ব্লীডিং হার্ট

    দুপুরের খাওয়া সেরে ইরার চোখে যখন ক্লান্ত দুপুরের আলস্য, সেই সময় পাঁচিলের ছায়া যতটুকু গড়ায়, বাগানের সীমানা সেইটুকুই । একচিলতে। একসময় আগাছায় ভরে ছিল, এখন সেখানে অনেক রং। ইরার হাতের নির্যাস থেকে এই রং ছড়িয়ে পড়েছে, এমনটা ভেবে ইরার বুকে একটা পাখি ডানা ঝাঁপটায় । যত গাছ লাগাতে চায়, ততো আর পারে কোথায়? অমূল্য বলে প্রতিটা গাছের বাড়ার জন্য একটা জায়গা ছাড়া চাই । শুধু তাই? সব গাছ সবার পাশে বাড়তেও চায় না দিদি। অমূল্যর নার্সারি আছে। সবুজপাতা নার্সারি, সেখান থেকেই চারা কেনে ইরা। সেটা কিরকম? শুধু আলো…

Read More

ফ্ল্যাশ ফিকস

    প্রচারক   উদাত্ত গলার আওয়াজে তারা মন্দির-প্রাঙ্গণের বাইরে এল। রুক্ষ পাথুরে রাস্তাটার উপর সাদা কাপড়ে মাথা ঘাড়। চোখে শেডস। অনাঘ্রাত সেই যুবতীর দল বিস্ময়ে ভেবেছিল তাকে কোনো সন্ত বা প্রচারক, নিদেন তীর্থক। তার পিছন দিক থেকে যখন বেরিয়ে যখন ঘিরে ধরল ছায়ামূর্তিরা তখনও তারা শঙ্কিত হয়নি। প্রচারক ঠান্ডা গলায় তাদের বলল, সঁপো – তারা বোঝেনি – জংলি পোশাকের হাতগুলো তাদের বুক, পাছা থেকে ছিঁড়ে নিতে লাগল আবরণ, দেওয়ালের গা থেকেও যেমন প্রত্যেকটা ইঁট। একখান চেয়ার মাঝখানে রেখে কনচার্তো-র সফল কন্ডাক্টরের মতো ব্যস্ত ছিল সে, উত্তেজিত ও মগ্ন। সার্চ…

Read More

সহোদরা

    আমাদিগের চক্ষুলজ্জা নাই। দয়িত আলোয় যে অশ্রুকণার দপদপা তাহা গড়াইয়া পড়িলে উৎপন্ন হয় শব্দগুচ্ছ। উহার না আছে আঁধার, না আছে অতল। অক্ষর ছিন্নবস্ত্রা হেতু আপোষে বহন করিতেছে শুধুমাত্র অর্থ; তাও গুটিকতক। ফলত স্নানরতা রাজিয়াকে ‘সুলতানা’ উপাধিতে ভূষিত করিয়া রাবেয়া ভাবিতেছিল ইয়ার্কি। ঠেঁস। যাহার গঠন নভিস নিবন্ধের মতো শীর্ণ, টীকা ও টিপ্পনী নাই; ফলত স্নানঘরে জলের শব্দছটায় সে অনুমান করিতে পারে মাই-এর কাঠামোতে কুঞ্চিত চামড়ার ব্যাভিচার, দুই কুড়ি পেরোয়নি এখনো, ইতোমধ্যে কাষ্ঠ – জলকণা গাত্রে আটকাইয়া যায়, যেন বা বনস্পতির কাণ্ডে পিপিলিকার সারিবব্ধ গমন; ফাটাফাটা রোঁয়া ওঠা সোয়েটার যেমন…

Read More

ডলি জুম

  আপাতত তার মুখটাই শুধু দেখা যাবে ক্যামেরার সামনে । ঠোঁটের কোণে একটু হতাশা লেগে থাকবে। দু চোখে থাকবে স্থির দৃষ্টি। সেই দৃষ্টি  নিষ্পলক , ভিতর পড়ে নেবে  যেন। কোথায় যেন গ্রন্থি গুলো শিথিল হয়ে যাবে , সেই চোখের দিকে তাকিয়ে।  তার এই মুখ আপাতত থাকবে আমাদের ক্যামেরার সামনে। আমরা সবাই এসে গেছি, হিরোইন মেক আপ করে এসে গেলই , মালবিকাদি শট টা আরেকবার তাকে ভালো করে বুঝিয়ে দেবে। সব সেট হয়ে গেলে, তারপরে আমাদের কাজ শুরু হবে।  সিনেমাটোগ্রাফার হিসেবে আমার এটা দ্বিতীয় কাজ। এখনও ইন্ডাস্ট্রির অনেককে ভালো করে চিনিনা।…

Read More

বুধা

বুধা আমাদের জঙ্গলে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখায়। স্বপ্ন দেখায় সূর্যোদয় দেখানোর। বুধা আমাদের খাম্বা থৈবির কাহিনি শোনায় তার আরোপিত ইংরেজি উচ্চারণে। দুপুরের দিকে আমি লেকটার সামনে চুপ করে বসে থাকি চিল ওড়া রোদের গায়ে গা লাগিয়ে। ঘরে অমলেন্দু ঘুমোয়, তাকে বিরক্ত করতে মন চায় না, অথচ একটা রামধনু এমন উঠেছে যে না ডাকলেই নয়। নৈঃশব্দ্য নিয়ে নয় ছয় খেলি, দরজার কাছে দাঁড়িয়ে একবার রামধনু একবার অমলেন্দু দেখি, ডাকার আগেই যদি রামধনু মিলিয়ে যায়? ডাকার আগেই অমলেন্দু ডাকে, “কিছু বলবি?” আঙুল তুলি আকাশে, রামধনুকে যে রামধনু বলা হয় সেটা ভাবতে সময়…

Read More

পুত্র

মুন্সেফ ভূঁইয়া কবে বড়পুত্র মঞ্জুর মুখের দিকে তাকিয়েছে, কবে বাজান বলে ডেকেছে মনে করতে পারে না। একই বাড়িতে থাকে, একই পুকুরে গোসল করে, একই পাতিলের ভাত খায়, অথচ দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে পিতা–পুত্রের দেখা হয় না, কথা হয় না।  জন্মের পর ভূঁইয়া কখনো ছেলেকে নাম ধরে ডাকেনি, আদর করে সবসময় ‘বাজান’কিংবা ‘বাবা মঞ্জু’ বলে ডেকেছে। মঞ্জু ছিল তার চোখের মণি। সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখত। এক মুহূর্তের জন্য চোখের আড়াল হলে অস্থির হয়ে উঠত। সাত বছর বয়সে মঞ্জু একবার নানার সঙ্গে নানাবাড়ি গিয়েছিল। টানা দশ দিন ছিল। দশ দিনকে মুন্সেফ ভূঁইয়ার…

Read More

ধুমুহা

প্রচুর আম হয়েছে এবার। এই এপ্রিলের শুরুতেই পথেঘাটে দেখা যাচ্ছে আমগাছগুলো ফলভারে নুয়ে পড়ছে। পাতার ফাঁকে ফাঁকে  গাছে গাছে আম ঝুলে আছে । যেন পান্নার কুচি। স্পষ্ট সবুজ সুন্দর। কেমন লম্বা বোঁটায় ঝুলে থাকা নিটোল আমের ওই আকৃতি। ছবি যেন।  ছবি নয় শুধু।  বিজ্ঞাপনের ছবি। এই দ্যাখো, এই দ্যাখো বলে চোখ টানছে। নিজেকে  দ্যাখাচ্ছে। আমাকে  দ্যাখো গো, আমার নাম আম। গ্রীষ্ম কালে ফলি, রসে টুসটুস করি।  সেই সেবার কাজিরাঙা গেসল আন্টি আর স্যার । সুলতাকে নিয়ে গেসল। ওদের সঙ্গে হাতিও চড়ল সুলতা। নইলে বুবুকে ধরবে কে? বুবুকে রেখে যাবেই বা…

Read More

খবরাখবর

১. বাঁশের বেড়ার মাঝবরাবর বাঁশেরই ফাঁক ফাঁক দরজা। দড়ি পেঁচিয়ে আগল দেওয়া৷ হাতের বাণ্ডিলখানা নামিয়ে রেখে শান্তি দড়ি আলগা করে। বাইরে বেরোয়। তারপর বান্ডিল তুলে নেয়। ঠোঙার বান্ডিল। জ্যালজেলে শাড়ির কিনারখান মাথায় টানে। বাবলা আর বাঁশঝাড় ঘেঁষাঘেঁষি পথ। ছোট ছোট ঘর। হুই যে মুচিবউ গা ধুচ্ছে ডোবায়, তার সিঁদুর ধোয়া কপাল আর আকাশের রঙ এখন প্রায় এক। মুচিবউ আঁচল পেতে দিয়েছে জলে, চুনো মাছ ধরার আশে। শান্তি শুধোয়, ‘পাইলু?’  মুচিবউ ফিরে চায়। মাথা নাড়ে। মাছ ওঠেনি।  ‘দুকান যাউচ?’ ‘হ। ঠুঙা লাগিব হাবুল’র। মোর লাগিব নুতন বিলেড।’ ‘আজি হব নাকি? তাগো…

Read More

যে জীবন দায়ের

হঠাৎ করে নয়,পাড়ার চেহারাটা  খোল নলচে সহ ভেতর থেকেই  ধীরে ধীরে পাল্টে গেছে গত কয়েক বছরে। এমন পাল্টেছে যে এদের জীবন সংশ্লিষ্ট মূল যে জীবিকা,তার পরিচয় ধীরে ধীরে লীন হতে হতে পাড়ার বিশেষত্বটা একটা মজা ডোবায় পরিণত হয়েছে। যে ডোবায় যে কোন সময় কয়েক ঝাঁকা মাটি ঢেলে দিলেই  তার আর কোন নাম নিশানা থাকে না, তেমন। ধুঁকতে ধুঁকতে যে কয় ঘর এখনো পাড়ায় আছে যে কোন অজুহাতে যে কোন দিন নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলে পরদিনই পাড়াটির কথা সবাই বেমালুম ভুলে যাবে। মনে রাখার সংগত কোন কারণের মতো মোটেই প্রয়োজনীয় নয় এরা।…

Read More

খোদাবক্সপিরের মোজেজা

“লাইলাহা ইল্লালা…লাইলাহা ইল্লালা…, আল্লাহ, আল্লাহ, আল্লাহ…।“ সবেমাত্র ‘জিকির’ শুরু হয়েছে, আর তাতেই পিরহুজুর ধ্যানে মগ্ন হয়ে গেছেন! তাঁর ফর্সা মুখটা চাঁদের মতো জ্বলছে! এ আলোকেই মেজালরা বলে ‘নূরের আলো’। মেজাল খুউব চালাক। ‘জিকির’ তুলতে তুলতে একবার চোখ বন্ধ করছে, আর একবার আঁড় চোখে পিরহুজুরের দিকে ফিক করে তাকাচ্ছে। তার উল্টো দিকে মুখ করে বসে থাকা সাদেক রেজা ব্যাপারটা লক্ষ্য করছে। আর মনে মনে খিস্তি দিচ্ছে। গোলাম আর ইজাজুল তখন জিকিরের বোলে ঘোর হয়ে আসমানি হয়ে গেছে। এরা সবাই আইবুড়ো টগবগে তরুণ। কারোরই বয়স কুঁড়ি পার হয়নি। তবে বিছানায় স্বপ্নদোষের ঠেলাই…

Read More

কমরেড

‘শেষ খেয়া; কে যাবে গো?’ একজন চাপ দাড়িওয়ালা লোক ডাক দিচ্ছে। পরনে হাঁটু পর্যন্ত গোটানো প্যান্ট। আগে হয়তো প্যান্টটার কোনো রং ছিল, এখন তাকে কেবল সাদা-কালো বলেই চালিয়ে দেওয়া যাচ্ছে। গায়ে ফ্যাকাসে লাল রঙের গেঞ্জি। তাতে চারটে ফুটোও আছে। ভালোভাবে খেয়াল করলে আরও ফুটো চোখে পড়ত মনে হয়। কিন্তু সে ডাক দিতে দিতে এদিক-ওদিক ঘুরছে। এত চলমান দৃশ্যকে ধরে রাখা যায় না। লোকটার চুল হাওয়াতে হাওয়াতে ঝাউবন হয়ে গেছে। গায়ের রঙের সাথে চুলের রঙের ফারাক কেবল এটুকুই যে চুলে কিছুকাল আগে লোকটি মেহেন্দি লাগিয়েছিল, তার লালচে কমলা রং খেয়াল করলে…

Read More

ভগীরথ

  ১.   মশাটার দিকে ভাল করে তাকাল সৃজিত,  তারপর মশারির দিকে আর তারপর প্লাগে গোঁজা মসকুইটো অয়েলের দিকে এবং দেখল প্লাগ অন রয়েছে, ঘাতক রাসায়নিকের মিষ্টি জুঁই গন্ধে ঘর ম ম করছে। মশারিতে কোথাও ফুটো নেই! তাহলে কোত্থেকে এল এই লস্কর-ই-তৈবা? বাইরে অঝোরে বৃষ্টি চলছে।  জুন জুলাইয়ের মাথা খেয়ে বৃষ্টি শুরু হয়েছে আগষ্টের বারো তারিখ। আজ এখন চোদ্দোর মধ্য রাত, রাত কাবারেই স্বাধীনতা দিবস। এরমধ্যে এই সশস্ত্র জঙ্গি তার ফর্সা থাইয়ের ওপর এলওসি কার্গিলের সেনাদের মত মাটি কামড়ে বসে রয়েছে। একে স্ত্রী মশা তায় গর্ভবতী! পেট ভর্তি লার্ভা নিয়ে…

Read More

বিচ্ছেদ

ট্রেন যখন আলিপুরদুয়ার ষ্টেশনে থামল ঝড়ঝড়িয়ে বৃষ্টি হচ্ছে। বাইরে গাড়ি থাকার কথা। তানবীর তার জিন্সের পকেট থেকে ফোন বার করে ড্রাইভার রামচন্দ্র কে ফোন করলো। গাড়ি বাইরেই আছে, কিন্তু বৃষ্টি না ধরলে তার কাছে পৌঁছতে গেলে তারা কাক ভেজা ভিজবে। অক্টোবরের শেষের দিক, কলকাতার থেকে তাপমাত্রা এখানে বেশ কম। তারসাথে আবার বৃষ্টি। ষ্টেশনের শেডের ভেতরের একটা স্টল থেকে দু’কাপ কফি নিলো কিংশুক আর তানবীর।  একটু বৃষ্টি ধরতে ষ্টেশনের বাইরে বেরিয়ে গাড়িতে উঠলো দু’জনে। গাড়িটা দুজনের জন্য বেশ বড়, একটা এসইউভি। ড্রাইভার ছাড়াও অনায়াসে ছ’জন বসা যায়। গাড়িতে উঠে ট্রলির চেন…

Read More

ধরে নেওয়া যাক ভ্যান গখ

ধরে নেওয়া যাক, ভ্যান গখ এই জন্মে এক কফি শপের মালিক। মালিক অবশ্য নাম কা ওয়াস্তে। সে কেবলই সুযোগ খোঁজে ছোট্ট টাউনটা ছেড়ে বেরিয়ে পড়তে। ওর যে কফিশপ সেটা বড় শহরের লাগোয়া আরেকটা শহর। নদীর এপার ওপার। ওর কাফেটা থেকে বেরিয়ে  মিনিট কুড়ি সড়ক পথ ধরে এগিয়ে সেতু পেরলেই বড় শহর। সেতুর নীচ দিয়ে বয়ে গেছে মজে যাওয়া নদী। ধরা যাক, ভ্যান গখের নাম এই জন্মে অর্পণ সরখেল। অর্পণ সরখেলের নাম যে ভ্যান গখ সেটা অবশ্য সে নিজে জানে না। ওর খুব কাছের বন্ধু যেমন মহুল, জানে। প্রায় বছর তেরো’র…

Read More

স্ট্যাচু

ভোররাত। নীলার খুব শীত করছিল। সূর্যের আলো চোখে পড়তে ঘুম ভাঙল। চোখ খুলে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের মাথায় পরীটার মধ্যে নিজেকে দেখতে পেল। পিঠের ডানা হাতের বাজনা সমেত পাথরের শরীর। শীতল। আশ্চর্যের বিষয় হল যে গোটা ব্যাপারটা তে তার যতটা  চমকে যাওয়ার কথা ছিল তার ভগ্নাংশ ও সে চমকাল না। যেন এমনটাই হওয়ার কথা ছিল। এমন কিছুর স্বপ্নই সে দেখেছিল  নীলাঞ্জনের সঙ্গে ভিক্টোরিয়া চত্বরে প্রেম করে বেড়ানোর দিনগুলোয়। তফাৎ শুধু নীলাঞ্জনকে আর সে আশপাশে দেখতে পেল না। একটা চিল কোথাথেকে এসে তার হাতে ধরা বাজনাটার ওপর বসলো। চিলের সঙ্গে চোখাচোখি হতেই নীলার…

Read More

প্রকৃত সারস

অমলতাস নিতান্ত নিরীহ নয়, সেকথা জানা ছিল। তবুও তো সে বৃক্ষ। সে যে এমন অকস্মাৎ ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে, ধারণা ছিল না শুভ্রার। অথচ সে দেখেছে গ্রীষ্ম দুপুরের একাকী ব্যাঙ, কেমন সে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লাফে পুকুরের ঢাল বেয়ে উঠে আসতে আসতে হঠাৎ নেই হয়ে যায়… সহসা সাপের মুখ একবার খোলে, বন্ধ হয়… ধীরে ধীরে ফুলে ওঠে তার গলা, ফোলাটা নামতে থাকে ঘাড় বেয়ে, বুক বেয়ে পেটের দিকে আর ক্রমশ ব্যাঙের স্মৃতি মুছে যায় পুকুরের মানচিত্র থেকে। অশ্রান্ত কাঠঠোকরার পার্কাশনেও এমন গ্রীষ্ম শুনেছে শুভ্রা, বুঝতে শিখেছে কখন অদৃশ্য হয় ছাল-বাকলের আড়াল থেকে…

Read More

জন্মান্তর

(১) এ বেটা, এক গ্লাস দে! লোকদুটো মদ খাওয়া থামিয়ে তাকাল বালকনাথ বাবাজির দিকে। সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছেন না তিনি, ছোট্ট শরীর টলমল করছে অনেকক্ষণ ধরেই। ইতস্তত করতে লাগল ওরা। বালকনাথ চেঁচিয়ে উঠলেন, ‘কী সোচ্‌ছিস? সাধুকে ফিরাতে নেই। দে জলদি।’ লোকদুটোর মধ্যে যে চেলা গোছের, প্লাস্টিকের গ্লাসে মদ ঢালতে ঢালতে বলল, ‘দিচ্ছি, তবে আমাদের এই বাবুকে একটু আশীর্বাদ করে দাও।’ আংটিভর্তি হাত মাথায়-মুখে বুলিয়ে দিলেন বালকনাথ। ‘আশীর্বাদ আশীর্বাদ! সতীমা’র কৃপায় তোর সব ভালো হবে। খুশ থাকবি তুই। আশীর্বাদ। …আরেকটু জল ঢাল্‌ না বে!’ মদ আর জল মেশানো টইটম্বুর সেই তরল…

Read More

আমার হাতে হোক রাত্রি রচনা

দুপুর গনগন করে বিদায় দিয়ে দিতে হয়, রাখা যায় না… রাখার কিছু নাইও… ছবির মত জীবন না। জীবন শুধু বিদায় দিয়ে দেয়ার। ভালোবাসি না এমন ভান করার। জড়িয়ে না ধরার। গায়ের গন্ধ না নেয়ার। বৈশাখের দুপুর খুব গনগন করতে জানে। আর ওর তো মনে কোন প্রেম নাই! সত্যি কথা প্রেম নাই। অনেকটা সাধু সন্ন্যাসী টাইপ, ওর কোন শারীরিক অস্থিরতাও নাই, প্রায় ভগবানের মতো। এইজন্যে আমাদের সম্পর্ক খুব ভালো হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। আমার অস্থিরতা কমছে কিন্তু মায়া বাড়ছে। আমার মনে হয় ও একটা রাজহাঁস, ওর লম্বা গলা, নরম পেট… ওর…

Read More

ভুতু

‘ভুতু কী করছে দেখতো?’ ‘ভুতু সেক্স করছে।’ ‘সেক্স করছে মানে?’ অস্মিতাকে প্রশ্ন করেও, অরূপ চুপ করে গেল। অরূপ ব্যাপারটা জানে।  অরূপ এ ঘর থেকে উঠে ভুতুর ঘরে গেল। যা ভেবে ছিল, ঠিক তাই। ভুতু কাকা অরূপকে দেখে লজ্জা পেল। ‘কি করছিস ভুতু?’ ভুতু বালিশ সরিয়ে ওপাশ ফিরে শুল, বলল ‘এইই হে হে কিছু না’। ভুতু লজ্জা পেয়েছে। প্রতিবারই ভুতু এইরকম লজ্জা পায়। হাসে বোকার মতো। অসহায়ের মতো। যখন ঘরে কেউ থাকে না, ভুতু তখনই বালিশ দিয়ে ওই সব কান্ড করে। অরূপের ভুতুর জন্য খারাপ লাগে। বাইশ বছরের ছেলে, ওর এখন…

Read More

দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান সার্কাস

১. কড়ি বরগার ওপর উইপোকাদের নক্সা। আলকাতরা মাখানো হয়েছিল সেই বুড়ো কর্তার আমলে, তারপর আস্তে আস্তে ফিকে হয়ে এসেছে কালো রঙ। দুটো তির ছাদ থেকে খসে পড়েছে গত বর্ষায়। পুরনো রাজমিস্ত্রি ফকির মোল্লা দেখে বলেছিল, —ছোটকত্তা ইবার জলছাতটা করন লাগবি যি! নাইলে ধসি পড়বি ছাত। সে জলছাদ আজও করা হয়নি। কবেকার জমিদারবাড়ি।ভাঙা খড়খড়ির জানলা খুললে যতদূর চোখ যায় ধূ ধূ পদ্মবিল। শনশন বাতাসে উড়ে বেড়ায় গাঙশালিখের দল। আশ্বিনে বিল আলো করে ফোটে গোলাপি পাপড়ির পদ্ম। দু টাকা তিনটাকা দাম ওঠে তখন একেকটা ফুলের। ছেলেপিলেরা চুবড়ি ভরে তুলে গঞ্জের পাইকারদের কাছে…

Read More