অন্ধকার দিনগুলিতে অনুবাদ

লেখার বিষয় যতটা অনুবাদ, ঠিক ততটাই এই অন্ধকার দিনগুলি। যখন ধর্মের ভিত্তিতে জনগণকে ভাগ করার চেষ্টায় ভয়ানক তৎপর বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার। নয়া নাগরিকত্ব আইনের প্রণয়ন এবং তা রুজু করার মাধ্যমে তারা বাতিল করে দিতে চাইছে এক বিশাল সংখ্যক জনগণের অস্তিত্ত্ব এবং তার সংশোধনকারি আইনের দ্বারা তারা বাতিল করছে সম্পূর্ণ মুসলিম সম্প্রদায়কে যারা ভারতবর্ষের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। অন্য সমস্ত ধর্মের নাম থাকলেও সিএএ থেকে নির্দ্বিধায় এই হিন্দুত্ববাদী সরকার বাদ দিয়েছে মুসলিম ধর্মের নাম। এটাই স্বাভাবিক যে এর বিরুদ্ধে সারা ভারতবর্ষের সমস্ত সাধারণ নাগরিক, প্রতিবাদ করবেন, আওয়াজ তুলবেন, রাস্তায় নামবেন। দেশব্যাপী এই প্রতিরোধের পুরোভাগে রয়েছে এদেশের ছাত্রী…

Read More

সাম আর মোর ইকুয়াল দ্যান আদার্স

সরকারবাহাদুরের সমালোচনা।  ১৯২৫। ফোর্ডের মডেল-টি গাড়ির চাহিদা তখন এতটাই তুঙ্গে যে হেনরি ফোর্ড নিশ্চিন্তে বলে দিলেন “A customer can have a car painted any color he wants as long as it’s black”। মোদ্দা কথা হল রং নিয়ে ত্যাঁদড়ামি করলে চলবে না, যা বানাচ্ছি তাই নিতে হবে নইলে কেটে পড়ো। “কাস্টোমার ইজ দ্য কিং” গোছের কথা তখন মূল্যহীন। ফোর্ড সাহেবের সেই বিখ্যাত উক্তির টেম্পলেটেই দিব্যি সাজিয়ে দেওয়া যায় এখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি; ““A Citizen can say anything about the Government as long as it’s Pro-Government”। অর্থাৎ গদগদ ফর্ম্যাটে সরকার বাহাদুরের প্রশংসা না…

Read More

এখানে আকাশ নীল ও পেঁয়াজ দশ টাকা

হেডিং পড়ামাত্র, পাঠক, আপনি ভাবলেন, কোথায়, কোথায় সেই জায়গা! তাহলে ‘রথ দেখা কলা বেচা’—র মতো সেখানে একটা টুর, হালকা বেড়ুবেড়ু তো বটেই (ওটা ফাউ) আর ফেরার বেলা কাঁধে বগলে মাথায় করে পেঁয়াজ ভর্তি বস্তা। আহা! ‘ঘুরতে গিয়ে আমার জন্য কী আনলি?’ বলা আত্মীয়স্বজনও পেঁয়াজ—সম স্তরে স্তরে খুশি। পিঠপিছে নিন্দে করা আত্মীয়, বন্ধুবলয়ের কাছেও উপহার পৌঁছনো মাত্র ঝাঁঝ গায়েব। আরও কী কী প্ল্যানিং হতে পারে, ভেবে নিন। জায়গার নাম বলছি। তার আগে, একটা স্বীকারোক্তি প্রয়োজন। পেঁয়াজের দামখানা পড়ামাত্র হয় আপনি চমকে গিয়েছিলেন, কিংবা ভেবেছিলেন কোনও রূপকথা, তাই তো? মোটমাট, বাস্তবের গন্ধ…

Read More

আমার হাতে হোক রাত্রি রচনা

দুপুর গনগন করে বিদায় দিয়ে দিতে হয়, রাখা যায় না… রাখার কিছু নাইও… ছবির মত জীবন না। জীবন শুধু বিদায় দিয়ে দেয়ার। ভালোবাসি না এমন ভান করার। জড়িয়ে না ধরার। গায়ের গন্ধ না নেয়ার। বৈশাখের দুপুর খুব গনগন করতে জানে। আর ওর তো মনে কোন প্রেম নাই! সত্যি কথা প্রেম নাই। অনেকটা সাধু সন্ন্যাসী টাইপ, ওর কোন শারীরিক অস্থিরতাও নাই, প্রায় ভগবানের মতো। এইজন্যে আমাদের সম্পর্ক খুব ভালো হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। আমার অস্থিরতা কমছে কিন্তু মায়া বাড়ছে। আমার মনে হয় ও একটা রাজহাঁস, ওর লম্বা গলা, নরম পেট… ওর…

Read More

ভুতু

‘ভুতু কী করছে দেখতো?’ ‘ভুতু সেক্স করছে।’ ‘সেক্স করছে মানে?’ অস্মিতাকে প্রশ্ন করেও, অরূপ চুপ করে গেল। অরূপ ব্যাপারটা জানে।  অরূপ এ ঘর থেকে উঠে ভুতুর ঘরে গেল। যা ভেবে ছিল, ঠিক তাই। ভুতু কাকা অরূপকে দেখে লজ্জা পেল। ‘কি করছিস ভুতু?’ ভুতু বালিশ সরিয়ে ওপাশ ফিরে শুল, বলল ‘এইই হে হে কিছু না’। ভুতু লজ্জা পেয়েছে। প্রতিবারই ভুতু এইরকম লজ্জা পায়। হাসে বোকার মতো। অসহায়ের মতো। যখন ঘরে কেউ থাকে না, ভুতু তখনই বালিশ দিয়ে ওই সব কান্ড করে। অরূপের ভুতুর জন্য খারাপ লাগে। বাইশ বছরের ছেলে, ওর এখন…

Read More

দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান সার্কাস

১. কড়ি বরগার ওপর উইপোকাদের নক্সা। আলকাতরা মাখানো হয়েছিল সেই বুড়ো কর্তার আমলে, তারপর আস্তে আস্তে ফিকে হয়ে এসেছে কালো রঙ। দুটো তির ছাদ থেকে খসে পড়েছে গত বর্ষায়। পুরনো রাজমিস্ত্রি ফকির মোল্লা দেখে বলেছিল, —ছোটকত্তা ইবার জলছাতটা করন লাগবি যি! নাইলে ধসি পড়বি ছাত। সে জলছাদ আজও করা হয়নি। কবেকার জমিদারবাড়ি।ভাঙা খড়খড়ির জানলা খুললে যতদূর চোখ যায় ধূ ধূ পদ্মবিল। শনশন বাতাসে উড়ে বেড়ায় গাঙশালিখের দল। আশ্বিনে বিল আলো করে ফোটে গোলাপি পাপড়ির পদ্ম। দু টাকা তিনটাকা দাম ওঠে তখন একেকটা ফুলের। ছেলেপিলেরা চুবড়ি ভরে তুলে গঞ্জের পাইকারদের কাছে…

Read More

আগুন — এক সাকিনগুঙার গল্প

— সাকিনগুঙা তুই এহানে মরলি? — হ মইরলাম। — তা মরলি, মরলি… এহানে কেন? — হ মইরলাম। — এইডা তোর জমিন? এহানে মরার আগে দুইবার ভাবস নাই? জমিনের পুকামাকড়ও নাদান কইব তোরে। — হ মইরলাম। সাকিনগুঙার ঠোঁট দুটো যেন হাল্কা নড়ল! আলতাফ চোখ কচলায়। শ্মশানের ব্যস্ততায় একা এক খাটিয়ায় শোয়া সাকিনগুঙা তখন মাছি চুমাচ্ছে। মাথা ঘ’ষে ঘ’ষে মাছির কত বিড়বিড়ে আমোদ! আলতাফের হুঁশ হয়, মরা মাইনষের ঠোঁটও তো মরা। সে চোখ তুলে বাকিদের খোঁজে। সাটিন, বেনো, কাত্তিক অফিসের দরজায় দাঁড়িয়ে। অন্যরা এদিক-সেদিক। ওপাশে, অফিসটা পেরোলেই গঙ্গা। গঙ্গারও ওপারে এখন আগুন,…

Read More

রূপকুন্ড ট্রেকিং

ভূমিকাঃ অন্য সবার মত আমারও ট্রেকের অভিজ্ঞতা শুরু হয়েছিল সান্দাকফু আর ফালুট ট্রেকের সাথে। সেখানেই আমাদের পঞ্চপান্ডবের এক হওয়া। আমাদের মধ্যে একজন অনিয়মিত হলেও আমরা বাকি চারজন প্রতি বছর একটা ট্রেকে একবার একসাথে হবই। এটা আমাদের একটা কমিটমেন্ট হয়ে গেছে। সারা ভারতে যারা ট্রেক করেন সান্দাকফু ছাড়াও রূপকুন্ড, রূপিন, গোয়েচালা আর তপোবন এই কয়টি ট্রেক অন্তত না করলে ট্রেকারেরা ঠিক জাতে ওঠেন না। আর শুনেছি রূপকুন্ড করতে পারলে নাকি লোকেরা বলে, ও আপনি রূপকুন্ড করেছেন তাহলে অমুক ট্রেক তো আপনার কাছে কোনো ব্যাপারই না।    তাই সবাই মিলে ঠিক করলাম বিড়ালকে…

Read More

রবির মাংপবী

মংপু পর্ব “নির্জন গিরি শিরে বিরচিলি চম্পূ তারেই কি নাম দিলি মংপু?” ১ চলো মংপু কালিম্পং থেকে রওনা হতে খানিক দেরিই হল আমাদের। মংপু অন্তত দু’ঘণ্টার পথ। এই যাত্রাতেও আমাদের চালকের আসনে সুদীপ। গাড়িতে করে যখনই কোথাও যাই, সামনের সিটে ড্রাইভারের পাশে বসাটা আমার বিশেষ প্রিয়। চারপাশের উন্মুক্ত দৃশ্যের অবাধ হাতছানি তো থাকেই, আরও যে ব্যাপারটা আমাকে টানে, সেটা হল, স্টিয়ারিং হাতে পাশে বসে থাকা মানুষটির সাথে একাত্ম হয়ে যাওয়ার মিষ্টতা। বিশেষত, অচেনা জায়গায় তারাই হয়ে ওঠে অলিখিত পথ-প্রদর্শক। বাপ-ঠাকুদ্দার মুখে শোনা গল্পগুলো কী সুনিপুণ ভঙ্গিতে ইতিহাসের তথ্য-সমৃদ্ধির পাশে নিজস্ব…

Read More

শাম্ভবী’র কথা

সহাবস্থান মালিকানার চাবি নয় কখনোই। এই যে কথায়-কথায় আমাকে হাওয়াকল প্রকাশনার কর্ণধার বা একজন বলা হয়, আমার পছন্দ হয় না। কেনই বা হবে? আমার নিজস্ব প্রকাশন সংস্থা আছে তো! শাম্ভবী দ্য থার্ড আই ইমপ্রিন্ট। সংক্ষেপে শাম্ভবী ইমপ্রিন্ট বা শুধুই “শাম্ভবী”। হ্যাঁ, প্রায় চার বছর হল আমাদের আর হাওয়াকল প্রকাশনার ঠিকানা এক। সমস্ত কাজকর্ম একই জায়গায়, একইভাবে করা হচ্ছে। কিন্তু মালিকানা হস্তান্তর বা পরিবর্তনের কোনও প্রয়োজন বা তাগিদ অনুভব করিনি। করেনি বিতান চক্রবর্তীও। যার হাতে তৈরি হাওয়াকল সংস্থাটি এক দশক পূর্ণ করেছে।  সরকারি চাকরির একটা মায়া আছে, জানেন তো? মোটা বেতন,…

Read More

কালিম্পং পর্ব-২

৩. মৃত্যুশ্রান্ত কবি   ঐতিহাসিক রেডিও-অনুষ্ঠানের কয়েকদিন পরই ২১শে মে কবি শেষপর্যন্ত মৈত্রেয়ীর আবদার রক্ষা করে মংপুতে গিয়েছিলেন। এরপর আরও তিনবার তিনি মংপু এসেছেন। কোনওবার শিলিগুড়ি থেকে সরাসরি, কখনও বা কালিম্পং হয়ে। শেষবার যখন মংপু এলেন ১৯৪০ সালে, সেবার আগে কালিম্পং এসেছিলেন। তারপর একদিন পরেই মংপু যান। কিছুদিন মংপুতে কাটিয়ে আবার কালিম্পঙে ফেরেন। কালিম্পঙে পৌনে দু’মাস কাটিয়েছিলেন (৭ই মে থেকে ২৯শে জুন)। সেবারের পর্বতবাসের অধ্যায়টি জুড়ে কেবলই প্রিয়জনের মৃত্যুযন্ত্রণায় বিদ্ধ হয়েছেন চির-আনন্দময় কবি। কালিম্পং যাওয়ার কয়েকদিন আগেই মারা গেলেন চার্লস ফ্রিয়ার অ্যান্ড্রুজ। কবির কর্মজীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সহকর্মী। ১৯৪০-এর শুরুতেই কলকাতায়…

Read More

কালিম্পং পর্ব

  “আমার আনন্দে আজ একাকার ধ্বনি আর রঙ, জানে তা কি এ কালিম্পঙ।” ১. বাস্তবে ব্রজেন, সিনেমায় ব্রাউন    পাহাড়ি সবুজের পরতে পরতে তখন শেষ শরতের ঔজ্জ্বল্য। শিলিগুড়ি থেকে রওনা হয়েছিলাম সকাল ন’টায়। কালিম্পং পৌঁছেছি তখন বেলা এগারোটা অতিক্রান্ত। বাংলার পাহাড়ের এমনিতেই একটা আপন করে নেওয়ার আলাদা আকর্ষণ রয়েছে। তার উপর এই অঞ্চলে এই প্রথম। চারিদিকে একটা অভ্যর্থনার ভাব। তার উপর গত কয়েকদিনের ঝড়বৃষ্টি-ধসের পালা কাটিয়ে উঠে রোদ ঝলমলে কালিম্পং যেন নতুন রূপে আবির্ভূতা।  পরিবারস্থ অন্যান্য সকলের মধ্যে আছে আমার তেরো-বছর বয়সী অনুজ ভ্রাতা। আমার সহকারী, আমার ছায়া। মনটা কাঁচা।…

Read More

স্ববিরোধ, মহানতা, ক্লিশে

“মহান শিল্পীদের জীবনীতে প্রায়শই পড়ি তাঁদের অকল্পনীয় নিষ্ঠুরতা কথা। পড়ি, এবং ভীষণ বিভ্রান্তবোধ করি। ভাবি যে, যে-মানুষ ব্যক্তিজীবনে এতটা হৃদয়হীন এবং নির্মম, তাঁর শিল্পের আদৌ কী দাম আমি দেব? যতই মহৎ হোক সেই শিল্পকীর্তি, তবু আমি তার কানাকড়ি মূল্যও দেব কি? পণ্ডিতেরা বলেন, ভুল, এই বিচার ভুল। শিল্পীও একজন মানুষ, আর সব মানুষের মতো তার ভিতরেও রয়েছে একই সঙ্গে সাধু এবং শয়তান। এবং নিজের ভিতরে এই সাধু-শয়তানের দ্বন্দ্ব থেকেই সৃষ্টি হচ্ছে তার শিল্প। সুতরাং, শিল্পীর ব্যক্তিজীবন দিয়ে তার শিল্পের বিচার এক মারাত্মক ভুল। পণ্ডিতেরা সর্বদাই এত ঠিক কথা বলেন! এত…

Read More

হার আর্মস ফুল অফ ফ্লাওয়ার্স : ওয়াইন, পারফিউম ও কবিতার গঠন সম্পর্কিত একটি গবেষণা  

  ১.  এ জীবনে, বস্তুগতভাবে, অনেকের মতো আমারও দুটো প্রিয় জিনিস হলো মদিরা ও আতর– ওয়াইন ও পারফিউম। দুটোই ফরাসী, প্রধানতঃ। খাঁটি ফরাসী সুগন্ধী ও ফরাসী ওয়াইনের স্বাদ-গন্ধ মাত্র কখনো আমি পেয়েছি। সেই থেকে মনে হয়েছে, সমর্পিত হওয়ার জন্যে এর চেয়ে ভালো আর কী-ই বা হতে পারে। ফ্রান্স ও ইতালির সেইসব মাইল মাইল বিস্তৃত রৌদ্রকরোজ্জ্বল আঙুরের খেত– বার্গান্ডি, টাসকানি ! ‘স্টিলিং বিউটি’-ছবিতে বার্তোলুচ্চি সেই টাসকান ভূখন্ডের এক ঝলক  দেখিয়েছিলেন।    সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় একবার লিখেছিলেন, মৃত্যুকালে যেন মুখে কিছু চিনি নিয়ে মরি। কেন যে চিনির মিষ্টত্ব ইচ্ছা করেছিলেন জানি না। তবে মদের…

Read More

মৈমনশাহী উপাখ্যান – অন্তিম পর্ব

১৪. কুয়াশা কাটছে।  সোমেশ্বরী নদী, দূরে গারো পাহাড়, নদীর বুকে  এই শীতে ধু ধু বালুচর। মধ্যিখানে শীর্ণ জলরেখা। নদীর বুকে বালি তোলার লরি। নদী পার হয়ে দুর্গাপুরে প্রবেশ করছে তারা। সুসঙ্গ। রাজার সঙ্গ ছিল অতি মধুর, রাজা ছিলেন প্রজাপালক, তাই সুসঙ্গ। রাস্তা সংকীর্ণ। টোটো, অটো, ম্যাটাডোর, মিনি লরি, গরুর গাড়ি এক সঙ্গে লাইন মেরেছে, মুখোমুখি হয়েছে। অতীনের কথায় বিপুল জিজ্ঞেস করল, প্রজা পালক রাজা সিমসাং নদীর নাম নিজের নামে করতে সম্মতি দিলেন কেন ?       অতীন বললেন, একই নদীর নাম স্থানে স্থানে আলাদা হয়, আপনাদের ব্রহ্মপুত্র আরো পুবে অনেক  উপরে, চিন…

Read More

দোষ

আজকাল নিপাট ভ্রূযুক্ত মানুষদের ভন্ড বলে মনে হয় চঞ্চলার। কথা বলতে গিয়ে মানুষের ভ্রূ দেখতে থাকে সে। আসল কথা কানে বা মাথায় ঢোকে না। মানুষের ভ্রূ দেখে মানুষকে যাচাই করতে থাকে চঞ্চলা। আর দেখে কীভাবে সত্যি সত্যি নিপাট ভ্রূযুক্ত মানুষেরা ভন্ডামি করে চঞ্চলার সাথে। ভন্ডামির শিকার হতে হতে চঞ্চলা গাছে জল দেয়, সমস্ত বিধ্বংসী খবর উপেক্ষা করে শব্দছক সমাধান করে খবরের কাগজের পাতায়। চঞ্চলার স্বামী গলা তুলে বলে “এক কাপ চা হবে না কি,” চঞ্চলারা নিঃসন্তান। ঘরে আসবাবপত্রের বাহুল্য নেই তাই। কোথাও কোনো উৎপাতের চিহ্নমাত্র নেই। দেওয়ালে রংপেন্সিলের অত্যাচার নেই।…

Read More

মৎস্যপুরাণ

গলির মোড়েই একটা ফুলের দোকান। রোজ সকালে সিধুদা নৈহাটি থেকে আসে ডাউনের ট্রেনে চড়ে। মাথার বোঝাটা নামাতে বেশ কষ্ট হয়। ট্রেনে ওঠার সময় কেউ কেউ ঝাঁকাটা ধরে তুলে দেয়। আবার কখনও লোক পাওয়া যায় না৷ এত দোপাটি, গোলাপ আর রজনীগন্ধার ভার বয়ে চলে সিধুদা। শুধু বুধবার ওর ছুটি। ঐদিন গাঁদা, গোলাপেরও ছুটির দিন। পাড়ার গৃহস্থ বাড়ির নিত্যপুজোর ফুল সেদিন মোল্লার হাট থেকে কিনে আনতে হয়। “মোল্লার হাট” নামটা বহুকাল ধরেই চলে আসছে, তাতে মোল্লা হোক বা মালাকর কারোরই কিছু আসে যায় না। তিন্নির জ্যামিতি বক্সে একটা মাছের ছবি আঁকা। অনেকটা…

Read More

সোহম দাস ভয় পায়নি

“আমাদের বাড়িতে মাঝেমধ্যেই একজন আসেন। তাকে আমি চিনি। কিন্তু তার পরিচয় আমি জানি না।” এই অবধি বলেই থেমে গেল সোহম। ইদানীং আরও একটু মোটা হয়েছে সে। নিয়মিত চুল-দাড়িও কাটে না। কেমন একটা অন্যমনস্ক হয়ে থাকে, কী যেন ভাবছে সারাদিন! লক্ষ্য করেছে শুভদীপ। সোহমের বন্ধু। দাদাও। হাতে ধরা রাখা সিগারেটের দিকে মাথাটা ঝুলিয়ে সোহমকে বসে থাকতে দেখে শুভদীপের একটু চিন্তা হলো। কিন্তু বিষয়টাকে হালকা করে নেওয়ার জন্য সোহমকে বললো, “আমার মনে হয় তোকে ভূতে ধরেছে। সেটা তুই বুঝতে পারছিস না। তাই তোকে মাঝেমাঝে জানান দিতে আসে, এই দ্যাখো আমি এসেছি।” বলেই…

Read More

ইউরেকা!

জাফরির ফাঁকে তখন দুপুরের আলোখেলা। জানলা দিয়ে সোজা তাকালে তখন আশেপাশের চুনকাম করা হাল্কা রঙের বাড়িগুলোয় পাকারঙ লাগতে শুরু করেছে। আহিরা সেদিকে তাকিয়ে ছিল। কিন্তু আহিরা সেদিকে দেখছিল না। তার সমস্ত ইন্দ্রিয় তখন ঘড়ির কাপড় কাচার শব্দে আস্তে আস্তে বুঁদ হয়ে আসছিল। ঘাড় ফিরিয়ে যে ঘড়িটার দিকে তাকাবে, সে শক্তিও প্রায় ছিল না। তবু সে একসময় ঘাড় থেকে প্রায় পাথর সরানোর মতো শক্তি প্রয়োগ করে ঘুরে তাকায় আস্তে করে ঘড়িটার দিকে। তার আস্ত শরীর তখন নিজেই নিজেকে ছেড়ে দিচ্ছে। কোনওমতে ও দেখল, মানে দেখতে পেল– ওর সমান্তরাল দুই হাত মিনিট…

Read More

পৃথিবীর শেষ লেখা

গাছেরা এখন প্রতিশোধ নিচ্ছে।   চমকে যাবেন না। আপনি যদি আমার লেখার খাতাটা হাতে পেয়ে থাকেন, আমার ভাষা যদি আপনার বোধগম্য হয়, তাহলে এই লেখা একটা মর্মান্তিক ইতিহাসের বিরাট দলিল হয়ে থাকবে। গুছিয়ে রাখবেন। আপনাদের নতুন পৃথিবীতে এই লেখাটার ধর্মগ্রন্থের মতো ঘরে ঘরে বিরাজ করা উচিৎ। যাতে আপনারা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে পারেন। আমাদের ভুল যেন আপনাদের না হয়। আপনারা যদি গাছের বিকল্প বানিয়ে ফেলে থাকেন, তাহলেও এই দলিল আপনাদের বারংবার আত্মতুষ্টি থেকে বিরত রাখবে। আর গাছেদের যদি আপনারা আবার দমন করে ফেলতে সক্ষম হন, তাহলেও আমার লেখা অভিজ্ঞতা আপনাদের…

Read More