রিমঝিম আহমেদ

রিমঝিম আহমেদের কবিতাগুচ্ছ

 

রাক্ষস

 

তুমি মাংসখেকো এ কথা জানা– কেন তাও পাঠালাম পাগল নিশ্বাস? ভেতরে এতটা রাক্ষস পুষে দুইবেলা তোমার নিরামিষ ভোজন। তোমার জিভ থেকে, লালা থেকে উদগ্র কামনাগন্ধ তেড়ে আসে। দাঁতে মাংসলাগা হাসি। আমি কি বিষণ্ণ হব? আমি কি কেঁদেকেটে মাথায় তুলব পাড়া? ছড়াব আর্তচিৎকার রাত্রির বিষাক্ত ক্ষরণে?

দু’হাতে তোমাকে সরিয়ে দিই। বোধের অঙ্গন থেকে উপড়ে নিতে চাইছি সমস্ত কামনাফল। ছুরির ফলার মতো নখ বিঁধে যাচ্ছে কণ্ঠে, নাভি ও ঊরুতে। স্ববিরোধ অন্ধকারে ঢেকে যাচ্ছে আমার মুখ। আর হা করলেই হড়বড় করে বেরিয়ে আসছে লালারক্ত।

আমি ধুয়ে নিতে চাইছি তাবৎ রক্তরিরংসা। আমার স্নানঘরে অনাবশ্যক দীর্ঘ হয়ে উঠছে রাত। অবগাঢ় শূন্যতার দিকে তাকিয়ে বিষ হয়ে উঠছে সুগন্ধি সাবানও।

 

 

ভস্মাধার নাকি অগ্নি

 

ভেসে-থাকা শিখে গেছি। সমুদ্র ও নদী সবই এক
যেখানে নিলীয়মান, রপ্ত করি মাছের কৌশল
রক্তস্রোত ব্যথা-পাশে শুশ্রূষার সুখঅগ্নিসেঁক
দুলে ওঠে পারিজাত অনাহত পরমান্ন জল

দু’পাশে বেণীর গান, স্বীকারোক্তি- ঢেউ ভাঙে প্রেম
অতন্দ্রায় চোখ জ্বলে থতমত অশ্রুর কনক
ভস্মধুলি ভেসে আসে, দূরে জ্বলে লণ্ঠনের হেম
উঠোনে কি দুঃখ পুঁতে চারা হয়? পাতার সবক!

অনঘ হৃদয় খোলে চিরদিন মৌন অনুভব
ভাঁজ করে রেখে দেয়া রুমালে সেলাই করা নাম
গাছেদের গূঢ়ভাষা পাতা বোঝে, আদি-কলরব
মানুষ ঘনিয়ে আসে, বুকে বিঁধে গতি অবিরাম

নিজেকে বিছিয়ে রাখা ধুলোপথে আমারই অভ্যাস
আপন মৃত্যুর দিকে পাখি ওড়ে, ধানদুব্বোঘাস

 

 

নিঃসঙ্গ

 

নতুন ধানের মত তোমাকে আশা জাগাচ্ছিলাম
উঁকি দিচ্ছিলাম পাথরকুচি শরীরে
সমস্ত মেঘ যদি মুছে ফেলা যেত আকাশ থেকে!
নিথর বেদনা নিয়ে বৃষ্টির ঝরে পড়া হতো না
বস্তু বিশেষে সকলেরই উপযোগ আছে
বুকের ভেতর নিঃসঙ্গ পিয়ানোর গান

জেলেনৌকোর আলো চুপিচুপি দেখেছিল জলের মুখ

তুমি আরও শারীরিক হবে বলে খুলে দিচ্ছ এক একটা জানালা

রাত গভীর হয়। মানুষ কি অমীমাংসিত একা নয়?

 

 

অধীরতা

 

আমার দিকে বাড়িয়ে দিলে পথ
পথের ধুলো, আকাশ– বিশ্বরূপ
স্তব্ধ ডানা, আগুনফুলে
কাঁপনলাগা পাতা–

জলের ঘটি উলটে দিয়ে গেল
কে জানে কার গোপন সুতোর টানে
স্পষ্টতর গহনকাল
বুনছে অধীরতা

 

 

চলে গেলে

 

তুমি চলে যাবে। গোধূলির ধুলো নামলে– কোনো এক অচেনা গ্রামের দিকে, যেখানে পথ ও সিঁথি এক হয়ে গেছে। যেমন মা আর প্রেমিকা কখনো মিলে যায়, বুকের ভেতর। তুমি চলে গেলে পুঁতে দেব একটি পাখিগাছ। সন্ধ্যা আসবে নির্দয় সিমারের মতো। পাখিরা ডানা ঝাপটাবে।
কিছু ব্যথা সত্য, আদিঅন্তময়।

তবু তোমাকে কেন চিরদিনের মনে হয়।

Facebook Comments

Related posts

Leave a Comment