তন্ময় ভট্টাচার্য

তন্ময় ভট্টাচার্য-র কবিতাগুচ্ছ

 

 

সময়জ্ঞান

চোখ বুজলেই মৃত একটা শরীর। হাত বাড়িয়ে বলছে টেনে তোলার কথা। মৃত, অথচ দেখে মনে হয় ঘুমন্ত—এমন ভুলচুক দিন আমাদেরও কেটেছে অনেক। তালু থেকে ছিটকে পড়েছে জলের ঝাপট। সাড়া না-পেলে সন্দেহ গাঢ় হয়। কান গিয়ে হাজির হয় বুকের ওপর। যে শরীর মৃত, সে কি টেনে তুললে বসে থাকতে পারে? ভাবতে পারে, হাসপাতালের পথেই জীবের ক্রমমুক্তি? সাতপাঁচ ভেবে চোখ বুজে ফেলি। কেউ এসে হাত ধরে টানুক, আমি জানি, বসতে পারব ঠিক। বন্ধুরা পৌঁছয় ঠিকই, দেরি করে খুব—

 

 

সীমাবদ্ধ

শুরুর খানিক পরই বোঝা যায়, এ কোনো নতুন কবিতা নয়। অন্য-কোনো রমণ এসে জারি হচ্ছে শরীরে। চমকে উঠি, ভঙ্গি পাল্টে কাছে যাই আরও। গতি বাড়িয়ে খুঁজি, আলাদা কী বক্তব্য রয়েছে। সে যদিও এসবের কিছুই টের পায় না। প্রতিটা রমণই তার কাছে নতুন কবিতাপাঠ। চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়া আনন্দ-ব্যথা-অশ্রু। বলতেও পারি না— হাবেভাবে একই বীর্য, ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে, আমি, রোজ…

 

 

তরঙ্গ

মায়ের সহিত বাদানুবাদের পর, মন বিষণ্ণ হইয়া থাকে বহুক্ষণ। মস্তকে প্রদাহ, আঁখিপত্র ভার, নিঃশ্বাসে চৈত্রের ঝলক। ইচ্ছা হয় নতমস্তকে দাঁড়াই, বলি, ক্ষমা করিয়া দাও। পরক্ষণেই ভাবি, যথেষ্ট লায়েক হইয়াছি—কালে স্বাভাবিক হইয়া যাইবে সব। সেইদিন আমার ভিতরে জিদ ও মায়ের ভিতরে ক্রন্দন সহাবস্থান করে। এক ঘর হইতে অপর ঘর, ক্রমে সারা গৃহেই ভাসিয়া বেড়ায় না-কথার তরঙ্গ। নেহাৎ সে-যুগ আর নাই; জগদীশচন্দ্র হইলে এইরূপ বেতারব্যবস্থা বরদাস্ত করিতেন না কিছুতেই।

 

 

এইচটিএমএল

যেন কোনো অত্যাধুনিক নগরীতে তোমায় ছেড়ে দিয়েছে কেউ। জ্যামিতিক নকশা, সুন্দর রাস্তা, ছবির মতো বাড়িঘর। কোনদিকে যাবে বুঝতে না-পেরে জিজ্ঞেস করছ লোকজনকে। তুমি, এলোমেলো জনপদ থেকে উঠে-আসা লোক, এই নগরীতে পেটের দায়ে। কন্ট্রোল+এফ টিপে হাতড়ে বেড়াচ্ছ ঠিকানা। ভুল গলিতে ঢুকে পড়লে একবার। ভুল বানানে কোডিং। এ-তল্লাটে খুচরো যানবাহন নেই। পায়ে হাঁটার আগে-পরে নেই কোনো বিশ্বাসযোগ্য স্ক্রিপ্ট। গোলকধাঁধা কিংবা এইচটিএমএল—ধুত্তেরি বলা যেতে পারে। যে-এরর, তাকেও কিছুটা ক্ষমার চোখে দেখতে পারো, এই সুযোগে, আজ…

 

 

কলিকাতা কল্পলতা

বাবু কি ফেরেন? ফিরলে, ওপরে আসেন সিঁড়ি বেয়ে? দেখেন কি, খোপে-খোপে কত পায়রা, কত জল, টাঙানো পোশাক? বাবু কি সজ্ঞানে, নাকি নেশায় কাঁদেন? ভাড়াটে বসাল বলে খিস্তি দেন বংশধরদের? বারান্দার এককোণে আগাছা জমেছে, ছাদে বিস্তীর্ণ ফাটল—বাবু কি পকেট থেকে ঝনাৎ রুপোর মুদ্রা ফেলবেন এবার? দরখাস্ত লিখে-লিখে জোটাবেন রায়বাহাদুর? বাবু কি বাবুর আত্মা, নেটিভ শহরে এসে বাবু হওয়া অবাঙালি-দল?

Facebook Comments

Related posts

One Thought to “তন্ময় ভট্টাচার্য-র কবিতাগুচ্ছ”

  1. শুভাকাঙখী

    তোর লেখায় তো আর সেই কবেকার অভিযোজনের গন্ধ নেই এখন। বরং অতিপরিণত এই পথে যে সেইকবেকার-গুলি নিয়ে জেলখানাপ্রশস্ত, এই সিপিয়া সময়ের পুনর্মুদ্রণে তার যথেচ্ছ বিনিময় রয়েছে। অপ্রাপ্তির চাষ এখানে, নানান শ্রেণীর হাহাকারের পাঠশালা আর তার কেন্দ্রে পোষা পাখি হাই তুলছে। অনন্তকাল ধরে নিভু নিভু হয়ে জ্বলছে দস্তাবেজের দেউটি। আরো ভাল লেখ ভাই।

Leave a Comment