কবিতাকে তার হারানো চিহ্ন ফেরত দেওয়া

এই আলাপচারিতার একটা ছোট ভূমিকা থাকা প্রয়োজন। দাবিদ উয়ের্তা (David Huerta) এস্পানিওল বা স্প্যানিশ ভাষার একজন প্রধান কবি। ওঁর জন্ম সিউদাদ দে মেহিকোতে ১৯৪৯ সালে। আমাদের হিসেবে ১৯৭০ এর দশকের কবি। শুরু থেকেই নববারোক কবিতা প্রবণতার সঙ্গে যুক্ত। নানা সম্মানের মধ্যে মেহিকোর জাতীয় সাহিত্য পুরস্কার ও রোমানিক ভাষা সমূহের সম্মিলিত সর্বোচ্চ সম্মান প্রেমিও ফিল পেয়েছেন। আমার সঙ্গে তাঁর আলাপ ২০১৬ সালে। আমি তাঁর সঙ্গে গায়ে পড়েই ইমেইল এ আলাপ করি তাঁর কবিতায় মুগ্ধ হয়ে। সেই থেকে উনি আমার কবিতা চর্চার এক প্রধান দিক প্রদর্শক হয়ে উঠেছেন। আমাদের দীর্ঘ সব কথোপকথন…

Read More

নিউটন-৩

কেমব্রিজে নিউটন  (১৬৬১-১৬৬৫)  সতের শতকের কেমব্রিজ। হাজার পাঁচেক লোকের এক বসতি। কেমব্রিজের আয়তনের নিরিখে সংখ্যাটি কিছুই নয়। শহরের চারপাশে উন্মুক্ত অংশ ইতস্তত ছড়িয়ে আছে। কেমব্রিজের তখন দুটি জিনিস নিয়ে ভারি গর্ব! প্রথমটি, তাদের শতাব্দী প্রাচীন ইউনিভার্সিটি। আর দ্বিতীয়টি হল ইংল্যান্ডের সবচেয়ে বড় মেলা, স্টৌরব্রিজ ফেয়ার, যা প্রতিবছর সেপ্টেম্বরে রিভার ক্যাম-এর একেবারে ধার ঘেঁষে এই কেমব্রিজেই বসে। সেপ্টেম্বর এখানে তাই উৎসবের মাস।  ইংল্যান্ডের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়ে সরগরম হয়ে ওঠে কেমব্রিজ শহর। ইস্ট এংলিয়া, মিডল্যান্ডস্‌, নর্থ ইংল্যান্ড, এমনকি খোদ লন্ডন শহর থেকেও লোকজন জমায়েত হয়। অনেক ব্যবসায়ী, ক্যাম ধরে…

Read More

আমেরিকা: এক হিমায়িত চিৎকার -৩

মেহিকোর কবিতা: দাবিদ উয়ের্তা (David Huerta)  দাবিদ উয়ের্তার বিষয়ে কথা শুরুর আগে নিজেকে কিছু কৈফেয়ত দেওয়া দরকার। এই লেখা পাঠকদেরও।  এই কথাগুলো আমার বলে রাখা দরকার খানিকটা ভূমিকার ছলে, খানিকটা নিজের কবিতা চর্চার পরিধির কৈফেয়ত হিসেবে। খানিকটা নিজের অস্থিরতা কীভাবে নিয়ে ফেলেছিল আরও আরও কবিতার দিকে তা নিজেকেই স্মরণ করানোর জন্য, নির্লেখ দিনে। ২০১০ সালে আসা এক আত্মীক উপলব্ধি আমাকে সবরকমের আখ্যান পড়া ও চর্চা করা থেকে বিরত রেখেছে।  ২০১২ থেকে সম্পূর্ণ। আমাদের চারপাশের দুনিয়ার লোকেদের অন্যভাষার সাহিত্য বলতে শুধু তত্ত্ব বা উপন্যাসের নাম ছোঁড়া আমাকে উশকে দেয়।  কবিতা তো সহজলোভ্য…

Read More

নিউটন-২

 কিংস স্কুল ও ক্লার্কের বাড়ি সতের শতকের গ্রান্থাম ছোট ছোট সবুজ টিলায় ঘেরা অতি মনোরম এক টাউন এলাকা। তবে সবকিছু ছাপিয়ে প্রথমেই নজর টানে চারশ বছরেরও বেশি প্রাচীন গথিক স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত সুউচ্চ সেন্ট উলফ্রাম চার্চটি। লিংকনশায়ারের এই আধা–শহর ও আধা–গ্রামীণ অঞ্চলটিতে উল ইন্ডাস্ট্রি থাকায় এখানকার মানুষজনের সমৃদ্ধি চোখে পড়ার মতো। বড়জোর দু-আড়াই হাজার লোকের বাস। গ্রান্থামের বাজারে ছুতোর মিস্ত্রির দোকান, কামারশালা, কসাইখানা, বেকারি, পানশালা ছাড়াও কিছু পান্থনিবাসও আছে। ইংল্যান্ডের উত্তর-দক্ষিণে চলাচলের প্রধান সড়কের মধ্যে পড়ে গ্রান্থাম। তাই অনেক পথচারীই রাত্রি যাপন করে এখানে।          সপ্তাহের প্রতি শনিবার হাট বসে। কাছাকাছি যেসব…

Read More

নিউটন

প্রাক কথনঃ  ১৬৮৭ তে নিউটনের প্রিঙ্কিপিয়া প্রকাশিত হওয়ার পর, ফরাসি গণিতবিদ দ্য লোপিতাল  প্রিঙ্কিপিয়ার প্রাকৃতিক দর্শন ও গাণিতিক সূত্রাবলীর বিপুল কর্মকাণ্ড প্রত্যক্ষ করে গভীর বিস্ময়ে বলে ওঠেন – ‘তিনি কি খাওয়া–দাওয়া করেন? পান করেন? ঘুমোন? আর সব মানুষেরই মতন কি তিনি?’ সতেরো শতকের বিখ্যাত দার্শনিক ও ইতিহাসবিদ গিলবার্ট বারনেট, নিউটন সম্পর্কে অভিমত ব্যক্ত করেছিলেন এই বলে – ‘সবচেয়ে বিশুদ্ধ হৃদয় সম্পন্ন মানুষ।’ ‘‘Nec fas est propius mortali attingere Divos” লাতিন ভাষায় লেখা এই কথাগুলির বাংলা তর্জমা এইরকম –  ‘ঈশ্বরের নিকটতম তিনি। সর্বশক্তিমানের কাছে এরচেয়ে বেশি আর কোনো মানুষের পক্ষে পৌঁছানো…

Read More

আমেরিকা: এক হিমায়িত চিৎকার-২

  নববারোক দল সেই স্বেচ্ছাচারী যে মায়ের থেকে পালায়। বিদায় নেওয়া মানে এক শিশিরবিন্দু চাষ করা যাতে সে লালার ধর্মনিরপেক্ষতায় মিশে যায়। স্বেচ্ছাচারের গভীরতা কখনই তার ফল হরণের পথে যায় না। স্বেচ্ছাচারী তার মাকে দেখা বন্ধ করে। সেই দীর্ঘায়িত হয়ে চলা ঘটমান দিনের অনুপস্থিতি এবং রাত্রিবেলা সেই অনুপস্থিতি ক্রমশ ছুরির মত গভীর হয়ে ওঠে। আর সেই অনুপস্থিতিতে খুলে যায় এক মিনার, সেই মিনারের মধ্যে নাচে এক ফাঁপা আগুন। আর এভাবেই সে নিজেকে পুষ্ট করে, আর মায়ের অনুপস্থিতি এক শান্তিতে থাকা সমুদ্র। কিন্তু সে পলায়নপর দেখেনা সেই প্রশ্নকর্তা ছুরিটিকে, সে ছুরি…

Read More

রবির মাংপবী-৫

৫ শারদীয়া আনন্দবাজারে গল্প শেখার সাম্মানিক একশো টাকা মংপুতে বসে তিনি কবিতা, চিঠি অনেকই লিখেছেন। প্রসঙ্গক্রমে সেগুলোর কিছু কিছু উল্লেখও করেছি। তবে এই পরিচ্ছেদে সেই লেখাগুলির কথা না বলে মংপুতে বসে তাঁর দুটি গল্প লেখার কথা বলতে চাইছি। প্রথম গল্পটি ‘রবিবার’। এই গল্পটি মংপুতে বসে লিখেছিলেন কিনা, সে বিষয়ে কোথাও প্রামাণ্য কিছু লেখা নেই। ‘গল্পগুচ্ছ’ গল্প-সংকলনে যেভাবে সময়ানুসারে গল্পগুলিকে সাজানো হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, ‘রবিবার’-এর আগে তিনি শেষ ছোট গল্প লিখেছেন ছ’বছর আগে। গল্পের নাম ‘চোরাই ধন’ যার প্রকাশকাল কার্তিক ১৩৪০। ‘রবিবার’ প্রকাশিত হয়েছে আশ্বিন ১৩৪৬। অর্থাৎ ১৯৩৯ সালের পুজোর…

Read More

আমার সমর্পণ

রবীন্দ্রনাথের সমর্পণ, সমর্পণের রবীন্দ্রনাথ  ‘আমার হৃদয়বৃত্তিগুলো যদি আমাকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাত আর যাই হোক কোনও রূপসৃষ্টি সম্ভব হত না’ — কিছুদিন আগে দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ও অতুলপ্রসাদ সেনের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের একটা কথোপকথনে পড়লাম এই কথাটা। সেই থেকে আগ্রহের পায়চারি আর সন্ত্রাস যুগপৎ খেলে যাচ্ছে আমার ভিতরে। আগ্রহ – কেননা কথাটি মাত্র এক লাইনের হলেও তার গায়ে লেগে আছে একজীবনের পরিশীলনের ছায়া। তার মন। সেই মনের আলো-হাওয়া-চরিত্র। আসলে কথাটা সব শিল্পীর, সারাজীবনের। ভাবি, হৃদয়বৃত্তি যদি প্রবল না হত তবে কী করে লিখলেন সেইসব গান যা পূজার ঘরে কাটাকুটি খেলতে খেলতে আসলে…

Read More

ইংরেজি ও রবীন্দ্রকুন্ঠা

রবীন্দ্রনাথ যখন নোবেল পুরস্কারের সম্মানে ভূষিত হলেন তখনও তাঁকে কোনো অভিনন্দন বার্তা পাঠাননি কবি রবার্ট ব্রিজেস্; অথচ তিনিই বৎসরাধিককাল পরে ১৯১৫-র মার্চের প্রথমার্ধে Gitanjali-র কয়েকটি কবিতা নিজে সংস্কারের আগ্রহ প্রকাশ করলেন। অনুমতি চেয়ে চিঠি লিখলেন রবীন্দ্রনাথকে। অবশ্য এর পূর্বেই ১৯১৪-র ৭ই জুন তিনি অভিনন্দন জানিয়েছেন নোবেলবিজয়ী কবিকে। কিন্তু, সে অভিনন্দনের ভাষা বিচিত্র ধরণের এবং কৌতূহলোদ্দীপক। কবিকৃত অনুবাদ প্রসঙ্গে স্বাভাবিকভাবে এ প্রশ্ন এসে যায় যে শুধু ব্রিজেস্ নন, ডব্লিউ.বি. ইয়েটস্ সহ অন্যরাও রবীন্দ্রকৃত অনুবাদের সংশোধন, পরিমার্জন ও পরিবর্তনে আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন কেন? তার কারণ কি রবীন্দ্রনাথ নিজেই ? রবীন্দ্রনাথের কবিতা, গল্প…

Read More

জন্মান্তর

(১) এ বেটা, এক গ্লাস দে! লোকদুটো মদ খাওয়া থামিয়ে তাকাল বালকনাথ বাবাজির দিকে। সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছেন না তিনি, ছোট্ট শরীর টলমল করছে অনেকক্ষণ ধরেই। ইতস্তত করতে লাগল ওরা। বালকনাথ চেঁচিয়ে উঠলেন, ‘কী সোচ্‌ছিস? সাধুকে ফিরাতে নেই। দে জলদি।’ লোকদুটোর মধ্যে যে চেলা গোছের, প্লাস্টিকের গ্লাসে মদ ঢালতে ঢালতে বলল, ‘দিচ্ছি, তবে আমাদের এই বাবুকে একটু আশীর্বাদ করে দাও।’ আংটিভর্তি হাত মাথায়-মুখে বুলিয়ে দিলেন বালকনাথ। ‘আশীর্বাদ আশীর্বাদ! সতীমা’র কৃপায় তোর সব ভালো হবে। খুশ থাকবি তুই। আশীর্বাদ। …আরেকটু জল ঢাল্‌ না বে!’ মদ আর জল মেশানো টইটম্বুর সেই তরল…

Read More

শম্ভু রক্ষিত, শ্রদ্ধাভাজনেষু

  যতদূর মনে পড়ছে, ইংরাজি ২০১৮-এর  শেষ প্রান্তে শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায়ের জীবনাবাসন হয়। প্রায় একই সময়ে, আরও একটি দুঃসংবাদ আমাদের বিমূঢ় করেছিল, যখন শম্ভু রক্ষিত-কে, আমাদের সকলের শম্ভুদা-কে, গুরুতর অসুস্থ অবস্থায়, চিকিৎসার জন্য পূর্ব মেদিনীপুরের বিরিঞ্চিবেড়িয়া থেকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। এর কিছুদিন পর, হাওড়ার ঠাকুরদাস দত্ত ফার্স্ট লেনে জন্মগ্রহণ করা শম্ভু রক্ষিত-কে কিঞ্চিৎ সুস্থ শরীরে আবার ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বিরিঞ্চিবেড়িয়ায়, কিন্তু তখন থেকেই কারুর-কারুর মনে আশঙ্কা জন্মাচ্ছিল, এইবার, এতদিনে, বৃত্ত বুঝি সম্পূর্ণ হতে চলল। অবশেষে, সম্পূর্ণ হল সেই বৃত্ত। বিগত আঠারো মাস ধ’রে তিনি কি তাঁর অনুরাগীদের নিজের মৃত্যুসংবাদের ভার বহন করবার…

Read More

পাহাড়পর্বত, মেঘমালা

শম্ভুদার প্রয়াণে আমি শোকাচ্ছন্ন। তাঁর সম্পর্কে কিছু লিখতে গিয়ে আমার দুচোখ সজল হয়ে উঠছে। তাঁর মৃত‍্যু সংবাদ পেয়ে আমি এই অচল-জগৎ পরিস্থিতিতে তাঁর শেষযাত্রায় যেতে পারিনি এজন‍্য মন বিষণ্ণ। সে মন নিয়েই কিছু লিখছি। সে গত গত শতাব্দীর ষাটের দশকের শেষার্ধ। ১৯৬৭-৬৮ সাল। স্কুলের অষ্টম-নবম শ্রেণীর ছাত্র আমি, আমাদের শহরের অগ্রজ কবিতাপ্রয়াসীদের উৎসাহদানে আমি তখন কবিতা রচনায় সবে সচেষ্ট হয়েছি। তাঁরা আমাকে কিছু কিছু কবিতার বই, লিটল ম‍্যাগাজিন দিতেন। সেসব থেকেই, ওই সময়, শম্ভু রক্ষিতের কিছু কবিতা পড়ি। সোমনাথদা, সোমনাথ মুখোপাধ‍্যায়, রমাদি, রমা ঘোষ, শৈলেনদা, শৈলেনকুমার দত্ত, আমাদের এই শহরে…

Read More

শম্ভু ও সিকিমের ছাম্ব্ হ্রদ

মেদিনীপুরের মাটি ফুঁড়ে বেড়ে ওঠা কবি- শম্ভু রক্ষিত। প্রাসাদ-পিরামিড-ড্রাগন-গন্ধর্ব অধ্যুষিত এক অলৌকিক বৈভব ও সম্ভোগের জগৎ। তা আকাশে মেঘের সৌধমালা। শম্ভুর ব্যক্তিজীবন নিয়ে অনেকেই মন্তব্য করেন। কিন্তু তার কবিতার কোনো আলোচনা কোথাও দেখিনি। অথচ গত তিন দশকের বাংলা কবিতার ইতিহাস যখন লেখা হবে তখন শম্ভুর কথা আসতে বাধ্য– যা তথাকথিত মূল স্রোতের অনেক কবির বিষয়েই নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। যদি ইয়োরোপের ১৯ শতকের নের্ভাল কি ২০ শতকের ডাডাইস্ট কি ফিউচারিস্ট কবিরা এখনও আমাদের কৌতুহল উদ্রেক করে থাকেন, তবে ব্যাপক না হলেও বলা যায় যে আগামী কয়েক দশকে শম্ভু বিষয়েও…

Read More

এক উদ্বৃত্ত মানুষের কবিতা

শম্ভু রক্ষিতের প্রয়াণের দিন, তাঁরই সমবয়সি একজন কবিকে সোসাল মিডিয়ায় মন্তব্য করতে দেখেছি যে, শম্ভুর মৃত্যুর সঙ্গে শেষ হল ‘এক অসম্ভবের যাপন’। এবং তারপর আরও অনেকেই ওই কথাটি মাঢ়ীতে চেপে জাবর কেটেছেন। সবারই লক্ষ্য শম্ভুর ব্যক্তিজীবন যাপনের দিকে। এভাবেই আমরা প্রায় সকলেই তাঁর জীবনযাপনে কৌতূহলী হয়ে তাঁর কবিতাকে নজর করিনি সেভাবে। আর তাঁর জীবনানুষঙ্গে যে তাঁর কবিতাকে খোঁজা অহেতুক, তা তিনি নিজেই জানিয়েছেন। ‘কবির ভিতর-বাহির অপাংক্তেয়’, তাই কবিতাকে জীবনচরিতে খুঁজতে চাওয়া, আসলে কবিতাকেও অপাংক্তেয় করে দেখার দুরভিসন্ধি বই আর-কিছু নয়। অথচ আমরা খেয়াল করলামই না, আমাদের চিরাচরিত কবিতাচর্চার পাশে তাঁর…

Read More

বাংলা কবিতার স্বাধীন পুরুষ মহাপৃথিবী’র কবি শম্ভু রক্ষিত

একটা গোটা জীবন ছিল কবিতার জন্য উৎসর্গ। শুধু কবিতাকে ভালবেসে পার্থিব সুখকে হেলায় উপেক্ষা করে সুদীর্ঘকাল ধরে নিষ্ঠা ও ধৈর্য্য সহকারে; ঘন্টা বাজিয়ে ছুটন্ত ঢেউয়ের শব্দে বাংলা সাহিত্যে নতুন ভাষা চয়নের মাত্রা যোগ করেছিলেন মহাপৃথিবীর কবি শম্ভু রক্ষিত। তিনি গত ২৯ জুন সকাল আটটায় নিজস্ব বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। শুভানুধ্যায়ী, গ্রামবাসী, আত্মীয় পরিজনবেষ্টিত হয়ে পুত্র, জামাতা, এক সাহিত্য সেবকের কাঁধে চেপে মহাপ্রস্থানে চলে গেলেন বাংলা সাহিত্যের ব্যতিক্রমী কবি শম্ভু রক্ষিত। স্থানীয় চাঁপী-পানা শ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।  প্রথাগত শিক্ষার প্রতি তাঁর কোনদিনই আগ্রহ ছিল না। হাওড়ার নরসিংহ দত্ত কলেজে…

Read More

শম্ভু রক্ষিতের কবিপ্রতিভার রহস্য

‘The poet is like the prince of the clouds who haunts the tempest and laughs at the archer. Exiled on the ground in the midst of the jeering crowd, his giant’s wings keep him from walking.’  — Baudelaire    ১৯৭১ সালে প্রকাশিত বইয়ের (‘সময়ের কাছে কেন আমি বা কেন মানুষ’)  একটি কবিতায় কবি শম্ভু রক্ষিত লেখেন : ‘রবি ঠাকুর বা নজরুল নই আমি, আমি শম্ভু রক্ষিত :’  এ কবিতাতেই আরও (‘আরামখেকো ঈশ্বরের প্রতি’) পড়ি : ‘আমি একজন কবি, আমি বাংলার কমার্শিয়াল বুদ্ধিজীবীদের গুম করে জখম করে দিতে চাইছি।’  উত্তম পুরুষ…

Read More

আমেরিকা, একটি হিমায়িত চিৎকার – ১

হোসে লেসামা লিমা প্রথমে একটা কথা পরিষ্কার হওয়া দরকার, আমাদের দেশে বা অন্যান্য প্রাক্তন ইংরেজ উপনিবেশে সাতটা মহাদেশের মডেল পড়ানো হয়, আমাদের কাছে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা দুটি আলাদা মহাদেশ। কিন্তু বাকি প্রাক্তন উপনিবেশে আমেরিকা একটিই মহাদেশ। আমি যেহেতু অইংরেজি আমেরিকার কথাই বলব আপাতত, তাই আমেরিকাকে একটি মহাদেশ হিসেবেই ধরব এমন এক অঞ্চলে ঢুকে পড়া গেল, যার থেকে বেরনোর রাস্তা আজ অব্দি ইতিহাস জানে না। এসে পড়বে ঔপনিবেশিক প্রশ্ন ও উত্তরহীনতা। এসে পড়বে থিওডর আডরনোর সেই বিখ্যাত আউশউইতশ এর পরে কবিতা লেখা যায় না মার্কা দার্শনিক হাই তোলা, যেন কোনওদিন…

Read More

রবির মাংপবী-৪

মংপু পর্ব   ৩ মংপু-মুগ্ধ রবীন্দ্রনাথ   ‘…এই কাচের ঘরটা বুঝি আমার লেখবার? এ তো খুবই ভাল, একেবারে উত্তম বলা যেতে পারে। এ চৌকিতে সকালবেলা বসব আর রোদ্দুর এসে পড়বে কাচের ভেতর দিয়ে। তোমার ঐ বৃহদাকার বনস্পতির পাতার ফাঁক দিয়ে শতধারায় ঝরে পড়বে সকালবেলার আলো, ভোরের সেই রৌদ্রস্নানটি আমার কত সুন্দর হবে।’ বারান্দা দিয়ে ঢুকে বাঁদিকের প্রান্তে যে কাচঘেরা পড়ার ঘরের কথা উল্লেখ করেছি আগের পরিচ্ছেদে, এই প্রশংসা সেই ঘরটাকে নিয়েই, অন্তত বর্ণনা তো একেবারে মিলে যাচ্ছে। ছোট্ট ঘরটার দরজা, জানলা ধবধবে সাদা রঙে শোভিত। ফলে কাচের মধ্যে দিয়ে আলো…

Read More

স্বাধীনতার চরাচর : ওক্তাবিও পাস

কবির ভূমিকা, কবির সামাজিকতা ও কবিতার সমান্তরাল চলন, এইসব প্রশ্ন হয়ত আমাদের সকলকেই, মানে যারা কবিতায় সম্পৃক্ত তাদের বিব্রত করেছে বা রেখেছে। আমরা যদি আমাদের প্রথম কবিতা জগতে আসার সময়টা মনে করি দেখব শুধু কয়েকটা নামকেই আমরা কবি হিসেবে চিহ্নিত করতাম আর সেই সব নামেদের একটা সামাজিক ভূমিকা ও বক্তব্য ছিল। কিন্তু কবিতা জগৎ যে বস্তুত বহুত্বময়, বস্তুত এক সমান্তরাল দুনিয়া, খানিকটা আন্ডারওয়ার্ল্ডই বলা যায়, তা আমাদের দৃষ্টিপথের বাইরে থাকে। এবং সেইসব কবিদের সামাজিক ভূমিকা একেবারেই গুরুত্ব রাখে না বৃহত্তর মানসে কারণ সেই কবির নাম খবরের কাগজে নেই। এইবার আরও…

Read More

অল আই হ্যাভ ইজ আ ভয়েস

প্রতি মুহূর্তে রাষ্ট্রের এমন এমন চিল-ঠোক্কর মানুষ শেষ কবে দেখেছে? আমাদের যাদের বয়স ত্রিশের কোঠায়, তারা এই প্রথমবার, এই দেশে। এমন অ্যাটেনশান সিকার রাষ্ট্র-ব্যবস্থা আমরা এর আগে নাৎসি জার্মানির ইতিহাসে দেখেছি, সিনেমায়, গল্পে। সত্যি বলতে এক ত্রাসের অনুভূতি ছাড়া বাকি অনুভূতিগুলো কেমন যেন বসে যাওয়া গলার মতো মোটা আর ক্ষীণ হয়ে আসছে। ভয় হচ্ছে। সত্যিকারের ভয়। ভাবি, এই তো একটাই মানবজীবন! তাকে কি তবে এবার থেকে এই এইমাত্র ত্রাসের অনুভূতি নিয়েই বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে হবে, বা জীবনের বড় একটা অংশ এই ভয় ত্রাসের ঘরে যুঝতে যুঝতে ফুরিয়ে যাবে! লক্ষ…

Read More