অনিমিখ পাত্র

দাভিদে কোর্তেসে’র কবিতা

ইংরাজি ভাষান্তরঃ পিনা পিক্কোলো

বাংলা অনুবাদঃ অনিমিখ পাত্র

 

কবি পরিচিতিঃ  দাভিদে কোর্তেসে’র জন্ম ১৯৭৪ সালে সিসিলি’র বেলাভূমি বরাবর লিপারি দ্বীপে। ২০০৪ থেকে তিনি রোমে বাস করছেন। প্রথম কবিতা সঙ্কলন ES প্রকাশিত হয় ১৯৯৮-এ। পরবর্তীকালে প্রকাশিত হয়েছে   “Babylon Guest House”, “Storie del bimbo ciliegia”, “ANUDA”, “OSSARIO”, “MADREPERLA”, “Lettere da Eldorado” ইত্যাদি আরও সঙ্কলন। কবিতার জন্য ২০১৫ তে তিনি গুরুত্বপূর্ণ Premio Internazionale “Don Luigi Di Liegro” পুরস্কারে ভূষিত হন। তিনি লিখেছেন   “Tattoo Motel” নামে একটি উপন্যাস। প্রকাশিত হয়েছে দুটি ছোটো গল্পের সঙ্কলন ও আরও অন্যান্য গদ্য। 

দাভিদের কবিতায় ছোটো ছোটো দৃশ্যের আঁচড়ে তার কবিমনের সংবেদনটি প্রাণময় হয়ে ধরা দেয়। সামান্য কথাই অসামান্য হয়ে ওঠে উচ্চারণের গভীরতায়। উপমা ও প্রতীকে ধনী তার পঙক্তিগুলি খোলা হাওয়ার আরাম এনে দেয়।            

 

পিনা পিক্কোলো গুরুত্বপূর্ণ দ্বিভাষিক (ইতালিয়ান ও ইংরাজি) কবি, অনুবাদক এবং একজন সক্রিয় সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মী। তিনি ‘দ্য ড্রিমিং মেশিন’ ও ‘লা মাশিনা সগনান্তে’ নামক দুটি যমজ সাহিত্যজার্নালের সম্পাদক।

 

 

 

 

 

 

 

**

আমি একজন অশান্ত মানুষ।
আমার সম্বন্ধে
আর কিচ্ছু জানবার নেই।
এক সোনালি গর্জন 
ভেতরে ভেতরে কাঁপে। 
আমার ভেতরে জ্বলজ্বল করে  
অন্ধকারের বয়ঃসন্ধিকাল    

 

**

তোমার দৃষ্টি
আমাকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। 
একটা নীলের কথা বলে
যে আকাশের পর আকাশ
ছিল আকাশী নীল
আর সাদা মেঘ
নীল হয়ে ফিরত আমার কাছে। 
আর আমার কালো সোয়ালোপাখি চোখ
তোমার ভেতরে ওড়ে।   

 

**

আমি যখন এখানে
আসলে অনেক দূরে আমি।
সত্যিই খুব ছোট্ট 
অথচ তবুও অনতিক্রম্য 
আমার থেকে দূরত্ব আমার।
আমার উড়বার আকাশটাকে ক্ষুধার্ত করে তুলবার থেকে
সবসময় এক পা দূরে দাঁড়িয়ে আছি আমি।

 

**

“দ্যাখো কত তরুণ গাছ
সারা দিনমান বাতাস খেয়ে মাতাল”
ঘৃণাভরে চেঁচিয়ে উঠল 
সেই কংক্রিটের চিমনিগুলো।    

**
আমারই একটা মুখ অন্য কোথাও
জল থেকে উঠে এসে
একটা দ্বীপ হয়ে যায়
যেন হিমশৈলের চূড়াটুকু 
লুকিয়ে আছে গহ্বরের ভিতর

অন্য কোথাও এক রহস্যময় দ্বীপ
–আমার সেই মুখটাই

উঠে এসেছে
অন্য এক সময়কালের ভেতরে। 

 

**

কয়েক শতাব্দী পূর্বে,
লিসবন-এর এক তরুণ নাবিকের বুকে 
ট্যাটু করা ছিল আমার হাত

(তাতে ধরা ছিল তরবারির হাতল)

এইমাত্র যে চুমু তুমি আর আমি বিনিময় করলাম
বললাম “তুমি আমার সর্বনাশ”
“আমার সর্বনাশ তুমি’
তা ঘটে গেছে বাগদাদ থেকে আসা একটা বুড়ো লোকের গানে

১৭২৩ সালে 
ড্রেসডেনে এক মুখোশনৃত্যের পার্টিতে
কেউ একজন ইতিমধ্যেই আমার সঙ্গে দেখা করে ফেলেছে 

 

 

**

আমাকে বলো, হে বসুন্ধরা
এই ফলের কাঁচা আলোয়
যা পোকার সবুজ পিঠের ওপর এসে পড়েছে
আমার কাছে শপথ করো যে কক্ষণও মরবে না তুমি।
বাঘের সোনালি চোখে তোমার গান 
ছেলেবেলার সমুদ্রের প্রাচীন মুখাবয়বে
আকাশের গোপন পৃষ্ঠায়
যাকে উল্টে দিয়েছে কালো একটা ডানা।   
কথা দাও, হে পৃথিবী, যে
ফুটে উঠবে বীজ
শপথ করো মরবে না তুমি।
যেন তুমি শেষতম মৌমাছি –
এইভাবে কিছুতেই তোমাকে দেখতে পারবো না আমি।          

 

 

**

 

যে মাটি তার ক্ষত মেলে ধরে আলোয় 
আমি তার কাছে ক্ষমা শিখতে চাই
সবচেয়ে ছোট্ট ফুলটির কাছে যা যা এসে পৌঁছয়
সেসব কোনোকিছুকেই আমি যেন ভয় না পাই।
আমি সেই আকাশের সঙ্গে এক মৃদু সাদৃশ্য চাই 
যে সম্ভব করে বাজপাখির ওড়া আর সেই মাছি
যে ধরে রাখে প্রজাপতির হাজার বছরের রহস্য। 
আমি চাই বৃষ্টি হয়ে যেতে আর রামধনু বানাতে। 
আমি চাই বাতাস আমাকে শেখাক
কীভাবে ক্ষতি না করেই মানুষের মাঝে বয়ে যেতে হয়
যেমনভাবে সে আমন্ড গাছের ডালপালার মাঝে বয়ে যায়।
আমি যেন মানুষের চোখের দিকে সরাসরি তাকাতে পারি
আর যাদের ভয় পাই তাদের চোখের তারায় যেন দেখি
ভালোবাসা দেবতার মতো হেঁটে যাচ্ছে আমার ভয়ের ওপর দিয়ে।
আমি যেন রাতের অন্ধকারেও হাসতে পারি 
আর কানের দুলের মতো 
মৃত্যুর কান থেকে ঝুলিয়ে দিতে পারি চেরিফল।  

Facebook Comments

Related posts

Leave a Comment