রাজদীপ রায়

কারুকর্মীর নিরন্ধ্র বলয়

১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে আঠারো বছর বয়সে দস্তয়েভস্কি তাঁর ভাইকে লিখেছিলেন: “Man is a mystery: if you spend your entire life trying to puzzle it out,then do not say that you have wasted your time. I occupy myself with this mystery, because I want to be a man.” সেই কারণে তাঁকে অনেকেই মনস্তত্ত্বিক কথাকার বললেও তিনি নিজেকে রিয়েলেস্টিক বলতে চেয়েছেন। তাই বলে কি তাঁর লেখায় মনস্তাত্ত্বিক উপাদান নেই? ঠিক এই কথা লেখবার তিরানব্বই বছর পরে অপমানে ক্ষরিত হতে হতে এক মৃত্যুর যাযাবর লিখে রাখছিলেন তাঁর গোপন খাতায় একটি উপন্যাসের অবয়ব। মানুষ দেখেছেন তিনি ঢের। মানুষ বুঝেছেন তিনি ঢের। আর কখনো কখনো বেশি দেখে ফেলার করুণ পরিণতিতে স্তব্ধবাক থেকেছেন। অন্তর্গত রক্তপাতে সেই খাতাগুলি রাঙা হয়েছে। অথচ দেখতে পায়নি কেউ—কারুকর্মীদের অমেয় নিষ্ঠুর নিয়তিবাষ্প। আরও অনেক সম্পূর্ণ—অসম্পূর্ণ উপন্যাসের সফলতা নিষ্ফলতার মধ্যেই তাই ‘কারুবাসনা’ সেই ত্রিকালের চূড়া, যার ওপর যে-কোনও কালের যে কোনো কারুশিল্পী,তা তিনি যতই সাধারণ আর মিডিওকার হোন না কেন,তাকে স্পর্শ করতে পেরেছে। স্পর্শ করতে না পারলেও স্পর্শের আর্তিতে বিসর্জন দিতে পেরেছে জগত ও জাগতিকতাকে। আবর্তিত জগতের ক্রূর হিংসার কাছে হতে হয়েছে নিষ্পেষিত। কত বিশ্বাস ভেঙেছে চোখের সামনে। কত নীল হয়ে গেছে স্বাভাবিক মানুষ। চোখের সামনে দেখেছে ওই অসহায় কারুকর্মীটি। তবু তিনি কিছু করতে পারেননি। কেননা তিনি কিছু করতে পারেন না। বা, তার কিছু করার ওপর এ পৃথিবীর একটিও চোখ ভরসাতুর তাকিয়ে নেই। সে জানে। আর আবারো, সব জেনে যাওয়ার অনিবার্য সততা তাকে পুড়িয়ে মারে। সফল হওয়ার পথগুলিতে সে একটু চললেই শিরোপা পেতে পারত, এ কথা জেনেও তাকে জীবনকে ঘিরে থাকা নীতিবোধের কারণে সরে থাকতে হয়। স্ফূর্তির ক্লাউন তার সাজা হয় না। হেমও পারেনি।

জীবনানন্দ উপন্যাস লিখতে চাননি। জীবনের অনিবার্য শকুন তাকে বাধ্য করেছিল। তিনি বা হেম,হেম বা তিনি বুঝেছিলেন, গদ্যের চড়া হাট আছে। সে হাটে নিজেকে খানিক বিকোতে না পারলে সম্ভব নয় মহানগরের বুকে এই অসহনীয় বেঁচে থাকা। হেম একলাইনও গদ্য লেখেনি। লিখতে চায়নি ভয়াবহ সততা থেকে। তাই সমগ্র কারুবাসনায় জীবনানন্দ হেমের কশেরুকা বাঁকতে দেননি বাজারের সফলতার ভিড়ে। কিন্তু বাস্তবিক জীবনানন্দের পক্ষে ততটা সরে থাকা সম্ভব ছিল না। তাই লিখেছেন বিস্তর। তাদের যত না প্রকাশ করেছেন, তার চেয়ে বেশি করেছেন ট্রাঙ্ক ভর্তি। কারুবাসনার শুরুতেই হেম-কে দেখা যায় এমনিই এক ট্রাঙ্কের ভেতর থেকে উইধরা বই-লেখা বের করতে। জীবনানন্দের উপন্যাস পড়তে বসে যত না বেশি একটি উপন্যাস পড়ার উত্তেজনা বোধ করা যায়, তার চেয়ে পক্ষপাত পায় এই মানসিকতা, কোন উপন্যাসের ভেতর কোন কবিতার বীজ লুকিয়ে রয়েছে। ‘কারুবাসনা’ এই কারণে অনেকে পড়েছেন বা রেফারেন্স করেছেন, কেননা তার মধ্যে ‘বনলতা’ নামটির উল্লেখ। উপন্যাস তখন পরম পাঠকের করুণায় কবির উপন্যাস। সেখানে কবির কবিতার বীজ ছাড়া কীই বা থাকতে পারে। জীবনানন্দ সমগ্র-র সম্পাদনা করতে গিয়ে দেবেশ রায়ের মনে হয়েছে: “কবিতা-লেখার জীবনব্রতী এক প্রধান চরিত্র উত্তমপুরুষে কথা বলে যায় বলেই এই উপন্যাসে অনেক সময়ই ডায়েরিজার্নালের প্রকৃতি যেন বেশি ধরা পড়ে। জীবনানন্দ নিজেই এ রচনা ‘novel’ বলে চিহ্নিত করে না-গেলে মনে হতে পারত, যে তিনি সব আড়াল ভেঙেই নিজের জীবনের কোনও এক সময়ের ডায়েরি রেখে গেছেন”। সত্যিই তো। উপন্যাস লিখবেন কেন জীবনানন্দ? তিনি তো লিখতে চান নি। বরং তিনি চেয়েছেন পরম আহ্লাদে তাঁর বইগুলির মৃত্যুকে প্রত্যক্ষ করতে :
“কল্যাণীকে বললাম—‘আমি চলে গেলে এই বইগুলো মাঝে মাঝে দেখো।’
কল্যাণী সেলাই করছিল; কোনো জবাব দিল না। বইগুলো মুছতে মুছতে—‘মাঝে মাঝে রোদে দিও এগুলো।’
কল্যাণী কোনো কথা বললে না।
সে আমার ওপর বিরক্ত;দেশে এসে বলেছিলাম ছ-সাত দিন থাকব; থাকতে-থাকতে তিন মাস হয়ে গেল। প্রায় এক মাস থেকে বলছি,চাকরির চেষ্টায় কলকাতায় আজকালই যাব। কিন্তু আজও গড়িমসি করে দেশের বাড়িতেই কাটাচ্ছি। এত অপরাধ ও বেদনার জন্য তার জীবন প্রস্তুত ছিল না।”

এ কার কথা লিখেছেন জীবনানন্দ? এ কি সত্যিই কোনো হেম, নাকি উপন্যাসের বয়ন যত এগোয়,সমস্ত কুয়াশার পরত যখন ফিকে হয়ে আসে তখন বরিশালের সেই ধূসর ছেলেটির অবয়ব স্পষ্ট হয়ে উঠতে চায়। স্পষ্ট হয়ে উঠতে চায় ব্যক্তিগত পরিসরের রক্তাক্ত জীবনের বিষাদানন্দ। কল্যাণীর নামকরণে যে নীড় যে আশ্বাস লুকিয়ে আছে পল্লী-বাংলার, সেই রূপ লাঞ্ছিত হয়ে এক পুড়ে যাওয়া কালশিটে পড়া প্রত্নপ্রতিমা আবিষ্কৃত হয়, তার স্নেহকরস্পর্শ না পারে প্রেমহীন হেমকে বাঁচাতে, না পারে প্রেমাকাঙ্ক্ষী নির্মলকে শুশ্রূষা দিতে। উপন্যাসের শুরুতেই সম্পর্কের এক নিষ্ঠুর কথোপকথনে জীবনানন্দ বুঝিয়ে ছাড়েন,আর যাই থাক, ‘জ্ঞানের বিহনে প্রেম নেই’। সেই নির্মম দুধ পান করবার দৃশ্যরূপ, এমন ডার্ক কমেডি,মক এলিমেণ্ট, জীবনানন্দে প্রায়শই আছে। কিন্তু এমনতর নেই:

‘গরম দুধ খাবে?’
‘না,দরকার নেই।’
বালিশে খানিক্ষণ মাথা গুঁজে পড়ে থাকে কল্যাণী- ‘বাঃ,তুমি আমার বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে আছ যে?’
‘দেখছিলাম’
‘না, মরতে এখনো দেরি আছে ঢের।’
‘মরার কথা নয়।’
‘হ্যাঁ,যা বলছিলে,আমাকে একটু গরম দুধ এনে দাও তো।’
‘আচ্ছা দিচ্ছি।’
‘কিন্তু এখন দুপুরবেলা সব্বায়ের খাওয়াদাওয়া হয়ে গেছে; কোত্থেকে এনে দেবে?’
‘কেন খুকির দুধই তো আছে।’
‘তা হলে খুকি কী খাবে?’
মাথা হেঁট করে একটু ভেবে, ‘বেশ,পিসিমার দুধের থেকে এনে দেব তাহলে।’
‘কী করে আনবে?’
চুপ করে ছিলাম।
‘পিসিমার কাছে গিয়ে চাইবে?’
ঈষৎ হাসতে চেষ্টা করে—‘হ্যাঁ,দরকার হয়েছে,চেয়ে আনব।’
‘কেন,আমি কি ভিখিরির মেয়ে যে পরের কাছ থেকে দুধ ভিখ করে ছাড়া খেতে পারব না?’
একটু চুপ থেকে বললাম, ‘এক গ্লাস দুধ তা পিসিমা খুশি হয়েই দেবেন।’
কল্যাণী একটা নিশ্বাস ফেলে, ‘যাক যা কাজ করছিলে তাই কর গিয়ে, দুধ আমার লাগবে না।’

…… … … … …

‘বেশ টাটকা দুধ নিশ্চয়ই?’
‘হ্যাঁ,খুব’
‘তুমি খেয়ে দেখেছ?’
‘না খাই নি’
‘বিনয় ভট্‌চার্যের দোকানে শিগগির যাওনি বুঝি?’
‘না’
‘এক কাপ চা খেতেও যাওনি?’
‘না, শিগগির গিয়েছি মনে পড়ে না।’
‘সত্যি যাও নি? বাপ রে, এত তো চায়ের ভক্ত ছিলে। কি,বাড়িতে তো চা পাও না,আমি তো ভাবতাম বিনয় ভট্‌চাযের দোকান থেকে চা খেয়ে আস তুমি।’
‘না,মাঝে-মাঝে একটা চুরুট কিনতে যাই’
‘চুরুট?’
‘হ্যাঁ’
‘আর-কিছু না?’
মাথা নাড়লাম—‘না’
‘চুরুট তো তোমাকে খেতে দেখি না আমি’
‘মাসের মধ্যে দু-একটা খাই’
‘তাই বা কখন খাও?’
‘খাই রাস্তায়—সন্ধ্যার সময়’
‘বেশ লাগে?’
‘মন্দ কী!’
‘কিন্তু দুধ খেও’
‘কে? আমি?’
‘হ্যাঁ’
‘কেন বল তো?’
কল্যাণী কোনো জবাব দিল না।

এরপর দুধ খাওয়া নিয়ে কল্যাণী-হেমের মধ্যে যে অদ্ভুত টানাপোড়েনের মাংস-মেদ-মজ্জা বেরিয়ে আসে,তার রঙ যতই কৌতুকের হোক না কেন, তাকে কালো, ধূসর কিংবা অন্য কোনো রঙ দিয়ে চিহ্নিত করা যাবে না। কারুকর্মীর অভ্রান্ত এই প্রেমহীনতার দস্তুর এইভাবেই উলঙ্গ হয়ে কুরে কুরে শেষ করে দেবে মধ্যবিত্তের সামাজিক ও যৌন অবস্থানকে। হেম বুঝতে পারে না রক্তমাংসের এই প্রগাঢ় রাজনীতিকে। তার শুধু মনে হয় ‘সব জায়গাতেই কি একরকম?’। নাকি অনিবার্য মুদ্রাদোষে কেবলমাত্র হেমই সেই অভাগা মানুষ,সে কবি,কল্পনাতাপস বলেই তার চারপাশের ক্রূর পৃথিবী তার প্রতিটি বিশ্বাসবোধের সমাধি চায় আজ। কিন্তু একি কারুকর্মীর নিয়তি না স্বভাব? যাকে আপামর সাহিত্যর পাঠক করুণার চোখে দেখে এসেছে। যেন কবি মানেই অভিশাপগ্রস্ত। এবং তার জীবনে অবশ্যই কোনো নারী থাকবে,একাধিকও পারে। কিন্তু তাদের কেউই কবিকে বুঝবে না এবং তাদের অমেয় সার্থ নিয়ে তারা পাশে থেকেও সরে যাবে দূরে। অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নানারঙের দিন’ নাটকে যেমন অভিনেতা রজনীকান্তকে তার গুনমুগ্ধ বান্ধবীটি জানিয়েছিল,বিয়ে তখনই সম্ভব,যদি রজনী থিয়েটার ছেড়ে দেয়। নারী নিরাপত্তা চায়। চায় সেই বলয়ের মধ্যে সুস্থির প্রেম। অন্তত জীবনানন্দ কিংবা হেমের জীবনে নারী এমনিই কিছু চেয়েছিল তাদের কাছ থেকে আযোজন দূরে দাঁড়িয়ে।

ট্রাজেডি এইখানে, যে নারীর কথা ভেবে ভেবে না পাওয়ার পীড়াগুলোর বনিয়াদ এত শক্তিশালী হয়েছে, যে নারী সামনে আসেনি,অথচ কল্পনার দূরতম দ্বীপ হয়ে জীবনের প্রদ্যুম্ন শিখাটি জ্বালিয়ে রাখতে কৃতকার্য হয়েছে, সেই যখন ঘরে এসেছে, তখন কেন তাকে জীবনের সেই পরম লালন দিয়ে নির্মাণ করতে পারেনি হেম কিংবা তার মত শত-সহস্র কারুকর্মী? ফলে নিজের কাছেই নিজের সেই প্রতিমার সারা অঙ্গে পড়েছে কালশিটে,ব্যর্থতার পুঞ্জীভূত ভূত চেপে বসেছে স্বপ্নভঙ্গের অভিজ্ঞতায়। তখনই চালাকি করে কিংবা খিদের তাড়নায় দুধ খেয়ে নেওয়া কল্যাণী, অপুষ্টিতে ভোগা কল্যাণীর বিপরীতে উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে মাধুরী কিংবা বনলতা। কিন্তু যদি ভেবে নেওয়া হয় তাদের অপ্রাপনীয়তার কাছে হেরে গিয়ে কল্যাণীর শরীর ও মন বড় সস্তা হয়ে উঠেছে হেমের কাছে, তাহলে ভুল হবে। কল্যাণীর অবস্থান আর মাধুরী কিংবা বনলতার অবস্থান পৃথক। তাই কল্যাণীর নির্মলের জন্যে ব্যথা পাওয়ার যেমন মানবিক দিক আছে। তেমনিই আছে সেই মানবিক চাওয়াটিকে সংসারের দুরমুসে ধ্বস্ত করে দেওয়ার ইতিবৃত্ত। কল্যাণীকে অনুসন্ধান করেছে হেম। খুঁজতে চেয়েছে তারই মধ্যে অনেক নারী। কিন্তু সে ভুলে গেছে কল্যাণীকে খুঁজতে। তাই কল্যাণীর সঙ্গে একীভূত হয়ে হেমের যে বিপরীতমুখী যন্ত্রণা, কল্যাণীরও একই যন্ত্রণা। তফাত একটুকুই, কারুকর্মীর কারুজগৎ আছে, মুক্তির, কিংবা জীবনের অচরিতার্থ দিকগুলির মেরামতের। কিন্তু কল্যাণীর তা কই? মাধুরী কিংবা বনলতাকে পেয়ে যে মানস অভিসারে এগোতে পারে হেম এবং সেই অভিসার অনিবার্যভাবে ব্যর্থ হলে, পারে সেই নিয়ে বিষাদে মশগুল হতে। সে যে কারুকর্মী। তার ক্ষমতা আছে। কল্যাণীর নেই। তাই যখন নির্মলের কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত কল্যাণীর ওপর ছেড়ে দেয় হেম,তখন :

“কল্যাণী অনেকক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর ধীরে-ধীরে বললে—‘কিন্তু আমি তো আজ একা নই। সংসারের পাকে জড়িয়ে গেছি যে। আমার দায়িত্ব আজ অনেক দিক দিয়ে। সংসারের বধূ আমি। আমি মা। কোনো একটা রোগ যদি বাধিয়ে আসি তা হলে খুকির কী হবে? তোমাদের এই সংসারের শান্তিও যাবে একেবারে নষ্ট হয়ে’…”

কারণ এ ছাড়া কল্যাণীর কাছে আর কোনো রাস্তা নেই। জীবন আর কোনো চয়েস রাখেনি তার কাছে। তাই হেমের চেয়ে কল্যাণীর অসহায়তা ও একাকীত্ব কোনো অংশে কম নয়।

এই কল্যাণীরই অতীত হেমের মা। যিনি শুধু ছেলের সামনে শরীরটুকু নিয়ে থাকেন। ছেলে বলে যায়…তার কলকাতার ফুটপাতে ঘুরে বেড়ানোর কথা, হতোদ্যম হয়ে মেসবাড়ির ঘরে ঘরে গুমরে মরার কথা,আর কী দেখে হেম? বুঝবে না জেনেও হেম বলে যায়: “জীবনের ব্যস্ত মোহাচ্ছন্ন মৌমাছির নির্বিবাদ নিরপরাধ গুঞ্জন: অপরূপ।” চমকে ওঠে মা, ছেলের কনফেশন শুনে,হেম বলে,অত্যন্ত নিরাশার মূহূর্তে তার মনে হয় দু-একজন মাড়োয়ারির পকেট কেটে নিতে। হেম নিজেকে হালকা করে,হালকা করতে চায়। সে জানে,নিজেকে নির্ভার করার পক্ষে কল্যাণীর চেয়ে মা-ই হয়ত শ্রেয়তর।কেননা মা কিছু বুঝবে না। তাই হেম তার স্বনির্বাচিত আত্মহননের কথা জানাতেও দ্বিধা করে না: “চৌকাঠের সঙ্গে দড়ি ঝুলিয়ে কিংবা বিষ খেয়ে যে মরণ, সে রকম মৃত্যু নয়,আউটরাম ঘাটে বেড়াতে গিয়ে সন্ধ্যার সোনালি মেঘের ভিতর অদৃশ্য হয়ে যেতে ইচ্ছে করে; মনে হয় আর যেন পৃথিবীতে ফিরে না আসি।”

মা বোঝে না সন্তানের এই মৃত্যুর আকাঙ্ক্ষার হেতু। গভীর গভীরতর দুঃখ থেকে কেন তার সন্তান প্রতিজ্ঞা করে পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়বার সন্তান না আনার। ঠিক কোন মনোভঙ্গির প্রকৃত বিচারে সে আত্মহনন চায়,কিংবা হয়ত আদৌ তা হেমের কাছে হনন নয়,বরং তা বৃহত্তর কোনো অপরূপ স্নায়ুমুক্তির এষণা। তার থেকে ভিন্ন অবস্থানে দাঁড়িয়েও যদি কেউ হেমকে, হেমের চিন্তাজগতকে সহমর্মিতা দিতে পারে, সে হেমের বাবা। ভারতীয় অধ্যাত্মবাদে বিশ্বাসী এই মানুষটি তাঁর জীবনের অপ্রাপনীয়তাকে ঘুচিয়েছে ঈশ্বর-অদৃষ্ট-উপনিষদে। হেমের সে বিশ্বাস নেই। ক্ষমতাও। তবু এই ধীর মানুষটি তাঁর মেনে নেওয়া অবস্থান থেকে ছেলের হয়ে লড়াই করেন। কলকাতার পথে পথে কাজ খুঁজে বেড়ানো হেমকে সান্ত্বনা নয়,সমর্থনের ভঙ্গিতে বলেন :

“জীবনে টাকার মুখ তুমিও কম দেখেছ, সে ট্রেন ভাড়া দিতে গিয়ে তোমার অন্তঃকরণ খেঁকিয়ে উঠবে একেবারে। এ বড় দীনতার কথা, মানুষ এতে বড় খাটো হয়, বৃষ্টিবাদলের মধ্যে পায়ে হেঁটে যাবে সেই উল্টাডিঙ্গি,পায়ে হেঁটে ফিরবে আবার; শরীরের দিক দিয়ে এর ভেতর যত না কষ্ট, আত্মার দিক দিয়ে তার চেয়ে ঢের বেশি অপচয়; কেন এ অপচয় করবে তুমি?… … … যে-কোনো কাজে বা চিন্তায় জীবনের প্রসার নষ্ট হয়, তার থেকে নিজেকে ঘুচিয়ে নিও। বরং বাড়িতেই চলে আসবে আবার; কী আর করবে? পনেরো টাকার টিউশনের জন্য, টিউশনের টাকার প্রতিটি কানাকড়িও বাঁচাবার জন্য হ্যারিসন রোড থেকে চেতলায় হেঁটে যাওয়া-আসা জীবনের এত বড় শকুন কোনোদিন সাজতে যেও না তুমি।”

বাবার এই সমর্থন ও সহমর্মিতাই তত্কালীন পরিস্থিতিতে হেমকে বাঁচিয়ে রাখে। তত্কালীন পরিস্থিতি বলতে? এ উপন্যাসের রচনাকাল ১৯৩৩। সেই সময়ে কেমন ছিল কলকাতা ও তার আশপাশের অর্থনৈতিক অবস্থা? অর্থনীতিবিদ ভবতোষ দত্ত তার ‘বাঙালী মধ্যবিত্তের তিন কাল’ প্রবন্ধের শুরুতেই ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’র একটি উদ্ধৃতি দিয়েছেন,সেই উদ্ধৃতি একবার দেখে নিয়ে ওই প্রবন্ধে ভবতোষবাবুর ব্যাখ্যাও আমরা দেখে নেব। তত্ত্ববোধিনী লিখেছিল: “শিক্ষিত সম্প্রদায়ের আর এক দুঃখের কারণ দারিদ্র। ইহাদের বিলাসিতা ও অন্যান্য প্রভাব খুব বাড়িতেছে, কিন্তু বিলাসসামগ্রীর দুর্মূল্যতা ও ইহাদের দারিদ্রতার জন্য ইহাদের বিলাসপ্রিয়তা চরিতার্থ হইতেছে না। আমরা বড়লোকদের কথা বলিতেছি না। সাধারণ শিক্ষিত সম্প্রদায়ের অধিকাংশই অর্থচিন্তায় আকুল। ইহাদের তেজ উত্সাহ ও সর্বপ্রকার উদ্যম অর্থচিন্তাস্রোতে ভাসিয়া যায়।” প্রবন্ধটি ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দের জ্যৈষ্ঠ সংখ্যায় প্রকাশিত। এই প্রবন্ধের উল্লেখ করে আলোচনা শুরু করবার পর ভবতোষ দত্ত লিখছেন: “ ষাট বছর আগে আমরা মধ্যবিত্ত বলতে শুধু আয়ের দিকটা বুঝতাম না, আরও অনেককিছু বুঝতাম। ‘ভদ্রলোক’ মাত্রই মধ্যবিত্ত ছিলেন না, কিন্তু তখনকার দিনের মধ্যবিত্তেরা সবাই ‘ভদ্রলোক’। তারা প্রধানত ছিলেন চাকুরিজীবী— কাজ করতেন সরকারী আর মার্চেণ্ট অফিসে,স্কুলে, কলেজে,সংবাদপত্রে, প্রকাশনা সংস্থায়, প্রশাসন, পুলিশ ইত্যাদির নিচের স্তরে। অবশ্য চাকরি পাওয়াটা সৌভাগ্যের কথা ছিল। ১৯৩০-এর কাছাকাছি প্রথম শ্রেণীতে বি.এ. অনার্স এম.এ. পাস করে তিন-চার বছর কোনো কাজ পাননি এরকম নজির অনেক ছিল। বেকার সমস্যা ছিল সর্বস্তরে। মধ্যবিত্তস্তরে সমস্যাটা বড় হয়ে দেখা দিত, কারণ ভদ্রলোকেরা সব ধরনের কাজ নিতে চাইতেন না, যদিও কোনো কোনো কায়িক পরিশ্রমের মজুরী অফিসের কেরানির চেয়ে বেশি ছিল।”

এই প্রবন্ধের সময়কাল ১৯৮৮। ফলে ভবতোষ ষাট বছর আগের পরিস্থিতি জানাতে চাইছেন মানে সময়টা ১৯২৮-এর আশেপাশে চলে আসছে। এবং ভাল রেজাল্ট করে চাকরি না পাওয়া। যে-কোনো কাজ না করতে চাওয়ার অভিমান, নৈতিক আদর্শবোধের জন্য উমেদারি না করতে পারা এ সবকিছু দিয়েই হেমকে খুব স্পষ্টভাবেই চিনতে পারা যায়। বুঝতে পারা যায় একজন প্রকৃত শিক্ষিত মানুষের কারুবাসনার নিয়তি কেন তাকে সহজে সুখের মুখাপেক্ষী করতে পারে না। চাকরির সন্ধানে এই বৃথা-অন্বেষণের কথা হেম কল্যাণী থেকে শুরু করে মেজকাকা,মা,বাবা,সকলকেই শুনিয়েছে। উপন্যাসের বয়নের একটা বড় অংশ জুড়েই সেই ছিদ্রান্বেষনের ইতিবৃত্ত প্রগাঢ় পিতামহীর মত জমাট বেঁধে আছে। বাবাকে হেম বলে সেই অভিজ্ঞতার একটি নমুনার কথা: “অবাক হয়ে ভাবি,জীবনের চার-পাঁচটা বছর ধরে সমস্তটা দুপুর কলকাতা শহরের কত জায়গায় টো-টো করে বেড়িয়েছি। ইউনিভার্সিটি বিল্ডিং,ইনকাম ট্যাক্স বিল্ডিং,ক্যালকাটা কর্পোরেশন,ইন্সিওরেন্স অফিসগুলো। এক-একটা জায়গায় পনেরো-বিশ বার করেও গিয়েছি। নিজের জবাবদিহি দেবার অকাঙ্গ্ক্ষা মানুষের এমনিই প্রবল, এমনিই রুচি তার যে সে মনে করে ইনকাম ট্যাক্সের একজন কেরানি হলেও জবাবদিহি দেওয়া হয়, কিন্তু দুটো কবিতার বই বের করলে হয় না। এই চার বছর যদি আমি এক মনে শিল্পসৃষ্টি করতাম, তাহলে অনেক মূল্যবান রচনা বের করতে পারতাম।” মনে হয় ভবতোষবাবু নৈর্ব্যক্তিক অবস্থান থেকে যে সমস্যাটি প্রত্যক্ষ্ করেছিলেন, তাই একজন ভিকটিমের কলামে জীবন্ত হয়ে উঠল। হয়ে উঠল হেমরূপী জীবনানন্দের জার্নাল।

কেননা জীবনানন্দ উপন্যাস লিখতে চাননি। তাঁর বিশ্বাস তাঁকে বুঝিয়েছিল অমরতা ওভাবে আসে না। অপেক্ষা করতে হয়,আর তাই চারপাশের সফল সাহিত্যিকদের দেখে যদি মনে উচাটন হয়,যদি মনে হয়,জীবন বিফলে গেল শুধু কবিতা লিখে, না কোনো নারীর ভালবাসা,না কোনো সামাজিক পরিচিতির আত্মগৌরব,কিছুই তো জুটল না শেষমেশ। তখন লোহিতকণিকার অতিতলদেশে কেঁপে ওঠা সেইসব অনুভূতিসকল তাকে অতি শান্তভাবে বোঝায়:

“এ কবিতাগুলোকে কাউকে দেখাইনি। অনেকক্ষণ সময় কেটে যায়। অবাক হয়ে ভাবি জীবনের সবচেয়ে বড় প্রয়োজনীয় জিনিশ হচ্ছে নিজেকে স্থির রাখা। ভাবতে-ভাবতে অনেক মুহূর্ত কেটে যায়, এক সময় নিজেকে স্থির রাখতে চেষ্টা করি এই ভেবে যে আলেকজানদ্রিয়ার লাইব্রেরি যখন ধ্বংস হয়ে যায় তখন এমন অনেক চিন্তা ও কল্পনার সম্ভার ধোঁয়ায় মিশে গেছে যার তুলনায় আমার এ কবিতাগুলো কিছুই নয়।
শেষপর্যন্ত শেক্সপিয়রের সমস্ত কাব্যও তো একদিন বরফের নিচে ধসে যাবে।
পৃথিবীতে একটিও মানুষ থাকবে না।
কিন্তু তবুও থেকে-থেকে মনে হয়, আলেকজানদ্রিয়ার লাইব্রেরির সমস্ত লুপ্ত ঐশ্বর্যের চেয়েও আমার কবিতাগুলোর ইঙ্গিত ও মূল্য ঢের চমত্কার ছিল, শেক্সপিয়র যা দিতে পারে নি— তাই তো দিয়েছিলাম আমি।”

এই অহং নিজেকে বুঝে যাওয়ার সচেতন অহং। এর মধ্যে অন্যকে ছোট করার কিংবা অন্য কারুকর্মীকে ঈর্ষা করার কোনো দুরভিসন্ধিজাত বীজ নেই। বরং আছে প্রকৃত শিল্পীর মত নির্ভীক-নির্মম-চূড়ান্ত সত্যি বলতে পারার সাহস। যে কথা পথে-ঘাটে বলে বেড়ানো যায় না। অন্তত জীবনানন্দ যে পারেননি সে কথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। অথচ কবিতার অন্তরঙ্গ বাজার যে সত্যি এনে উপস্থিত করেছিল তার সামনে,তিনি বুঝতে পারছিলেন সেই সত্যি আদতে মুমূর্ষু কমলালেবুর মত। যার করুণ অসুস্থ মাংস ছড়িয়ে পড়েছিল সমগ্র বাংলা কবিতা বাজারে। সত্যি বা মিথ্যের যে আদৌ কোনো বাস্তব অস্তিত্বই নেই। তাই তাকে নিয়ে ইচ্ছেমত বানিয়ে নেওয়া যায়। রবীন্দ্রনাথ যেমন একবার লিখেছিলেন ‘উলঙ্গের তো আর কোনো পরিচয় নেই’। বানিয়ে তোলা কাপড়ে তখন তাকে রাজা কিংবা ফকির হিসেবে ধরতে হয়। এই বাজারজাত সত্যির পরিহাস মেরেছিল জীবনানন্দকে। হেমকেও কি?

উপন্যাস লিখতে চেয়েছিলেন জীবনানন্দ। চেয়েছিলেন বাধ্য প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে। চেয়েছিলেন কিছু টাকা রোজগার করতে। প্রতিভা বসুকে তার করা করুণ জিজ্ঞাসা,হয়ত স্বচ্ছল বুদ্ধদেব,বিষ্ণু দে,প্রেমেন্দ্র মিত্র,কিংবা অতিস্বচ্ছল সুধীন্দ্রনাথকে দেখতে দেখতে তৈরি হয়েছিল। জীবন তো শুধু উপনিষদ নয়। যতদিন জগতে মানব আছে,রক্তমাংস আছে, আছে তার অন্তর্গত স্ফীতি-সংকোচন, ততদিন ব্যক্তিত্বের অসম লড়াইতে সে হারতে চাইবে না, কিংবা চাইবে না হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে তার একান্ত উজ্জ্বল সংবেদনগুলোকে উপেক্ষার ক্লেদে হারিয়ে ফেলতে। তবেই তো সে মানুষ। আর তার চেতনা ও সম্মানবোধ আছে বলেই নিজের ঘনিষ্টতম নারীর মাধ্যমে জীবনের চূড়ান্ত অপমান পাওয়া সত্ত্বেও সে চাইবে লিখে যেতে। কেননা ঐ একটি ক্ষেত্রেই তার সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলার উপায় ও অধিকার কোনো সমাজ বা ব্যক্তি আবিষ্কার করতে পারে না। লিখে গেছেন জীবনানন্দ। লিখে গেছে হেম। অপরিমেয় সফল এই দুনিয়ায় এইসব অক্ষর কোনো সুস্থির ভবিষ্যত্‍ পাবে না জেনেও। লিখেছে,এবং তাকে ট্রাঙ্ক ভর্তি করেছে। আজকের নিজেকে প্রতি মূহূর্তে প্রকাশ করবার হুল্লোড়ে সেই ট্রাঙ্ক কোথায়? কোথায় আমাদের নির্মমতা নিজেদের প্রতি? নিজেদের প্রতি যে অসম্ভব নিষ্ঠুরতা থাকলে শিল্পী হয়ে উঠতে পারা যায়,সে ক’লজের জোর আজ আমাদের কোথায়? হেম আর জীবনবাবু এত কাছাকাছি,যতটা কাছাকাছি তাদের ট্রাঙ্ক। লিখছে দুজনেই তারা। লিখে মনে হচ্ছে এসব কী লেখা! না আছে রোমান্টিকতা,না আছে বৈদগ্ধ, না আছে পণ্ডিতি। কে পড়ে দেখবে এসব?কে এইসব লেখার গভীরে সংগুপ্ত সত্যের প্রতি সহমর্মী হবে আর? তাই সে লুকিয়ে রাখছে, তাই তারা লুকিয়ে রাখছে এই বেনিয়া পৃথিবীর নাগাল থেকে তাদের সন্তানকে।

তাদের টিকে থাকার দায় আছে,যেহেতু তারা জীব,এই পৃথিবীর আলো হাওয়ার গোপন অস্থিসন্ধির ওপর যেহেতু তাদেরও জন্মগত অধিকার। এই অধিকার নিশ্চয় কেউ কেড়ে নিতে পারে না, স্বীকৃতি,পুরস্কার,চেয়ার কিংবা জীবনের আরও কোনো উত্তুঙ্গ সফলতার জোরে। নিশ্চয়ই কেউ পারে না কারুকর্মীর এই শৈল্পিক ঔদাসীন্যের সুযোগ নিয়ে তাকে বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত করতে। যে চক্রান্ত কোনো বিশ শতকের একান্ত নিজস্ব ফসল না হয়ে হয়ে উঠবে বিশ্বায়ন-উত্তর পৃথিবীতেও প্রকৃত শিল্পকে নস্যাত করবার খুড়োর কল। নির্জনে,কোলাহল থেকে দূরে থাকা কারুপ্রেমিকেরা ঝরে যাবেন নান্দনিক অবহেলার চোরাস্রোতে। এই তো হয়ে আসে। আর কত না লেখা অবরুদ্ধ হয় ট্রাঙ্কে। কত ট্রাঙ্কের জং ধরা তালা অক্ষরপ্রতিমাকে সযত্নে গোপন করে রাখে ভবিষ্যতের জন্য। এমনকি স্বভাব-অন্তর্মুখী জীবনানন্দ যখন তার স্বভাবকে অতিক্রম করে নিজেকে মেলে দেন তারই অগ্রবর্তী এক মহাজাগতিক কবিপুরুষের কাছে,তখন আপাতভাবে অবাক লাগলেও আমরা বুঝতে পারি স্বীকৃতি একজন কারুকর্মীর কাছে কতটা পাথেয় হতে পারে। সেই দুটি চিঠি, নিজের ব্যক্তিগত ট্রাঙ্ক ভেঙে,একবারই,হয়ত শেষবারই। ‘ঝরাপালক’ পাঠিয়েছিলেন জীবনানন্দ।শুধু কবিতার বই পাঠিয়ে নিছক মন্তব্য শোনার চিঠি ছিল না সেটা। কবিতা ও কাব্যের জগতের নানা কথা বলে জীবনানন্দ পেতে চাইছিলেন সেই পরম সঙ্গকে,তার অভাবে তাকে ঘুরে মরতে হয়েছে ,এমনকি কলকাতার রাজপথেও! রবীন্দ্রনাথ জীবনানন্দের প্রথম বই পছন্দ করেননি,সেটা অন্য কথা। না হতেই পারে। কিন্তু জীবনানন্দের চিঠিতে যে সেতুনির্মাণ করতে চাওয়ার, কবিতা নিয়ে আলোচনার পরিসর গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন,তাকেও কবিগুরু ঠুকরে দেন। উপেক্ষা করেন। এতে হতোদ্যম হননি জীবনানন্দ। তিনি এরপর বাংলা কবিতায় নিজের স্বর খুঁজে পেয়েছেন!সেই আনন্দে লিখে ফেললেন রবীন্দ্রনাথকে আর একটি চিঠি,এবং সে চিঠির শেষ হল এই অশেষ আকুতি নিয়ে: “কালিদাস তাঁর মেঘদূতে বলেছিলেন শ্রেষ্ঠজনের কাছে দাবি জানাতে হয়; তাঁরা মানুষের আন্তরিক দাবির সম্মান রক্ষা করেন। আমিও আজ একটা মস্ত বড় দাবি নিয়ে আপনার কাছে হাজির হয়েছি : আপনি যদি একটু সময় করে এই বইটা পড়ে দেখেন— ও তারপর বিশদভাবে আমাকে একখানা চিঠি লেখেন তাহলে আমি খুব উপকৃত বোধ করব।

বিস্তৃতভাবে আলোচনা করবার জন্য আপনাকে অনুরোধ ক’রলাম বলে ক্ষমা ক’রবেন। কিন্তু আগেই বলেছি আমার আজকের দাবিটা খুব মস্ত বড়,এবং সব চেয়ে মহৎ জনের কাছে।”

এরপর সেই বহু কাঙ্ক্ষিত ‘মহৎ জন’ কী করলেন? চিঠি এসেছিল আবার। এবার হয়ত জেগেছিল সামান্য করুণার বোধ। তাই দুলাইনের সে চিঠিতে আর জীবনানন্দকে খুব বেশি বিদ্ধ করেননি রবীন্দ্রনাথ। আবার এক অচেনা অর্বাচীন তরুণকে যতটা গুরুত্ব দেওয়া দরকার,সেটুকুও দেননি। সে যাই হোক। এখানে রবীন্দ্রনাথের এই আচরণের সমালোচনা করা এ লেখার উদ্দেশ্য নয়। বরং এইটা জেনে আরও বেশি দুঃখ জাগে,যখন দেখা যায়, যে উত্তর জীবনানন্দকে দিতেই পারতেন কবি। যে উত্তর পাওয়াটা সেইসময়ের বাংলা কবিতা বাজারে সংগ্রামরত জীবনানন্দের কাছে কোনও বর্ধমানের মহারাজার সার্টিফিকেটের থেকে কম হত না,সেই কথাগুলোই লিখলেন রবীন্দ্রনাথ। তবে জীবনানন্দকে নয়,বুদ্ধদেব বসুকে। কবে? ২৬ সেপ্টেম্বর,১৯৩৩ এ একটি চিঠিতে। জীবনানন্দকে লিখেছিলেন১২ মার্চ,১৯৩৭। ধূসর পাণ্ডুলিপি পড়ে। অথচ তার চার বছর আগে তারই এক সতীর্থকে লিখছেন এই কথা: “ভাল না লাগা, ভাল বলতে না পারার মতো দুঃখ অল্পই আছে। সেই জন্যে আধুনিক বাংলার নতুন বই পড়তে আমার ভয় লাগে। তার একমাত্র কারণ এ নয় যে বইটা ভাল না লাগতেও পারে। যুগবিশেষের এবং ব্যক্তিবিশেষের স্বাদ-গ্রহণের একটা বিশেষ অভ্যাস আছে। আমাদের যাচাইবুদ্ধির উপরে সেই অভ্যাসের প্রভাব থাকতে বাধ্য। যে নৈর্ব্যক্তিক রুচি নিজের দেশকাল-পাত্রগত সমস্ত সংকীর্ণতাকে ছাড়িয়ে উঠতে পারে সেই সম্পদের কল্পতরু ক’জনের চিত্তে আছে? সেই জন্যে ভয় হয় পাছে অবিচার করি। আমাদের চির অভ্যাসের সঙ্গে যা সঙ্গত তাতেই আমাদের আরাম, এই আরামের বাধা আনন্দকেও রাহুগ্রস্থ করে, জ্যোতিষ্ককে করে ছায়াচ্ছন্ন। নূতন কালের সৃষ্টির সঙ্গে পুরাতনকালের অভ্যাসের রফানিষ্পত্তি হতে কিছুদিন সময় লাগে, এইজন্যে সমসাময়িক বিচার সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ হতে পারে না তার হাজার প্রমাণ পেয়েচি।”

আমাদের দুর্ভাগ্য,তার প্রমাণ তিনি নিজেই। শুধু এই নয়,এই চিঠিতেই এরপর রবীন্দ্রনাথ যা জানাচ্ছেন,তা যেমন কোনও জিনিয়াসের ক্ষেত্রে সত্যি,তেমন জীবনানন্দের জীবনের চূড়ান্ত ভবিতব্য!তিনি লিখলেন: “সাহিত্যের দাম নগদ দাম নয়, সে দাম যখন শোধ হয় তখন নেবার মানুষ থাকে বৈতরণীর পারে—।” উঃ! ভেবে অবাক লাগে। চার বছর আগে যে কথা বললেন রবীন্দ্রনাথ, বুদ্ধদেবকে, সেই কথা বুদ্ধদেবের চেয়ে শোনা জরুরী ছিল জীবনানন্দের॰। এর মূলে কি জীবনের সীমাহীন পক্ষপাত? সুধীন্দ্রনাথ অনেকটা তাঁরই মতো লিখতেন বলে কতবার তার হয়ে প্রশ্ন করেছেন। লিখেছেন তার স্বপক্ষে। যদি কোনও তরুণ কবিকে সবচে বেশি শান্তিনিকেতনে আসতে বলে থাকেন রবীন্দ্রনাথ, তিনি সংশয়হীনভাবে সুধীন্দ্রনাথই। বিশ্বভারতী প্রকাশিত চিঠিপত্র-র ১৬ তম খন্ড খুললেই পরিষ্কার বোঝা যাবে, আধুনিক কবিদের মধ্যে কাকে সবচে বেশি গুরুত্ব দিতেন রবীন্দ্রনাথ। সেই গুরুত্ব দেওয়ার অন্যতম হেতু? ছেলেটা আমার মতোই লেখে! আধুনিক কবিদের লেখা এই খন্ডে রবীন্দ্রনাথ চিঠি লিখেছেন যথাক্রমে জীবনানন্দ,সুধীন্দ্রনাথ,বুদ্ধদেব,বিষ্ণু দে,সঞ্জয় ভট্টাচার্য্য এবং সমর সেনকে। অমিয় চক্রবর্তীর সঙ্গে তার চিঠিপত্রের খন্ড আলাদা প্রকাশিত(১১)। কিন্তু রবীন্দ্র-মানসের দিক থেকে বিচার করলে জীবনানন্দ নামটা সবার শেষে আসবে নিশ্চিতভাবে। এমনকি এলাকার বাইরেও যেতে পারে। তাই হেম বলে ওঠে,সেই সমস্ত নির্জনে থাকা আড়ালে থাকা কারুকর্মীদের সপক্ষে, পরম জীবন সত্যের ভাষ্য, আর এটাই ‘কারুবাসনা’-র অনির্বাণ পথে হেঁটে যাওয়া এক কর্মীর সর্বাপেক্ষা প্রকাশ্য মুসাবিদা :

“কারুবাসনা আমাকে নষ্ট করে দিয়েছে। সব সময়ই শিল্প সৃষ্টি করবার আগ্রহ,তৃষ্ণা,পৃথিবীর সমস্ত সুখ-দুঃখ,লালসা,কলরব,আড়ম্বরের ভিতর কল্পনা ও স্বপ্ন চিন্তার দুশ্ছেদ্য অংকুরের বোঝা বুকে বহন করে বেড়াবার জন্মগত পাপ। কারুকর্মীর এই জন্মগত অভিশাপ আমার সমস্ত সামাজিকও সফলতা নষ্ট করে দিয়েছে। … … ..আকাঙ্ক্ষা ও উদ্যমের অকুতোভয় স্বাভাবিকতা ও অমিততেজা সাংসারিকতা যদি থাকত তাহলে গত ছ-সাত বছরের মধ্যে কোনো না-কোনো কাজ আমি নিশ্চয়ই খুঁজে পেতাম; হয়ত কোনো ইস্কুলে পঁচিশ টাকার মাস্টারি নিতাম, কোনো মেসের সরকার হয়ে যেতাম হয়তো, লাইফ ইনসিওরেন্সের এজেন্সি নিয়ে অন্ধকারের মধ্যে একদিনে হয়তো প্রদীপ জ্বালিয়ে ফেলতে পারতাম, .. … ..আলুর আড়ৎ না-খুলে সাহিত্য সৃষ্টি করতে চাচ্ছি বলে মনের ভিতর কোনো বেদনা থাকত না। .. .. শিল্পযাত্রীও শেষ পর্যন্ত পৃথিবীর মানুষ হিশেবেই রক্তমাংসের সুখসুবিধা ভোগ করতে চায় বই কি, কিন্তু তার জীবনের মধ্যে প্রেরণার ভিতর নিরবয়বকে উপলব্ধি করে আনন্দ,ও অবয়বসম্পৃক্ত নিষ্ফলতা, আবহমানকাল থেকে এই মধুর মারাত্মক বীজ রয়ে গেছে।”

এবং এই মারণ বীজ একজন প্রকৃত শিল্পীর জীবনসঙ্গী। যার কাছে কোনো আঙ্গিক,কোনো ফর্ম-ই বন্ধন নয়। জীবনের চরম অপমান,পরম নিরাশক্তি যিনি দেখে ফেলেছেন,তিনি শুধু অক্ষর খোঁজেন,খোঁজেন বর্ণ,ধ্বনি,সাদা পাতা। তখন কী কবিতা কী উপন্যাস। বাস্তবিক সমস্তটাই জীবন। অহেতুক জীবনানন্দ। আলো ক্রমে আসিতেছে।হে অনাগত কাল,তুমি দেখতে পাচ্ছ কি?

‘কারুবাসনা’র যে নাট্যরূপ অর্পিতা ঘোষ করেছেন,সেখানে খুকি নেই। হেম-কল্যাণী-বাবা-মা-মেজকাকা-যদুনাথ-বিরাজের ভিড়ে কল্যাণী ও হেমের এই একমাত্র সন্তানটি কোথায় যেন হারিয়ে যায়। গরিবের সংসারে সন্তান অভিশাপ—এই আপ্তবাক্যটি প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ আকারে হেম উচ্চারণ করে এটুকু অন্তত বুঝিয়ে ছাড়ে, এই সন্তান সম্পর্কটি তার এবং কল্যাণীর মতোই পতনশীল। সেই সময়টা, যখন কল্যাণী পাশ ফিরে শুচ্ছে। আদতে ইহজগতের রুচির মানদন্ডটাই যেন দূরে সরে গেল হেমের থেকে। এবার সে কী করছে? খুকিকে নিয়ে চলে আসছে নিজের ঘরে। খুকির বয়স কত? আড়াই বছর। মায়ের কাছে থাকাই তার পক্ষে স্বাভাবিক। তবু হেম তাকে বড় আগলে নিয়ে আসছে তার কাছে। যে মেয়েটি অন্ধকারের ভেতর বাবার চোখের জল দেখতে পাচ্ছে না। যে তার অবোধ কচি-কচি হাত বুলিয়ে শুষে নিচ্ছে বাবার জীবন –যন্ত্রণা। কে এই খুকু? যাকে হেমের হাতে সমর্পণ করে জীবনানন্দ নিয়ে আসতে চাইছেন নিজের কাছে। একান্ত কাছে। শুধু সেই রাত্রির অন্ধকারের অর্থহীন কথোপকথনই নয়। সন্তানের ভবিষ্যত কী হবে,এই নিয়ে হেম ব্যথায় আকুল। চিন্তায় আকুল। এমনকি সেই সন্তানের জন্ম দেওয়াটা কত সুস্থ সিদ্ধান্ত হয়েছে,সে নিয়েও দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে হেমের মন। সন্তান সম্পর্কে তার মনে হয়: “ভবিতব্যতার অন্ধকারে ঘেরা এই পৃথিবীর পথে চলতে চলতে এক-একটা ইঁদুরের ছানার অবস্থা যে-রকম হয়— তেমনি হয়েছে এই মেয়েটির।”

কী অবস্থা হয় ইঁদুরের ছানার? দেখেছি জীবনানন্দেরই কবিতায়,সেই ইঁদুরকে,গ্রামপতনের শব্দ এড়িয়ে এড়িয়ে খুদ সংগ্রহ করতে। সন্তানকে সেই অনিশ্চয়তা,সেই অশনি-সংকেত দিয়েই ব্যাখ্যা করতে চাইলেন জীবনানন্দ। সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যত নয়,তাই অনিবার্যভাবেই উঠে এল খুকির সুস্পষ্ট অপুষ্ট শিরদাঁড়া। সেই ভঙ্গুর মেরুদণ্ডে হাত রেখে হেমের মনে হল : “মা আছে,বাবা আছে,দাদু আছে,ঠাকুরমা আছে,তবুও যেন মনে হয়,ঠিকানাহীন নিরুদ্দেশ রুগ্ন একটা বিড়ালের ছানার মতো,ক্ষমাহীন পৃথিবীর পথে-বিপথে, এঁটো ও ঝাঁটা খেয়ে বেড়াবার জন্য এর জন্ম ও জীবন।” এরপর হেম জানায় সে যখন কাজের সন্ধানে কলকাতার অপরিসর মেসে শুয়ে থাকে,বারান্দায় খুদের সন্ধানে ঘুরে বেড়ানো চড়ুই দেখে তার মেয়ের কথাই মনে হয়। সেই দৃশ্য “চড়াইয়ের ছোট্ট নিঃসহায় মুখ,করুণ ঠ্যাং,অসম্পূর্ণ অকৃতকার্য দৃষ্টি ঘুরেফিরে একটি আড়াই বছরের শিশুর রূপ মনে করায়।“এই নিঃসহায়,করুণ,অসম্পূর্ণ,অকৃতকার্য, এই ক্রমান্ব্য়ী নেতিবাচক বিশেষণ,একি শুধুই হেমের নিজের সন্তানকে দেখা? এর মধ্যে কোথাও কি জীবনানন্দের নিজের লেখা কবিতাগুলি সম্পর্কে কবিতা-সমাজ ও কবিতা-বাজারের মনোভাবের প্রতিফলন নয়? একজন শিল্পী ভাবছেন,তাঁর এই কবিতাগুলির ভবিষ্যত কী? এমনকি তিনি যখন থাকবেন না তখন সময়ের অমনোযোগে নষ্ট হয়ে যাবে না তো? এইসব সন্তান? হেম ভাবছে তার মানব-সন্তানকে রক্ষা করবার কথা,আর তারই আড়ালে জীবনানন্দ ভেবে চলেছেন তাঁর কবিতা-সন্ততিকে রক্ষা করবার অসহায় উপায়। তিনি জানেন— “পিতার হৃদয়ের এই রকম অনেক বিবর্ণ হতাশ অমঙ্গল চিন্তার মধ্যে এর জন্ম। গর্ভে যখন ছিল এই মেয়েটি এর মায়ের হৃদয় তখন বর্ণহীন রূপহীন শাদা করবীর একটা শাখার মতো, হেমন্তের সন্ধ্যার কুয়াশা ওদিকে তাকিয়ে আছে।”

এই অমঙ্গলবোধ যা সন্তান-জন্মের শুভক্ষণে নিশ্চয়ই মানানসই নয়। আর জন্মের সময়ে এত মৃত্যুর ইমজারি? পিতার বিবর্ণ,হতাশা,চিন্তা,মাযের গর্ভে এসে মাকে করে তুলল বর্ণহীন,রূপহীন,শাদা করবীর শাখার মত। অর্থাৎ শীর্ণকায়, রোগগ্রস্থ,অপুষ্টিজনিত শরীর নিয়ে এই সন্তানের জন্ম দিয়েছিল কল্যাণী। কিংবা দিয়েছিল বাধ্য হয়ে। এই সন্তান ভালোবাসার ফসল না। তাই সে আগামী পৃথিবীতে কারোর ভালোবাসা পাবে না। সকলে তাকে করুণার চোখ দিয়ে দেখবে,দেখবে প্রবল অবজ্ঞায়। এমন তো কত সন্তান জন্মায় যারা সন্দেহ সৃষ্টি করে,মায়ের মনকে দেয় নিরাশায় ভরে। তবুও কি পৃথিবী পারে না একটু সহানুভূতির চোখ দিয়ে তাকে দেখতে? নাগরিক কলকাতার দমবন্ধ বাতাসে জীবনানন্দর মনে হচ্ছে : “…যার দেহের নির্জীবিতা কাদাখোঁচার ছায়ার মতো, চড়াইয়ের মতো, হেমন্তের বিকেলে শুকনো পাতার রাশের ভিতর বালি-হাঁসের বিবর্ণ ডিমের মতো(লক্ষ্য করুন,জীবনানন্দের নিজের ট্রাঙ্ক-এ লেখা লুকিয়ে রাখাটা কিভাবে প্রত্যক্ষ হয়ে উঠছে হেমের সন্তানের ভবিষ্যৎ চিন্তায়), পৃথিবীর হৃদয় যেন তাদের সম্মন্ধে নিজেকে সুসময়ে-অসময়ে অবারিতভাবে ব্যয় করতে কেন এমন কুণ্ঠিত হয়?”

এই পৃথিবীর হৃদয়ের একটু সান্নিধ্যই চেয়েছিলেন জীবনানন্দ।আবার এও বুঝেছিলেন,তার প্রতি,তার লেখার প্রতি সময় ব্যয় করতে সে হৃদয় ইচ্ছাকৃতভাবে উদাসীন। দীর্ঘ একটা দৃশ্য-উদযাপনের পর সময় আসে। খুকি ঘুমিয়ে পড়ে। জীবনবাবুর কবিতাগুলি জেগে বসে থাকে ট্রাঙ্কের ভেতর,কোনো অনাগত কালের প্রতীক্ষায়। হেমের বাবা চেয়েছিলেন হেম নবপর্যায়ের কবিতা লিখুক। সারা উপন্যাসে কবিতা লেখার ব্যর্থ চেষ্টায় মগ্ন-থাকা হেমের কবিতা আসে, যখন সে এই পৃথিবীর হৃদয়ের দেওয়া অপমান আত্মসাৎ করতে শেখে: “দূর থেকে দূরে সরে যায়–/অন্তর্গত পৃথিবীর সুনিশ্চয় ঘন পরিচয়; প্রত্যাবর্তনের পথ নিঃশেষে মুছে–/ কীর্তি সফলতা আর উদ্যমের বিপুলতা দিয়ে।/ নির্বাসনের এক নিরন্ধ্র বলয় কাছে আসে। / কারুবাসনার লয়,নিরন্ধ্র বলয়—“

Facebook Comments

Related posts

2 Thoughts to “কারুকর্মীর নিরন্ধ্র বলয়”

  1. দুর্জয় আশরাফুল ইসলাম

    আহ, জীবনানন্দ!
    কারুবাসনা প্রকৃত অর্থেই তার দিনপঞ্জি। তার ব্যথা বেদনা, উপেক্ষিত জীবনের আখ্যান।

    ভালো লাগলো

    1. নির্মাল্য নন্দী

      সত্যিই ভালো লেখা।

Leave a Comment