হিন্দোল ভট্টাচার্য’র কবিতাগুচ্ছ

  অস্ত্র   যেখানে দাঁড়াই, দেখি, মূর্তিগুলো ভাঙা, পড়ে আছে যুদ্ধে মৃত সৈনিকের রক্তমাখা শরীর যেমন। চকচকে ধারালো অস্ত্র দিনে দিনে মরচে পড়ে যায়। প্রতিটি মূর্তির কিছু কথা আছে, জানেন ভাস্কর। প্রতিটি অস্ত্রের থাকে বেদনা, বিষাদ। ক্ষতস্থান থেকে শুধু রক্ত পড়ে। রক্ত, প্রাণ নয়। ভাস্কর জানেন, তিনি কার মূর্তি গড়তে গিয়ে কাকে গড়ে তুলেছেন একা। যুদ্ধক্ষেত্র জুড়ে পড়ে থাকে তার ক্ষয়।     অভিশাপ   যে বিষাক্ত হয়ে আছি, এই বিষ তোমাদের দেওয়া। আমার ওষুধ নেই, অপমান আছে। মনে হয় এ কথাটি বলেছি আগেও; মনে হয় খোকা খোকা মুখ করে…

Read More

বিপন্ন বিস্ময়গুলি – পর্ব ৬

লেখা ও লেখক আসলে আমরা সারাজীবন ধরেই হয়ত এক একটা দিবাস্বপ্নের মধ্যে কাটাই। নিজেদের মনের মধ্যেই স্বীকার করতে পারি না বাস্তবতাকে। কারণ বাস্তবতার সংজ্ঞা বড়ই ক্ষণস্থায়ীত্বের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু আমরা কার্যকারণ সূত্রে না বাঁধলে অস্বস্তিতে পড়ে যাব নিজেরাই। ফলে একসাথে আমাদের মনে হয় অনেকগুলো জীবন চলতে থাকে। এই অনেক জীবনের মধ্যে আমরা নিজেদের হারিয়ে ফেলি। ওই যে স্বীকৃতির কথা, ভালোবাসার কথা, – এসব তো সামাজিক লেবেল। যতই আপনি মহান কবি হোন না কেন, এই সামাজিক লেবেলের ভূত আর তার সঙ্গে ক্ষমতার কৌশলের ক্লেদ আপনাকে তাড়া করবেই। এগুলি মনকে আরও তিক্ত,…

Read More

বিপন্ন বিস্ময়গুলি – পর্ব ৫

সমর্পণ নিজেকে কারো কাছে এবং কোনও কিছুর কাছে সম্পূর্ণ সমর্পণ করে দেওয়া খুব কঠিন কাজ। সমর্পণ করে দিলেই তো আর হল না, মনে মনে বিশ্বাস রাখতে হবে, নিজেকে বারবার বলতে হবে, যে আমি সমর্পিত। কিন্তু এই সমর্পণের অর্থ কী? আত্মবিলুপ্তি? আত্মলীন হয়ে যাওয়া? কবিতা লেখার সময়ে তো ঠিক এই কাজটিই ঘটে। কারণ কবিতা তো নিজেকে লেখার জন্য কবির মধ্যে দিয়ে প্রকাশিত হয়। কবি কেবল একজন আধার মাত্র। আর কিছু নয়। যখন অপ্রত্যাশিত স্পর্শের মতো, কবিতা আসে সেই কবির কাছে, তখন সে আত্মসমর্পণ-ই করে। লেখা হয়ে যাওয়ার পরে হয়ত, তার ‘আমি’…

Read More

বিপন্ন বিস্ময়গুলি – পর্ব ৪

ভোগ ও ত্যাগ কাঁপতে কাঁপতে যখন হাজির হলাম ক্যাম্পের মধ্যে, আমার তখন শরীরের উপর কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। একে, টানা ১৪ কিলোমিটার চড়াই অতিক্রম করে এসেছি। ৬০০০ ফুট থেকে টানা ১৬০০০ ফুটে। তার উপর টানা বৃষ্টি। ভিজে গেছি। খাইনি। আর ঠিক তখন জলদগম্ভীর গলা- ‘এখানেও এসে গেছেন?’ চেয়ে দেখি, চেনা মুখ। ‘কী অবস্থা!’ সঙ্গে সঙ্গে কিছু ওষুধ আর গরম চা। বসলাম এক জায়গায়। জামাকাপড় পাল্টালাম। হেমকুণ্ড সাহিবে গেলেই আপনি পাবেন গরম গরম খিচুড়ি। সেই খিচুড়ি খেয়ে একটু ধাতস্থ হয়ে ভালো করে চারিদিকে তাকালাম। আমি একটা স্বতন্ত্র ক্যাম্পে শুয়ে আছি। চারিদিকে অক্সিজেন…

Read More

বিপন্ন বিস্ময়গুলি – পর্ব ৩

অভিজ্ঞতাগুলি ক্রমে… শুকনো পাতার স্তূপ্ বললেই মনে পড়ে যায় গ্রীসিয়ান আর্নের কথা। একটি অসামান্য জায়গা ছিল- হার্ড মেলোডিজ আর সুইট, বাট দোজ আনহার্ড আর সুইটার। আমার এক মাস্টারমশাই ছিলেন, পিএম বলে ডাকতাম। পুরো নাম পার্থ মুখোপাধ্যায়। একবার পড়ানো হয়ে গেছে। বসে আছি তাঁর সল্ট লেকের বাড়ির ছাদে। পাশে ঘুরঘুর করছে তাঁর দুই সন্ন্যাসী কুকুর। তিনি হঠাৎ বলে উঠলেন- জানো, এই লাইনটা, বোল্ড লাভারস ক্যান্সট নেভার নেভার দাউ কিস- এই ব্যাপারটাকে ঠিক কিছু দিয়েই ধরা যায় না। আমরা বৃথাই এসব পড়ি। পড়াই। কিন্তু যা বাজে অন্তরে তা মনে হয় আরও বেশি…

Read More

বিপন্ন বিস্ময়গুলি – পর্ব ২

অপ্রত্যাশিতের এই স্পর্শ পাওয়ার জন্য জগতের কাছে সবসময় হাত পেতে বসে থাকতে যে হয়, সেটিই আসল সত্য। মানে, অপেক্ষাই আসলে প্রধান। মিলন নয়। ধরা যাক দুজন মানুষ একে অপরকে ভালোবাসে, তারা একে অপরের জন্য অপেক্ষা করছে। প্রতিদিন প্রতি মুহূর্ত তাদের অপেক্ষা আর ফুরোচ্ছে না। এই না ফুরোনো অপেক্ষাই হল প্রেম। মিলন তো ক্ষণিকের। অপেক্ষাই চিরকালীন। এ প্রসঙ্গে একটি দৃশ্য ও একটি গল্প মনে পড়ছে। আমি বসে আছি দেউরিয়া তালে। সারা রাত ধরে অপেক্ষা করেছি দেউরিয়া তালের ধারে একটি তাঁবুতে। সূর্য উঠবে। পাহাড়ে সূর্যোদয়ের উলটো ছায়া পড়বে দেউরিয়া তালের জলে। দেখব।…

Read More

বিপন্ন বিস্ময়গুলি – পর্ব ১

আমি নিজেকে সবসময় উপলক্ষ্য ভাবি। এই যে কবিতা লিখি, আদৌ আমি কি লিখি? না কি আমি কেবলমাত্র লেখার আধার হয়ে থাকি? ঈশ্বরের কথা জানি না। প্রকৃতির কথা কিছুটা জানি। দর্শন হোক বা বিজ্ঞান, সঙ্গীত হোক বা কবিতা- কোনওকিছুই আমরা নতুন করে তৈরি করছি না, ইংরিজিতে ইনভেন্ট যাকে বলে, যা করছি, তা হল  ডিসকভারি, মানে খুঁজে পাচ্ছি। খুঁজে পাচ্ছি, তার কারণ, আমাদের মধ্যে কেউ না কেউ কোনও না কোনও ভাবে খুঁজে চলেছে। প্রশ্নটা হল, কী খুঁজে চলেছে এবং কাকে খুঁজে চলেছে। আমাদের সমস্ত অসীমেরও ধারণার অতীত এই মহাবিশ্বে নিজস্ব সীমার মধ্যেও…

Read More