পৃথিবীর শেষ উচ্ছেদশিল্পী

‘তোমরা আজকালকার ছেলেপুলেরা ভাবো বটে যে তুড়ি মেরে সব কাজই হাসিল করে ফেলা যায়, তবে বিশ্বাস করো আর নাই করো জানবে মূর্তি ভাঙ্গা মোটে সোজা কথা নয়।’ গোলাম সাইদি তার অশক্ত, কাঁপা কাঁপা হাত আর ধূমায়িত চায়ের কাপ সহ ফ্রেমে ঢুকে পড়েন। ডিরেক্টর ছোঁড়া ভিউ ফাইন্ডারে চোখ রেখে ভাবে বটে, ‘বয়েসের গাছ পাথর’ না থাকার বাগধারা এর চে সার্থক প্রয়োগ হয়ে তার সামনাসামনি এভাবে সশরীরে এসে দাঁড়ায়নি কখনো, এই আপাত অভিব্যক্তিহীন, বলিরেখাময় অতিবৃদ্ধ জনৈক গোলাম সাইদি, যাকে অনায়াসে গত শতাব্দীর কোনো ফারসি কবি অথবা আরো অনেকদূর পিছিয়ে আগুনের ঐশী জ্ঞানলব্ধ…

Read More

পঙ্কজ চক্রবর্তী’র কবিতাগুচ্ছ

সান্ধ্যভাষার জলস্রোত ১. বৃথা মানুষের সঙ্গে দিন কাটে । কতদিন তার সাথে দেখা হল জলে ও জঙ্গলে, আশ্চর্য লাইব্রেরির মাথায়। আজ সে একা হাতে বাজার করে। সবুজে সবুজ হয়ে ঘরে ফেরে মাংসময়। রবিবার। রবিবার নয় এমন দিনে ওই তার উচ্চকিত ফেরা… ২. গান জানো। তবে শোনাও। শ্রোতার চোখ যেন দেখতে পায় দুপুরের জোনাকি। যেন মনে হয় মরু শহরের উটের মালিকের বিষণ্ণতা জলীয় বিষয়। অচেনা হাত এইমাত্র ছুঁয়ে এল কাঁথাবোনা সুর। আমি শীতাতপ গানের মালিক। আমি শ্রোতার চোখ ঘুরিয়ে দিতে পারি ভাঙাচোরা জনতার দিকে ৩. বার্ধক্যভাতার মতো নেমে আসছে বারোয়ারি সিঁড়ি।…

Read More

শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়-এর কবিতাগুচ্ছ

খসড়া সঙ্গীত ৭. দেবদূত বৃষ্টি মানে আচমকা বাবার সঙ্গে এসে পড়া ধাঙড় বস্তি কাটা-ফুল-ফ্যাকাশে সকালে পাঁকাল খাদ থেকে কিছু তোলা যায় না শুধু একঝাঁক ছাই-ছবিঃ চোখের উপর স্রোত কেননা তারা সকলেই ক্ষণস্থায়ী ধাঙড়ের দীর্ঘ মদ্যপান তাড়িত সকাল বাবার বুঝতে চাওয়া সামাজিক সমস্যা আমি শুধু টের পাই গতকালের সান্ধ্য ফুলের মধ্যে বন্দি বৃষ্টি বাতাস আমি শুধু বুঝতে পারি আমার চামড়ার রং সেই মাটির মত যে সব লুকিয়ে রাখতে জানে পিঁপড়ের রাসায়নিক ভাষায় আমার পালাতে চাওয়া বারবার কোনও কিশোরীর অকারণ হাসির দমবন্ধ পাঁজর   ৮. ক. সমস্ত বেরিয়ে পড়া আস্ত একটা শীতের…

Read More

নির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়-এর কবিতাগুচ্ছ

ছায়াহরিণের বন  ১. মাঠ ভেঙে জল ভেঙে পুরোনো সঞ্চয় ভেঙে এতটা এসেছ এবার জিরোও তবে, স্নান সেরে এসো নধর ফুলের মাংস নিভু আঁচে উনুনে বসিয়ে নিজের ছায়ার সঙ্গে জুয়া খেলো কিছুক্ষণ বিড়ি টানো, কাশো ছায়াহরিণের বনে অস্ত্র হাতে কখনো যেয়ো না হোক না বেসুরো, গান ধরো শরীরে লুকোনো আলো দিয়ে রাত্রির ঠোঁটের ধার ছেঁটে দাও যত্নসহকারে   ২. নিপুণ সেলাই থেকে, কেকা থেকে কী কৌশলে নিজেকেই সরিয়ে নিয়েছ যেন দরজা ছিল, আর নেই আঘাতের বিপ্রতীপে রক্তমাখা বাতিদান ঝোলে ঘোরালো হাওয়ার স্তন কী দিয়েছে মুঠো মুঠো শুকনো পাতা ছাড়া ধিকধিকে আগুন…

Read More

ঋতুপর্ণা খাটুয়ার কবিতাগুচ্ছ

মনোলগ ও গুচ্ছ কবিতা (১) ওই পথটি খুঁজে পেয়েছি। কালচে সবুজ পাথরের পিঠে, প্রিয় দার্জিলিং একেই এতদিন লুকিয়ে রেখেছিল, হাঁটতে তো ইচ্ছে করেই, অপেক্ষার রাস্তা কথা বলে। কিন্তু একটু ভয় ও ইতস্তত বোধ ছড়িয়ে আছে রাস্তায় পড়ে থাকা রোদে— কেউ কি হেঁটেছেন এখানে গেলে কেমন হয় এসব জানতে আগ্রহ বাড়ে এমন দোনোমোনো কিছু একটা নিয়ে তারুণ্য থেকে যৌবনে হেঁটেছিলাম (২) আজকাল কেউ লেখে না, একটি রঙিন দিনের গল্প। অ্যাকোরিয়ামে সাজাপ্রাপ্ত মাছেদের জীবনীগ্রন্থ — এলেম আছে কিনা প্রমাণ দাও, লেখো তো দেখি। শরীর খেকো গরমে ডাবের জলের মতো উপশম কিংবা নিদেনপক্ষে…

Read More

বহুরূপী সিরিজ

  ‘বহুরূপী’ পশ্চিমবাংলার অত্যন্ত প্রাচীনতম একটি লোকশিল্প। বহুরূপী কথার অর্থ হলো বহুরূপে যার প্রকাশ। এনারা মূলত গ্রামীণ লোকশিল্পী যারা নানা রূপ ধরে, গ্রাম বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে ঘুরে মানুষের মনোরঞ্জন করেন এবং জীবিকা নির্বাহ করেন। লোকসংস্কৃতির গবেষকরা মনে করেন যারা বহুরূপী সাজেন তাদের পূর্বপুরুষদের অনেকেই মধ্যযুগে সামন্ত রাজাদের এবং পরবর্তীকালে ইংরেজ আমলে জমিদারদের অধীনে কাজ করতেন পাইক, পেয়াদা, বরকন্দাজ হিসেবে। বহুরূপীরা নিজেরাই নিজেদের রূপসজ্জা করেন এবং গ্রামের বিভিন্ন প্রান্তে ও শহরে ঘুরে ঘুরে নাচ গান করে মানুষের মনোরঞ্জন করে নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করেন। কখনো তাদের রুপে ধরা পড়ে পৌরাণিক কোন…

Read More