বিকাশ গণ চৌধুরী

বাশোর কবিতা

মাৎসুও বাশো (১৬৪৪ – ১৬৯৪) ছিলেন জাপানের সুবিখ্যাত কবি। তাঁকে ‘হাইকু’ ফর্মের শ্রেষ্ঠ উদগাতা বলে চিহ্নিত করা হয়। খুব অল্প বয়সেই কবিতা লিখতে শুরু করেন তিনি। তৎকালীন এডো, বর্তমানের টোকিও শহরের বিদ্যাচর্চার পরিমণ্ডলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর খ্যাতি দ্রুত গোটা জাপান জুড়ে। শিক্ষকতা করেই চালিয়ে নিচ্ছিলেন তিনি, কিন্তু তারপর সাহিত্যসমাজের শহুরে সামাজিক বৃত্তকে পরিহার করে সারা দেশ ঘুরে বেড়াতে ব্রতী হন। সুদূর উত্তরাঞ্চলের বন্য পরিবেশ থেকে তিনি তাঁর লেখার অনুপ্রেরণা সংগ্রহ করতেন। তাঁর কবিতা তাঁরই চারপাশের জগতের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা সঞ্জাত, অনেকসময়ই সহজ কয়েকটি শব্দে যা ধরে ফেলে কোনো দৃশ্যের মর্মকথা।

অনুবাদঃ বিকাশ গণ চৌধুরী।

বা শো র ক বি তা


আমার নতুন জামায়
আজ সকালে ––
নতুন কেউ

 


মাঠ, পাহাড়
হিবাকুর, আর
ন’দিনের মাথায় –– বসন্ত

 


বছরের পর বছর
বাঁদরের মুখোশ
বাঁদরকে সুখী রাখে

 


নববর্ষ –– বাশো –– তোশেইয়ের
সাধনকুটির
হাইকুর গুনগুন

 


নতুন বছর ––
শরতের শেষ থেকে
জন্ম দেবার ইচ্ছা

 


বসন্ত এল ––
নতুন বছরের খোলে ঠাসা
গত বছরের পাঁচ পালি ধান

 


ধাবমান খুরে উড়ছে
পুরাণকথার বালি –– দিব্য এক শুভ্রতা
ঘোড়ারা নতুন বছরকে স্বাগত জানাচ্ছে

 


বসন্তের রাত
চেরী ফোটা
সকাল

 


খড়ের জামা গায়ে
বসন্তের আগমনে
সন্তরা একে অপরকে শুভেচ্ছা জানাল

 

১০
দেশ ছাড়ল বসন্ত
পাখিদের বেদনার ডাক
মাছেদের কাঁপা চোখে কান্না

 

১১
চেরি-বিতানের জন্য
জমিতে নিড়ানি
ঝড়ের প্রতিধ্বনি

 

১২
শরতের বৃষ্টি
গাছগাছালির তলায়
স্ফটিকের ধারা

 

১৩
স্নেহশূন্য অন্ধকারে
ভিক্ষুদের ভারী পায়ের শব্দ
এঁকে দিচ্ছে মিষ্টি জল

 

১৪
শরতের চাঁদ ––
পুষ্পের আনন
কুয়াশায়

 

১৫
শরতের বৃষ্টি ––
আমার মতো চির অলসকেও
জাগিয়ে তুলছে

 

১৬
ভাঁটার টান ––
কাদায় ডুবে আছে
উইলোরা

 

১৭
ঘুলঘুলিতে চড়াই ––
ঘরের চালে ইঁদুর
স্বর্গীয় সংগীত

 

১৮
নিকষ রাত
তার বাসার জন্য
টিট্টিভ পাখিটা কাঁদছে

 

১৯
ভরত পাখির গান ছাপিয়ে
নো-নাচের
রঙিন পাখিদের হল্লা

 

২০
কী ভয়ানক ––
সাপখেকো
তিতিরের ডাক

 

২১
ভরত পাখির উড়ানের থেকেও
অনেক উঁচুতে উড়ছে
হোজো গিরিবর্ত্ম

 

২২
উঠোনে শুকোতে দেওয়া
চালের বড়িতে
বুলবুলিও চোখ

 

 

২৩
বিড়াল ডেকে উঠল
মিয়াওঁ, শোবার ঘর
স্পর্শ করল জ্যোৎস্না

 

২৪
ঝোপে
ফুটে থাকা প্লামেদের
ভুলো না

Facebook Comments

Related posts

Leave a Comment