কুন্তল মুখোপাধ্যায়

কুন্তল মুখোপাধ্যায়ের কবিতাগুচ্ছ

প্রস্তাব

শরীর কেমন আছে ? এ কথার উত্তরে বারবার বলেছি ‘ সুধা তোমাকে ভোলেনি’, দেখো মেনোপজ সন্ধ্য নেমে আসার আগের এই দুপুর, তুমিও রোদের দিকে পিঠ দিয়ে বসে আছ , আমি বাতাসে ভেসে যাবো কীনা ভাবছি কারণ অতীতের সমস্ত উড়ান কোনো দুর্নিবার আকাঙ্খায় নষ্ট হয়ে গেছে , দূরের সপ্তাহের ডানা ভাঁজ করে রাখা আছে ছাদের গোঁসাঘরে , তুমি রৌদ্রের নমিতস্নান সেরে উঠলে দেখতে পাবে যে মাদুরে বসে আছ সেখানের আল্পনা পাল্টে যাচ্ছে , মূলত আমাদেরই সম্পর্কজটিল ঘূর্ণি কী ,এক মিথোস্ক্রিয়ায় , সূর্যের আলোতে বারেবারে পাল্টে যাচ্ছে , বিগত সকালে আমি বাঁশি খুঁজেছি আর তুমি খুঁজেছ হুইসল যার পিছনে পিছনে আসে পুরসভার অমোঘ আবর্জনা গাড়ি যেখানে আমাদের সমস্ত হতাশা পাওয়া যাবে, মন

এখনও রৌদ্র , এখনও সময় আছে

 

 

প্রস্থান

সে কাঁদে যে মরে যায় ,
সে কাঁদে আকুল কাঁদে
রোদ ধরে
ছায়া ধরে
হাওয়া আর বাতাসের কোণ ধরে কাঁদে

সে থাকে যে মরে যায়,
কাঠের গন্ধের সঙ্গে
লেগে থাকে
উন্মুখর নীরবতা
গায়ে গায়ে আত্মীয়তা
বেঁধেছিল, বাঁধে

বিষাদে সমস্ত বাল্ব
জ্বলতে গিয়ে নষ্ট হয়,
ফিলামেন্ট তারে
সে এক হাওয়ার তোড়ে সবকিছু লণ্ডভণ্ড করে গেছে সব

এসি নষ্ট
ফ্রিজ নষ্ট
টিউবলাইট
টিভি
বাড়ির জলের কল
বউ নষ্ট ছেলে নষ্ট পচা পাতা
নষ্ট জীবনের ঘ্রাণ মাধব মাধব

যাওয়ার আনন্দ তাকে
দিয়েছিল ধর্মগ্রন্থ,
আজ দেখে সেও
দূর থেকে
চোখ পালটায়ে কয়ঃ
ঈশ্বর তোমাকে ডেকে ফিরছেন কোন ভোর থেকে…

যাওয়ার আনন্দ-অশ্রু
বিষাদপাহাড়, ধৈর্য
অন্ধকার বারন্দায়
পায়চারি লেখে
লেখে রাত্রি বিনিদ্রের হাওয়ার আলোয় লেখে
নিরুদ্দেশ
লেখে ব্রহ্ম লিখে রাখে ‘প্রায়’

সে কাঁদে , যে মরে যায়, সে কাঁদে যে মরে যায়
সারাদিন
খুঁজেছে সাকেত

পরমাত্মা-আঙ্কল তাকে
মিষ্টি লাল টফি দেবে তাই…

দূর থেকে হাত নেড়ে ডাকে



হৃদয়বিদারক 

নতুন্ প্রেমের মতো 
নতুন পিরিত ওঠে 

বুক থেকে কাঁধে নেমে যায় 
হা আমার আশরীর 
                    দিগন্ত 
                           পর্যন্ত 
                                   পড়ে 
                                          আছে 

পায়ের কাছেই দেখছি 
ছোট ছোট তালগাছ 
মাথার উপরে 
বাঁহাত ওঠালে 
মেঘ 

হা আমার মুখ থেকে 
প্রথম প্রেমের রক্ত 
আলো আলো দুমুঠিতে তোর হাত 
দুমুঠিতে তোর স্তন 
ধরে রাখতে পারছি কই বল 
খাবি খাচ্ছি 
হাওয়া এসে 
বেঘোরে চোখের সামনে 
নেচে মরছে নিরুপায় 
খাবি খাচ্ছি তার-কারন খাওয়ার কিছুই বাকী নাই 
নাক দিয়ে রক্ত চাপ 
ফ্রেশ ভাই ফ্রেশ ফ্রেশ 
দেশি-দুশো দেশি-দুশো 
                মাছবাজার মাছবাজার দুআঙুলে আঁশ 

আলো আলো আলো আমি মরে যাচ্ছি 
আলো কোন মাস এটা কোন মাস 
কী যন্ত্রণা ঘাড় থেকে 
                         পিঠ দিয়ে 
                                        নেমে যাচ্ছে 
                                                             নতুন প্রেমের রক্ত 
পিস্টনে প্রচণ্ড ধাক্কা 
রক্তারক্তি 
স্বত স্বত স্বতঃপ্রণোদিত 

আহা সেই রাত্রি ভাবো 
আহা সেই রাত্রি ভাবো আলো 
ফুলের শয্যায় জ্বলছে 
উল্কাখণ্ড ধুমকেতু 
অজস্র আলোকবর্ষ 
ওঠে 
ডোবে 
রুগ্ন হয় 
ফের 
জেগে 
ওঠে ... 

তোমার বাঁহাত আমি 
নিজের ভিতরে নিয়ে 
বুকের ভিতরে নিয়ে 
বুঝেছি হৃদয় মহাশয় 
কীভাবে ও দুটি স্তন পায়রা হয় 
ছটফট ছটফট করে 
                  উড়ে যেতে 
                               তারও ইচ্ছে হয় 
কীভাবে আশ্রয় দুটি তালু হয় 
স্বচ্ছ দীঘি 
কাকচক্ষু জল 
কীভাবে কীভাবে 

আজ এই যে চলে যাচ্ছি 
আলো দেখ ছেড়ে যাচ্ছি 
এই ঘর এই ছাদ 
ছাদের উপরে লেগে
অজস্র মৃতের হাসিমুখ 
আজ এই যে চলে যাচ্ছি 
হাওয়ায় উড়তে উড়তে 
ক্লান্ত লাগছে ঘুম ঘুম পায় 

হৃৎকমলিনী, এও এক প্রেম   
Facebook Comments

Related posts

Leave a Comment