দ্রষ্টা

লিখতে না পারার ভেতর একটা চিলেকোঠা আছে। লেখকের উদ্‌ভ্রান্ত মন তখন অনন্ত শূন্যের ভেতর ভাসতে থাকা ওই চিলেকোঠায় একা বসে থাকে। লেখক হয়তো সেইসময় সকালবেলা চা খেতে খেতে একবার রোদ্দূরের দিকে তাকালেন। দু’-একবার গাছপালার রঙ পেরিয়ে, আরও দূরে যেতে চাইল তাঁর চোখ। বাইরের আলতো হাওয়া ছুঁয়ে যাচ্ছে ঘরদোর। প্রাত্যহিক কাজকর্মও নিয়ম মেনে গড়িয়ে চলেছে। কিন্তু মন? মন বসে আছে, সেই নির্জন ঘরে। অন্যমনস্ক। কখনো আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে ভাবছে: ‘আর কোনোদিন একলাইনও লেখা হবে?’ দূর থেকে কখনো দেখা যায়, লেখক নামছেন ট্রাম থেকে। কাউকে হাত নেড়ে বলার চেষ্টা করছেন: ‘হ্যাঁ, কাল…

Read More

গৌতম চৌধুরী’র কবিতাগুচ্ছ

অপরগুচ্ছ ১. উঁচুনিচু সাত রকম অন্ধকার। নিজের ছায়াও অচেনা ঠেকিতে পারে। ওদিইকে খেলার প্রহর গড়াইয়া যায়। অবশ্য, খেলিতেই হইবে, এমন কোনও মাথার দিব্য কেহ দেয় নাই। ঘরের কোণে থুম ধরিয়া বসিয়া নেশাভাঙ করিলেই বা কাহার কী! তুই বেটা মর্‌, মরিস না কেন – বলিয়া ঘুলঘুলির ফাঁক হইতে শাপান্ত করিবে একটি ঘাঘু মাকড়সা। সে ভাবিতেছে, তাহার বাড়া ভাতে বুঝি ছাই পড়িল। ঘর-দুয়ার ফাঁকা থাকিলেই তাহার পোয়াবারো। একটু পরে ছাদের কার্নিসে বসিয়া জ্যোৎস্না ভাঙিতে বসিবে পরীর দল। ঘুলঘুলির ফাঁক হইতে উপুড় হইয়া তাহাদের ঠ্যাঙের দুলুনি দেখিবে মাকড়সা। তাহার দৃষ্টি অতটুকুই। ঠ্যাঙের উপরে…

Read More

কুন্তল মুখোপাধ্যায়ের কবিতাগুচ্ছ

প্রস্তাব শরীর কেমন আছে ? এ কথার উত্তরে বারবার বলেছি ‘ সুধা তোমাকে ভোলেনি’, দেখো মেনোপজ সন্ধ্য নেমে আসার আগের এই দুপুর, তুমিও রোদের দিকে পিঠ দিয়ে বসে আছ , আমি বাতাসে ভেসে যাবো কীনা ভাবছি কারণ অতীতের সমস্ত উড়ান কোনো দুর্নিবার আকাঙ্খায় নষ্ট হয়ে গেছে , দূরের সপ্তাহের ডানা ভাঁজ করে রাখা আছে ছাদের গোঁসাঘরে , তুমি রৌদ্রের নমিতস্নান সেরে উঠলে দেখতে পাবে যে মাদুরে বসে আছ সেখানের আল্পনা পাল্টে যাচ্ছে , মূলত আমাদেরই সম্পর্কজটিল ঘূর্ণি কী ,এক মিথোস্ক্রিয়ায় , সূর্যের আলোতে বারেবারে পাল্টে যাচ্ছে , বিগত সকালে আমি…

Read More

ভগীরথ

  ১.   মশাটার দিকে ভাল করে তাকাল সৃজিত,  তারপর মশারির দিকে আর তারপর প্লাগে গোঁজা মসকুইটো অয়েলের দিকে এবং দেখল প্লাগ অন রয়েছে, ঘাতক রাসায়নিকের মিষ্টি জুঁই গন্ধে ঘর ম ম করছে। মশারিতে কোথাও ফুটো নেই! তাহলে কোত্থেকে এল এই লস্কর-ই-তৈবা? বাইরে অঝোরে বৃষ্টি চলছে।  জুন জুলাইয়ের মাথা খেয়ে বৃষ্টি শুরু হয়েছে আগষ্টের বারো তারিখ। আজ এখন চোদ্দোর মধ্য রাত, রাত কাবারেই স্বাধীনতা দিবস। এরমধ্যে এই সশস্ত্র জঙ্গি তার ফর্সা থাইয়ের ওপর এলওসি কার্গিলের সেনাদের মত মাটি কামড়ে বসে রয়েছে। একে স্ত্রী মশা তায় গর্ভবতী! পেট ভর্তি লার্ভা নিয়ে…

Read More

বাশোর কবিতা

মাৎসুও বাশো (১৬৪৪ – ১৬৯৪) ছিলেন জাপানের সুবিখ্যাত কবি। তাঁকে ‘হাইকু’ ফর্মের শ্রেষ্ঠ উদগাতা বলে চিহ্নিত করা হয়। খুব অল্প বয়সেই কবিতা লিখতে শুরু করেন তিনি। তৎকালীন এডো, বর্তমানের টোকিও শহরের বিদ্যাচর্চার পরিমণ্ডলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর খ্যাতি দ্রুত গোটা জাপান জুড়ে। শিক্ষকতা করেই চালিয়ে নিচ্ছিলেন তিনি, কিন্তু তারপর সাহিত্যসমাজের শহুরে সামাজিক বৃত্তকে পরিহার করে সারা দেশ ঘুরে বেড়াতে ব্রতী হন। সুদূর উত্তরাঞ্চলের বন্য পরিবেশ থেকে তিনি তাঁর লেখার অনুপ্রেরণা সংগ্রহ করতেন। তাঁর কবিতা তাঁরই চারপাশের জগতের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা সঞ্জাত, অনেকসময়ই সহজ কয়েকটি শব্দে যা ধরে ফেলে কোনো…

Read More

সাম্য রাইয়ানের কবিতাগুচ্ছ

  অন্ধকাল বেরিয়ে আসতে পারো শামুকী খোলস ছেড়ে দেখতে পারো পুরোটা আঁধার — কতোটা জটিল জ্বালানীবিহীন কী নির্মম এই অন্ধকাল! আকাশে মেঘ নেই, তবু পৃথিবীজুড়ে অন্ধকার নিবিড় অন্ধকার!     শাদা প্রজাপতি এইখানে আমি একা, নিঃসঙ্গ পরিব্রাজক। তারপরও সে আছে এখানেই মাড়াইকৃত চালের মতো শুভ্র শরীর নিয়ে এখানেই কোথাও সে রয়ে গেছে অপ্রকাশিত প্রজাপতি হয়ে। শাদা প্রজাপতি এক জীবন্ত এরোপ্লেন। হাত বাড়ালেই তার উন্মাতাল গান উঠে আসে হাতে কান্নার সুর।     দৃশ্যের মিউজিয়াম জীবনকে মনে হয় ছায়াশীতল মিউজিয়াম। তুমি কি ধ্বংশমতো কারাগারের রক্ষী? একদিন শাশ্বত হয়ে যেতে পারে সবকিছু,…

Read More

নিউটন – ৮

  নিউটনের অ্যালকেমি চর্চা   ১৬৭০-এর দশক। নিউটনের আলোর নতুন থিয়োরি ঘিরে ক্রমশ বাড়ছে জল্পনা, ইউরোপের বিজ্ঞানীরা নিঃসংশয় হতে পারছেন না। তাঁদের তীব্র সমালোচনায় বিদ্ধ কেমব্রিজের তরুণ বিজ্ঞানী। রয়্যাল সোসাইটির জার্নাল, ফিলজফিক্যাল ট্রানজাকশন-এ প্রকাশ পাচ্ছে সেসব সমালোচনা পত্র। সোসাইটির সেক্রেটারি হেনরি ওল্ডেনবার্গকে একের-পর-এক পত্র পাঠিয়ে নিজের তত্ত্বের স্বপক্ষে যুক্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন নিউটন। আবার কখনো-বা ক্ষোভে অভিমানে ভাবছেন আর কখনোই তিনি তাঁর গবেষণার ফলাফল প্রকাশ্যে আনবেন না। এমন-কি র‍য়্যাল-সোসাইটির সদস্য পদ ত্যাগ করার কথাও জানাচ্ছেন ওল্ডেনবার্গকে।  এরকমই এক সময় ওল্ডেনবার্গকে লেখা এক চিঠিতে (২১ শে সেপ্টেম্বর, ১৬৭২) নিউটন জানালেন – ‘…এই…

Read More

উজ্জ্বল ঘোষের কবিতাগুচ্ছ

  চা খাও, জীবন   যদি ভেবে নাও মহাশূন্যে বসে আছে চায়ের দোকানী, তবে হাওয়া ভরে যাবে সুবহ-আড্ডায়, বাঁশবাগানোর মতো ফুটে উঠবে মানুষের রাঙা কলরব। আটখানা দীর্ঘদেহী নারকেল গাছ লম্বা হাত মেলে দেবে তোমার দু’দিকে। নীচে কলা বন, আর হানার দু’ধারে ঝোপঝাড়, কয়েকটা বাড়ি কাছে দূরে। মাঝখানে তুমি, মাটি ছুঁয়ে দাঁড়িয়েছ, মাটির কটোরা। রবিবার শুক্তো রান্না সেরে, চান করে চুল শুকোচ্ছে শ্রীমতী। যদি তুমি শ্রীমতীর কুচি ধরে দাও; যদি সোম-শনি তাকে বাসস্টপে ছেড়ে বল’, “সাবধানে যেও”; তবে ঠিক জেনো মহাশূন্যে উঁকি দেবে কেটলির মুখ, মাটির কটোরা থেকে উৎসারিত হবে ভোলগা-গংগা…

Read More

তাপস বিশ্বাসের কবিতাগুচ্ছ

  দাগ   এইখানে দাঁড়ালে ছোট হয়ে আসে সহজের জনপদ। ডানা কাটা বিন্দু যেমন দু’পাশ থাকে না, আমি থাকে। স্বমেহন থাকে। আত্মার চাতুরির মতো শীত থাকে। এই যে পা চিনে চিনে উপায়ের শৃঙ্গ হল এই যে সম্মোহন জমে জমে বাদাম হল তোমার শেখানো ভাষায় নিজেকে কামড়ের অদ্ভুত দাগ হল     ডার্করুম   ফিল্মে ফুরোচ্ছি যেন আবার। যেন ফিরেও আসছি। চকমকি গানের মতো যেন এও এক বিনিময়। সুতোয় চোখ ভুলে ঝুলে আছি যেন। নিষিদ্ধ হয়ে আছি। যেন চোখেরই অবশিষ্ট কোনও রং। তুমি থেকে থেকে আসছ এমন এক অন্ধতা নিয়ে যার…

Read More

দিদার মালেকী’র কবিতাগুচ্ছ

  সব ডুবে যাচ্ছে, প্রিয়ে   করলডেঙা কতো দূর? গরুর গলায় ছুরি গাছের আগায় আগুন করলডেঙা কত দূর? পেটে আসে না পুত্র রাজা ফিরিয়েছে জায়া মেধসমুনিকে স্বপ্নদর্শন! দুর্গতিনাশিনী দেবী তারই দ্বারে কৃতদার আরতিতে জাগছে আশ্রম ‘কোথায় কৈলাশ মাগো সন্ধানে আমি জ্যান্ত লাশ দেখা দাও ফুল দেবো’ পাতা কুড়োচ্ছে দশভূজা তিন প্যাঁচে পরিধেয় তার লোহিত ছুটছে ত্রিনয়ন! ঘৃতমুখি নারীদের জটলা বচসা লেগেছে রমণে কার পান্ডা কতোটা সবল! তারই মাঝে সুফি এক ‘সত্যরে দেখেছি আমি দেখাবো ভক্তিসম্মিলনে’ তারপর জোছনা বালিকা মালিকা গাঁথছে নুড়িতে বসনে তার বাসন্তী চীবর পেট ফুলে গেল তার স্ফীত…

Read More

রিমঝিম আহমেদের কবিতাগুচ্ছ

  রাক্ষস   তুমি মাংসখেকো এ কথা জানা– কেন তাও পাঠালাম পাগল নিশ্বাস? ভেতরে এতটা রাক্ষস পুষে দুইবেলা তোমার নিরামিষ ভোজন। তোমার জিভ থেকে, লালা থেকে উদগ্র কামনাগন্ধ তেড়ে আসে। দাঁতে মাংসলাগা হাসি। আমি কি বিষণ্ণ হব? আমি কি কেঁদেকেটে মাথায় তুলব পাড়া? ছড়াব আর্তচিৎকার রাত্রির বিষাক্ত ক্ষরণে? দু’হাতে তোমাকে সরিয়ে দিই। বোধের অঙ্গন থেকে উপড়ে নিতে চাইছি সমস্ত কামনাফল। ছুরির ফলার মতো নখ বিঁধে যাচ্ছে কণ্ঠে, নাভি ও ঊরুতে। স্ববিরোধ অন্ধকারে ঢেকে যাচ্ছে আমার মুখ। আর হা করলেই হড়বড় করে বেরিয়ে আসছে লালারক্ত। আমি ধুয়ে নিতে চাইছি তাবৎ রক্তরিরংসা।…

Read More