প্রবাসের অন্যতম অপেক্ষক স্বজনহীনতা। প্রবাসের দূরত্ব ও প্রকৃতিভেদে এই স্বজনের সংজ্ঞাও বদলে যায়, তার জড়তা ও প্রাত্যহিকতা একে অপরকে নেগেট করতে থাকে অহরহ। এ যেন তারকোভস্কির Stalker (১৯৭৯)-এর এক বিশ্বপ্রিয় স্টিল, পরিত্যক্ত দালানে মরুভূমির মত বালিয়াড়ি জমে রয়েছে, ইতস্তত দাঁড়িয়ে রয়েছে বিয়োগান্ত দাবার ছকের মত গোটাতিনেক গুটিমানুষ। দুজন খুব কাছাকাছি, চোখ থেকে দূরে, দরজার কাছে। একজন দৃষ্টিসীমার মধ্যেই। তিনজনের শামুকসদৃশ রসায়ন পুরো ছবির গতিকেই মরুভূমির মত মন্থর করে রাখছে। তাদের স্বজনহীনতার মন্তাজ-ই তাদের স্বজন হয়ে উঠবার ব্লু-প্রিন্ট রচনা করছে বারবার, আবহ জুড়ে। তাই তারকোভস্কির ছবির বৈশিষ্ট্য তার স্লথতায় নয়, বরং…
Read MoreCategory: প্রবন্ধ-চিন্তালেখা-দিনদুনিয়া
ফৌজি কওয়াল
(আজিজ মিঁয়া: ১৯৪২ – ২০০০) দৃশ্য ১: করাচির জৈনাব মার্কেট, আটের দশক। জুম্মার নামাজ শেষে কাওয়ালির আসরে ভিড় করেছেন কয়েকশ মানুষ৷ ‘কওল’ দিতে আসছেন আজিজ মিঁয়া, কওয়ালির ‘বেতাজ বাদশা’। তাঁর কওয়ালি শুনতে ভেঙে পড়েছে শহরের মানুষ। কিন্তু একি! কওয়ালির আসরে পুলিশ কেন? বিস্ময়ে সবাই দেখে, বিরাট পুলিশ বাহিনী ঘিরে রেখেছে গোটা অঞ্চল, যেন কোনও যুদ্ধের প্রস্তুতি। তারাও বুঝি কওয়ালি শুনতে এসেছে! নাহ, সে রাতে পুলিশ এসেছিল পরিস্থিতি সামলাতে৷ আজিজ মিঁয়ার সুরের এমনই জাদু, লোকেরা পাগল হয়ে যায়, শুরু হয় মাতলামো, ভাঙচুর, চরম বিশৃঙ্খলা। সেই অপ্রীতিকর পরিস্থিতি আটকাতেই পুলিশের আগমন।…
Read Moreকিস্যা কাহানি কা
‘ভাদ্র মাস যায় মিছে মিছে কথা না শুনে’ – এ জনশ্রুতি, জনসংস্কৃতি জনজীবনের এক খাঁটি আয়নার মতো। মিছে কথা। শুনতেই হয় ভাদ্রমাসে। তার মানে কি আশ্বিন থেকে শ্রাবণ সব সত্য কথা? অসত্য শুধুই ভাদ্র মাসে! মনে পড়ে ‘এ মাহ ভাদর এ ভরা বাদর? হ্যাঁ, ভাদ্রের ভরা বর্ষায় কাদা প্যাচপ্যাচে পথঘাট, টইটম্বুর মাঠপাথার। বুড়ি অঞ্জুমান বানু বলছিলেন এ সময় নদী বড়ো ফেঁপে ওঠে, পোয়াতির মতো ভরে যায়। সে সময় ছেলে-বুড়ো মেয়ে-মদ্দ সব ঘরবন্দী। কাজহীন নিস্তরঙ্গ জীবনে তখন রঙ্গরসিকতা, শোলোক-কাহানি, আলকাপ, কবিগান। মিছে কথা মানে গল্প কথা, কিস্যা, কাহানি… শোলোক বলা…
Read Moreদ্রষ্টা
লিখতে না পারার ভেতর একটা চিলেকোঠা আছে। লেখকের উদ্ভ্রান্ত মন তখন অনন্ত শূন্যের ভেতর ভাসতে থাকা ওই চিলেকোঠায় একা বসে থাকে। লেখক হয়তো সেইসময় সকালবেলা চা খেতে খেতে একবার রোদ্দূরের দিকে তাকালেন। দু’-একবার গাছপালার রঙ পেরিয়ে, আরও দূরে যেতে চাইল তাঁর চোখ। বাইরের আলতো হাওয়া ছুঁয়ে যাচ্ছে ঘরদোর। প্রাত্যহিক কাজকর্মও নিয়ম মেনে গড়িয়ে চলেছে। কিন্তু মন? মন বসে আছে, সেই নির্জন ঘরে। অন্যমনস্ক। কখনো আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে ভাবছে: ‘আর কোনোদিন একলাইনও লেখা হবে?’ দূর থেকে কখনো দেখা যায়, লেখক নামছেন ট্রাম থেকে। কাউকে হাত নেড়ে বলার চেষ্টা করছেন: ‘হ্যাঁ, কাল…
Read Moreউলটপুরাণ
দিল্লী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামলে মনে হয়, ইন্দ্রপ্রস্থে এলাম। চারিদিকে হাতি ঘোড়া নৃত্যরতা তন্বীর সোনালী মূর্তি, কাজু বরফি, চন্দন কাঠের দোকান। পারলে একটা রাধামাধবের মন্দিরও গড়ে ফেলে! ইনক্রেডিবল ইন্ডিয়া নাম দিয়ে এরকম একটা দেখনদারি ভারতবর্ষ গড়ে তোলা হয়েছে হচ্ছে কয়েক দশক ধরে তিলেতিলে। যে ভারত আসলে নেই, কখনো ছিল না, শুধু দেখানোর জন্য আছে। পেটোয়া শিল্পী, ইতিহাসবিদ, সংগীতজ্ঞ, দার্শনিক, আর্কিটেক্ট, রেস্তোরাঁ মালিক, ক্রিকেটার, সাহিত্যিক সবাই মিলে এই মিথ্যে ভারত গড়ে তুলেছে। খাঁটি নির্ভেজাল ভারতীয় মিথ্যা তথা মিথ। মিথ মানেই মিথ্যা আখ্যান। একদা কামধেনু নামের গরু বা রাম নামে প্রজাবৎসল রাজা ছিল…
Read Moreবন্ধুর কথায় বন্ধু
(গৌতম বসুর স্মরণসভায় স্মৃতিচারণা) শহরটা তখন বদলে যাচ্ছে। শহরের দেওয়ালে চেয়ারম্যান মাও এর ছবি ক্রমশ মলিন হয়ে আসছে, তার বদলে এশিয়ার মুক্তিসূর্য’র ছবি। কলেজ স্ট্রিটে রোজই গণ্ডগোল লেগে থাকে, নকশালদের সঙ্গে কংগ্রেসের। তার আঁচ কলেজের (প্রেসিডেন্সি কলেজ) ভেতরেও টের পাই। এইসময়, প্রথম প্রায় দেড় বছর, গৌতমের সঙ্গে আমার অতটা বন্ধুত্ব হয়নি। এটার একটা কারণ সম্ভবত এই যে, তখন কলেজে পরিষ্কার দুটো রাজনৈতিক দল ছিল – একটা বামভাবাপন্ন দল, পুরনো নকশালরা অনেকেই ছিল তার মধ্যে, আরেকটা অবাম, কংগ্রেসই বলা যায়। আমি সেই অ-বাম দলটিতে ছিলাম, ইলেকশনেও দাঁড়িয়েছিলাম, ছাত্র পরিষদের হয়ে। এবং…
Read Moreরবির মাংপবী-৫
৫ শারদীয়া আনন্দবাজারে গল্প শেখার সাম্মানিক একশো টাকা মংপুতে বসে তিনি কবিতা, চিঠি অনেকই লিখেছেন। প্রসঙ্গক্রমে সেগুলোর কিছু কিছু উল্লেখও করেছি। তবে এই পরিচ্ছেদে সেই লেখাগুলির কথা না বলে মংপুতে বসে তাঁর দুটি গল্প লেখার কথা বলতে চাইছি। প্রথম গল্পটি ‘রবিবার’। এই গল্পটি মংপুতে বসে লিখেছিলেন কিনা, সে বিষয়ে কোথাও প্রামাণ্য কিছু লেখা নেই। ‘গল্পগুচ্ছ’ গল্প-সংকলনে যেভাবে সময়ানুসারে গল্পগুলিকে সাজানো হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, ‘রবিবার’-এর আগে তিনি শেষ ছোট গল্প লিখেছেন ছ’বছর আগে। গল্পের নাম ‘চোরাই ধন’ যার প্রকাশকাল কার্তিক ১৩৪০। ‘রবিবার’ প্রকাশিত হয়েছে আশ্বিন ১৩৪৬। অর্থাৎ ১৯৩৯ সালের পুজোর…
Read Moreআমার সমর্পণ
রবীন্দ্রনাথের সমর্পণ, সমর্পণের রবীন্দ্রনাথ ‘আমার হৃদয়বৃত্তিগুলো যদি আমাকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাত আর যাই হোক কোনও রূপসৃষ্টি সম্ভব হত না’ — কিছুদিন আগে দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ও অতুলপ্রসাদ সেনের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের একটা কথোপকথনে পড়লাম এই কথাটা। সেই থেকে আগ্রহের পায়চারি আর সন্ত্রাস যুগপৎ খেলে যাচ্ছে আমার ভিতরে। আগ্রহ – কেননা কথাটি মাত্র এক লাইনের হলেও তার গায়ে লেগে আছে একজীবনের পরিশীলনের ছায়া। তার মন। সেই মনের আলো-হাওয়া-চরিত্র। আসলে কথাটা সব শিল্পীর, সারাজীবনের। ভাবি, হৃদয়বৃত্তি যদি প্রবল না হত তবে কী করে লিখলেন সেইসব গান যা পূজার ঘরে কাটাকুটি খেলতে খেলতে আসলে…
Read Moreইংরেজি ও রবীন্দ্রকুন্ঠা
রবীন্দ্রনাথ যখন নোবেল পুরস্কারের সম্মানে ভূষিত হলেন তখনও তাঁকে কোনো অভিনন্দন বার্তা পাঠাননি কবি রবার্ট ব্রিজেস্; অথচ তিনিই বৎসরাধিককাল পরে ১৯১৫-র মার্চের প্রথমার্ধে Gitanjali-র কয়েকটি কবিতা নিজে সংস্কারের আগ্রহ প্রকাশ করলেন। অনুমতি চেয়ে চিঠি লিখলেন রবীন্দ্রনাথকে। অবশ্য এর পূর্বেই ১৯১৪-র ৭ই জুন তিনি অভিনন্দন জানিয়েছেন নোবেলবিজয়ী কবিকে। কিন্তু, সে অভিনন্দনের ভাষা বিচিত্র ধরণের এবং কৌতূহলোদ্দীপক। কবিকৃত অনুবাদ প্রসঙ্গে স্বাভাবিকভাবে এ প্রশ্ন এসে যায় যে শুধু ব্রিজেস্ নন, ডব্লিউ.বি. ইয়েটস্ সহ অন্যরাও রবীন্দ্রকৃত অনুবাদের সংশোধন, পরিমার্জন ও পরিবর্তনে আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন কেন? তার কারণ কি রবীন্দ্রনাথ নিজেই ? রবীন্দ্রনাথের কবিতা, গল্প…
Read Moreশম্ভু রক্ষিত, শ্রদ্ধাভাজনেষু
যতদূর মনে পড়ছে, ইংরাজি ২০১৮-এর শেষ প্রান্তে শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায়ের জীবনাবাসন হয়। প্রায় একই সময়ে, আরও একটি দুঃসংবাদ আমাদের বিমূঢ় করেছিল, যখন শম্ভু রক্ষিত-কে, আমাদের সকলের শম্ভুদা-কে, গুরুতর অসুস্থ অবস্থায়, চিকিৎসার জন্য পূর্ব মেদিনীপুরের বিরিঞ্চিবেড়িয়া থেকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। এর কিছুদিন পর, হাওড়ার ঠাকুরদাস দত্ত ফার্স্ট লেনে জন্মগ্রহণ করা শম্ভু রক্ষিত-কে কিঞ্চিৎ সুস্থ শরীরে আবার ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বিরিঞ্চিবেড়িয়ায়, কিন্তু তখন থেকেই কারুর-কারুর মনে আশঙ্কা জন্মাচ্ছিল, এইবার, এতদিনে, বৃত্ত বুঝি সম্পূর্ণ হতে চলল। অবশেষে, সম্পূর্ণ হল সেই বৃত্ত। বিগত আঠারো মাস ধ’রে তিনি কি তাঁর অনুরাগীদের নিজের মৃত্যুসংবাদের ভার বহন করবার…
Read Moreপাহাড়পর্বত, মেঘমালা
শম্ভুদার প্রয়াণে আমি শোকাচ্ছন্ন। তাঁর সম্পর্কে কিছু লিখতে গিয়ে আমার দুচোখ সজল হয়ে উঠছে। তাঁর মৃত্যু সংবাদ পেয়ে আমি এই অচল-জগৎ পরিস্থিতিতে তাঁর শেষযাত্রায় যেতে পারিনি এজন্য মন বিষণ্ণ। সে মন নিয়েই কিছু লিখছি। সে গত গত শতাব্দীর ষাটের দশকের শেষার্ধ। ১৯৬৭-৬৮ সাল। স্কুলের অষ্টম-নবম শ্রেণীর ছাত্র আমি, আমাদের শহরের অগ্রজ কবিতাপ্রয়াসীদের উৎসাহদানে আমি তখন কবিতা রচনায় সবে সচেষ্ট হয়েছি। তাঁরা আমাকে কিছু কিছু কবিতার বই, লিটল ম্যাগাজিন দিতেন। সেসব থেকেই, ওই সময়, শম্ভু রক্ষিতের কিছু কবিতা পড়ি। সোমনাথদা, সোমনাথ মুখোপাধ্যায়, রমাদি, রমা ঘোষ, শৈলেনদা, শৈলেনকুমার দত্ত, আমাদের এই শহরে…
Read Moreশম্ভু ও সিকিমের ছাম্ব্ হ্রদ
মেদিনীপুরের মাটি ফুঁড়ে বেড়ে ওঠা কবি- শম্ভু রক্ষিত। প্রাসাদ-পিরামিড-ড্রাগন-গন্ধর্ব অধ্যুষিত এক অলৌকিক বৈভব ও সম্ভোগের জগৎ। তা আকাশে মেঘের সৌধমালা। শম্ভুর ব্যক্তিজীবন নিয়ে অনেকেই মন্তব্য করেন। কিন্তু তার কবিতার কোনো আলোচনা কোথাও দেখিনি। অথচ গত তিন দশকের বাংলা কবিতার ইতিহাস যখন লেখা হবে তখন শম্ভুর কথা আসতে বাধ্য– যা তথাকথিত মূল স্রোতের অনেক কবির বিষয়েই নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। যদি ইয়োরোপের ১৯ শতকের নের্ভাল কি ২০ শতকের ডাডাইস্ট কি ফিউচারিস্ট কবিরা এখনও আমাদের কৌতুহল উদ্রেক করে থাকেন, তবে ব্যাপক না হলেও বলা যায় যে আগামী কয়েক দশকে শম্ভু বিষয়েও…
Read Moreএক উদ্বৃত্ত মানুষের কবিতা
শম্ভু রক্ষিতের প্রয়াণের দিন, তাঁরই সমবয়সি একজন কবিকে সোসাল মিডিয়ায় মন্তব্য করতে দেখেছি যে, শম্ভুর মৃত্যুর সঙ্গে শেষ হল ‘এক অসম্ভবের যাপন’। এবং তারপর আরও অনেকেই ওই কথাটি মাঢ়ীতে চেপে জাবর কেটেছেন। সবারই লক্ষ্য শম্ভুর ব্যক্তিজীবন যাপনের দিকে। এভাবেই আমরা প্রায় সকলেই তাঁর জীবনযাপনে কৌতূহলী হয়ে তাঁর কবিতাকে নজর করিনি সেভাবে। আর তাঁর জীবনানুষঙ্গে যে তাঁর কবিতাকে খোঁজা অহেতুক, তা তিনি নিজেই জানিয়েছেন। ‘কবির ভিতর-বাহির অপাংক্তেয়’, তাই কবিতাকে জীবনচরিতে খুঁজতে চাওয়া, আসলে কবিতাকেও অপাংক্তেয় করে দেখার দুরভিসন্ধি বই আর-কিছু নয়। অথচ আমরা খেয়াল করলামই না, আমাদের চিরাচরিত কবিতাচর্চার পাশে তাঁর…
Read Moreবাংলা কবিতার স্বাধীন পুরুষ মহাপৃথিবী’র কবি শম্ভু রক্ষিত
একটা গোটা জীবন ছিল কবিতার জন্য উৎসর্গ। শুধু কবিতাকে ভালবেসে পার্থিব সুখকে হেলায় উপেক্ষা করে সুদীর্ঘকাল ধরে নিষ্ঠা ও ধৈর্য্য সহকারে; ঘন্টা বাজিয়ে ছুটন্ত ঢেউয়ের শব্দে বাংলা সাহিত্যে নতুন ভাষা চয়নের মাত্রা যোগ করেছিলেন মহাপৃথিবীর কবি শম্ভু রক্ষিত। তিনি গত ২৯ জুন সকাল আটটায় নিজস্ব বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। শুভানুধ্যায়ী, গ্রামবাসী, আত্মীয় পরিজনবেষ্টিত হয়ে পুত্র, জামাতা, এক সাহিত্য সেবকের কাঁধে চেপে মহাপ্রস্থানে চলে গেলেন বাংলা সাহিত্যের ব্যতিক্রমী কবি শম্ভু রক্ষিত। স্থানীয় চাঁপী-পানা শ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। প্রথাগত শিক্ষার প্রতি তাঁর কোনদিনই আগ্রহ ছিল না। হাওড়ার নরসিংহ দত্ত কলেজে…
Read Moreশম্ভু রক্ষিতের কবিপ্রতিভার রহস্য
‘The poet is like the prince of the clouds who haunts the tempest and laughs at the archer. Exiled on the ground in the midst of the jeering crowd, his giant’s wings keep him from walking.’ — Baudelaire ১৯৭১ সালে প্রকাশিত বইয়ের (‘সময়ের কাছে কেন আমি বা কেন মানুষ’) একটি কবিতায় কবি শম্ভু রক্ষিত লেখেন : ‘রবি ঠাকুর বা নজরুল নই আমি, আমি শম্ভু রক্ষিত :’ এ কবিতাতেই আরও (‘আরামখেকো ঈশ্বরের প্রতি’) পড়ি : ‘আমি একজন কবি, আমি বাংলার কমার্শিয়াল বুদ্ধিজীবীদের গুম করে জখম করে দিতে চাইছি।’ উত্তম পুরুষ…
Read Moreরবির মাংপবী-৪
মংপু পর্ব ৩ মংপু-মুগ্ধ রবীন্দ্রনাথ ‘…এই কাচের ঘরটা বুঝি আমার লেখবার? এ তো খুবই ভাল, একেবারে উত্তম বলা যেতে পারে। এ চৌকিতে সকালবেলা বসব আর রোদ্দুর এসে পড়বে কাচের ভেতর দিয়ে। তোমার ঐ বৃহদাকার বনস্পতির পাতার ফাঁক দিয়ে শতধারায় ঝরে পড়বে সকালবেলার আলো, ভোরের সেই রৌদ্রস্নানটি আমার কত সুন্দর হবে।’ বারান্দা দিয়ে ঢুকে বাঁদিকের প্রান্তে যে কাচঘেরা পড়ার ঘরের কথা উল্লেখ করেছি আগের পরিচ্ছেদে, এই প্রশংসা সেই ঘরটাকে নিয়েই, অন্তত বর্ণনা তো একেবারে মিলে যাচ্ছে। ছোট্ট ঘরটার দরজা, জানলা ধবধবে সাদা রঙে শোভিত। ফলে কাচের মধ্যে দিয়ে আলো…
Read Moreঅল আই হ্যাভ ইজ আ ভয়েস
প্রতি মুহূর্তে রাষ্ট্রের এমন এমন চিল-ঠোক্কর মানুষ শেষ কবে দেখেছে? আমাদের যাদের বয়স ত্রিশের কোঠায়, তারা এই প্রথমবার, এই দেশে। এমন অ্যাটেনশান সিকার রাষ্ট্র-ব্যবস্থা আমরা এর আগে নাৎসি জার্মানির ইতিহাসে দেখেছি, সিনেমায়, গল্পে। সত্যি বলতে এক ত্রাসের অনুভূতি ছাড়া বাকি অনুভূতিগুলো কেমন যেন বসে যাওয়া গলার মতো মোটা আর ক্ষীণ হয়ে আসছে। ভয় হচ্ছে। সত্যিকারের ভয়। ভাবি, এই তো একটাই মানবজীবন! তাকে কি তবে এবার থেকে এই এইমাত্র ত্রাসের অনুভূতি নিয়েই বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে হবে, বা জীবনের বড় একটা অংশ এই ভয় ত্রাসের ঘরে যুঝতে যুঝতে ফুরিয়ে যাবে! লক্ষ…
Read Moreঅন্ধকার দিনগুলিতে অনুবাদ
লেখার বিষয় যতটা অনুবাদ, ঠিক ততটাই এই অন্ধকার দিনগুলি। যখন ধর্মের ভিত্তিতে জনগণকে ভাগ করার চেষ্টায় ভয়ানক তৎপর বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার। নয়া নাগরিকত্ব আইনের প্রণয়ন এবং তা রুজু করার মাধ্যমে তারা বাতিল করে দিতে চাইছে এক বিশাল সংখ্যক জনগণের অস্তিত্ত্ব এবং তার সংশোধনকারি আইনের দ্বারা তারা বাতিল করছে সম্পূর্ণ মুসলিম সম্প্রদায়কে যারা ভারতবর্ষের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। অন্য সমস্ত ধর্মের নাম থাকলেও সিএএ থেকে নির্দ্বিধায় এই হিন্দুত্ববাদী সরকার বাদ দিয়েছে মুসলিম ধর্মের নাম। এটাই স্বাভাবিক যে এর বিরুদ্ধে সারা ভারতবর্ষের সমস্ত সাধারণ নাগরিক, প্রতিবাদ করবেন, আওয়াজ তুলবেন, রাস্তায় নামবেন। দেশব্যাপী এই প্রতিরোধের পুরোভাগে রয়েছে এদেশের ছাত্রী…
Read Moreসাম আর মোর ইকুয়াল দ্যান আদার্স
সরকারবাহাদুরের সমালোচনা। ১৯২৫। ফোর্ডের মডেল-টি গাড়ির চাহিদা তখন এতটাই তুঙ্গে যে হেনরি ফোর্ড নিশ্চিন্তে বলে দিলেন “A customer can have a car painted any color he wants as long as it’s black”। মোদ্দা কথা হল রং নিয়ে ত্যাঁদড়ামি করলে চলবে না, যা বানাচ্ছি তাই নিতে হবে নইলে কেটে পড়ো। “কাস্টোমার ইজ দ্য কিং” গোছের কথা তখন মূল্যহীন। ফোর্ড সাহেবের সেই বিখ্যাত উক্তির টেম্পলেটেই দিব্যি সাজিয়ে দেওয়া যায় এখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি; ““A Citizen can say anything about the Government as long as it’s Pro-Government”। অর্থাৎ গদগদ ফর্ম্যাটে সরকার বাহাদুরের প্রশংসা না…
Read Moreএখানে আকাশ নীল ও পেঁয়াজ দশ টাকা
হেডিং পড়ামাত্র, পাঠক, আপনি ভাবলেন, কোথায়, কোথায় সেই জায়গা! তাহলে ‘রথ দেখা কলা বেচা’—র মতো সেখানে একটা টুর, হালকা বেড়ুবেড়ু তো বটেই (ওটা ফাউ) আর ফেরার বেলা কাঁধে বগলে মাথায় করে পেঁয়াজ ভর্তি বস্তা। আহা! ‘ঘুরতে গিয়ে আমার জন্য কী আনলি?’ বলা আত্মীয়স্বজনও পেঁয়াজ—সম স্তরে স্তরে খুশি। পিঠপিছে নিন্দে করা আত্মীয়, বন্ধুবলয়ের কাছেও উপহার পৌঁছনো মাত্র ঝাঁঝ গায়েব। আরও কী কী প্ল্যানিং হতে পারে, ভেবে নিন। জায়গার নাম বলছি। তার আগে, একটা স্বীকারোক্তি প্রয়োজন। পেঁয়াজের দামখানা পড়ামাত্র হয় আপনি চমকে গিয়েছিলেন, কিংবা ভেবেছিলেন কোনও রূপকথা, তাই তো? মোটমাট, বাস্তবের গন্ধ…
Read More