শিশির আজম

শিশির আজমের কবিতাগুচ্ছ

 

 

গোল্লা

 

স্কুলের পরীক্ষায় রচনা লিখন এসেছিল ‘গরু’
আমি কিছুই লিখিনি

টিচার আমায় গোল্লা দিয়েছিলেন

আমি আদৌ ঘুমিয়ে ছিলাম না আর গরু বিষয়ে আমি জানি

যদিও এখনো আমার মাথায় আসেনি
টিচার
আমায় গোল্লা দিলেন কেন
গরু
নিরীহ আর মহৎ একটা প্রাণি
ওকে নিয়ে কী লিখবো আমি

আচ্ছা আমাকে নিয়ে যদি রচনা লিখতে বলা হয়
গরু
কী লিখবে তাহলে
টিচার ওকে কত নম্বর দেবেন
ওই গরুকে
না কি ও-ও পাবে
আস্ত এক গোল্লা

 

 

যে কথাটা বেমালুম চেপে যাওয়া হয়

 

উয়ারী আর বটেশ্বর দুটো গ্রাম
অথবা
একটাই গ্রাম

ওখানে আমরা বেঁচে ছিলাম হাসিখুশি শিশুদের মতো
পাখিদের সঙ্গে
পাশে নদী
আর ধ্বনিময়তার বিশাল বন

অমলিন আর অন্তরঙ্গ এক আকাশ ছিল আমাদের
অনেক দুপুর
কুকুর
পাল পাল গবাদিপশু
আর একটা আগ্নেয়গিরি

ও হ্যাঁ
আগ্নেয়গিরির কথাটা কিন্তু আপনাদের কাছে
প্রত্নতাত্বিকগণ
বেমালুম চেপে গেছেন

 

 

সুখ

 

তোমার অতিসাধারন বিষয়াশয় আর কাজের ভিতর
তোমাকে সুখীই ভাবি
সুখে থাকো
হয়তো দেখতে পাওনি টেবিলে খবরের কাগজের অবিমৃষ্যকারিতা
তোমার ব্রাজিলিয়ান কফি তোমার রুশমার্কিনের গোয়েন্দাযুদ্ধ
সাম্যবাদী আত্মার শালবনে আমরা কতোবার ঘুরতে গেছি যার যার
পছন্দের পোশাকে
জানো না সেখানে গ্রাম এখন গ্রাম নেই শহর শহর নেই শহর গ্রাম
টগবগ ফুটছে
জলের ভিতর হাঁটি গোগলের জলের পাশাপাশি
বেঁচে থাকার জন্য তারা বড্ড গোলমাল করছে এমনকি মৃতদের সঙ্গেও
বিপ্লবীদের গ্রান্ড ক্যানিয়ন থেকে মানবসূত্র চুরি করে
প্রত্যেকে চেষ্টা করছে যার যার খিদে বাড়িয়ে নিতে
যদিও বর্তমান মানুষ আদিম মানুষের মতোই সামুদ্রিক ছোট্ট শামুকের
খোলের মধ্যে নিজেকে সঁপে দিতে স্বস্তিবোধ করে
আমরা জেনে গেছি রাস্তাদের নির্দিষ্ট রেখা নেই ইন্দ্রিয়ময়তা আছে
বিদ্যালয় নেই চিন্তাপ্রণালী নেই জুতোর পাহাড় আছে
ফুলের খামখেয়ালিপনা আর গর্ভ্যচ্যূতি দেখতে পাচ্ছি
স্কুলবালিকাদের সাতডিঙা মুখচ্ছবিতে
শত শত গাঁজাখোর গাজায় শিশুহত্যার প্রতিবাদে মিছিলে নেমেছে
হয়তো তুমি সুখী, তোমাকে সুখীই ভাবি
প্রস্তরীভূত বাক্যবিন্যাসে কেউ একজন জীবনানন্দ বুঝিয়ে কেড়ে নিয়েছে
বদরক্তমাখা তোমার চুলের কাঁটা তোমার অক্ষশক্তির আদিম একাগ্রতা
এখন তুমি মুক্ত তোমাকে অনুসরণ করা সূর্যকেন্দ্রিক ছায়ানিসর্গ থেকে
দুঃস্বপ্নগুলি বেঞ্চের নিচে ঠেলে দিয়ে আমরা মোড়ের দোকানটাকে পাহারা দিই
যেন ঈশ্বর আমাদের দেখেননি চেনেন না কশ্মিনকালেও
বাদিকে বোটানিকাল গার্ডেনের গেটে উনি দাঁড় করিয়েছেন
এক নাস্তিককে
শান্ত
জলের মতো রাস্তা

 

 

মাসির মেয়েরা

 

বেশ রাত হয়ে গিয়েছিল
আর মাথায় এলো এ পথে আমি নতুন

রাস্তায় পুরুষ মানুষ ছিল
পুলিশ ছিল কুকুর ছিল
অন্য কোন জন্তুজানোয়ার তো ছিল না

রাস্তার পাশে রং ঘষে দেওয়া পুরনো কালের বাড়িটার সামনে
আবছা আলোয় সারি সারি দাঁড়ানো
অনেকগুলো মেয়ে দেখলাম
স্বল্প পোশাক
প্রত্যেকের ঠোঁটের রং একই
একই চোখ
একই হাসি
ভেতরে কে যেন চেঁচিয়ে মাসিকে ডাকলো
মাসি
ওদের তো মা নেই

 

 

রেনোয়া

 

ক্লদ মনের বউ শুয়ে শুয়ে সুখী সুখী নিমগ্নতায়
বই পড়ছে
এরকম একটা ব্রাইট এ্যান্ড কালারফুল অয়েল পেইনটিং
তুমি এঁকেছো
কেন আঁকলে
ওর প্রাইভেসি আর সোশাল এ্যাপিলের বিষয়টা মাথায় নিলে না
নাকি কামিই
তোমার বন্ধুর বউ
এটা চেয়েছে
তুমি কি ভালোবাসো ওকে
তুমি কি দেখেছো ওর সান ওর ইম্প্রেশান
এখন
শুয়ে শুয়ে ও বই পড়ছে
বই পড়ছে
আমি ওকে পড়ছি
হ্যাঁ
আমি ওকে পড়ছি
আর আমার টেবিল আর আমার বইয়ের তাক
চাইছে আমাকে পিষে ফেলতে

 

 

মাইয়ারা ঢেঁকিতে পাড় দিতেছে

 

ছোট বেলায় দেখছি আমাদের বাড়িতে সারারাত জাইগা
পালা কইরা পাড়ার মাইয়ারা
ঢেঁকিতে ধান ভানতেছে
কিচ্ছা করতেছে
গান গাইতেছে
সারারাত ধইরা
গুড়া কুটতেছে পিঠা বানাবার লাইগা
আজও
দরকারি কাজ ভুইলা যখন আমি চোখ বন্ধ রাখি
ঘুমাই না
ওরা
ওই মাইয়ারা
দেখি আমাদের ঢেঁকিতে পাড় দিতেছে
পাড় দিতেছে
পাড় দিতেছে
সারারাত ধইরা
কেন
ওদের চোখে কি ঘুম নাই

Facebook Comments

Related posts

Leave a Comment