছেন। হ্যালি জানেন, এর উত্তর মিলতে পারে…

Read More

নিউটন – ৯

  নিউটনের ধর্মতত্ত্ব গবেষণা       ট্রিনিটির নিয়ম অনুসারে, মেজর ফেলো হওয়ার ঠিক সাত বছরের মধ্যে সকল সিনিয়র ফেলোকেই অভিষিক্ত হতে হয় ধর্মযাজকের পদে। ১৬৬৮-র জুলাই মাসে মেজর ফেলো হন নিউটন। কাজেই ১৬৭৫-এ ইংল্যান্ডের কোনও একটি চার্চে ধর্মযাজক অর্থাৎ অ্যাংগলিকান পাদ্রি হতে হবে তাঁকে।  বালক বয়সে, উলস্‌থর্পের বাড়িতে এবং গ্রান্থামের কিংস স্কুলে যাজকদের সংস্পর্শে ঘোরতর ধর্মীয় অনুশাসন ও আচার অনুষ্ঠানের মধ্যে কাটাতে হয়েছে নিউটনকে। হয়ে ওঠেন অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ এক বালক। কেমব্রিজে ছাত্রাবস্থায়, ‘পাপ কাজ’-এর একটি তালিকা প্রস্তুত করেছিলেন। স্পষ্টত, ঈশ্বরের প্রিয়জন হয়ে ওঠার সুতীব্র বাসনা ছিল যুবকটির মধ্যে। আন্ডার-গ্র্যাজুয়েট স্তরে,…

Read More

পুত্র

মুন্সেফ ভূঁইয়া কবে বড়পুত্র মঞ্জুর মুখের দিকে তাকিয়েছে, কবে বাজান বলে ডেকেছে মনে করতে পারে না। একই বাড়িতে থাকে, একই পুকুরে গোসল করে, একই পাতিলের ভাত খায়, অথচ দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে পিতা–পুত্রের দেখা হয় না, কথা হয় না।  জন্মের পর ভূঁইয়া কখনো ছেলেকে নাম ধরে ডাকেনি, আদর করে সবসময় ‘বাজান’কিংবা ‘বাবা মঞ্জু’ বলে ডেকেছে। মঞ্জু ছিল তার চোখের মণি। সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখত। এক মুহূর্তের জন্য চোখের আড়াল হলে অস্থির হয়ে উঠত। সাত বছর বয়সে মঞ্জু একবার নানার সঙ্গে নানাবাড়ি গিয়েছিল। টানা দশ দিন ছিল। দশ দিনকে মুন্সেফ ভূঁইয়ার…

Read More

ধুমুহা

প্রচুর আম হয়েছে এবার। এই এপ্রিলের শুরুতেই পথেঘাটে দেখা যাচ্ছে আমগাছগুলো ফলভারে নুয়ে পড়ছে। পাতার ফাঁকে ফাঁকে  গাছে গাছে আম ঝুলে আছে । যেন পান্নার কুচি। স্পষ্ট সবুজ সুন্দর। কেমন লম্বা বোঁটায় ঝুলে থাকা নিটোল আমের ওই আকৃতি। ছবি যেন।  ছবি নয় শুধু।  বিজ্ঞাপনের ছবি। এই দ্যাখো, এই দ্যাখো বলে চোখ টানছে। নিজেকে  দ্যাখাচ্ছে। আমাকে  দ্যাখো গো, আমার নাম আম। গ্রীষ্ম কালে ফলি, রসে টুসটুস করি।  সেই সেবার কাজিরাঙা গেসল আন্টি আর স্যার । সুলতাকে নিয়ে গেসল। ওদের সঙ্গে হাতিও চড়ল সুলতা। নইলে বুবুকে ধরবে কে? বুবুকে রেখে যাবেই বা…

Read More

খবরাখবর

১. বাঁশের বেড়ার মাঝবরাবর বাঁশেরই ফাঁক ফাঁক দরজা। দড়ি পেঁচিয়ে আগল দেওয়া৷ হাতের বাণ্ডিলখানা নামিয়ে রেখে শান্তি দড়ি আলগা করে। বাইরে বেরোয়। তারপর বান্ডিল তুলে নেয়। ঠোঙার বান্ডিল। জ্যালজেলে শাড়ির কিনারখান মাথায় টানে। বাবলা আর বাঁশঝাড় ঘেঁষাঘেঁষি পথ। ছোট ছোট ঘর। হুই যে মুচিবউ গা ধুচ্ছে ডোবায়, তার সিঁদুর ধোয়া কপাল আর আকাশের রঙ এখন প্রায় এক। মুচিবউ আঁচল পেতে দিয়েছে জলে, চুনো মাছ ধরার আশে। শান্তি শুধোয়, ‘পাইলু?’  মুচিবউ ফিরে চায়। মাথা নাড়ে। মাছ ওঠেনি।  ‘দুকান যাউচ?’ ‘হ। ঠুঙা লাগিব হাবুল’র। মোর লাগিব নুতন বিলেড।’ ‘আজি হব নাকি? তাগো…

Read More