প্রাচীন দুনিয়ার দিকে একটি ভূমিকা ফিরি ইউরোপে। ২০০২ সাল থেকে যে সম্পর্ক তৈরি হয়েছে এই মহাদেশের সঙ্গে ২০০৭ সালে গিয়ে সে পৌঁছলো এক প্রত্যক্ষতায়। এই বিষয়ে নানা লেখা ছড়িয়ে আছে, কৌরবের পাতায়, অন্যান্য জায়গায়। এই গদ্যমালায় আমি লিখতে চাই কীভাবে ইউরোপে রচিত এস্পানিওল ভাষার কবিতা এবং সরাসরি এস্পানিয়া নামক দেশের পাঠ সংস্কৃতি আমার সামনে এক অন্য দুনিয়া খুলে দিয়েছে। আর সেই প্রসঙ্গে ফিরতেই হয় ২০০৭ সালে। খুয়ান রামোন খিমেনেস এর একটি প্রকাশিত কবিতার বই প্রকাশ পাচ্ছে। সে বই বিস্ফোরক কারণ সে এক তীব্র মাংসল প্রেমের কবিতা, কবির উত্তুঙ্গ যৌবনের চিহ্ন।…
Read Moreশুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়

আমেরিকা এক হিমায়িত চিৎকার
২০০৪ সালের কলকাতা বইমেলার সময় আমার বয়স ২৫, ছটফটে, রক্তে স্বভাবকবিত্ব, যেকোনও কথায় মিলিয়ে দিতে পারি অন্ত্যমিল, যেমনটা হয় বা হত নয়ের দশক ও তার অব্যবহিত পরের কফিহাউসতুতো কবিদের, একশ বছর আগেকার রিলকে কে নকল করে কবিতার আদর্শ স্থির করা, দূর মফস্বলের গ্রন্থাগারিক কবি, শহরের করণিক কবি, অধ্যাপক কবি কেউই আসলে কবিতার ২১ শতকের বিশ্বের সন্ধান দিতে পারছিল না, যদিও তাঁরা সকলেই সেই শতকের বাসিন্দা (নাকি নন, তাঁরা আরও বেশি করে ব্রত পুজো পার্বণ হাতে তাগা তাবিজ মা দিয়েছে আংটি)। বহু পরে বুঝেছি পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি আসলে শুধুই প্রাচীনে আস্থা রাখে,…
Read Moreজ্বলন্ত অন্তরঙ্গতার পৃথিবী ও কোরাল ব্রাচো
ভাবনার ইঙ্গিত পথেই চালিত হয়। গত কয়েক বছর ধরে স্পষ্ট হচ্ছে আমাদের মাথায় গেঁথে থাকা ঔপনিবেশিক মানচিত্রের স্পষ্টতা। এই যে আমাদের ভাললাগা মানেই ইউরোপ বা তদৃশ ভূদৃশ্যে সৌন্দর্য অনুধাবনা থেকে শুরু করে বাংলা ভাষার ক্রমশ লোগোসেনট্রিক হয়ে ওঠা এবং আমাদের তা মেনে নেওয়া। সুধীর স্পষ্ট হয়ে ওঠে এই দুনিয়ার আসল মেরুকরণ — ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র এবং অধীনস্ত উপনিবেশ। এই অধীনস্ত উপনিবেশ যত দূরেই চলে যাক তার প্রাক্তন প্রভুর থেকে গায়ে লেগে থাকে উপনিবেশের অনপনেয় দাগ। তার চলন সারাজীবনের অধমর্ণের। আর এইখানেই তার প্রকৃত সংগ্রাম। তার ভাষাকে প্রভুর প্রতীক ব্যবস্থা ( লোগোস)…
Read Moreনববারোক নির্মাণ অন্তঃভাষাভূগোল ও আমেরিকা
আমেরিকা এক হিমায়িত চিৎকার বলে চিহ্নিত করার পর একটা কাজ আরও বেড়ে যায় এক অদ্ভুত দায় ও সচেতনতা। যে আমি অন্ধের মত স্পর্শে চিনেছি আমেরিকা পণ্ডিতের মত নয় তার কাছে এই অনুভূতি আর কজন বন্ধুর সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া খুবই প্রয়োজন। মার্কিন দেশে এত বাঙালি থাকা সত্ত্বেও এই বিষয়টা আমাদের মত গোদা লোকেদের সামনে কেউ তুলে ধরেছেন বলে মনে পড়ে না। কবিতার ক্ষেত্রে কেউ হয়তো ধরিয়ে দিয়েছেন নতুন ধরনের কবিতার আঙ্গিক এর কথা। কিন্তু কেউ ধরিয়ে দেননি ইউরোপীয় ভাষায় লেখা হওয়া সত্ত্বেও আমেরিকা মহাদেশের কবিতা একেবারে তাদের ঔপনিবেশিক দাগ ঘষে-মেজে…
Read Moreকবিতাকে তার হারানো চিহ্ন ফেরত দেওয়া
এই আলাপচারিতার একটা ছোট ভূমিকা থাকা প্রয়োজন। দাবিদ উয়ের্তা (David Huerta) এস্পানিওল বা স্প্যানিশ ভাষার একজন প্রধান কবি। ওঁর জন্ম সিউদাদ দে মেহিকোতে ১৯৪৯ সালে। আমাদের হিসেবে ১৯৭০ এর দশকের কবি। শুরু থেকেই নববারোক কবিতা প্রবণতার সঙ্গে যুক্ত। নানা সম্মানের মধ্যে মেহিকোর জাতীয় সাহিত্য পুরস্কার ও রোমানিক ভাষা সমূহের সম্মিলিত সর্বোচ্চ সম্মান প্রেমিও ফিল পেয়েছেন। আমার সঙ্গে তাঁর আলাপ ২০১৬ সালে। আমি তাঁর সঙ্গে গায়ে পড়েই ইমেইল এ আলাপ করি তাঁর কবিতায় মুগ্ধ হয়ে। সেই থেকে উনি আমার কবিতা চর্চার এক প্রধান দিক প্রদর্শক হয়ে উঠেছেন। আমাদের দীর্ঘ সব কথোপকথন…
Read Moreআমেরিকা: এক হিমায়িত চিৎকার -৩
মেহিকোর কবিতা: দাবিদ উয়ের্তা (David Huerta) দাবিদ উয়ের্তার বিষয়ে কথা শুরুর আগে নিজেকে কিছু কৈফেয়ত দেওয়া দরকার। এই লেখা পাঠকদেরও। এই কথাগুলো আমার বলে রাখা দরকার খানিকটা ভূমিকার ছলে, খানিকটা নিজের কবিতা চর্চার পরিধির কৈফেয়ত হিসেবে। খানিকটা নিজের অস্থিরতা কীভাবে নিয়ে ফেলেছিল আরও আরও কবিতার দিকে তা নিজেকেই স্মরণ করানোর জন্য, নির্লেখ দিনে। ২০১০ সালে আসা এক আত্মীক উপলব্ধি আমাকে সবরকমের আখ্যান পড়া ও চর্চা করা থেকে বিরত রেখেছে। ২০১২ থেকে সম্পূর্ণ। আমাদের চারপাশের দুনিয়ার লোকেদের অন্যভাষার সাহিত্য বলতে শুধু তত্ত্ব বা উপন্যাসের নাম ছোঁড়া আমাকে উশকে দেয়। কবিতা তো সহজলোভ্য…
Read Moreআমেরিকা: এক হিমায়িত চিৎকার-২
নববারোক দল সেই স্বেচ্ছাচারী যে মায়ের থেকে পালায়। বিদায় নেওয়া মানে এক শিশিরবিন্দু চাষ করা যাতে সে লালার ধর্মনিরপেক্ষতায় মিশে যায়। স্বেচ্ছাচারের গভীরতা কখনই তার ফল হরণের পথে যায় না। স্বেচ্ছাচারী তার মাকে দেখা বন্ধ করে। সেই দীর্ঘায়িত হয়ে চলা ঘটমান দিনের অনুপস্থিতি এবং রাত্রিবেলা সেই অনুপস্থিতি ক্রমশ ছুরির মত গভীর হয়ে ওঠে। আর সেই অনুপস্থিতিতে খুলে যায় এক মিনার, সেই মিনারের মধ্যে নাচে এক ফাঁপা আগুন। আর এভাবেই সে নিজেকে পুষ্ট করে, আর মায়ের অনুপস্থিতি এক শান্তিতে থাকা সমুদ্র। কিন্তু সে পলায়নপর দেখেনা সেই প্রশ্নকর্তা ছুরিটিকে, সে ছুরি…
Read Moreআমেরিকা, একটি হিমায়িত চিৎকার – ১
হোসে লেসামা লিমা প্রথমে একটা কথা পরিষ্কার হওয়া দরকার, আমাদের দেশে বা অন্যান্য প্রাক্তন ইংরেজ উপনিবেশে সাতটা মহাদেশের মডেল পড়ানো হয়, আমাদের কাছে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা দুটি আলাদা মহাদেশ। কিন্তু বাকি প্রাক্তন উপনিবেশে আমেরিকা একটিই মহাদেশ। আমি যেহেতু অইংরেজি আমেরিকার কথাই বলব আপাতত, তাই আমেরিকাকে একটি মহাদেশ হিসেবেই ধরব এমন এক অঞ্চলে ঢুকে পড়া গেল, যার থেকে বেরনোর রাস্তা আজ অব্দি ইতিহাস জানে না। এসে পড়বে ঔপনিবেশিক প্রশ্ন ও উত্তরহীনতা। এসে পড়বে থিওডর আডরনোর সেই বিখ্যাত আউশউইতশ এর পরে কবিতা লেখা যায় না মার্কা দার্শনিক হাই তোলা, যেন কোনওদিন…
Read Moreস্বাধীনতার চরাচর : ওক্তাবিও পাস
কবির ভূমিকা, কবির সামাজিকতা ও কবিতার সমান্তরাল চলন, এইসব প্রশ্ন হয়ত আমাদের সকলকেই, মানে যারা কবিতায় সম্পৃক্ত তাদের বিব্রত করেছে বা রেখেছে। আমরা যদি আমাদের প্রথম কবিতা জগতে আসার সময়টা মনে করি দেখব শুধু কয়েকটা নামকেই আমরা কবি হিসেবে চিহ্নিত করতাম আর সেই সব নামেদের একটা সামাজিক ভূমিকা ও বক্তব্য ছিল। কিন্তু কবিতা জগৎ যে বস্তুত বহুত্বময়, বস্তুত এক সমান্তরাল দুনিয়া, খানিকটা আন্ডারওয়ার্ল্ডই বলা যায়, তা আমাদের দৃষ্টিপথের বাইরে থাকে। এবং সেইসব কবিদের সামাজিক ভূমিকা একেবারেই গুরুত্ব রাখে না বৃহত্তর মানসে কারণ সেই কবির নাম খবরের কাগজে নেই। এইবার আরও…
Read Moreপ্রকৃত বহুরৈখিক ভাষা চরাচরঃ শূন্য দশক
২১ শতকের প্রথম দশক বা ২১ঃ ০ বা শূন্য দশক নিয়ে এই উপমহাদেশের প্রেক্ষাপটে বিশেষত বাংলা ভাষার নিরিখে ভাবতে বসলে প্রথম যে কথাটা মনে আসে সেটা হল তার পূর্বশর্তহীনতা। এই সেই দশক যে তার দু একটি মিসিং লিঙ্ক ছাড়া তার ভাষাকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র করে নিয়েছে। এই সেই দশক যেখানে বাংলাভাষা তার বিভাজিত ভূখণ্ডে সামগ্রিকভাবে দুটি ভাষার প্রবর্তন ঘটিয়েছে। এই পরিবর্তনের সামাজিক ও ঐতিহাসিক উপাদান হয়ত সমাজতাত্ত্বিকের কাজ। কিন্তু কবিতার পরিবর্তনগুলোকে দেখা আমাদের কাজের এক্তিয়ার। প্রেক্ষিত নব্বই দশকের বাংলা কবিতার যে প্রধান বৈশিষ্ট্য অর্থাৎ ছান্দিক কাঠামোর মধ্যে থেকে বিষয় ভিত্তিক কবিতা…
Read Moreএক চাঁদের চাকার দাগ
১ শুরু বলা যেতে পারত ১৯৯৮ সাল, যখন জমিল সৈয়দের হাত ধরে আমি প্রথমবার মণীন্দ্র গুপ্তের লেখা পড়ি। কিন্তু সে ভাব বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। ২০ বছরের আমি অচিরেই মজে যাই তাঁর চেয়ে বেশি চমক জাগানো অন্য কবিদের লেখায়। এই ঘটনার ১০ বছর পর ২০০৮ সালে নানা কবিতার মধ্যে দিয়ে যেতে গিয়ে বাংলা কবিতার স্বভাব প্রবণতা তার সুন্দর ও স্মৃতিধার্য লাইনে খানিকটা বিরক্ত হয়ে ফের ঢুকে যাই মণীন্দ্র গুপ্তে। ততদিনে উনি মণিদা হয়ে গেছেন আমার কাছে। আমি শিখতে শুরু করেছি কীভাবে স্তবক থেকে স্তবকে নিয়ে যেতে হয় কবিতার স্তরবিন্যাস। কীকরে…
Read More