শৈবাল সরকার

শৈবাল সরকারের কবিতাগুচ্ছ

পাতার উল্টো দিকের লেখা।
১.
খাঁচা খুলে দিলে প্রথমে
স্বাধীন হয় চোখদুটো।
তারপর তোমাকে একলা রেখে
তারা উড়ে যায় তোমার দু’দিকে।

বহু মহাকাশ পরে
এক বৃষ্টির রাতে
তাদের পাঠানো গান
এখন তুমি সাজিয়ে রাখছো
আয়ুর দু’দিকে।

২.
কাগজের উল্টো দিকের লেখা
এখানে ফুটে উঠছে।
এইটুকু দেখতে পেয়ে তুমি
উড়ে যাওয়ার মতো হয়ে যাও।

পাতার উল্টো দিকে আরও একটা কেউ
আটকে থাকে একটা কলম ধরে।

তার সারা শরীর ধীরে ধীরে
মহাকাশ শুষে নিচ্ছে কাছে।

৩.
আমরা কথা শুরু করলেই
দু’জনের মুখ থেকে একটা করে
প্রজাপতি বেরিয়ে আসে।
এসেই ঝাঁপিয়ে পড়ে
একে অন্যের ওপর।

লড়াই লেগেছে ভেবে ভিড় জমে।
কেউ কেউ বাজি ধরে এ-ওর ছায়ায়।

আস্তে আস্তে ডানা খসে পড়ে
তোমার আমার।

সময় ফাঁকা হয়ে আসে।

দুটো মৃত প্রজাপতির পাশে
আমরা নীরবে বসে থাকি।

৪.
যাতায়াতের শুরুতেই তুমি
বাসগুলো হারিয়ে ফেল।
ফলে তোমার ফেরার তাড়া থাকে না।

সারাদিন তোমার মাথার ওপরে
চিল ওড়ে।
প্রাচীন কলকাতা থেকে দেখে নেয়
তোমার মাংস-মেদ।

এভাবে দিন ফুরোয়।

সন্ধের একটু আগে পুলিশ আসে।
বাসগুলো নিয়ে জেরা করে আমাকে।

সন্ধে ফুরিয়ে এলে
তুলে নিয়ে যায়।

৫.
ব্যক্তিগত মহাকাশ।
উপগ্রহের পাঠানো চিঠি
আটকে রেখেছো তাতে।

আলো ঘিরে বই খাতাগুলো পাক খাচ্ছে।

একটা লাল কালির কলম
তোমাকে অবাক রেখে
গতি বাড়িয়ে জানলা পেরলো।

সাদা একটা পাতার ওপর
এই একটি মাত্র দাগ
গড়িয়ে নামছে।

৬.
শেষ আশ্রয়টুকু মাদুরের মতো
গুটিয়ে রেখে দিলে
মহাকাশ নীচে নেমে আসে।
গোটা একটা শহর ভাসমান হয়।
উবে যেতে থাকে।

পাশের বাড়ির জানলা ধরে
আমরা বসে থাকি।

আমাদের বিভিন্ন বয়েস
ঝুলে থাকে আমাদের ধরে।

৭.
রাতের একলা জ্বর
অনেকটা স্নানের মতো।
সমস্ত ক্ষত ধুয়ে দেয়।

তখন সাবানের ফেনার মতো
তোমাকে দেখা যায়।

রঙিন বুদবুদগুলো তখন
একা একাই ফুলে ওঠে
ফেটে যায়।

আস্তে আস্তে মহাকাশ বড় হতে থাকে।

Facebook Comments

Related posts

Leave a Comment