বাঁশের সাঁকোটি জলে ভেসে গেছে, ঘাটে এসে উবজো ভূত দাঁড়িয়ে রয়েছি একা একা- ঝুপসি অলক্ষ্মী পানা, শিকড়বিহীন সাদা স্রোত, শামুকখোলের মতো ভারী মেঘ; ‘আমি তবে যাই’ হঠাৎ জলের ঘুর বলে উঠল মালতীর ভাই। যা থেকে আমার নিজের কোনো অর্জন নেই তা আমি পড়ব কেন? কেন ফিরে যাই দেবারতি মিত্র-র মত কবির কাছে বার বার? কেননা তিনি তাঁর কবিতায় ও ইতস্তত ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথায় যা দেন তা প্রচুর। অমোঘ। অজস্র। এই পোড়া দেশে একজন প্রকৃত ও মহৎ কবিকে চিনে নিতে অক্ষম পাঠককুলের কাছে তুলে ধরতে হয় কবির জীবনযাপন। প্রকৃত সাধক…
Read MoreDay: February 23, 2024
ভেসে যায় নৌকো কোনখানে
১ কার সাথে কার কবে কোথায় প্রথম ও শেষ দেখা হবে, এসবই নাকি দৈবনির্ধারিত হয়ে থাকে। কে জানে, হয়তো আমরা এরকমই ভাবতে ভালোবাসি। কবিদম্পতি মণীন্দ্র গুপ্ত ও দেবারতি মিত্র-র সাথে এভাবেই একদিন আমার আলাপ হয়েছিল, এক শুভ লগ্নে। আশির দশকের শুরুতে জামশেদপুরে যখন কৌরব পত্রিকার সাথে আমি যুক্ত হয়েছি, মাঝে মাঝে ওঁদের কবিতাও পড়েছি, কিন্তু আলাপ ছিল না, স্বচক্ষে দেখাও হয়নি। ভাবলে আশ্চর্য লাগে, আরো অনেকগুলো বছর পিছিয়ে গেলে, ১৯৬২ সালে, যখন ওঁদের নামও শুনিনি, আমি তখন উত্তর কলকাতার শ্যামবাজারে বাস থেকে নেমে পিঠে ব্যাগ নিয়ে রামধন মিত্র লেন…
Read Moreখুকি ও তার ভূতেরা
‘খুকু’ দেবারতি মিত্রের ডাকনাম। এ-তথ্য জানা গিয়েছে তাঁর ছোটবোন দেবার্চনা সরকারের সঙ্গে কথাবার্তায়। নিজের দিদির সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে দেবার্চনা জানাচ্ছেন: “…ওর ডাকনাম খুকু, তা কিন্তু শুধু বাবা-মায়ের কাছে নয়, বিশ্বজগতের কাছেও তাই। আমিও ওকে খুকু-ই বলি। আমাদের ভাইজিরাও এমনকী ওকে খুকু বলে। আজকের মানুষেরা নিজেকে প্রোজেক্ট করতে চায়, ও ঠিক উলটো।” ছোটবেলা থেকেই, থমকে যাওয়া, আত্মবিশ্বাসহীন, রক্তমাংসের দেবারতিকে এই কথাবার্তায় দেবার্চনা যে নৈর্ব্যক্তিকতার সঙ্গে উপস্থাপনা করেছেন, দেবারতির কবিতা পর্যালোচনার ক্ষেত্রে তা অপরিহার্য সহায়ক হয়ে উঠবে ভবিষ্যতে। যদিও আপাতত এই নিবন্ধের মুখপাতে দেবারতির ডাকনাম সম্পর্কে অনুসন্ধান করতে যাওয়ার উদ্দেশ্য একটাই।…
Read MoreSelected Poems of Debarati Mitra
Translated from Bengali by Animikh Patra In the drawing room Our evening was a library. Friends are born as books this time – Aroma wafting through their bodies, They are black birds against white clouds: In the woods of Shami trees at night fire walks stumbling. My brother is a moth, He wanted to get inside the books repeatedly, Sisters were incense smoke wrapped in the leaves. And I am a glass almirah. Shadow of the southern hemisphere in the small room. In Paloma College No dust gathered this…
Read Moreদেবারতি মিত্র-র ১৫টি কবিতা
নির্বাচন: অরণি বসু ভূমিকা – অনিমিখ, দেবারতিদির দশটি কবিতা নির্বাচনের যে দায়িত্ব তুমি আমাকে দিয়েছিলে এবং আমি সেই প্রস্তাব সাগ্রহে গ্রহণ করেছিলাম, কাজটি করতে বসে বুঝলাম দেবারতি মিত্রের মত একজন কবির অসামান্য সব কবিতার মধ্যে থেকে দশটি কবিতা নির্বাচন করতে যাওয়ার চেষ্টা করাও অপচেষ্টা মাত্র। বাছাই প্রক্রিয়া থেকে কবিতাসমগ্রের কবিতা প্রথমেই বাদ দিলাম। কবিতাসমগ্র প্রকাশের পরবর্তীকালের গ্রন্থিত ও অগ্রন্থিত কবিতাবলীর মধ্যে থেকে দশটি নয় পনেরটি কবিতা আমি নির্বাচন করলাম। দেবারতি মিত্রের সমগ্র কবিতাবলীর বিচারে আমার পছন্দসই কবিতার তালিকার প্রেক্ষাপটে এই নির্বাচন হিমশৈলের চূড়ামাত্র। তবুও আমার নির্বাচন পাঠকের পছন্দ স্পর্শ করতে…
Read Moreআমার আর কিছুই ভাল লাগে না
লোহার গেট ঠেলে আমার লাল সাইকেলটা সিড়ির পাশে রাখার পর উঠতে শুরু করলাম। অদ্ভুত সেই সিড়ি, তার চেয়েও অদ্ভুত উত্তরণ। পাতলা ধাপ। অন্যান্য সিড়িতে ওপরে ওঠার অভিজ্ঞতায় বড় করে পা ফেলার অভ্যাস এখানে কাজে লাগিয়ে ভুল হল। ঠিক পদক্ষেপ ভুলদিকে চালিত করে খাওয়াল হোঁচট। কারণ, পা ততক্ষণে ভেবে নিয়েছিল জমিতে সে পৌঁছে গিয়েছে। এবং দেহের সমস্ত ভর সামনের দিকে ঝুঁকে সেই পায়ে পৌঁছল, আর অতঃপর পাতালপ্রবেশের মতো অনুভূতি। আরও কয়েকবার এমন হওয়ার পর, মনে হল, বয়ে যাচ্ছি। বয়ে যেতে যেতে বেশ কয়েকবার এ দরজা, ও দরজা। ব্যাঙ্কের লকগেট। পড়শির…
Read Moreদেবারতি মিত্রের কবিতারা : তোলপাড় সমুদ্র আর ধূ ধূ সমুদ্রকে নিয়ে …
এক . এক একটা ভোরের স্বপ্নে জলে বুদ্বুদ ভাঙতে ভাঙতে গান নিজেই উজানে বৈঠা ভাসিয়ে দেয় | এই গান কেমন যেন ভূতে পাওয়া। সে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে গাইছে, ওগো মেঘ তুমি উড়ে যাও কোন ঠিকানায় ? কে তোমায় নিয়ে যায় দূর অজানায়,বলোনা আমায় ওগো মেঘ তুমি উড়ে যাও কোন ঠিকানায় ? আমি নই সে বিরহী আমার কাউকে বলার কিছু নেই তবু যেন কি বেদনা জমে উঠে হৃদয়ে মনে হয় আমার কেউ কেন নেই ঐ অলকায় ওগো মেঘ তুমি উড়ে যাও কোন ঠিকানায় ? আমি ঘুমের ঘোরে দেখি, এক দেবী…
Read Moreমণীন্দ্র গুপ্ত, যোগিয়া বাড়ি ও দেবারতিদি
১১ জানুয়ারি ২০২৪ এর সকাল পেরিয়ে বেলা দশটার দিকে সমাজমাধ্যমে জানতে পারলাম,অন্ধ স্কুলে আর ঘন্টা বাজবে না।আমি তখন স্টেটবাসের মধ্যে, কর্মস্থলের দিকে রওনা হয়েছি।বসেছি জানলার ধারে।বাইরে তাকালাম।কাচের জানলার ভেতর দিয়ে চলমান জীবন চোখে পড়ল।এর আগে যে কোনোদিন দেখিনি তা নয়।তবে আজ একজন কবির মৃত্যুর পরে এই চলমান জীবন ,তার ছন্দ আমার চোখে অন্যভাবে ধরা দিল।অথচ এই কবি,দেবারতি মিত্রের লেখায় তো বহির্জগতের ঘাত প্রতিঘাত ঢুকে পড়েনি সেভাবে।বরাবরই অন্তর্মুখী।লাবণ্য ও বিষাদে মেশা সম্পর্কের খুঁটিনাটি নিয়ে জীবনের গভীর জটিল স্তর ফুটে থাকে তাঁর কবিতায়।তবে কবির মৃত্যুর পর এই ছুটন্ত বাস-ট্যাক্সি মোটরবাইক, গতিময় চাকার…
Read Moreনীরব কেটলিতে ফুটে চলে জল আর শব্দ
অক্ষর যেখানে সতত সচল, দৈনন্দিনের তারে টানটান করে বাঁধা, সেখানেই নিভৃতে বেজে ওঠে তাঁর কবিতা। এক আটপৌরে গৃহস্থের মাঝেও কখনও রান্নাঘর, কখনও বা ছবির অ্যালবাম, কখনও আবার পুরনো পত্রিকার গন্ধ, নীরবতায় মুদ্রিত ষাটের দশকের এই নিভৃতবাসিনীর আত্মকথা। কী নির্ভার অথচ অমোঘ সেই সব কবিতা। পঞ্চাশের দশকের কবিদের ভাষা তখন সুপ্রতিষ্ঠিত, কবিতামঞ্চ সেজে উঠেছে পুরুষ কবিদের সশব্দ উচ্চারণে, তেমন সময়েই দেবারতি মিত্র এলেন তাঁর কবিতার সম্ভার নিয়ে। নারীর ভাষ্যে ফুটে উঠল তার যাপনের নানা সংলাপ, প্রেম-শরীর-যৌনতা যেন কবিতাশরীরে এক নতুন ছন্দ পেল, যেখানে কোনো রাখ-ঢাক নেই, নেই কোনো নিষেধাজ্ঞার ফতোয়া।…
Read More