জয়রাজ ভট্টাচার্য

উলটপুরাণ


দিল্লী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামলে মনে হয়, ইন্দ্রপ্রস্থে এলাম। চারিদিকে হাতি ঘোড়া নৃত্যরতা তন্বীর সোনালী মূর্তি, কাজু বরফি, চন্দন কাঠের দোকান। পারলে একটা রাধামাধবের মন্দিরও গড়ে ফেলে! ইনক্রেডিবল ইন্ডিয়া নাম দিয়ে এরকম একটা দেখনদারি ভারতবর্ষ গড়ে তোলা হয়েছে হচ্ছে কয়েক দশক ধরে তিলেতিলে। যে ভারত আসলে নেই, কখনো ছিল না, শুধু দেখানোর জন্য আছে। পেটোয়া শিল্পী, ইতিহাসবিদ, সংগীতজ্ঞ, দার্শনিক, আর্কিটেক্ট, রেস্তোরাঁ মালিক, ক্রিকেটার, সাহিত্যিক সবাই মিলে এই মিথ্যে ভারত গড়ে তুলেছে। খাঁটি নির্ভেজাল ভারতীয় মিথ্যা তথা মিথ। মিথ মানেই মিথ্যা আখ্যান। একদা কামধেনু নামের গরু বা রাম নামে প্রজাবৎসল রাজা ছিল ইত্যাদি। ভারতে থিয়েটারও শিল্পমাধ্যম হিসেবে শিকড়ে ফিরে চলো, খাঁটি ভারতীয় থিয়েটার, নাট্যশাস্ত্র, কোকশাস্ত্র, পেপসিশাস্ত্র এইসব মিথের বেসাতি খুলে বসেছে। কোকশাস্ত্র, পেপসি শাস্ত্রের উল্লেখ কথার পিঠে কথা গেঁথে মজা করার উদ্দ্যেশ্যে নয়। এই ধরনের বৃহৎ বহুজাতিক কম্প্যানীরাই ‘বিকল্প’ থিয়েটারের প্রধান পৃষ্ঠপোষক। সমকালীন ভারতে থিয়েটার হচ্ছে এই বহুজাতিক কম্পানিগুলির স্বার্থে, তাদের যোগান দেওয়া অর্থে এবং অবধারিতভাবে তাদের বেঁধে দেওয়া শর্তে।

এই বহুজাতিক কর্পোরেটদের প্রধাণ শর্ত হচ্ছে সমকালীনে দাঁড়িয়ে সমকালীনতা বর্জন। ভারতীয় ঐতিহ্য বলে কিছু মৃত পুঁতিগন্ধময় জিনিসকে চালানো। টিনের তলোয়ার নাটকের চরিত্র প্রিয়নাথ মল্লিকের জবানীতে “ আপনাদের কদর্য জীবনবোধ বর্জিত নাটকে মিথ্যা আড়ম্বর, বাইরে পুরাতন সমাজ বিদ্ধস্থ হচ্ছে, আর নাট্যশালায় আপনারা কাশ্মীরের যুবরাজের প্রেমের অলীক স্বর্গ রচনা করে চলেছেন।“
দিল্লীর এনএসডিকে কেন্দ্র করে যে ভারতীয় থিয়েটার তৈরির প্রকল্প নেওয়া হয় এবং আমেরিকার দুর্নীতিগ্রস্থ গাড়ি কম্পানী ফোর্ডের অর্থানুকূল্যে যে থিয়েটার সারা দেশে স্বীকৃতি পায়, তার প্রধান বৈশিষ্ট্য সমকালীনতা বর্জন করে মিথোলজি বা পুরাণে প্রত্যাবর্তন। এ প্রসঙ্গে আর একটি কথা জরুরি, তা হোল- মিথ এবং মিথোলজির মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক আছে কিন্তু তারা একই চিজ নয়। সপ্তম শ্রেণীর ভৌত বিজ্ঞান পুস্তক দ্বারা প্রাণীত হয়ে বলা যায়- সব মিথোলজিই মিথ দ্বারা নির্মিত কিন্তু সব মিথই মিথোলজিতে ঠাঁই পায় না। মিথ হল কিংবদন্তি, মিথোলজি হল পুরাণ। পুরাণের ভিত্তিই হল কিংবদন্তি। কিন্তু অনেক কিংবদন্তি লোকগাথায় ছড়িয়ে থাকে, যা পুরানে জায়গা পায়না। আমরা অনেক সময়ে কিংবদন্তি, পুরান, লোকগাথা, মহাকাব্য ( এপিক) প্রথা ( রিচুয়াল) এই সবের মধ্যে পার্থক্য করি না। একটি বোঝাতে অন্যটি উচ্চারণ করি। আমাদের এশিয়ান সমাজদর্শনে এই নমনীয়তা ছিল। তার কতগুলি সদর্থক দিক ছিল। গ্রীক বা রোমান মিথোলজির মত রিজিড অবস্থানে ছিল না চীনা বা ভারতের মিথোলজি বা আরবের মিথোলজি। গ্রীক ও রোমান সভ্যতার প্রধান বৈশিষ্ট্য হল তার নগর কেন্দ্রীকতা। ‘গ্রামবাসী’ বা ‘দেশবাসী’ থেকে মানুষ সেখানে নাগরিক বা সিটিজেন হয়ে উঠছে। এই ‘সিটিজেনশিপ’ বা নাগরিকত্বের ধারনা, একটা রাষ্ট্রিক ধারনা।৷ তা গড়ে ওঠে প্রাচীন গ্রীসে। স্মরণ করুন ইডিপাস নাটকে ইডিপাস জনতাকে সম্বোধন করছেন ‘ হে আমার থিবসের নাগরিকবৃন্দ’ বলে। ‘নাগরিকবৃন্দ’ বলছেন, ‘দেশবাসী’ বা ‘গ্রামবাসী’ নয়। অন্যদিকে প্রাচ্যে রাষ্ট্রের চেয়ে ‘সমাজ’ নির্ভরতা আজও অনেক বেশি। সুপারস্ট্রাকচারটি অনেক নমনীয়, লুজ। ইউরোপে যেখানে লজিকের পিরামিড সদৃশ স্ট্রাকচারটি সর্বগ্রাসী সেখানে ভারতে প্যারালজিকের উপস্থিতি বহমান। ফলে ইউরোপ যে কোন ধারনাকে সংগায়িত করে ফেলতে না পারলে স্বস্তি পায় না। কিন্তু প্রাচ্যে তা একইসাথে বিমূর্ত ও ব্যবহারিক। সমস্যা হল এই সদর্থক নমনীয়তাকেই নঞর্থক আত্মিকরণ করছে ব্রাহ্মণ্যবাদ। লুজ স্ট্রাকচারের সুবিধা নিয়ে, ভারতের নয়া নাৎসিরা, শাশ্বত ভারত, সনাতন ধর্ম ইত্যাদি ভ্রান্ত ন্যারেটিভ তৈরি করতে চাইছেন এবং অনেক ক্ষেত্রে সফল হচ্ছেন। তারা পুরাণকেই ইতিহাস বলে চালিয়ে দিতে চাইছেন, লোকগাথাকে পুরাণ বলে চালিয়ে দিতে চাইছেন, মিথকে বলতে চাইছেন রিচুয়াল। এ অনেকটা হেগেলের দ্বান্দ্বিক ভাববাদ সম্পর্কে কার্ল মার্ক্সের মন্তব্যের মত। মার্ক্স বলেছিলেন হেগেলের দর্শন মাথার ওপর ভর করে পা দুটো শূন্যে তুলে দাঁড়াতে চাইছে, আমি শুধু তাকে দুপায়ে দাঁড় করিয়েছি। মিথ এবং রিচুয়ালের আন্তসম্পর্কটিও এইভাবে হেঁটমুন্ড ঊর্ধপদ হয়ে থাকে। মিথকে প্রমাণিত আর রিচুয়ালকে প্রামাণ্য বিচার করে মিথোলজি-পন্থীরা আদাজল খেয়ে লেগেছেন। এইসব পুরাণতাত্ত্বিকরা পুরাণ থেকে ‘মূর্ধন্য’ ধ্বনিটিকে সরিয়ে ফেলে পুরাতাত্ত্বিকের ভান করছেন। যেখানে সেখানে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করেছেন, যার ফলে কেঁচো খুঁড়তে বেড়োচ্ছে কেউটে।

পোস্ট মার্ক্সিস্ট সময়ে আমাদের যাত্রা হবে রিচুয়াল থেকে মিথের দিকে। মিথের থেকে রিচুয়ালের দিকে নয়। মিথ দিয়ে আমরা রিচুয়ালকে ব্যাখ্যা করার বা বোঝার চেষ্টা করবো না। রিচুয়াল দিয়ে আমরা মিথকে ব্যাখ্যা করবো বুঝবো। যে মিথ নির্মাণ হয়েছে, তার বিনির্মাণ করবো রিচুয়াল দিয়েই। কারণ রিচুয়াল হল একশন, আর মিথ হল আখ্যান। পুরাতাত্ত্বিক গবেষণায় যে ইতিহাসের চিহ্ন উঠে আসে তার থেকে আমরা জীবন সম্পর্কে একটা ধারণা পাই। জীবন টিকিয়ে রাখতে ক্রিয়ার ধারণা পাই। মাটি খুঁড়ে বের করে আনা একটা ধাতব ঘড়া তাই সেই সময়ে মানুষের ক্রিয়া, তথা শ্রম এবং কর্ম নিবিড় রিচুয়ালের ধারণা দেয়। ঘড়া নিয়ে রাধার জল আনতে গেলে ইভটিজার কৃষ্ণের বেয়াদপী বা যশোদার মাখন ভর্তি ঘড়া চুরি করার ত্যাঁদরামির আখ্যান নয়। আখ্যান যেখানে এলিমিনেশনকে পাথেও করে, অর্থাৎ তোমার আখ্যান থেকে আমার আখ্যান আলাদা তথা উন্নত এই বিভাজন তৈরি করে, তখন রিচুয়ালের বৈশিষ্ট্য এসিমিলেশন। কারণ রিচুয়াল আদিম শ্রমের সাথে সম্পৃক্ত। অন্নের সংস্থান করতে, গাছে চড়তে, নদীতে ভেলা ভাসাতে, হিংস্র জানোরারদের হাত থেকে সন্তানকে বাঁচানোর জন্য পাথুরে অস্ত্র বানাতে, কাঠ কাটতে, হোমসেপিয়ানসকে মেহনত করতে হয়েছে সর্বত্রই। কোথাও, পৃথিবীর কোন প্রান্তেই, দেবতার অলৌকিক কারবারে সভ্যতা তৈরি হয়নি। হয়েছে মানুষের নিরলস মেহনতে। তার এই মেহনতের যে সিমিলারিটিস, তার প্রক্রিয়ার, যন্ত্রণার, বিষাদের, যুথবদ্ধতার যে সিমিলারিটিজ তাই ধরা পড়ে রিচুয়ালের সিমিলারিটিতে। ইতিহাসের এই সারসত্য বুঝেছিলেন মার্কস। তাই তার ডাক দুনিয়ার মেহনতি মানুষ এক হও। বিশ্বের আধুনিকতম বা প্রাচীনতম রিচুয়ালের নাম ‘বিপ্লব’। রিচুয়ালিস্টিক একশন বা রিচুয়ালিস্টিক পার্ফরমেন্স রিপিটেটিভ। আদিম যুগে মানুষ দলবেঁধে এই কাজে শ্রম নিয়োগ করতো।করতে করতেই এই কাজগুলোর একটা সাধারণ ছন্দ গড়ে ওঠে। সবাই এক তালে কাঠ কাটছেন বা পাথর সরাচ্ছেন বা গাঁইতি চালাচ্ছেন। সবাই কাজটা এক ছন্দে করার ফলে, কাজটায় একই সময়ে সকলে বল প্রয়োগ করছেন, ফলে কাজ হচ্ছে বেশি, আর এই কাজ করতে করতেই পেশীতে তৈরি হচ্ছে কাজের অভিজ্ঞতা। যা একই সাথে ইন্ডিভিজুয়ালের অভিজ্ঞতা, আর যৌথ বা কালেক্টিভ অভিজ্ঞতা। এই অভিজ্ঞরা ধরে রাখছে স্মৃতি। মস্তিষ্কে শুধু নয়, পেশিতে ধরে রাখছে স্মৃতি, যাকে ইংরেজিতে বলে মাসল মেমারি। আর কিছুটা স্মৃতি যৌথ ভাবেই চলে যাচ্ছে আরো অতলে, অচেতনতায়। অচেতনতায়, কিন্তু যৌথ ভাবে। একে বলা হয় কৌম অচেতন বা কালেক্টিভ আনকনশাস। এই আনকনশাসনেসকেই ট্রিগার করে রিচুয়াল। সেটাও ঘটে যৌথ অংশগ্রহণ তথা কালেক্টিভ পার্টিসিপেশনে। মানুষ এভাবেই ছাদ পেটাতে পেটাতে, হামান্দিস্তায় মশলা গুঁড়ো করতে করতে, বাটনা বাটতে বাটিতে, মাটি কোপাতে কোপাতে, যুথবদ্ধভাবে কাজ করার কিছু সুবিধাজনক প্রথা আবিষ্কার করছে। কাজ করার প্রথা, ধর্মীয় প্রাতিষ্ঠানিক প্রথা নয়। এই প্রথা, বিজ্ঞানের দোসর, বা বলা যায়, এই যৌথভাবে কাজ করার সুবিধাজনক প্রথা আবিষ্কারের বিশেষ জ্ঞানই ‘বিজ্ঞান’। পরে এই প্রথা বা রিচুয়ালের সাথে যুক্ত হয়েছে মানুষের কল্পনা, তৈরি হয়েছে আখ্যান। আর সম্পূর্ণ শ্রম থেকে বিচ্ছিন্ন মানুষ, পরজীবী মানুষ, তাদের শ্রমের সাথে সম্পর্কহীন, বস্তুজগতের সাথে সম্পর্কহীন অলীক কল্পনা দিয়ে সেই আখ্যানে অলৌকিক মিথ্যে গল্প ফেঁদেছে। মানুষের শ্রমকে অস্বীকার করে, দেবতার ভাঁওতাবাজিকে মহিমান্বিত করেছে। নিজেরা শ্রম অর্থাৎ কাজ ফাঁকি দেবে বলে, দেবতাদের কাছের লোক দাবী করে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছে। ব্রাহ্মণ্যবাদ এইভাবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। পুরোহিত, প্রিস্ট, মৌলবিদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। ক্রমে ক্রমে ক্রিয়ালব্ধ রিচুয়াল, ক্রিয়াবিমুখ হয়ে আখ্যানধর্মীতার কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। তার সজীবতা, সচলতা বিসর্জন দিয়ে, অনড় অচল ধর্মীয় প্রথায় পর্যবসিত হয়েছে। তৈরি হয়েছে পার্ফরমার, এপ্রিশিয়েটর প্যাট্রনের বর্নাশ্রম। না হলে ছাদ পেটাতে পেটাতে যে ছাদ পেটাই এর গান বা পদ্মায় অথবা অ্যামাজনে যে মাঝিরা বা বোটম্যানরা নৌকা বাইতে বাইতে গান ধরেছে সেখানে এই বিভাজন কোথায়! ময়ূরভঞ্জের ছৌ নাচের দুটো মুভমেন্টের নাম গোবরগুলা আর ঝিঙ্গা ছিটকা। গোবর গুলে, উঠোন নিকোনোর সময় যে ভাবে পা দিয়ে গোবর গোলা জল উঠোনে প্রথমে ছিটিয়ে দেওয়া হয় তার থেকে প্রাণীত গোবরগুলা মুভমেন্ট। আর ঝিঙ্গা ছিটকা হল চিংড়ি মাছের মুভমেন্ট। উড়িষ্যায় চিংড়িকে ঝিঁংগা বলা হয়, সমুদ্রে চিংড়ি ধরা পড়লে যেভাবে ছিটকে পালানোর চেষ্টা করে, তা থেকেই মৎস্যজীবী মানুষ পেয়েছেন এই মুভমেন্ট।
কিন্তু পুরাণপ্রেমী পালাকাররা রিচুয়ালকে শ্রম এবং শ্রমিকের চৌহদ্দি থেকে তুলে নিয়ে যেতে চেয়েছেন মন্দিরে। ব্রাহ্মণ্যবাদের ঘেরাটোপে। যেখানে একশন বা কাজটাকে গুরুত্বহীন করে আখ্যানটিকেই প্রধান করে তোলা হয়েছে। এবং আখ্যানটিও আর গ্রামীন লোকগাথা থাকেনি। থাকেনি পাঁচালি পাঠের মত নিত্যক্রিয়া হয়ে। যা ঘরের কাজ করতে করতেই গৃহিণী গৃহের মঙ্গল কামনায় নিভৃতে উচ্চারণ করে নেবেন। এটি হয়ে উঠেছে আড়ম্বর সর্বস্ব, পুরুষ নিয়ন্ত্রিত, একমাত্রিক আখ্যান বা শাস্ত্র। অর্থাৎ যাত্রাপথটি এইরূপ, রিচুয়াল-> মিথ-> মিথোলজি। বাংলা করলে প্রথা বা আচার-> কিংবদন্তি বা আখ্যান-> পুরাণ। আগেই বলেছি কিংবদন্তি বা আখ্যান লোকগাথাতেও ঠাঁই পায়। লোকগাথা যেহেতু ‘পুরাণ’ নয় তাই সেখানে সহজেই ‘উলটপুরাণ’ হয়। অসুর হতে পারে মহৎহৃদয়, রাম হতে পারে ভীরু এবং খল বা তামাসার যোগ্য, গনেশকে নিয়ে চলতে পারে মশকরা। রিচুয়ালের সাথে লোকগাথার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ থাকলেই রিচুয়ালে প্রাণ থাকে। ইন্টারপ্রেট করার সুযোগ থাকে। কিন্তু লোকগাথায় অংশগ্রহণকারী তো সাধারণ লোক বা মানুষ, যারা খেটে খান। যেখানে অংশগ্রহণকারী আর উপভোক্তার বিভাজনও নেই। লোকগাথা প্রাচীন জগদ্দল নয়। সে বহমান তথা কন্টেম্পোরারি। তাই আজকের ভারতে বর্জিত! ভারতীয় থিয়েটর বলে যে আজব ব্যপারটার নির্মাণ করা হয়েছে, সেখানে যা দেখবেন তা দেখা যায় শুধু দিল্লী এয়ারপোর্টে। যার অস্তিত্ব আসলে নেই।যেখানে সমস্ত কিংবদন্তির রেফারেন্স হিন্দু মিথোলজি, মুনি ঋষি রাক্ষস খোক্কশ হিড়িম্বা পুতনা অর্জুন রাম রাধা কেষ্ট । গিরীশ কারনাড, রতন থিয়াম, পানিক্কড়, বীনাপানি চাওলা সকলেই ইনক্রেডিবল ইন্ডিয়া তথা একজটিক ইন্ডিয়ার নির্মাণে নিজেদের নিয়োগ করেছেন। ঘোড়া কথা বলছে, মানুষ সর্প হয়ে যাচ্ছে, মুনি ঋষির অভিশাপে বন্যা, খরা, মহামারী হচ্ছে, যজ্ঞ করে বৃষ্টির দেবতাকে তুষ্ট করা হচ্ছে, এইসব ছেলে ভুলানো ন্যারেটিভ দিয়ে তারা সমকালীন ভারতের রাজনৈতিক ক্রাইসিস থেকে দর্শককে দূরে সরাচ্ছেন। ইমেজারি হিসেবে বারবার এই সাপ ব্যাং একজটিজম দিয়ে নয়া হিন্দু ফ্যাসিস্টদের পালে হাওয়া দিচ্ছেন। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সেমিনার কক্ষে, ইংরেজি ভাষায়, এরা যেসব কথাবার্তা বলেন, তা খুবই মনোগ্রাহী, কিন্তু থিয়েটারের প্রযোজনায় এদের রিচুয়ালিস্টিক পারফর্মেন্সের ব্যবহার প্রক্ষিপ্ত, দেখনদারি এবং কোডিফায়েড। অনেকসময়ই মূল প্রযোজনার সাথে সম্পর্কহীন ভাবে, একটু যক্ষগান, একটু কুটিয়াট্টম, একটু থাং-টা গুঁজে দেন এরা, আর্বান এলিট দর্শকের মনোরঞ্জনের উদ্দেশ্যে। দর্শক ওই প্রক্ষিপ্ত, কোডিফায়েড পারফর্মেন্স টেক্সটকে ডিকোড করে ইন্ডিভিজুয়াল কন্সাসনেস দিয়ে। যে কন্সাসনেস তাকে কালেক্টিভ আনকন্সাস থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে পেরেছে। তার সচেতন মন বুঝিয়ে দিয়েছে, রুরাল প্রলেতারিয়ান ফোর্স ভারতের প্রান্তে প্রান্তরে যে লড়াই চালাচ্ছে, তার থেকে দূরত্ব নির্মাণের সবচেয়ে সহজ তারিকা বুকে মি টু আর্বান নকশাল নোটিশ লটকানো। এতে দাক্ষিণাত্যকে জবাব বা উত্তর আর উত্তরকে দাক্ষিণ্য দেওয়া যায়। এই ডেলিকেট ব্যালান্স সর্বাত্মক।

Facebook Comments

Related posts

Leave a Comment