নবব্রত ঘোষাল

নিউটন-৫

‘থিয়োরি অফ কালারস্‌’

কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির সদ্য গ্র্যাজুয়েট, তরুণ নিউটন আলোর নতুন এক থিয়োরি পেশ করলেন। একান্ত নিভৃতে নোটবুকের পাতায় রচিত হল অভিনব সেই আলোক তত্ত্ব। সুদীর্ঘকালের লালিত মানুষের যে বিশ্বাস – সূর্য থেকে আগত শুভ্র আলো সবচেয়ে খাঁটি, সবচেয়ে বিশুদ্ধ, অর্থাৎ, মৌলিক চরিত্রের, আর তা অন্ধকার ও ছায়ার প্রভাবে ভিন্ন ভিন্ন বর্ণের বলে প্রতিভাত হয় মাত্র, এবং নানা বর্ণের আলো যা প্রকৃতিতে দেখা যায়, সেগুলি সাদা আলোর ‘মডিফিকেশন’ অর্থাৎ অপর কোনো রূপে প্রকাশ ভিন্ন আর কিছু নয় – নিউটন বুঝলেন, এ-সমস্তই ভ্রান্ত ধারণা। সূর্যালোক আদৌ বিশুদ্ধ নয়। সাদা আলো, আদতে বহু বর্ণের এক মিশ্রণ। ‘হেটেরোজিনিয়াস’ চরিত্রের। আর তাই, একে নানা বর্ণে ভেঙে ফেলাও সম্ভব।          

এই সত্য উদ্ঘাটনের কাজটি মোটেও সহজে হয়নি নবীন গবেষকের। প্রিজম নিয়ে অনেকগুলি পরীক্ষা করেন নিউটন। পরীক্ষার ফল বিচার করে এমন এক সিদ্ধান্তে পৌঁছলেন যা লিখতে গিয়ে হাত কেঁপে ওঠে তাঁর। সাদা আলোর মিশ্র চরিত্র আবিষ্কার প্রসঙ্গে, ১৬৭২ সালে, র‍য়্যাল-সোসাইটির সেক্রেটারি হেনরি ওল্ডেনবার্গকে লেখা চিঠিতে নিউটন মন্তব্য করেন – ‘এটা অনুধাবন করতে নিজেকেই প্রত্যয় জোগাতে হয়। দাবিটি (সাদা আলো যে মৌলিক নয়) প্রচলিত মতের একেবারেই যে বিপরীত, আর তাই একে অনুমোদন দেওয়া বিশেষ দুরূহ কাজ।’ 

কিন্তু, ঠিক কীভাবে উপনীত হলেন নিউটন সেই সত্যে, যা দু-হাজার বছরের প্রাচীন ধ্যান-ধারণাকে সমূলে উপড়ে ফেলে? জন্ম দেয় এক নতুন আলোক তত্ত্বের?   

শুরুটা কেমব্রিজেই। যখন তিনি গণিত, প্রাকৃতিক দর্শন ও বৈজ্ঞানিক পরীক্ষানিরীক্ষা সংক্রান্ত একটির পর একটি বই গোগ্রাসে পড়ে চলেছেন। ওই সময়, অর্থাৎ ট্রিনিটি কলেজে আন্ডার-গ্র্যাজুয়েট স্তরেই আলোক সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি বই পড়লেন নিউটন। নোটবুক দেখলে বোঝা যায়, প্রথমেই ওয়াল্টার চার্লিটন এবং দেকার্তের বই পড়ছেন তিনি। দেকার্তের বইটি ছাড়াও, ১৬৬৬ সাল নাগাদ রবার্ট হুকের ‘মাইক্রোগ্রাফিয়া’ বইটিও পড়লেন নিউটন। বিরোধ বাঁধল। আলোর বর্ণ নিয়ে হুক যে থিয়োরি দিয়েছেন তা মেনে নিতে পারছেন না এই যুবক। হুক কি বলছেন? আলোর চরিত্র ও বর্ণ নিয়ে হুকের যে তত্ত্ব তা হল – আলো, পালস্‌ বা স্পন্দনের সমষ্টি বিশেষ এবং আমাদের চোখের রেটিনায় এই পালস্‌ যে বিভ্রান্তির ছাপ (confused impressions) ফেলে তা থেকেই আলোকে নীল বা লাল বর্ণের বলে অনুভূত হয়। নিউটন তাঁর নোটবুকে (MS Add 3996) রবার্ট হুকের মাইক্রোগ্রাফিয়া থেকে যে নোট নিয়েছেন সেখানে তিনি “confused” শব্দটি বাদ দিলেন। অর্থাৎ আলোকে নীল বা লাল দেখাটা আমাদের চোখের ভ্রান্তি যে নয় তা স্পষ্ট বুঝতে পেরেছেন যুবকটি। 

নিউটন আলোর যে নতুন মডেল তৈরি করলেন সেখানে, আলোকে তিনি কোনো পালস্‌ বা স্পন্দন বলে বিবেচনা করলেন না, বরং অসংখ্য কণার স্রোত (stream of corpuscles) হিসাবে ধরলেন। লিখলেন, সাদা আলো বা সূর্যালোক হল এই কণাদেরই সংমিশ্রণ। আলোর কণারা ভিন্ন ভিন্ন গোত্রের এবং সাদা আলোর মিশ্রণ থেকে আলাদা হয়ে চোখে পৌঁছলে বিশেষ একটি বর্ণের অনুভূতি জাগায় তারা আমাদের চোখে।

আলোর বর্ণ সংক্রান্ত যে বইটি নিউটনের উপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলল, সেটি রবার্ট বয়েল-এর লেখা – ‘Experiments and Considerations Touching Colours’। বইটি প্রকাশ পাওয়ার প্রায় সঙ্গে-সঙ্গেই নিউটন তা সংগ্রহ করে পড়ে ফেললেন।   

বয়েল লিখেছেন – “আলোর বর্ণ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য প্রিজম হল সর্বোৎকৃষ্ট যন্ত্র“। সেই সঙ্গে আলো নিয়ে নানা পরীক্ষার বর্ণনা করেছেন বয়েল। খানিকটা প্রস্তাব আকারে পেশ করেছেন সেগুলি। নিউটন তাঁর যে নোটবুকটিতে ‘কয়েকটি দার্শনিক প্রশ্ন’ (MS Add 3996) লিপিবদ্ধ করেন, সেই নোটবুকেই ‘অফ কালার্স’ শিরোনামে বয়েলের বই থেকে কিছু বাছাই করা অংশ লিখে রাখেন। আলো নিয়ে গবেষণার পথটি, সম্ভবত তখনই মনে মনে এঁকে ফেলেন নিউটন এবং আলোর স্বরূপ বুঝতে প্রথমে একটি ত্রিকোণাকার প্রিজমকেই বেছে নেন।

অন্য আর একটি নোটবুকেও (MS Add 3975-‘Chemical Notebook’) বয়েলের বই থেকে আরো কিছু বাছাই করা অংশ কপি করে রাখলেন। আর এই নোটবুকেই তাঁর প্রথম আলোর পরীক্ষাটি লিপিবদ্ধ করেছেন। 

এ-যাবত নানা রকম পরীক্ষার বিবরণ নোটবুকে উল্লেখ থাকলেও এবারই প্রথম একখানি প্রিজম হাতে ‘এক্সপেরিমেন্ট’ করতে প্রস্তুত হলেন নিউটন। একটি কালো কাগজ নিয়ে তাতে একটি সরলরেখা আঁকলেন, যার এক-অর্ধ উজ্জ্বল নীল বর্ণের ও বাকি অর্ধ উজ্জ্বল লাল। এরপর, প্রিজমটিকে চোখের সামনে ধরে রঙদুটি থেকে আগত রশ্মির প্রতিসরণের ধরণ পর্যবেক্ষণ করলেন। পরীক্ষালব্ধ ফলাফল সযত্নে লিখে রাখলেন তাঁর ‘কেমিক্যাল নোটবুকে’। লিখলেন – ‘…blue rays suffer a greater refraction than red ones’ – নীল বর্ণের রশ্মি, লাল বর্ণের রশ্মির চেয়ে অধিকতর প্রতিসৃত হয়।

এরপর নিউটন, তাঁর সেই গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাটির বর্ণনা লিখছেন নোটবুকে।             

প্রিজম নিয়ে তাঁর এই পরীক্ষার সূত্রপাত হয়েছিল সম্ভবত উলস্‌থর্প ম্যনর্‌-এ।  নিউটন তাঁর স্মৃতিচারণায় অর্থাৎ, ১৭২৬ সালে কনদ্যুইত-এর সঙ্গে তাঁর যে কথোপকথন হয়েছিল, সেসময় বলেছিলেন, স্টৌরব্রিজ ফেয়ার থেকে তিনি একটি প্রিজম কিনেছিলেন এবং ১৬৬৫-র প্লেগ মহামারীর সময় তিনি প্রিজমটি নিয়ে উলস্‌থর্পের বাড়িতে যান। 

কেমিক্যাল নোটবুকে লিখে রাখা সেই বর্ণনায় দেখা যায়, প্রথমে ঘরের সমস্ত দরজা-জানলা বন্ধ করে যতটা সম্ভব ঘরটিকে অন্ধকার করলেন নিউটন। একটি জানলার শাটারে ছোট একটি ছিদ্র করে নিলেন যাতে তার মধ্যে দিয়ে কিছুটা সূর্যালোক প্রবেশ করতে পারে। এরপর সেই আলোক রশ্মিকে প্রিজমের মধ্যে দিয়ে পাঠালেন। আর পাঠাতেই – উল্টোদিকের দেওয়ালে কেবল রঙের ঝর্ণাধারা। সেই চিত্তাকর্ষক উজ্জ্বল বর্ণালী দেখে নিউটন রোমাঞ্চিত। কিন্তু তাঁর এই প্রাথমিক ভাললাগাটুকু দীর্ঘস্থায়ী হল না। একটি অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষ্য করলেন। প্রিজমের অনুপস্থিতিতে, দেওয়ালে সূর্যালোক গোলাকার আলোর ফোঁটা সৃষ্টি করে। প্রিজমের মধ্যে দিয়ে প্রতিসৃত আলোর প্রতিবিম্বের আকারও তেমনই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা তো হল না! তার বদলে লাল, কমলা, হলুদ, সবুজ, নীল এসব নানা বর্ণের লম্বাটে, কিছুটা আয়তাকার চেহারার এক আলোক-পটি তৈরি হয়েছে। মেপে দেখলেন বর্ণালীর দৈর্ঘ্য, প্রস্থের চেয়ে প্রায় পাঁচগুণ বড়। 

কেন এমন হল? স্বভাবগত ভাবনার গভীরে ডুবে গেলেন নিউটন। মনের মধ্যে একরাশ প্রশ্ন ভিড় করে আসে। আলোর প্রকৃতির মধ্যেই কি এই রহস্যের সমাধান সূত্র লুকিয়ে আছে? সাদা আলো কি তাহলে মৌলিক নয়? আলাদা-আলাদা বর্ণের আলো একসাথে মিলে-মিশে আমাদের চোখের রেটিনায় কি এই শুভ্রতার অনুভূতি জাগায়? হয়তো সেজন্যই প্রিজমের স্বচ্ছ মাধ্যম অতিক্রম করার পথে সাদা আলো তার মধ্যেকার বিভিন্ন বর্ণে ভেঙ্গে উজ্জ্বল আলোক-পটি গড়ে তুলেছে। ভাল করে  পর্যবেক্ষণ করে দেখলেন, নীল অংশ সবচেয়ে বেশি বাঁক খেয়ে প্রিজম থেকে বের হয়েছে। লাল আলো সবচেয়ে কম বেঁকেছে অর্থাৎ, প্রারম্ভিক গতিপথ থেকে কম বিচ্যুত হয়েছে। তবে কি লাল বর্ণ প্রিজমের কাচের মধ্যে সর্বাধিক দ্রুততায় দৌড়য়, তাই সে কম বাঁকে? আর তুলনায় ধীর গতির নীল বর্ণ বেশি বাঁক খেয়ে প্রিজম থেকে প্রতিসৃত হয়? নাকি এগুলোর কোনোটাই নয়? কাচের প্রিজমই বর্ণের জন্ম দিয়েছে? তবে কি সে বিশ্লেষক নয়, নিজেই জাতক? 

কোনটা সঠিক? তাঁকে জানতে হবে। নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন। প্রয়োজন আরও একটি প্রিজমের। কিন্তু তাঁর এই পল্লীগ্রাম উলস্‌থর্প তো দূর-অস্ত, সমগ্র লিংকনশায়ারেই-বা প্রিজম পাবেন কোথায়? এজন্য তাঁকে কেম্ব্রিজ যেতে হবে। কিন্তু সেখানে-যে প্লেগের তান্ডব চলছে সমানে। প্লেগের হাত থেকে রেহাই মিলবে কবে? আবার কবে খুলবে কেম্ব্রিজ ইউনিভার্সিটির সদর দরজা?

সব কিছুরই একটা শেষ থাকে। অনন্তকাল চলতে পারে না কোনও কিছুই। ১৬৬৬-র মাঝামাঝি সময় থেকে ইংল্যান্ডও প্লেগ-অতিমারির করাল ছায়া থেকে ধীরে-ধীরে নিষ্কৃতি পেল। ১৬৬৭-র এপ্রিলে কেম্ব্রিজ পাড়ি দিলেন নিউটন। 

নিউটনের হিসাবের খাতা ওল্টালে দেখা যায়, ১৬৬৮-র শুরুর দিকে কেমব্রিজে  তিনটি প্রিজম কিনেছেন তিনি। প্রিজম তাঁর কাছে খেলার সামগ্রী নয়। প্রকৃতির এক অনাবিষ্কৃত সত্য অনুসন্ধানে সাহায্য করবে এই তেফলা কাচ। নতুন তত্ত্বের সুদৃঢ় ভিত্তি চাই তাঁর।   

একটি প্রিজমের পাশে আর একটি প্রিজমকে পরস্পরের উল্টোমুখ করে রাখলেন। একটি সূক্ষ্ণ ছিদ্রপথ ধরে ঠিকরে আসা সূর্যালোককে এদের মধ্যে দিয়ে পাঠিয়ে সাদা পর্দায় গড়ে তুললেন প্রতিবিম্ব। যা ভেবেছিলেন ঠিক তাই। প্রথম প্রিজমটি সাদা আলোকে ভেঙে সাতরঙা যে বর্ণালী তৈরি করে, দ্বিতীয়টি পুনরায় তাদের সঙ্গবদ্ধ করে সাদা আলো ফিরিয়ে দিয়েছে। তাঁর অনুমান সঠিক। কাচের প্রিজম কোনো বর্ণের জন্ম দেয় না। তা যদি হত তাহলে, দ্বিতীয় প্রিজমের গা পিছলে বেরিয়ে আসা আলো আরো বর্ণময় হত। কখনই সাদা হত না।   

একটির পর একটি পরীক্ষা করে চললেন নিউটন। না, আর কোনো সংশয় নেই। একটি বিশেষ পরীক্ষাকে বেছে নিলেন। যা আলোক তত্ত্বের অকাট্যতাকে দিনের আলোয় এনে দাঁড় করায়। তরুণ গবেষকটির কাছে প্রিজমের এই পরীক্ষাটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সাদা আলো থেকে নীল ও লাল বর্ণের রশ্মিকে পৃথক করে নেওয়া সম্ভব এই পরীক্ষার দ্বারা। পরীক্ষাটিকে তিনি ‘experimentum crucis’ বলে উল্লেখ করলেন।                        

১৬৭২-এর ৬ ফেব্রুয়ারি হেনরি ওল্ডেনবার্গকে লেখা চিঠির মাধ্যমেই তাঁর নতুন আলোক তত্ত্ব লন্ডনের র‍য়্যাল-সোসাইটিতে পাঠালেন নিউটন। এর আগে এই আবিষ্কার তিনি নোটবুকেই আগলে রেখেছিলেন প্রায় ছ’বছর। ততদিনে, আলোর বর্ণ সম্পর্কে তাঁর স্বচ্ছ ধারণা জন্ম নিয়েছে। নীল, সবুজ, হলুদ, লাল এরকম কয়েকটি বর্ণই যে প্রকৃতপক্ষে মৌলিক, স্বকীয় ধর্ম বিশিষ্ট এবং এদের সঠিক আনুপাতিক মিশ্রণই যে সাদা আলো সৃষ্টি করে, এই তত্ত্বে গভীর আস্থা তাঁর, লেশমাত্র সন্দেহ নেই আর। কিন্তু এমনতর অভিনব, র‍্যাডিক্‌ল্‌ বৈজ্ঞানিক চিন্তা গ্রহণে কি প্রস্তুত সমসাময়িক বিজ্ঞানীরা?

 দুদিন পর, ৮ ফেব্রুয়ারি, র‍য়্যাল-সোসাইটিতে পড়া হল পেপারটি। সেই দিনই ওল্ডেনবার্গ চিঠি লিখলেন নিউটনকে। চিঠিতে ওল্ডেনবার্গ লিখেছেন, পেপারটি পাঠের সময় উপস্থিত ব্যক্তিদের সমস্ত মনোযোগ কেড়ে নেয় এবং বিরল রকমের প্রশংসাও লাভ করে (‘…met both with a singular attention and an uncommon applause…’)। এবার নিউটনের সম্মতি পেলেই পেপারটি, র‍য়্যাল-সোসাইটির জার্নাল, ফিলজফিক্যাল ট্রানজাকশন-এ প্রকাশ করা হবে।

 নিউটন বোধহয় এতটা আশা করেননি। এত সত্ত্বর যে গবেষণাপত্রটি গৃহীত হবে তা ভাবতেই পারেননি তিনি। নিউটন সম্মতি জানাতে দেরি করলেন না। ১৬৭২-র ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ পেল পেপারটি। প্রকাশ পাওয়া মাত্রই ইউরোপের প্রথম সারির বিজ্ঞানীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করল ‘থিয়োরি অফ কালার্স’। ভিন্ন ভিন্ন অভিমত ব্যক্ত করতে শোনা গেল তাঁদের। 

যে সময়ের কথা বলছি, কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির চার দেওয়ালের বাইরে আইজাক নিউটন, তখন সম্পূর্ণ অপরিচিত এক নাম। ১৬৭২-এর এই গ্রাউন্ডব্রেকিং পেপারটি রাতারাতি তাঁকে বিখ্যাত করে তুলল। শুধুমাত্র ইংল্যান্ড নয়, ইউরোপের অন্যান্য বেশ কয়েকটি দেশেও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল খ্যাতি। 

ডাচ পদার্থবিদ ক্রিস্টিয়ান হাইগেনস, নিউটনের গবেষণা পত্রটি পড়ে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করলেন। হাইগেনস ও রবার্ট বয়েল তাঁদের নিজেদের লেখা বই উপহার স্বরূপ পাঠালেন নবীন গবেষকটিকে।  

এ-পর্যন্ত সবকিছু নিউটনের প্রত্যাশা ছাপিয়েই ঘটে চলেছিল। গোল বাঁধল গবেষণাপত্রটির উপর লেখা রবার্ট হুকের সমালোচনা পত্রটিকে ঘিরে। রবার্ট হুক আবার যে-সে ব্যক্তি নন। তিনি তখন র‍য়্যাল-সোসাইটির অত্যন্ত প্রভাবশালী একজন বিজ্ঞানী এবং তাঁর আলোক সংক্রান্ত বই, ‘মাইক্রোগ্রাফিয়া’ মাত্র কয়েক বছর আগেই প্রকাশ পেয়েছে। র‍য়্যাল-সোসাইটিতে জমা দেওয়া সেই সমালোচনা পত্রে তিনি বিরুদ্ধ অভিমত ব্যক্ত করলেন – সাদা আলোকে যে ‘হেটেরোজিনিয়াস’ চরিত্রের বলে দাবি করা হয়েছে, তা বড়জোর এক ‘হাইপথিসিস’, অনুমান মাত্র। আলো নিয়ে এরকম একাধিক হাইপথিসিস তো রয়েছেই। 

ফরাসি বিজ্ঞানী, ইগনাস গাসতোঁ পারদিস-এর মন্তব্যও অনুরূপ। ওল্ডেনবার্গকে লেখা পত্রে, নিউটনের এই পরীক্ষা-সিদ্ধ আলোক তত্ত্বকে যদিও ‘অসাধারণ মৌলিক একটি কাজ’ হিসেবে উল্লেখ করলেন, তবুও থিয়োরি না বলে একে তিনি প্রকল্প বা হাইপথিসিস-ই আখ্যা দিলেন।     

হুক এবং অন্যান্য বিজ্ঞানীদের সমালোচনার জবাবে, নিউটন তাঁর প্রিজমের এক্সপেরিমেন্ট-এর ফলাফলকেই প্রমাণ স্বরূপ তুলে ধরার চেষ্টা করলেন। ওল্ডেনবার্গ-কে লিখলেন, ‘…আমি আগেই আপনাকে জানিয়েছি, যে তত্ত্বের অবতারণা করেছি তা কখনোই অনুমানের ভিত্তিতে নয়, সরাসরি পরীক্ষার দ্বারা নির্মিত। আর তাই, এই থিয়োরির সত্যতা যাচাই করার জন্য উপযুক্ত পরীক্ষাগুলি করে নেওয়াই সঠিক রাস্তা…।’

র‍য়্যাল-সোসাইটির পক্ষ থেকে নিউটনকে জানানো হল, এক্সপেরিমেন্ট-এর সাহায্য নিয়েই তাঁর আলোক তত্ত্বের সত্যতা বিচার করা হবে এবং তিনি যেন প্রিজমের আরো কিছু সুনিশ্চিত পরীক্ষা পাঠান।  

নিউটন র‍য়্যাল-সোসাইটির সেক্রেটারি ওল্ডেনবার্গকে চিঠি মারফত শুধুমাত্র জানালেন – এই মুহূর্তে তিনি অন্য বিষয় নিয়ে বিশেষ ব্যস্ত। 

গবেষণা পত্রটি লেখার আগে, বারংবার প্রিজমের পরীক্ষাগুলি করেন নিউটন। প্রিজম ও লেন্স এর সাহায্যে, সূর্যালোক বিশ্লিষ্ট করে তার মৌলিক বর্ণগুলিকে ঠিক কীভাবে পৃথক করে নিতে হয় এবং পুনরায় তাদের একত্রিত করে সাদা আলো ফিরে পাওয়া সম্ভব, নিউটন ছাড়া দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তি জানেন না। ১৬৭২-এর গবেষণা পত্রে, নিউটন তাঁর আলোর পরীক্ষার কিছু গুরুত্বপূর্ণ খুঁটিনাটি বিষয় গোপন করে গেলেন। তার ফলে, অপর কোনো বিজ্ঞানীর পক্ষে এই পরীক্ষাগুলি করে দেখা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়াল। তাছাড়া, এ-কথা ভুললে চলবে না, নিউটনের মতো এমন সুদক্ষ ‘এক্সপেরিমেন্টালিস্ট’ এই গ্রহে কজনই-বা আছেন! ইউরোপের নানা দেশের বিজ্ঞানীরা প্রিজম নিয়ে পরীক্ষা করে যখন নিউটন বর্ণিত অনুরূপ ফলাফল পেলেন না, তাঁরা ভাবলেন নিউটনের দাবিগুলি নিশ্চয়ই সঠিক নয়। পুরোপুরি অনুমান নির্ভর এই তত্ত্ব। 

হাইগেনস প্রথমে প্রশংসা করেছিলেন ঠিকই। কিন্তু কয়েকমাস পরে ওল্ডেনবার্গ-কে লেখা এক চিঠিতে তিনিও নিউটনের ‘থিয়োরি অফ কালার্স’-কে ‘সম্ভাব্য হাইপথিসিস’ বলেই চিহ্নিত করলেন। তাঁর মতে, নিউটনের প্রকল্পটি গ্রহণীয় হবে যদি কেবলমাত্র হলুদ ও সবুজ, এই দুই বর্ণকেই মৌলিক ধরা হয়। কারণ, অন্য  সকল বর্ণদের এই দুটির সংমিশ্রণে পাওয়া সম্ভব। 

এখানে একটি কথা বলে নেওয়া দরকার, সমসাময়িক যে সব বিজ্ঞানীরা ছিলেন, প্রতিভার বিচারে তাঁদের মধ্যে হাইগেনসকেই নিউটনের সঙ্গে তুলনা করা চলে। সতের শতকের ইউরোপের দুপ্রান্তে বসে এই দুই বিজ্ঞান দার্শনিক প্রায় সমান্তরালভাবে একটার-পর-একটা মহা আবিষ্কারের মাইলস্টোন ছুঁয়ে গেছেন।

এখন দেকার্তের ‘মেক্যানিকাল ফিলসফি’ অর্থাৎ যান্ত্রিক দর্শন-এর আঙ্গিকে আলোক তত্ত্বকে বোঝার চেষ্টা করছেন হাইগেনস। অসুবিধা হচ্ছে তাঁর।   

কিন্তু নিউটন জানেন, হলুদ ও সবুজের মতোই নীল, লাল, অনেক বর্ণই মৌলিক চরিত্রের। নিউটন লিখলেন, “আমি তো কখনোই বলিনি, ঠিক কি কারণে মৌলিক বর্ণেরা আলাদা আলাদা গুণবিশিষ্ট হয়। কেবল এটুকুই দেখাতে চেয়েছি, তারা স্বকীয় ধর্মযুক্ত, ধ্রুব, অপরিবর্তনীয়। কেন তাদের এই স্বকীয়তা, ‘মেক্যানিকাল হাইপথিসিস’-এর সাহায্যে তার ব্যাখ্যা দেওয়া খুব জটিল কিছু কাজ নয়, আমি তা  অন্যদের ওপরই ছেড়ে দিতে চাই।”  

হাইগেনস বুঝলেন নিউটনের বক্তব্য। কিন্তু সম্পূর্ণ একমত নন। সাদা আলোর ‘হেটেরোজিনিয়াস’ চরিত্র নিঃসংশয়ে গ্রহণ করতে পারছেন না তিনি।

নিউটন ও হাইগেনস-এর মধ্যে পত্রযুদ্ধ চলতে থাকল আরো বেশ কিছুদিন।             

ক্রমে নিউটনের মনে হতে শুরু হল তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। আহত ও ক্রুদ্ধ নিউটন, ওল্ডেনবার্গকে (১৬৭৩ এর মার্চ মাসে) চিঠি পাঠালেন এই মর্মে যে, তিনি র‍য়্যাল-সোসাইটির সদস্য পদ পরিত্যাগ করতে চান।  

ঢের হয়েছে! তিনি আবার আগের শান্ত নিস্তরঙ্গ জীবনে ফিরে যাবেন। হায় রে! তা যে আর হওয়ার নয়। যে খ্যাতিময় জীবনে প্রবেশ করেছেন তিনি সেখানে মাঝে মধ্যে বিক্ষুব্ধ ঝোড়ো হাওয়া বইবে বইকি!       

সেক্রেটারি ওল্ডেনবার্গ ও আরো কয়েকজনের ঐকান্তিক অনুরোধে নিউটন তাঁর সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করলেন। র‍য়্যাল-সোসাইটির সদস্য পদ ত্যাগ করা নিয়ে আর জোরাজুরি করলেন না।     

এই ঘটনার বছর দেড়েক পর, ১৬৭৪-এর অক্টোবর মাসে, লিয়েজ (বর্তমানে বেলজিয়ামের একটি শহর) থেকে একটি পত্র এসে পৌঁছল লন্ডনের র‍য়্যাল-সোসাইটির দপ্তরে। পত্রটি পাঠিয়েছেন লিয়েজ শহরের ইংলিশ কলেজের এক প্রবীণ প্রফেসর, ফ্রান্সিস লিনাস। পত্রে তিনি লিখেছেন – 

“মহাশয়, ফিলজফিক্যাল ট্রানজাকশন-এ প্রকাশিত, কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির গণিতের প্রফেসর আইজাক নিউটনের গবেষণা পত্রটি দেখার সুযোগ ঘটেছে আমার অল্প ক’দিন আগেই। প্রিজমের মধ্যে দিয়ে সূর্য-রশ্মি পাঠিয়ে বিপরীত দেওয়ালে নানা বর্ণের একটি প্রতিবিম্ব পেয়েছেন তিনি। যার দৈর্ঘ্য, প্রস্থের চেয়ে অনেকটা বড় এবং এই ফল প্রত্যক্ষ করে তিনি তাঁর নতুন আলোক তত্ত্ব গড়েছেন। ঠিকই, এই গবেষক সঠিক কথাই বলেছেন, তাঁর পর্যবেক্ষণে কোনও ভুল নেই। প্রিজম দ্বারা গঠিত বর্ণালীর ক্ষেত্রে অনুরূপ ঘটনা অতীতে আমিও প্রত্যক্ষ করেছি। কিন্তু এরকমটা তখনই হয়, যখন সূর্যের কিরণ মেঘের মধ্যে দিয়ে আসে। মেঘমুক্ত রৌদ্রজ্জ্বল দিনে প্রিজম-বর্ণচ্ছটার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের এই বিভেদ দেখা যায় না। আমার সিদ্ধান্ত এই যে, গবেষণাপত্রটির লেখক যে লম্বাটে ধরনের বর্ণালী পর্যবেক্ষণ করেছেন, তা প্রকৃত সূর্যালোক দ্বারা সৃষ্ট নয়, সূর্যের নিকটবর্তী কোনো উজ্জ্বল মেঘ থেকে বিকীর্ণ রশ্মির প্রভাবেই ঘটেছে। সুতরাং, এই পরীক্ষাকে ভিত্তি করে যে আলোক তত্ত্বের অবতারণা করা হয়েছে তা ভ্রান্ত। আমার বক্তব্য অনুধাবনের জন্য আর কিছু না, শুধুমাত্র অভিজ্ঞতাই যথেষ্ট।               

পরিশেষে বলি, ওই বিদ্বান ব্যক্তির কোনোপ্রকার মর্যাদা হানির অভিপ্রায়ে এই ভ্রান্তির উল্লেখ করা হয়নি। 

ইতি –

আপনার আজ্ঞাধীন,

ফ্রান্সিস লিনাস – ৬ অক্টোবর, ১৬৭৪।”

লিনাসের এই চিঠির একখানি কপি নিউটনকে পাঠানো হল। 

চিঠি পড়ে নিউটনের মনের অবস্থা কেমন হয়েছিল, তা আন্দাজ করা খুব কঠিন নয়। চিঠির মর্মবস্তু দেখে নিউটন বুঝলেন, তাঁর এক্সপেরিমেন্ট-টি ভাল মতো বোধগম্যই হয়নি ভদ্রলোকের। তাঁর পরীক্ষায় বর্ণালীর যে দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি ঘটছে সে তো প্রিজমের অক্ষ বরাবর নয়, বরং অক্ষের উল্লম্ব রেখা বরাবর। কী বিড়াম্বনায় পড়লেন নবীন গবেষক! 

এ-চিঠির কোনো উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন অনুভব করলেন না নিউটন। তাছাড়া, তিনি তো ঠিকই করে নিয়েছেন, বিজ্ঞানের প্রচারে তিনি আর নিজেকে জড়াবেন না। তবুও, কি মনে হল, র‍য়্যাল-সোসাইটিকে বললেন, প্রত্যক্ষভাবে তিনি কোনো উত্তর দিতে চান না, তবে ফ্রান্সিস লিনাস-কে জানিয়ে দেওয়া যেতে পারে যে এই পরীক্ষাটি তিনি মেঘমুক্ত একটি দিনেই করেছিলেন।           

প্রফেসর লিনাস এতটুকুও না দমে, আবার এক পত্র লিখলেন র‍য়্যাল-সোসাইটিকে। এবার নিউটন তাঁর পরীক্ষার বিবরণ ও পরীক্ষাটি যে সকল বিজ্ঞানীরা সফল ভাবে করেছেন তাঁদের সবার নাম উল্লেখ করে একখানি পত্র পাঠালেন। দুটি পত্রই ফিলজফিক্যাল ট্রানজাকশন-এ ছাপানো হল। 

এর অল্প ক’দিন পরই লিয়েজ থেকে খবর এল, প্রফেসর লিনাস গত হয়েছেন। তা-বলে বিতর্কের অবসান হল, এমন ভাবার কারন নেই। এবার তাঁর এক ছাত্র দায়িত্ব নিলেন প্রফেসর লিনাস-এর মানরক্ষার। ছাত্রটি, অ্যান্টনি লুকাস নামক এক যাজককে নিয়োগ করলেন, যাতে তিনি পরীক্ষাটি সঠিক ভাবে সম্পাদন করে নিউটনের দাবি নস্যাৎ করে দেন। 

ইতিমধ্যে, লন্ডনের র‍য়্যাল-সোসাইটি নির্ঘণ্ট প্রকাশ করে জানালো, এপ্রিল ২৭, ১৬৭৬, নিউটন প্রস্তাবিত ‘থিয়োরি অফ কালার্স’-এর সত্যতা যাচাই করা হবে। অত্যন্ত চমকপ্রদ বিষয় হল, রবার্ট হুক আগেই পরীক্ষার সাফল্য ঘোষণা করে  বসলেন। সত্যি কথা বলতে কি, নিউটনের প্রিজমের পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে হুকের বিশেষ সংশয় ছিল না। তিনি নিজেও বিরাট মাপের একজন ‘এক্সপেরিমেন্টালিস্ট’। কিন্তু পরীক্ষার ফলাফলের বিশ্লেষণ নিয়েই ছিল তাঁর যত আপত্তি। যাইহোক, সোসাইটিতে নিউটন বর্ণিত প্রণালীতে প্রিজমের পরীক্ষাটি সম্পন্ন হল। সকল বাধা দূর করে সফলভাবে উত্তীর্ণ হল ‘থিয়োরি অফ কালার্স’। উড়ল বিজ্ঞানের বিজয় কেতন। নবীন বিজ্ঞানীর মুখে তৃপ্তির হাসি। না, আর কোনও সংশয়ের অবকাশ নেই। 

কিন্তু, লিয়েজ শহরে তখন অন্য খবর। অ্যান্টনি লুকাস পরীক্ষা করে দেখলেন সূর্যালোক প্রিজমের মধ্য দিয়ে প্রতিসৃত হয়ে যে বর্ণালীর সৃষ্টি করে তার দৈর্ঘ্য প্রস্থের তুলনায় তিন বা বড়জোর সাড়ে-তিনগুণ বড়। কোনোমতেই নিউটনের দাবি মোতাবেক পাঁচগুণ নয়। এখানেই শেষ নয়। লুকাস আরো অনেকগুলি পরীক্ষা করলেন। যে সব ফলাফল পেলেন তা নিউটনের তত্ত্বকে নাকি মান্যতা দেয় না। লুকাস পত্র মারফত তাঁর এই গবেষণা লব্ধ ফলাফল র‍য়্যাল-সোসাইটিতে পাঠালেন।

প্রত্যুত্তরে নিউটন লিখলেন, “…instead of a multitude of things try only the Experimentum Crucis. For it is not number of Experiments, but weight to be regarded; & where one will do, what need many?” তাঁর তত্ত্বের সত্যতা যাচাই-এর জন্য এতগুলি পরীক্ষার কী প্রয়োজন? যেখানে একটিই যথেষ্ট। 

নিউটন এ-ও বুঝলেন, বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় লুকাসের হাত নেহাত কাঁচা। আর তাই এই বিভ্রাট। পত্রে জানালেন, “যে প্রিজমটি আমি ব্যবহার করেছি তার প্রতিসারক কোণের মান ৬৩ ডিগ্রি, ১২মিনিট। আমি নিশ্চিত যে, মিস্টার লুকাস যে প্রিজমটি দিয়ে পরীক্ষা করেছেন, তার কোণের মান কখনোই ৬০ ডিগ্রি নয়। অবশ্যই তার চেয়ে কম। আমি চাই মিস্টার লুকাস এই পরীক্ষাটি পুনরায় সম্পাদন করুন এবং যথাযথ সতর্কতা ও সূক্ষ্ণতা অবলম্বন করুন।”   

নিউটন ও লুকাসের মধ্যে এই বিবাদ চলে প্রায় দু’বছর।                      

‘থিয়োরি অফ কালার্স’ প্রকাশ পাওয়ার তিন দশক পর, ১৭০৪ সালে, আলোক বিজ্ঞানের বিখ্যাত বই, ‘অপটিক্স’ প্রকাশ করবেন নিউটন, সেখানে বিস্তৃত বিবরণ সহ প্রিজমের পরীক্ষাগুলির উল্লেখ থাকবে। এরপর তাঁর আলোক তত্ত্ব ঘিরে জমে ওঠা সকল বিতর্কের হবে অবসান।

কিন্তু এসব অনেক পরের কথা। আমরা আবার ফিরে যাই ১৬৬৭ তে, যখন নিউটন বাক্স-প্যাঁটরা গুছিয়ে কেম্ব্রিজের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। আঠারো মাসের গৃহ বন্দী দশায় অনেকগুলি অভিনব আবিষ্কারের ভাবনা ভাবা হয়ে গেছে তাঁর। কিন্তু কোনোটাই পূর্ণতা পায়নি। এখনো অনেক, অনেক কাজ তাঁর বাকি। মাথা ছিঁড়ে  খাচ্ছে তারা। কেমব্রিজ তাঁকে ডাকছে।   

(চলবে)

অলঙ্করণঃ সৌহার্দ্য চক্রবর্তী

 

সূত্রনির্দেশ 

 

  1. R. S. Westfall, Never at rest, Cambridge University Press, New York, 1980
  2. R. Iliffe, Priest of Nature, Oxford University Press, New York, 2017 
  3. A. R. Hall, Isaac Newton – Adventurer in Thought, Cambridge University Press, UK, 1996
  4. P. Fara – Newton shows the light: a commentary on Newton (1672) ‘A letter … containing his new theory about light and colours…’, Phil. Trans. R. Soc. A 373: 20140213.
  5. http://www.newtonproject.ox.ac.uk/view/texts/normalized/NATP00003
  6. http://www.newtonproject.ox.ac.uk/view/texts/normalized/NATP00020
Facebook Comments

Related posts

Leave a Comment