মহুয়া কাঞ্জিলাল

পায়ে পায়ে ফ্রেঞ্চ আল্পস

 

ফ্রেঞ্চ আল্পস ১ : মর্জিনের পথে 

শুরুটা মোটেও সুখকর ছিলনা। বার্মিংহাম থেকে আমস্টারডাম হয়ে জেনিভা পৌঁছনোর কথা দুপুর দুটোর মধ্যে। সেখান থেকে বাসে করে মর্জিন (Morzine)ফ্রান্স আর সুইজারল্যান্ডের সীমান্তে অবস্থিত মর্জিন ফ্রেঞ্চ আল্পস ঘেরা একটা ছোট্ট শহর । আমরা যাচ্ছি কয়েকদিন আল্পসকে এই প্রথম কাছ থেকে ছুঁয়ে দেখার এবং চেনার আশায়।

আল্পস হিমালয় নয়। অত সুউচ্চ পর্বত শিখরের দাবিও করে না। কিন্তু নিজের স্বমহিমায় পৃথিবীতে বিরাজ করছে।  হিমালয় সৃষ্টির ২৫০ মিলিয়ন বছর আগে সৃষ্ট এই ভঙ্গিল পর্বতমালা দক্ষিণ ইউরোপের ফ্রান্স থেকে আলবেনিয়া অবধি ১২০০ কিলোমিটার জুড়ে বিরাজ করছে এবং এর প্রকৃতিগত বৈশিষ্টের কারণে পৃথিবীতে আলপাইন শ্রেণীর উদ্ভিদ তৈরী হয়েছে। ছোটবেলা থেকে আল্পসের বিখ্যাত মঁব্লা এবং ম্যাটারহর্ণ চূড়ার নাম মুখস্ত করে এসেছি। সেই আল্পসকে ছুঁতে পারার রোমন্টিকতায় বুঁদ হয়ে রওনা দিয়েছিলাম।  

Morzine

কিন্তু শুরু থেকেই বিপত্তি। বার্মিংহাম থেকে প্লেনে ওঠার সময় দেখা গেল আমাদের সীট অন্য লোকের আওতায় আর আমরা পেলাম অতি বাজে দুটো সীট, প্লেনের একবারে শেষে। আমস্টারডামে lay over মোটে চল্লিশ মিনিট। প্রায় ১৫ মিনিট দেরীতে পৌঁছানোর ফলে আমরা দে ছুট লাগালাম জেনিভার প্লেন ধরার জন্যে। হাঁফাতে হাঁফাতে এসে প্লেনের দরজা বন্ধ করার ঠিক আগের মুহূর্তে ঢুকলাম সিটিহপার প্লেনে। এই ছোট্ট প্লেনগুলো বাসের মতই কাজ করে, ইউরোপের এক শহর থেকে অন্য শহরে মধ্যে। বসার সাথে সাথে মনের মধ্যে একটা কু ডাকলো। আমরা না হয় দৌড় লাগালাম, কিন্তু আমাদের দুটো সুটকেশ! তাদের কি দশা হল! 

জেনিভা পৌঁছে প্রথমেই দমকা গরম হাওয়া জানিয়ে দিল ইউরোপে তাপপ্রবাহ চলছে। ঘেমে নেয়ে লাগেজ সংগ্রহের লাইনে বহুক্ষণ দাঁড়াবার পর সবার ব্যাগ এসে গেল, আমাদের সুটকেশ  এল না। খোঁজ খবর করে জানা গেল, আমরা জেনিভার সিটিহপার ধরতে পারলেও আমাদের সুটকেশরা পেরে ওঠেনি। কতৃপক্ষ জানালো বিকেলে পরের হপারে এসে পৌঁছোবে। সাথে তারা জিনিষপত্রের অভাব দূর করার জন্যে একটা ছোট প্যাকেট দিল তাতে নাকি রাত কাটানোর সব সরঞ্জাম এমনকি রাতের পোষাকও আছে!  এদিকে আমাদের বাস বুক করা মর্জিনের। তাই সুটকেশের দুঃখ ছেড়ে বাসে উঠলাম। জেনিভার ব্যস্ত রাস্তা পেরিয়ে কিছুদূর গিয়ে ফ্রান্সের বর্ডার। না আছে কাঁটা তার, না আছে রক্ষী। রাস্তার ধারে একটা ঘর আছে বটে পাসপোর্ট চেক করার, কিন্তু তা তালা বন্ধ। কাজেই সুইজারল্যান্ড থেকে ফ্রান্সে ঢুকে পরলাম নিঃশব্দে। ফ্রান্সে স্বাগত লেখাটা না থাকলে বোঝাও মুশকিল হত। 

ফ্রান্সের পূর্বদিকের এই অঞ্চলটা একবারের জনবিহীন। কচিৎ কয়েকটা গ্রাম এল পথে। ঘন্টা দেড়েক চলার পর ঘন জঙ্গল শুরু হল। বুঝলাম আল্পসের তরাই অঞ্চলে পৌঁছেছি। এখানে সারিসারি কাঠের কল। ধীরে ধীরে উচ্চতা বাড়তে থাকলো। দূরে পর্বতশ্রেণীরা দেখা দিতে লাগল ক্রমশ। বাস থেকে হঠাৎ একটা সুন্দর হিমবাহ সৃষ্ট ক্রাগ এন্ড টেল ভূমিরূপও দেখতে পেলাম। 

মর্জিন যখন পৌঁছালাম তখন ছবির মত এই ছোট্ট শহর এক জনসমুদ্রের আকার নিয়েছে। বাসও আর এগোতে পারলোনা। আসলে ইউরোপের বিখ্যাত সাইকেল রেস, ’ট্যুর দ্য ফ্রান্সের’ সময় এখন। মর্জিন এই রেসের পথে পরে। আর প্রতিযোগীরা মর্জিনে শেষ করেছে সেদিনের রেস। রাস্তার ধারের জনতা আবেগে উত্তাল পুরো। মর্জিনের সাইকেলের প্রতি ভালোবাসা পরে নানা অভিজ্ঞতায় বহুবার লক্ষ্য করেছি। 

ভীড়ের মধ্যে কোনোরকমে খুঁজে পেলাম আমাদের চ্যালে (Chalet)অ্যাবির (চ্যালের কর্মী) অভ্যর্থনায় সারাদিনের ক্লান্তি, হয়রানি অনেকটাই দূর হল। কৃষ্ণনগরের মেয়ে আল্পসের ঢালে এরকম একটা কাঠের বাড়িতে বসে রাতের খাবার খাচ্ছি এই ভাবনাতে বিগলিত হয়ে এয়ারলাইন্সের যাবতীয় গাফিলতি সেদিনের মত ক্ষমা করে দিলাম।  

Our Chalet

পরদিন সুটকেশ না আসা অবধি এই কাঠের বাড়িতে বসে উপত্যকার শোভা দেখেই কাটাতে হবে।

 

ফ্রেঞ্চ আল্পস ২ : আল্পসকে প্রথম ছুঁয়ে দেখা

শঁবলে আল্পসের ঢালে দ্রান্সে (Darnse) নদীর উপত্যকায় অবস্থিত মর্জিন শহরের পর্যটনের আসল সময় শীতকাল, যখন এর চতুর্দিকের পাহাড়ের ঢাল বরফে ভর্তি থাকে। তখন এই বরফের ঢাল ধরে স্কি করার জন্যে পর্যটকেরা ভিড় জমায়। শীতকালে এখানকার চ্যালেগুলোতে জায়গা পাওয়াই মুশকিল। স্কি করার সরঞ্জাম পাহাড়ের মাথায় তোলার জন্যে প্রতিটা ঢালে স্কি লিফ্ট অবধি আছে। এসব গল্প শুনে আর নিজের ভূগোলের জ্ঞান মাথায় রেখে আল্পসে আসছি বলে কয়েকখানা জ্যাকেট, উলের টুপি, গ্লাভস কিছু বাকি রাখিনি আনতে। এখানে এসে বুঝলাম কি মারাত্মক ভুল করেছি। জুলাই মাসে কলকাতা বোধহয় আল্পসের চেয়ে বেশি আরামদায়ক। 

আগেরদিন মধ্যরাতে সুটকেশ এসে পৌঁছেছে কাজেই সকাল হতেই পরিকল্পনা অনুযায়ী হাঁটতে বেরোলাম। হোটেল থেকেই self guided walking route দিয়েছে অনেকগুলো। এদিন গ্রামের বাসস্ট্যন্ড থেকে বাসে করে ছোট একটা হ্রদের ধারে পৌঁছালাম। নাম তার Mines d’Or. হ্রদের পাশ দিয়ে জঙ্গলে ঢুকে গেছে যে হাঁটার রাস্তা, সে পথ দিয়েই আমরা হাঁটতে শুরু করলাম। বেশ চড়াই প্রথম দিকটা। জঙ্গল শেষ হতেই ঘন্টার আওয়াজ। ভাবলাম নিশ্চই কাছেপিঠে গীর্জা আছে। মাঠের মধ্যে দিয়ে যত উঠছি পাহাড়ে, ততই বাড়তে থাকছে ঘন্টার আওয়াজ। অনেকটা উঠে তারপর চোখে পরলো গরুর পাল, যাদের গলায় বড় বড় ঘন্টা বাধা। এই ফার্মের ডানদিকে চীজ ফ্যক্টারি। হাতের গাইডের বর্ণনা বলছে গরুদের পাশ কাটিয়ে আমাদের অন্য পাহাড়ের দিকে যেতে হবে। বেজায় শিংধারী হৃষ্টপুষ্টু গরুর পাশ দিয়ে যেতে যথেষ্ট ভয় লাগলেও তারা আমাদের পাত্তা দেয়নি মোটেও। পরের কদিন আল্পসের ঢালে হেঁটে বেড়ানোর সময় লক্ষ করেছি এই অঞ্চলে বেশ কিছু চীজ ফার্ম আছে।

এই সবুজ ফার্মটা চারদিকে পাহাড়ে ঘেরা। তাতে ঘন্টার একটানা টুংটুং আওয়াজ এক অদ্ভুত আবহের সৃস্টি করেছে। ঘন্টার শব্দ এক সময় ছাপিয়ে গেল নদীর কুলকুল আওয়াজে। নাম না জানা এক পাহাড়ি নদী লাফিয়ে নেমে চলেছে মর্জিন উপত্যকায়। ঘন পাইনের জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে অনেকটা ওঠার পর ক্রমশ গাছপালা কমতে লাগল। বুঝলাম ট্রি লাইনের ওপরে চলে এসেছি। পুরো রাস্তা ধরেই আলাপাইন ফুল মুগ্ধ করছিল আমাদের, কিন্তু জঙ্গল শেষ হতে যেন তাদের বিস্তার আর রকমভেদ ক্রমশ বাড়তে লাগলো।  আল্পসে ট্রিলাইনের ওপরে এরকম wildflower meadow দেখা যায় শুনেছিলাম, কিন্তু তাদের বাহার যে এরকম মনমুগ্ধকর তা ভাবিনি।   পাহাড়ের ঢালে কিছু ফুল মন দিয়ে দেখতে গিয়ে হঠাৎ দেখি এক বিশালাকার হরিণ ছুটে আসছে আমাদের দিকে। সেই দেখে আমি যেই মনিশকে ডেকে দেখাতে গেছি অমনি হরিণভায়া উল্টোদিকে ছুটে পালালো। 

অনেকটা উঁচুতে উঠে আসার পর মর্জিন উপত্যকা এবং আশেপাশের পর্বতশ্রণীদের রূপ ক্রমশ প্রতীয়মান হতে থাকলো। কোনো কোনো শিখরে এখনো বরফের ছোঁয়া, খুব সামান্য হলেও। সৌন্দর্য্যের যে কোনো সংজ্ঞা এরকম জায়গায় ম্লান হয়ে যায়। ফ্রেঞ্চ আল্পসের যে অংশে আছি আমরা তা শঁবলে (Chabalis) অঞ্চল। এখানের পর্বতের চূড়া ত্রিকোন নয়, যে কারণে আল্পসের ম্যাটারহর্ণ শিখর জগৎ বিখ্যাত। শঁবলে পর্বতের চূড়া অনেকটা ভোঁতা, কখনো গম্বুজের মত, কখনো বা শিখরহীন অনেকটা লম্বা দেওয়ালের মত ridge তৈরী করেছে। 

আরো আধঘন্টা চড়াই এর পর এসে পৌঁছালাম কল ডি ক্যু (Col de Coux) শিখরে। ২০০০ মিটার উঁচু এই শিখর ফ্রান্স এবং সুইজারল্যান্ডের সীমানায় অবস্থিত। তাই শিখরের দুদিকে দুদেশের প্রতীক এবং এখানথেকে যে শিখরগুলো দেখা যায় তাদের উচ্চতা সহ নাম লিখে রাখা। সুইস আল্পসের বরফে ঢাকা ত্রিকোণ শিখরের ছবি সবার চোখে ভাসে। তারই বেশকিছু সুউচ্চ শিখর দূর থেকে দেখা যায় কল ডি ক্যু থেকে। অপূর্ব সে দৃশ্য। এই দৃশ্যে মুগ্ধ হবার মাঝে সুইস ঢালে বসে সেদিনের লাঞ্চ সারলাম। সামনে অমন মৌনঋষির মত দাঁড়িয়ে থাকা আল্পস, আল্পাইন ফুলে ঘেরা তারই এক ঢালে বসে খাওয়া প্যাকেটের স্যান্ডউইচ তখন অমৃত সমান। 

ফেরার পথে চীজ ফার্ম থেকে চীজ আর কফি খেয়ে উদর এবং মন দুটোই ভরিয়ে বাস ধরলাম। 

আল্পসে প্রথম হাঁটার অভিজ্ঞতা, আল্পসকে ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছে কানায় কানায় পূর্ণ হল সেদিন। 

 

ফ্রেঞ্চ আল্পস ৩ : নদীর সাথে পথ চলা 

মর্জিন শহরের ঠিক মাঝখান দিয়ে বয়ে চলেছে দ্রান্সে নদী। অথবা বলা যেতে পারে দ্রান্সে নদীর ভ্যালিতে গড়ে উঠেছে মর্জিন শহর। মর্জিন উপত্যকার আকৃতি দেখে সহজেই অনুমান করা যায় এটা প্রথমে হিমবাহ এবং পরে নদীর ক্ষয়ের ফলে তৈরী। আল্পসের নদী উপত্যকায় হাঁটার সুযোগ কি আর ছাড়া যায়! তাই পরদিন সকালে চ্যালে থেকে বেরিয়ে সোজা নদী বরাবর হাঁটা লাগালাম। অনেকটা নামার পরও দেখলাম নদী আরো বেশকিছুটা নীচ দিয়ে বয়ে চলেছে। এ শহরে মানুষের সুবিধার জন্যে নদীর পাড়ে নামার লিফ্ট আছে। কিছুটা একটা লিফ্টে নেমে তারপর আবার আর একটা লিফ্ট। সিঁড়িও নিশ্চই আছে কিন্তু লিফ্ট পেলে কে আর সিঁড়ি চায়!

2nd day walk

নদীকে ডানদিকে রেখে অর্থাৎ নদীর গতিপথ ধরে এগোতে থাকলাম। তিরতির করে সামান্য জলের আওয়াজ তুলে দ্রান্সে উত্তর পশ্চিমের দিকে বয়ে চলেছে। গাছের ছায়া আর মৃদুমন্দ হাওয়ায় এদিনের অতিরিক্ত গরমকে ভুলে থাকা সম্ভব হল। কিছুদূর যাবার পর দ্রান্সে নদীকে পার করে কিছুটা জঙ্গলের মধ্যে হাঁটার পর একটা ফাঁকা মাঠ। এই মাঠ পেরিয়ে মন্ট্রিও (Montriond) শহর। শহরে ঢোকার মুখে মনিশের সাথে এক শেয়ালভায়ার সাক্ষাত। সে বেচারা এ রাস্তায় বোধহয় বেশি লোকের আনাগোনা দেখেনা। কজন ই বা আমাদের মত মাঠঘাট ঘুরে বেড়ায় আল্পসে এসে! 

মর্জিনের থেকে আকারে অনেকটাই ছোট এই শহর। এখানকার রেস্তেরাতে কফি খেয়ে কিছুক্ষণের বিশ্রাম। তারপর শহরকে ডানদিকে রেখে আবার নদীর ধারে নেমে এলাম। এটা দ্রান্সেরই উপনদী। আমার ধারণা ছিল মন্ট্রিও লেক থেকে এর উৎপত্তি। তাই এই উপনদীর উৎসের দিকে হাঁটতে থাকলে লেকে পৌঁছে যাব। এবং অবধারিত ভাবে তা হিমবাহ সৃষ্ট লেক। সবই আমার ধারণা মাত্র। 

দ্রান্সে উপনদীর চলন বড়ই সুন্দর। খরস্রোতা এই নদীর প্রায় পুরো প্রবাহ জুড়েই ছোট ছোট ঝর্ণা তৈরী করেছে, ফলে জলের আওয়াজে মুখর চারদিক। তার সাথে পাইনবনের পাতার আওয়াজ আর গন্ধ। এরকম রাস্তায় যেতে থাকলে মনে হয় গন্তব্যে পৌঁছানোর সত্যি কি কোনো দরকার আছে! একথা আমার বহুবার মনে হয়েছে সেদিন। 

তবুও একসময় পৌঁছে গেলাম মন্ট্রিও লেক। চারদিকে পাহাড়ে ঘেরা সবুজ জলের লেক সত্যি চোখের আরাম দেয়। তবে পরে জানতে পারলাম এই লেক মোটেও হিমবাহ সৃষ্ট নয়, বরং মর্জিন শহরের উত্তরে যে নান্তে পর্বত (Nantaux mountain) আছে তার ধ্বস নেমে নদীর গতিপথ আটকে এই হ্রদের সৃষ্টি। লেকের একদিকে খাড়া রুক্ষ পর্বতের ঢাল আর অপর পাড়ে সবুজের মেলা। লেকের সীমারেখা যেন মিশে গেছে আর এক নদী উপত্যকাতে। নীল সবুজের মেলবন্ধন সব সময় সুন্দর, তবুও মনে হয় ভগবান পৃথিবীর এই কোণে একটু বেশিমাত্রায় পক্ষপাতিত্ব করেছেন। 

লেকের ধারে বসে থাকার সময় দেখলাম বেশকিছু ফরাসী মহিলা এবং বাচ্চা পাহাড়ের ঢাল থেকে কি সব তুলে মুখে দিচ্ছে। বহুক্ষণ তাকিয়ে থেকেও উদ্ধার করতে পারিনি খাদ্যবস্তুটি কি! রহস্য উদ্ধার করতে আরো দুদিন লেগেছিল। 

 

Lake Montriond

ফেরার পথেও সুন্দরী চঞ্চলা নদী সেদিন নিরাশ করেনি আমাদের। তবে হাবেভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে নদীর গল্প সব দেশে একই রকম, পাল্টায় শুধু মানুষের বর্ণনায়।

 

ফ্রেঞ্চ আল্পস ৪ : ঝুলে ঝুলে আল্পস ভ্রমণ

Les  Portes Du Soleil (লে পোর্তে দ্যু সোলেইয়া) শব্দটার সাথে পরিচয় হল মর্জিনে আসার পর। বাসের গায়ে থেকে রাস্তার ধার, ম্যাপ, tourist centre  সবেতেই দেখি ’লে পোর্তে দ্যু সোলেইয়া’ লেখা। খোঁজ নিয়ে জানলাম জেনিভা থেকে মঁ ব্লা অবধি ১৩টা শহর/ গ্রাম নিয়ে এবং ১৪টা উপত্যকা জুড়ে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম স্কি করার অঞ্চল গড়ে উঠেছে যার নাম লে পোর্তে দ্যু সোলেইয়া। এই প্রতিটা স্কি সেন্টার ফ্রি বাস সার্ভিস, রোপওয়ে (যা এখানে টেলিকেবিন নামে পরিচিত) এবং স্কি লিফ্ট দিয়ে যুক্ত। যাতে শীতকালে স্কি করতে আসা পর্যটক এবং extreme soprts enthusiast যারা, তাদের কোনো অসুবিধা না হয় পর্বতের শিখরে ওঠানামা করার। মোদ্দা কথা হল বেশি হাঁটাহাঁটি না করে ঝুলে ঝুলে আল্পস ঘোরা সম্ভব লে পোর্তে দ্যু সোলেইয়ার যে কোনো শহরে থাকলে। তাতে এর কেন্দ্রস্থল হল মর্জিন। এই শহরের প্রতিটা ঢালে একটা করে রোপওয়ে রয়েছে সাথে স্কি লিফ্ট। 

একটা রোপওয়ের ম্যাপ জোগাড় করে ঝুলে ঝুলে আভোরিয়া (Avoriaz) নামে শহরে যাব ঠিক করলাম। কি করে সেখানে পৌঁছালাম পরে আসছি। আগে এই শহরে বর্ণনা দিয়ে নিই। 

ফ্রেঞ্চ আল্পসের পূর্ব সীমানায় ২০০০ মিটার উচ্চতার এক পর্বতের মাথায় অবস্থিত আভোরিয়া মূলত স্কি সেন্টার, যদিও শহরটা দেখতে কল্প বিজ্ঞানের সিনেমার মত। মর্ডান এই শহরে কোনো বাসস্টান্ড খুঁজে না পেয়ে আমরা এক ফরাসী দম্পতিকে জিজ্ঞেস করলাম কোথা থেকে মর্জিন যাবার বাস পাওয়া যাবে। তারা আকাশ থেকে পরলো যেন! ’বাস? মানে ইঞ্জিনে চলা বাস?’ – এ কেমন প্রশ্ন! বাস তো ইঞ্জিনেই চলবে। যাই হোক তারা জানালো এ শহরে একমাত্র ঘোড়ায় টানা বাস চলে। রাস্তার ওপারে বাস স্টান্ড দেখিয়ে জানালেন প্রতি ১৫ মিনিটে আসে সেই বাস। 

এমন অভিজ্ঞতাও বাকি ছিল আমাদের জীবনে!!

এবার আসি আভোরিয়ার যাত্রাপথের গল্পে। হোটেল থেকে দেওয়া একটা রুট হল এই ঝুলে এবং হেঁটে আভোরিয়া পোঁছাবার পথ। এই শহরটা মূলত একটা ক্লিফের ওপরে। কাজেই সেখানে পোঁছাতে গেলে রোপেওয়েতে উঠতে হবেই। আমাদের হোটেল থেকে রোজ দেখি একটা রোপওয়েকে পাহাড়ের মাথায় লোক তুলতে, নাম তার সুপার মর্জিন টেলিকেবিন। টিকিট কাটতে গিয়ে দেখি বিশাল লাইন সাইকেলওয়ালাদের। সাইকেল নিয়ে নানা বয়সী লোক উঠছে রোপওয়েতে পাহাড়ের মাথায় মাউন্টেন বাইকিং করবে বলে। শীতকালে স্কি র যা জনপ্রিয়তা এই অঞ্চলে, গরমকালে সেই এক রকম জনপ্রিয় মাউন্টেন বাইক চালায় যারা তাদের কাছে। 

আমার জীবনে প্রথম রোপওয়ে চড়া। বেশ উত্তেজনা নিয়ে চেপে বসলাম। দ্রান্সে নদী পেরিয়ে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে উঠছে তো উঠছেই। পাহাড়ের মাথায় উঠেও দেখি থামেনা। আরো কিছুক্ষণ গিয়ে অন্য পাহাড়ের মাথায় পৌঁছে তবে থামলো। থামলো বলা ভুল, ধীরে হল। চলন্ত কেবিন থেকেই নামতে হচ্ছে সবাইকে। 

এখানথেকে মর্জিন শহরকে অত্যন্ত্য ছোট একটা জনপদ মনে হচ্ছে। এবার উঠতে হবে স্কি লিফ্টে। এই চলমান যানকে আগে দেখিনি। দেখলাম একটা করে বেঞ্চ উঠে যাচ্ছে তার ধরে ওপরে। আমি তো দেখে ভয়ে কাঁটা হয়ে গেলাম। দরজা, ঢাকা কিচ্ছু নেই, শুধু একটা বেঞ্চ। মুখ তোতো করে এগোলাম। এখানেও সাইকেল চালকদের লাইন। তারা ঐ চলন্ত বেঞ্চের পেছনে নিজেদের সাইকেলগুলো  কিভাবে যেন আটকে দিচ্ছে আর পরের বেঞ্চ এগিয়ে এলে ধুপ করে বসে পড়ে মিলিয়ে যাচ্ছে দূরে। আমাদের ডাক এল একসময়। চলন্ত বেঞ্চে কোনোরকমে বসলাম, পিঠের ব্যাগের কারণে পিঠ ঠেকিয়ে বসতেও পারলামনা। এই অবস্থায় চলতে থাকলো চলন্ত বেঞ্চ। আমরা দুজনে প্রমাদ গুনছি কতক্ষণে মাটিতে পড়বো। ওদিকে পেছন থেকে চিৎকার ’সেফটি রড সেফটি রড’। আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত মাথার ওপরে হাত দিয়ে একটা রড পেয়ে গায়ের জোরে টেনে নামলাম। সেটা আমাদের আটকে দিল সামনে থেকে। এ যাত্রায় রক্ষা পেলাম। শেষমেষ যেখানে পৌঁছালাম তার আশেপাশের সব চূড়াই এখান থেকে নীচে। 

এবার পায়ে হাঁটা শুরু। পায়ে হাঁটা যে কত নিরাপদ আজ তা বেশি করে বুঝলাম। রুট অনুযায়ী আমাদের সুইসজারল্যান্ডের ঢালে হাঁটতে হবে। বহুদূরের একটা জনবসতি চোখে পরলো, অপূর্ব তার স্থাপত্য। দেখে মনে হয় সুইস স্থাপত্যের উদাহরণ। আমাদের সাথে সাথে প্রচুর সাইকেল আরোহীও যাত্রা শুরু করলো কিন্তু মুহূর্তে মিলিয়ে গেল পাহাড়ের অপর ঢালে। জানতে পারলাম এখানে মাউন্টেন বাইকিং এর বিখ্যাত প্রতিযোগিতা সেপ্টেম্বরে, তার প্রাকটিস চলছে এখন। তাছাড়াও বহু ফরাসী দম্পতিকে দেখলাম ছোটছোট বাচ্চা নিয়ে এসে শেখাচ্ছে। আমরা বাঙালী মায়েরা এ ধরণের খেলাকে পাত্তাই দেবনা, উৎসাহ দেওয়া তো দূরের কথা।

অনেকটা নেমে আসার পর একটা ছোট চীজ ফার্ম পরলো। গরমে নাজেহাল পথিকদের কাছে এই ফার্মগুলো পরিত্রাতা। এখানে বসে স্থানীয় কোক খেলাম। বহুজাতিক সংস্থাকে বাতিল করে এরা নিজেরাই ঠান্ডা পানীয় তৈরী করেছে। সেটার স্বাদ অনেকটা সিরাপের মত হলেও গরমে তাই আরামের। 

চীজফার্ম থেকে বেরিয়ে একটা বিশাল স্কি করার ঢাল পেরিয়ে জঙ্গলে ঢুকতে হল। দেখে জঙ্গল মনে হলেও এই রাস্তা আসলে সংকীর্ণ ক্লিফের ওপর দিয়ে। তাই একটু দূরে দূরে সাবধান করে দেওয়া। আগেরদিন লেকের ধারে যে সুউচ্চ ক্লিফ দেখেছিলাম এই রাস্তা তার মাথা দিয়ে। রাস্তা বিপদ্জনক হলেও পাইনের পাতার আওয়াজ, সাথে পাখির ডাক মিশে দারুণ পরিবেশ তৈরী করেছে। সাথে গাছের ছায়া। একদিন রদ্দুরের তাপে এতই পুড়ছি যে ছায়া পেলেই চুম্বকের মত ধেয়ে যাচ্ছি তার দিকে। 

একসময় রুটম্যাপের নির্দেশ অনুযায়ী এল একটা গল্ফ খেলার মাঠ। এত উঁচুতেও কি সুন্দর প্রাকৃতিক গল্ফ কোর্স তৈরী হয়েছে। গল্ফ কোর্সের মাথার ওপর দিয়ে একটা স্কি লিফ্ট উঠে যাচ্ছে সমানে। গল্ফ মাঠ শেষ হতে আমাদের রুট নির্দেশও শেষ। অথচ আমরা কোথাও পৌঁছালামনা। আবারো সেই দ্বিধা! রাস্তায় চলার সাথে গন্তব্যের দ্বন্দ। 

Golf course

সরু পায়ে হাঁটা পথ ধরে প্রখর রোদের মধ্যে আরো চড়াইতে উঠলাম কিছুক্ষণ। শরীরের দম যখন নিঃশ্বেস প্রায় তখন চোখে পরলো সেই দূর থেকে দেখা জনবসতি। তাহলে এতক্ষণ আমরা এই বসতিতে পৌঁছাবার জন্যে হাঁটলাম যার নাম আভোরিয়া! 

এখানথেকে পাশের শিখরগুলোকে যেন হাতদিয়ে ছোঁয়া যায়। বেশ কিছুক্ষণ কাটিয়ে ঠিক করলাম পরপর ৩টে স্কি লিফ্ট করে নীচে নেমে তারপর সেই টেলিকেবিনে উঠবো। আভোরিয়ার চূড়ো থেকে পাশাপাশি দুটো স্কি লিফ্ট দুই পাহাড়ে নামছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় আমাদের তুলতে রাজী হলনা। তার কারণ এগুলো শুধুমাত্র ওঠার জন্যে, নামার জন্যে নয়। তখন ভয়ানক রাগ হলেও পরে মাথা ঠান্ডা করে ভেবে দেখেছি এগুলো মূলত স্কি করার সরঞ্জাম ওপরে তোলার জন্যে। আর একবার ওপরে উঠলে তারা তো স্কি করেই নীচে পৌঁছে যায়। 

এরপর ভাবলাম কিভাবে বাসে ফেরা যায়। তখনই ঐ ফরাসী দম্পতির সাথে দেখা। পরে আভোরিয়ার টুরিস্ট সেন্টার থেকে জানতে পারলাম আরো একটা টেলিকেবিন আছে যেটা পেতে গেলে আমাদের অন্য ক্লিফের ধারে যেতে হবে। যে শহর গোটাটাই ক্লিফের ওপর তার আবার অন্য ক্লিফ কোথায়! আবারো এক ফরাসী মহিলা বাঁচালেন আমাদের। তিনি ফরাসীতে কি যে নির্দেশ দিলেন আর মনিশ মাথা নেড়ে কি বুঝলো ভগবানই একমাত্র জানেন, তবুও আমরা খুঁজে পেলাম সেই রোপওয়ে, সেটা ছাড়ার ঠিক এক মিনিট আগে। এর নাম লে প্রোডে কেবলকার। এর আপদ হল চলার পরও কিছুতেই দরজা বন্ধ হয়না। ক্লিফ থেকে ঝাঁপ দেবার ঠিক আগের মুহূর্তে দুরুম করে দরজা বন্ধ হল অবশেষে, আর আমিও হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। যদিও পরের দশমিনিট দম বন্ধ করেই ছিলাম। 

এরপরও যদি কেউ ঝুলে ঝুলে আল্পস ভ্রমণ করতে চায়, তার দায় আমি নেবনা।

 

 

ফ্রেঞ্চ আল্পস ৫ : মঁ ব্লা দর্শন

মর্জিন শহরে পা রাখা অবধি ভেবে যাচ্ছি কিভাবে মঁ ব্লা দেখা যায়। আল্পসের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মঁ ব্লা (Mount Blanc) দক্ষিণ ফ্রেঞ্চ আল্পসের সীমানায় অবস্থিত একটি পর্বতশিখর আর আমরা আছি উত্তরে। লোকজনকে জিজ্ঞেস করে কোনো সুরাহা হলনা। ট্যুরিস্ট সেন্টার বললো মর্জিনের একটা পর্বত চূড়া প্লেনী থেকে দেখা যেতে পারে। মন সায় দিলনা তাতে, কারণ আমার ভূগোলের জ্ঞান বলছে এখান থেকে দেখতে পাওয়া অসম্ভব। ম্যাপ ঘাঁটাঘাঁটি করে একদিন মনিশকে বললাম মাউন্ট চেরী উঠব। সে বেচারী অবাক। কোথায় মাউন্ট চেরী আর কেনই বা! ওখান থেকে মঁব্লা দেখা যাবেই সাহস করে তাই বা বলি কি করে! 

 

যাই হোক শুধুমাত্র অনুমানের ওপর ভরসা করে একদিন বাসে চেপে চললাম কাছেই লে জেঁ (Les Gets) নামের শহরে। সেখান থেকে মাউন্ট চেরীর হাঁটা শুরু। অর্ধেক রাস্তা যেতেই দর্শন দিলেন তুষারে আবৃত মঁ ব্লা। চারদিকে আরো কয়েকটা শিখর নিয়ে যেন সিংহাসনে বিরাজ করছেন। রাস্তা যত ওপরে উঠেছে তত যেন কাছে চলে আসছে ছোটবেলার বই এ পড়া এই শিখর। শুধু নামেই কিছু জিনিষ কত আপন হতে পারে। আমি কোথাকার এক মেয়ে অথচ আল্পসের এই শিখর যেন আমার কতদিনের পরিচিত। 

মাউন্ট চেরীর উচ্চতা ২০০০ মিটারের কাছে। ওপরের অনেকটা রাস্তা খাড়া ridge এর ওপর দিয়ে হাঁটা। দুদিকে খাড়া ঢাল। নিজেদের আপদ বিপদের আশঙ্কা ভুলে মঁব্লার রূপে মুগ্ধ হয়ে হেঁটে চলেছি তখন। হঠাৎ খেয়াল করলাম এ অঞ্চলটা সুইস ডিপার্টমেন্টের অধীনে। সত্যি কথা বলতে কি, একদিনে কখন যে ফ্রান্স আর কখন যে সুইজারল্যান্ডের মাটিতে হাঁটছি তার হিসেব আমার এই ছোট মাথায় রাখা সম্ভব নয়। একসময় চেরীর শিখরে পৌঁছোলাম। এখান থেকে ফ্রেঞ্চ আল্পসের উত্তর এবং দক্ষিণের পর্বতশ্রেণীর ভাগ পরিষ্কার দেখা যায়। দূরে বেশ কিছু শৃঙ্গ থেকে হিমবাহের নেমে আসার চিহ্নও বেশ স্পষ্ট। মঁব্লার সামনে একটা টেবিলের মত পর্বত রয়েছে যার নাম Rochersdes Fiz. ভঙ্গিল পর্বতে এরকম ভূমিরূপ হতে পারে তা জানতাম না। তবে কতটুকুই বা জ্ঞানের পরিধি আমার! মাউন্ট চেরীর ম্যাপ থেকে বাকি পর্বত শিখরগুলোর নাম জানতে পারলাম। Mt Maudit, Aiguille Midi, Grandes Jorasses এদের সবেরই উচ্চতা ৪০০০ মিটারের ওপরে। আল্পসের এই শিখরশ্রেণীর অবস্থিতি ফ্রান্স এবং ইতালীর সীমানায়। মাউন্ট চেরী থেকে তাই তিন দেশের (ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড ও ইতালী) আল্পসের রূপ সবথেকে ভালো দেখতে পেলাম। অথচ এখানে পর্যটকের ভীড় নেই, বিজ্ঞাপন নেই স্থান মাহাত্ম্যের। 

সেদিন মাউন্ট চেরীর ঢালে বসে মঁব্লার সৌন্দর্য্য দেখতে দেখতে ভাবছিলাম, কি সুন্দর ভাবে ইউরোপীয়ান দেশগুলো নিজেদের মধ্যে সমঝোতায় এসেছে এবং প্রকৃতির মধ্যে রাজনৈতিক কাঁটাতারের বেড়া লাগায়নি। তাই আমরা নির্ভয়ে এক দেশ থেকে অন্য দেশে গিয়ে নিজেদের ইচ্ছে মত আল্পসে উপভোগ করতে পারলাম। 

ফেরার পথে আবারো চোখে পরলো মানুষজন পাহাড়ের ঢাল থেকে তুলে কি খাচ্ছে। আমি বুনো ফলের ভক্ত এমনিতেই তাই এরকম দেখে স্থির থাকতে পারিনা। কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করে এবং ফরাসী বক্তব্যের মর্মদ্ধার করে বুঝলাম এগুলো এক ধরনের লাল জঙলী বেরী। পাহাড়ের গায়ে লেগে থাকা গাছের উচ্চতা বড়জোর ৬ সেন্টিমিটার, আর তার গায়ে ঝুলে আছে ছোট্ট ছোট্ট লাল রঙের বেরীফল। অপূর্ব তার স্বাদ। আল্পসে এসে foraging করতে পারবো কে জানত! বেশকিছু ফল খেয়ে, এক পান্না রাঙা লেক দেখে ফিরে এলাম সেদিন।

এবারের ভ্রমণে আল্পস তার রূপে গুণে মুগ্ধ করেছে, প্রাপ্তির ঝুলি কানায় কানায় পরিপূর্ণ আমাদের।   

Facebook Comments

Related posts

Leave a Comment