লিটল ম্যাগাজিনের সম্রাট

মণীন্দ্র গুপ্তকে আমি বলি, মনে মনে এবং প্রকাশ্যে বলি, তিনি হলেন লিটল ম্যাগাজিনের সম্রাট। তাঁকে কোথাও দেখা যেত না। কোনো বড়ো কাগজে তাঁর লেখা থাকত না। বড়ো কাগজ মানে আমি বলছি আসলে ‘বড়ো’ কাগজ। সমস্ত মাস মিডিয়া থেকে তিনি দূরে থেকেছেন। দূরে থাকতে বাধ্য হয়েছেন। দূরে থাকতে চেয়েওছেন। আজ থেকে তিরিশ বছর আগে আমি কৃষ্ণনগর থেকে এসে প্রথমে ওঁর হিন্দুস্থান পার্কের বাড়িতেই গিয়েছিলাম। হিন্দুস্থান পার্কে তাঁর ফ্ল্যাটে গিয়ে মনে হয়েছিল তিনি একটা হিমালয়ের গুহার মধ্যে বসে আছেন। গুহার মধ্যে বসে আছেন – এই মেটাফরটা আমার মাথায় এসেছিল কেন? গুহার মধ্যে…

Read More

কার্বাইডের আলো ও বিরল অর্কিড

১ “সময়, আমাদের নশ্বরদের জন্য তৈরী একটি মায়া—দেখতে না দেখতে, স্বাদ নিতে না নিতে ফুরিয়ে যায়”– লিখেছিলেন কবি মণীন্দ্র গুপ্ত– বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল প্রবীণ কবি, গল্পকার, উপন্যাসিক। কবিদের মনোজগত নিয়ে আমার সাম্প্রতিক ছবিতে তিনিঅংশ নিয়েছিলেন। সেই সূত্রে ওঁর সঙ্গে বেশ কিছুদিন কেটেছিল আমার আড্ডায়,আলোচনায়। জন্ম বাংলাদেশের বরিশালে। নবতিপর এই প্রাজ্ঞ মানুষটি আমাকে মুগ্ধ করেছিলেন তাঁর তারুণ্যে; এই বয়সেও অম্লান তাঁর আন্তরিকতা, সারল্য, কৌতূহল, স্বীকারোক্তি, অন্বেষণ, ভাবনা ! বলেছিলেন, সব কিছু নতুন করে ভাবতে হবে আবার, ভুলে যেতে হবে আমরা মানুষ ; আমরা আসলে অন্য যেকোনও প্রাণীর মতোই। একটি কবিতায়…

Read More

এক চাঁদের চাকার দাগ

১ শুরু বলা যেতে পারত ১৯৯৮ সাল, যখন জমিল সৈয়দের হাত ধরে আমি প্রথমবার মণীন্দ্র গুপ্তের লেখা পড়ি। কিন্তু সে ভাব বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। ২০ বছরের আমি অচিরেই মজে যাই তাঁর চেয়ে বেশি চমক জাগানো অন্য কবিদের লেখায়। এই ঘটনার ১০ বছর পর ২০০৮ সালে নানা কবিতার মধ্যে দিয়ে যেতে গিয়ে বাংলা কবিতার স্বভাব প্রবণতা তার সুন্দর ও স্মৃতিধার্য লাইনে খানিকটা বিরক্ত হয়ে ফের ঢুকে যাই মণীন্দ্র গুপ্তে। ততদিনে উনি মণিদা হয়ে গেছেন আমার কাছে। আমি শিখতে শুরু করেছি কীভাবে স্তবক থেকে স্তবকে নিয়ে যেতে হয় কবিতার স্তরবিন্যাস। কীকরে…

Read More

সুখ নেই, দুঃখও নেই

নিজের আত্মজীবনীমূলক বই ‘অক্ষয় মালবেরি’তে জীবনের প্রথম স্মৃতির অনুভূতি নিয়ে বলতে গিয়ে লিখেছেন– ‘পরিত্যক্ত থাকার কষ্ট এবং অসহায় ক্রোধ—এই দ্বৈতই বোধ হয় আমার সারা জীবনের সারসংকলন।’ তিনি মণীন্দ্র গুপ্ত। এই পরিত্যক্ত থাকার কষ্ট, অসহায় ক্রোধের অভিমুখ নিজে হাতে তিনি ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন। পরিণত করেছিলেন মিত্রশক্তিতে। পজিটিভ এনার্জিতে। তাঁর ‘হয়ে ওঠা’য়, তাঁর কবিতা আর গদ্যের মন ও ইন্দ্রিয়ের সর্বাত্মক ব্যবহারে। নিজের মধ্যে এক ‘আমি’ হয়ে ঢুকে, বহু ‘আমি’ হয়ে প্রবেশ করে তিনি নিজেকে দূর থেকে দেখার আশ্চর্য কৌশলটি রপ্ত করেছিলেন। যেকোনও দেখায়—দেখার প্রয়োজনীয় দূরত্বটি অবিচল রাখতে পেরেছেন তিনি। জীবনের নানা গলি- চোরাপথ-…

Read More

আমার মণীন্দ্র গুপ্ত

(সম্পাদকের কথাঃ ২০১৭-এর খুব সম্ভবত সেপ্টেম্বর, আকাশে নীল সবে থাবা বসাতে শুরু করেছে। বহুদিনের একটা ইচ্ছে সেদিন অবয়ব পেল। বিকাশদা, বিকাশ গণচৌধুরি নিয়ে গেলেন মণীন্দ্র গুপ্ত ও দেবারতি মিত্র’র বাড়ি। তখন তাঁর সারা শরীরে চর্মরোগটা সবে ছড়িয়েছে। অল্প সময়ের সাক্ষাৎ। দুনিয়াদারি’তে ওঁদের যৌথ সাক্ষাৎকার নেব, এই ছিল অভিপ্রায়। ভয় ও সাহসের মিশ্র-অনুভূতি সমেত কথাটা পাড়তে, সম্মতও হয়েছিলেন আনন্দের সঙ্গে। শুধু বলেছিলেন—‘একটু সেরে উঠি, তারপরই একদিন এসো তোমরা, আড্ডা দেব।’ সেই আড্ডাটা মুলতুবি রয়ে গেছে। আসার সময় ওঁরা ওপার বাংলার কবি অনুপ চণ্ডালের দুটি কবিতার বই উপহার দেন। সেই সূত্র ধরে…

Read More