শৌভিক দে সরকার

চার্লস সিমিক -এর কবিতা

অনুবাদঃ শৌভিক দে সরকার 

 

চার্লস সিমিকঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম কবি চার্লস সিমিকের জন্ম ১৯৩৮ সালে যুগোস্লাভিয়ার বেলগ্রেড শহরে। ষোল বছর বয়সে তিনি তাঁর পরিবারের সঙ্গে আমেরিকায় চলে এসেছিলেন। ১৯৬৬ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ,‘হোয়াট দা গ্রাস সেস’। ‘আনএন্ডিং ব্লুজ’,‘হোটেল ইনসোম্যানিয়া’,‘নাইট পিকনিক’ তাঁর বিখ্যত কাব্যগ্রন্থ। ১৯৯০ সালে ‘ দা ওয়ার্ল্ড ডাজ নট এন্ড’-এর জন্য পুলিৎজার পুরষ্কার পেয়েছেন সিমিক। এছাড়া গ্রিফিন ইন্টারন্যাশনাল পোয়েট্রি প্রাইজ, ওয়ালস স্টিভেনস অ্যাওয়ার্ড- এর মতো পুরষ্কার পেয়েছেন চার্লস সিমিক। ইউনিভার্সিটি অফ নিউ হ্যাম্পশায়ারে দীর্ঘদিন অধ্যাপনার পাশাপাশি ‘প্যারিস রিভিউ’ পত্রিকার কবিতা বিভাগটি সম্পাদনা করেছেন তিনি।  

 

আমার ডান হাতের আঙুলগুলোর পঞ্চতন্ত্র


বুড়ো আঙুলটা আসলে ঘোড়ার নড়বড়ে দাঁত
মুরগির দলের ভেতর একটা মোরগ
শয়তানের শিং, মোটাসোটা একটা পোকা
আমার জন্মের সময় ওরা আঙুলটাকে
আমার মাংসের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছিল
অন্য চারটে ওকে জাপটে ধরে
বাঁকানোর চেষ্টা করতে থাকে
যতক্ষণ না ভেতরের হাড় ককিয়ে ওঠে

কেটে ফ্যালো আঙুলটাকে, দেখবে ওটা নিজের
দেখভাল করতে পারবে, দিব্যি মাটিতে শেকড় চাড়িয়ে দেবে
অথবা নেকড়েদের সঙ্গে শিকার ধরতে বেরিয়ে পড়বে


দ্বিতীয় আঙুলটা শুধু রাস্তা দেখায়,সত্যিকারের রাস্তা
যেটা পৃথিবী, চাঁদ আর কয়েকটা তারা ডিঙিয়ে চলে যায়
দ্যাখো, কিছু দেখাচ্ছে আঙুলটা!
নিজেকেই দেখাচ্ছে এবার


মাঝখানের আঙুলটার পিঠে ব্যাথা আছে
সোজা দাঁড়িয়ে থাকে, নিজেকে মেলাতে পারেনা
দুনিয়ার কোনোকিছুর সঙ্গে, জন্ম থেকে বুড়িয়ে গিয়েছে
কিছু একটা হারিয়ে ফেলে
আমার হাতের তালুতে সেটা খুঁজে বেড়াচ্ছে
যেভাবে একটা কুকুর
মাছিদের দিকে তাকিয়ে
ধারালো দাঁত বের করে


চার নম্বর আঙুলটা রহস্যজনক
কখনও আমি হাতটা
টেবিলের ওপর রাখলে
নিজে থেকেই লাফিয়ে ওঠে আঙুলটা
যেন কেউ আঙুলটাকে নাম ধরে ডাকছে

প্রতিটা হাড়, আঙুলের পর
আমি ওর কাছে বিদ্ধস্ত হয়ে ফিরে আসি


পাঁচ নম্বর আঙুলটা মাঝেমধ্যে কেঁপে ওঠে
জন্মের পর থেকেই একটু একটু করে কেঁপে যাচ্ছে
পলকা, সহজে হেরে যায়
অথচ খুব আলতো করে ছুঁয়ে থাকতে পারে
এক ফোঁটা চোখের জলকেও তুলে নিতে পারে
চোখের কোণা থেকে সরিয়ে দিতে পারে ধুলোর কণা

 

কাঁটাচামচ

এই অদ্ভুত জিনিসটা নিশ্চয়ই
নরক থেকে লুকিয়ে বের হয়ে এসেছে!
দেখে মনে হচ্ছে একটা পাখির পা
নরখাদকদের গলায় লটকে আছে !

যখন তুমি জিনিসটাকে হাতে নেবে
একটা মাংসের টুকরোর ওপর গেঁথে দেবে
পুরো পাখিটাকে তখন কল্পনা করতে পারবে
তোমার হাতের মুঠোটাই ওর মাথা
পালক ছাড়ানো, ঠোঁটহীন, অন্ধ, বড়সড় একটা মাথা

 

অক্টোবর এগিয়ে আসছে

আজকে শুধু একটা
ফালতু পিঁপড়েকে নিয়েই ভাবব
অন্যদের কাছে সন্তদের ছবি আছে
অন্যদের কাছে আকাশ ভর্তি মেঘ আছে

দরজার কাছে এগিয়ে এসেছে অক্টোবর
একদম একা হয়ে যাওয়া একটা পিঁপড়ে
লুকোনোর জন্য তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে
কোনও কিছু ঠিক করতে পারছে না বেচারা

বারবার পিছু হটছে শুধু
হটতে হটতে শেষ অবধি বিশাল একটা ফাঁকা দেওয়ালে
নিজেকে দেখতে পাচ্ছে
একটাও জানালা নেই দেওয়ালটাতে

গাছেদের দলা পাকানো ছায়া পিঁপড়েটার সামনে
অন্ধকার গোলকধাঁধা ছুঁড়ে দিচ্ছে
আর পরের মুহূর্তেই অন্ধকারটাকে মুছে দিচ্ছে
সমুদ্রের আওয়াজের চালাকি দিয়ে

 

ভয়ের এনসাইক্লোপিডিয়া

ইনসোম্যানিয়ার রোগীরা ছাড়া আর কেউ এটা পড়ে না!
এখানেই শুধু খুঁজে পাওয়া যাবে কীভাবে এই সকালবেলাতেই
মায়ের হাতে চড় খেয়ে বসে আছে একটা বাচ্চা,
আর পাগল হয়ে যাওয়া একজন মহিলা
রাস্তায় বসে বসে পেচ্ছাপ করছে

ওরা কি কারও কথা লিখতে ভুলে গিয়েছে?
বোম পড়ার পর ধোঁয়ায় ঢেকে যাওয়া শহরটা,
আধপোড়া সিগারেটের মতো মানুষের লাশ
রাতের খাবারের প্লেটে ছাইয়ের সঙ্গে উপচে পড়ছে
না, সবাই তো আছে!

তোমার কি কোনও অদৃশ্য ট্রাইবুনালে আসার কথা?
পাতা উল্টে দেখার মতো অনেক ছবি পাবে এখানে
অনেক অনেক গল্প শুনতে পাবে
যেমন কয়েদীদের পেটানোর পর জেলের পাহারাদাররা
কীভাবে তাস খেলে সেটাও জানতে পারবে

Facebook Comments

Related posts

Leave a Comment