নিউটন – ১২

  প্রথমবার পার্লামেন্টের সদস্য হলেন নিউটন প্রিঙ্কিপিয়া প্রকাশ পাওয়ার খবর হ্যালির চিঠি পড়ে জানতে পারেন নিউটন। ৫ জুলাই, ১৬৮৭-তে লেখা সেই চিঠি। হ্যালি জানান, নিউটনের তরফ থেকে প্রিঙ্কিপিয়ার কপি, রয়্যাল সোসাইটিকে এবং লন্ডনের বিশিষ্ট বিজ্ঞানী মিস্টার বয়েল, মিস্টার প্যাগেট ও মিস্টার ফ্ল্যামস্টিডকে প্রদান করবেন তিনি।     হ্যালি তাঁর চিঠির সাথে কুড়ি কপি প্রিঙ্কিপিয়া পাঠান, যাতে কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটিতে পরিচিত জনদের উপহার দিতে পারেন নিউটন। হ্যালির প্রতি তাঁর কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। সে-কথা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ব্যক্তও করেছেন প্রিঙ্কিপিয়ার মুখবন্ধে। নিউটন লিখেছেন, ‘মিস্টার এডমন্ড হ্যালি শুধুমাত্র যে ছাপার ত্রুটি সংশোধনে আমায় সাহায্য করেছেন অথবা প্রকাশনার…

Read More

নিউটন – ১১

প্রকাশ পেল ‘ফিলসফিয়াই ন্যাচারালিস প্রিঙ্কিপিয়া ম্যাথেমেটিকা’   মায়ের মৃত্যুর পর উলস্‌থর্প থেকে কেমব্রিজে ফিরেই নিউটন হাতে পেলেন রবার্ট হুকের একটি চিঠি। ১৬৭৯-র একেবারে শেষদিক। বিগত কয়েক বছর ডুবে ছিলেন থিয়লজি ও অ্যালকেমির গবেষণায়। হুকের চিঠি, বাধ্য করল থিয়লজি ও অ্যালকেমি চর্চায় সাময়িক বিরতি টানতে। গ্রহ-উপগ্রহদের কক্ষীয় গতির অন্তর্নিহিত কারণানুসন্ধান ও সেই সংক্রান্ত গণিত নির্মাণে ব্যস্ত হয়ে গেলেন নিউটন।  প্রায় একই সময়ে ঘটল এক বিরল মহাজাগতিক ঘটনা। ১৬৮০-৮১-র সন্ধ্যার আকাশে সুদীর্ঘ পুচ্ছ-বিশিষ্ট এক ধূমকেতুর আবির্ভাব, নতুন করে আকৃষ্ট করল নিউটনকে জ্যোতির্বিদ্যা চর্চায়।   এর কয়েক বছর পর (১৬৮৪), তরুণ জ্যোতির্বিজ্ঞানী, এডমন্ড হ্যালি,…

Read More

নিউটন – ১০

প্রিঙ্কিপিয়ার প্রেক্ষাপট          ১৬৮৪-র আগস্ট মাস। ঘোড়াটানা একখানি গাড়িতে লন্ডন থেকে কেমব্রিজের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন বছর আটাশের এক যুবক। জ্যোতির্বিজ্ঞানী হিসাবে ইতিমধ্যে কিছু নাম-ডাক হয়েছে এই যুবকের। লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটির একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য তিনি। জ্যোতির্বিজ্ঞানী যুবকটির নাম এডমন্ড হ্যালি। ভিতরে-ভিতরে বড় অস্থির হয়ে আছেন। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটিতে তাঁর কিছু জরুরী কাজ আছে। কিন্তু সে-সব নয়, এমন এক প্রশ্ন মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে যা শান্তি দিচ্ছে না। এ-প্রশ্নের সমাধান তাঁর কাছে নেই। এমন-কি রয়্যাল সোসাইটির সভায় উপস্থিত প্রায় সকল বিজ্ঞানীই নিজেদের অপারগতার কথা জানিয়েছেন। হ্যালি জানেন, এর উত্তর মিলতে পারে…

Read More

নিউটন – ৯

  নিউটনের ধর্মতত্ত্ব গবেষণা       ট্রিনিটির নিয়ম অনুসারে, মেজর ফেলো হওয়ার ঠিক সাত বছরের মধ্যে সকল সিনিয়র ফেলোকেই অভিষিক্ত হতে হয় ধর্মযাজকের পদে। ১৬৬৮-র জুলাই মাসে মেজর ফেলো হন নিউটন। কাজেই ১৬৭৫-এ ইংল্যান্ডের কোনও একটি চার্চে ধর্মযাজক অর্থাৎ অ্যাংগলিকান পাদ্রি হতে হবে তাঁকে।  বালক বয়সে, উলস্‌থর্পের বাড়িতে এবং গ্রান্থামের কিংস স্কুলে যাজকদের সংস্পর্শে ঘোরতর ধর্মীয় অনুশাসন ও আচার অনুষ্ঠানের মধ্যে কাটাতে হয়েছে নিউটনকে। হয়ে ওঠেন অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ এক বালক। কেমব্রিজে ছাত্রাবস্থায়, ‘পাপ কাজ’-এর একটি তালিকা প্রস্তুত করেছিলেন। স্পষ্টত, ঈশ্বরের প্রিয়জন হয়ে ওঠার সুতীব্র বাসনা ছিল যুবকটির মধ্যে। আন্ডার-গ্র্যাজুয়েট স্তরে,…

Read More

নিউটন – ৮

  নিউটনের অ্যালকেমি চর্চা   ১৬৭০-এর দশক। নিউটনের আলোর নতুন থিয়োরি ঘিরে ক্রমশ বাড়ছে জল্পনা, ইউরোপের বিজ্ঞানীরা নিঃসংশয় হতে পারছেন না। তাঁদের তীব্র সমালোচনায় বিদ্ধ কেমব্রিজের তরুণ বিজ্ঞানী। রয়্যাল সোসাইটির জার্নাল, ফিলজফিক্যাল ট্রানজাকশন-এ প্রকাশ পাচ্ছে সেসব সমালোচনা পত্র। সোসাইটির সেক্রেটারি হেনরি ওল্ডেনবার্গকে একের-পর-এক পত্র পাঠিয়ে নিজের তত্ত্বের স্বপক্ষে যুক্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন নিউটন। আবার কখনো-বা ক্ষোভে অভিমানে ভাবছেন আর কখনোই তিনি তাঁর গবেষণার ফলাফল প্রকাশ্যে আনবেন না। এমন-কি র‍য়্যাল-সোসাইটির সদস্য পদ ত্যাগ করার কথাও জানাচ্ছেন ওল্ডেনবার্গকে।  এরকমই এক সময় ওল্ডেনবার্গকে লেখা এক চিঠিতে (২১ শে সেপ্টেম্বর, ১৬৭২) নিউটন জানালেন – ‘…এই…

Read More

নিউটন – ৭

লুকাসিয়ান প্রফেসর ১৬৬৯ সাল। নিউটনের জীবনের সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বছর। ওই বছরের একেবারে গোড়ার দিকে লন্ডন নিবাসী এক ভদ্রলোক সদ্য প্রকাশিত একখানি গণিত বই প্রফেসর ব্যারোকে ডাক মারফত পাঠালেন। ভদ্রলোকের নাম জন কলিন্স। ব্যারোর পূর্বপরিচিত। কলিন্স এক অদ্ভুত  চরিত্রের মানুষ। পেশায় সরকারি কেরানি, কিন্তু গণিত তাঁর নেশা। রয়্যাল সোসাইটির সদস্যও তিনি। ইউরোপের কোথায় গণিতে নতুন কি আবিষ্কার হল, নতুন কি প্রকাশ পেল, সেসবের সমস্ত খবরাখবর সংগ্রহ করে বেড়ান। ইউরোপের প্রথম সারির প্রায় সব গণিতজ্ঞের সাথেই নিয়মিত যোগাযোগও রাখেন। ব্যারোকে অঙ্কের যে বইটি পাঠিয়েছেন, তার লেখক নিকোলাস মার্কেটর। মার্কেটর, তাঁর এই…

Read More

নিউটন – ৬

‘মার্ভেলাস টেলিস্কোপ অফ মিস্টার নিউটন’ ১৬৬৭-র বসন্তের মাঝামাঝি কেমব্রিজে ফিরে এলেন উলসথর্পের বছর পঁচিশের সেই যুবক। যুবকটি কি বুঝতে পারছেন যে তিনি একজন বিরল প্রতিভার অধিকারি? প্লেগ মহামারির আগের নিউটনের কাছে নিজের ঐশ্বর্য অনাবিষ্কৃত থাকারই কথা। কিন্তু আঠার মাস গৃহবন্দী দশায় যে-সমস্ত অভিনব ভাবনার, ‘গ্রাউন্ড ব্রেকিং’  আবিষ্কারের ভিত্তি স্থাপনের কাজ সেরে কেমব্রিজে এবার এলেন, তারপর নিশ্চয়ই নিজের বৈজ্ঞানিক সত্ত্বার অস্তিত্ব টের পেয়েছেন তিনি।      কেমব্রিজে ফিরে এসে প্রথমেই, ইউনিভার্সিটির ব্যাচেলর গাউন ও দু-জোড়া জুতো বানিয়ে নিলেন নিউটন এবং বেশ কিছু প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কিনলেন। ওই সময় তাঁর হিসাবের খাতা (Fitzwilliam Notebook) থেকে…

Read More

নিউটন-৫

‘থিয়োরি অফ কালারস্‌’ কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির সদ্য গ্র্যাজুয়েট, তরুণ নিউটন আলোর নতুন এক থিয়োরি পেশ করলেন। একান্ত নিভৃতে নোটবুকের পাতায় রচিত হল অভিনব সেই আলোক তত্ত্ব। সুদীর্ঘকালের লালিত মানুষের যে বিশ্বাস – সূর্য থেকে আগত শুভ্র আলো সবচেয়ে খাঁটি, সবচেয়ে বিশুদ্ধ, অর্থাৎ, মৌলিক চরিত্রের, আর তা অন্ধকার ও ছায়ার প্রভাবে ভিন্ন ভিন্ন বর্ণের বলে প্রতিভাত হয় মাত্র, এবং নানা বর্ণের আলো যা প্রকৃতিতে দেখা যায়, সেগুলি সাদা আলোর ‘মডিফিকেশন’ অর্থাৎ অপর কোনো রূপে প্রকাশ ভিন্ন আর কিছু নয় – নিউটন বুঝলেন, এ-সমস্তই ভ্রান্ত ধারণা। সূর্যালোক আদৌ বিশুদ্ধ নয়। সাদা আলো, আদতে…

Read More

নিউটন-৪

আপেল পড়ার গল্প ১৬৬৫-র জুন-জুলাই মাস নাগাদ উলস্‌থর্প ম্যানর-এ ফিরে এলেন আইজাক  নিউটন।  মহামারির প্রকোপ এড়িয়ে নিরাপদে  পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবেন এই খামার বাড়িতে। কেমব্রিজ থেকে সঙ্গে এনেছেন বাক্সভর্তি বই। সেগুলি রাখার জন্য দোতলার একটি ঘরে পাইন কাঠের সেলফ্‌ বানিয়ে নিলেন নিউটন। এখন তাঁর সর্বক্ষণের সঙ্গী হল সৎপিতা বারনাবাস স্মিথের থেকে পাওয়া সেই ‘ওয়েস্ট বুক’। ক্রমশ যা ভরে উঠতে থাকল নানা রকম সাংকেতিক চিহ্নে, গাণিতিক সংখ্যায় ও জ্যামিতিক চিত্রে।    তেইশ বছরের এই যুবক আর আগের সেই গ্রাম্য আইজাকের মধ্যে এখন বিস্তর ফারাক। নিউটন নিজেকে এখন ‘আইজাক নিউটন অফ উলস্‌থর্প, জেন্টল্‌ম্যান’…

Read More

নিউটন-৩

কেমব্রিজে নিউটন  (১৬৬১-১৬৬৫)  সতের শতকের কেমব্রিজ। হাজার পাঁচেক লোকের এক বসতি। কেমব্রিজের আয়তনের নিরিখে সংখ্যাটি কিছুই নয়। শহরের চারপাশে উন্মুক্ত অংশ ইতস্তত ছড়িয়ে আছে। কেমব্রিজের তখন দুটি জিনিস নিয়ে ভারি গর্ব! প্রথমটি, তাদের শতাব্দী প্রাচীন ইউনিভার্সিটি। আর দ্বিতীয়টি হল ইংল্যান্ডের সবচেয়ে বড় মেলা, স্টৌরব্রিজ ফেয়ার, যা প্রতিবছর সেপ্টেম্বরে রিভার ক্যাম-এর একেবারে ধার ঘেঁষে এই কেমব্রিজেই বসে। সেপ্টেম্বর এখানে তাই উৎসবের মাস।  ইংল্যান্ডের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়ে সরগরম হয়ে ওঠে কেমব্রিজ শহর। ইস্ট এংলিয়া, মিডল্যান্ডস্‌, নর্থ ইংল্যান্ড, এমনকি খোদ লন্ডন শহর থেকেও লোকজন জমায়েত হয়। অনেক ব্যবসায়ী, ক্যাম ধরে…

Read More

নিউটন-২

 কিংস স্কুল ও ক্লার্কের বাড়ি সতের শতকের গ্রান্থাম ছোট ছোট সবুজ টিলায় ঘেরা অতি মনোরম এক টাউন এলাকা। তবে সবকিছু ছাপিয়ে প্রথমেই নজর টানে চারশ বছরেরও বেশি প্রাচীন গথিক স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত সুউচ্চ সেন্ট উলফ্রাম চার্চটি। লিংকনশায়ারের এই আধা–শহর ও আধা–গ্রামীণ অঞ্চলটিতে উল ইন্ডাস্ট্রি থাকায় এখানকার মানুষজনের সমৃদ্ধি চোখে পড়ার মতো। বড়জোর দু-আড়াই হাজার লোকের বাস। গ্রান্থামের বাজারে ছুতোর মিস্ত্রির দোকান, কামারশালা, কসাইখানা, বেকারি, পানশালা ছাড়াও কিছু পান্থনিবাসও আছে। ইংল্যান্ডের উত্তর-দক্ষিণে চলাচলের প্রধান সড়কের মধ্যে পড়ে গ্রান্থাম। তাই অনেক পথচারীই রাত্রি যাপন করে এখানে।          সপ্তাহের প্রতি শনিবার হাট বসে। কাছাকাছি যেসব…

Read More

নিউটন

প্রাক কথনঃ  ১৬৮৭ তে নিউটনের প্রিঙ্কিপিয়া প্রকাশিত হওয়ার পর, ফরাসি গণিতবিদ দ্য লোপিতাল  প্রিঙ্কিপিয়ার প্রাকৃতিক দর্শন ও গাণিতিক সূত্রাবলীর বিপুল কর্মকাণ্ড প্রত্যক্ষ করে গভীর বিস্ময়ে বলে ওঠেন – ‘তিনি কি খাওয়া–দাওয়া করেন? পান করেন? ঘুমোন? আর সব মানুষেরই মতন কি তিনি?’ সতেরো শতকের বিখ্যাত দার্শনিক ও ইতিহাসবিদ গিলবার্ট বারনেট, নিউটন সম্পর্কে অভিমত ব্যক্ত করেছিলেন এই বলে – ‘সবচেয়ে বিশুদ্ধ হৃদয় সম্পন্ন মানুষ।’ ‘‘Nec fas est propius mortali attingere Divos” লাতিন ভাষায় লেখা এই কথাগুলির বাংলা তর্জমা এইরকম –  ‘ঈশ্বরের নিকটতম তিনি। সর্বশক্তিমানের কাছে এরচেয়ে বেশি আর কোনো মানুষের পক্ষে পৌঁছানো…

Read More