প্রদীপ্ত রায়

প্রদীপ্ত রায়ের কবিতাগুচ্ছ

 

কবিতা

(১)
বিরতিতে নিজেকে গুটিয়ে নেয় ঘোলা জলের জিওল,
অল্প অক্সিজেন মেনে নেয়।
ফিরনি স্কিনে মোলায়েম রাখে রোখ,নোনা পানি। পিতল ইজ্জত আর জোড়া বুকে সেজে ওঠে অবুঝমারের ঈশ্বর আবিষ্কার করা মেয়ে।
সঠিক পরিমাপে জান আর থোপা জলে ধরা নরম কছুয়া… এই তো হেঁসেল।
বেলেল্লার প্যাস্টেল শেডের মুড, জরিবুটি, চামচে গুলি নয় কলিজা ব্যালান্স।
তা হোক।
বেসিনে যারা পুরুষাঙ্গ ধোয় তারাও তো অলৌকিক ঘটনার পরে পারলৌকিক চিতল কিনতে ভালোবাসে।

 

(২)
বিজ্ঞাপনদাতা আয়োজিত অনুষ্ঠান এইমাত্র শেষ হোলো,
শূন্য মেগাহার্টজ-এ আপনারা শুনবেন নৈঃশব্দ্য।
মৃত মানুষের স্বপ্ন দেখতে ভিখারীকে বারণ করেছে অঘোরী।
ছেঁড়া ঘুমে মাখানো সিঁদুর আর আলবেলা দেখবে সে।
নদীর ওপারে সবাই, এপারে কাঁথা, কম্বল আর প্লাস্টিকের মাদুরে রাত বেছায় ঢুলুয়া  ভিখমাঙ্গা।
জড়িয়ে যাওয়া কেশরের গন্ধ আর যে ভাষায় কথা বলতেন চাঁদ বণিক ও মনসা, তার ছত্রে ছত্রে ঔপনিবেশিকতার ঘট।
ক্ষিদের ভয়টা কাটিয়ে দেওয়াই লক্ষ্য হয়ে ওঠে যখন, যখন রাস্তা পেরোয় ধীরে সুস্থে মাথা উঁচু করা ভুখ;
তখন মাগরিবের নমাজ অদা হয়।
ক্ষিদের চোখের পাতার ছায়ায় বালিশ পাতে ভিখারী,
ভাঁজ করে নেয় নিজেকে।

 

(৩)
লোকমুখে দেখেছি পাখি উড়ে যায়।
পাখি উড়ে যায়, সুপারসনিক।
গোলা পায়রাও অচেনা লাগে যখন
কিংবদন্তী উঠোনে দানা দেয় চিলাপাতার কবি আর নরহরি বামন।
আমরা সরে আসি জলের দিকে,
জল আমাদের দেখে কাছে আসে;
বৈঠকে অলীক হয় পাইনের জঙ্গল।
অনেক কিলোমিটার হাঁটবে বলে যে বেরিয়েছে তার জুতোর তলায় শবসায়রের গান।
কানে কানে জনাব ডেকেছি যেই,
নিজেকে ছড়িয়ে দিয়েছে গেছো জিন।
বোতল ধরেছে, আবদার রেখেছে,
বিদেশি খেজুর আর তাবায়েফী সুর।
ক্যামেরায় ফিল্টার ধরে
সিদ্ধান্ত করেছি আমরা জলজ সেদিন-
স্বাস্থ্য নয়, শরীর নিয়ে কথা বলবো শুধু।

 

(৪)
কানামাছি খেলে তাঁবুতে ফেরে লেলকু,
চোখে নাজুক সওয়ারি।
সাদা স্তনের মত পাহাড়ের দিকে মুখ করা বেঞ্চ,
মঞ্চে কুলীন আর কৈবর্ত।
ফুঁক দিয়ে টিয়াপাখি উড়িয়েছে,
কাবিল হয়েছে মন-টানা বিকেলে।
ঠোঁটের কাছে ছুঁতে চেয়েছে খুঁত
নাভির নীচের অভিমানী জলে।
কোনো কোনো দিন তাঁবুতে ফেরেনা লেলকু।
দুটো হাত,দুটো পা পাঠিয়ে দেয়।
পা পা ধোয়,হাত ভাত মাখায়।
সরু গলির মুখে অশরীরী দাঁড়িয়ে থাকে লেলকু,
পরিব্রাজককে প্রেমিকার শ্বশুরবাড়ি চিনিয়ে দেয়।

 

(৫)
জেনো সোশাল মিডিয়া বিচ্ছিন্ন,
তোমার টলের কাছে আজন্ম লালিত শৈশব আসলে চিংগারি।
তুমি বাদাম গাছের ডাল ভাঙা ডোম।
খুঁচিয়ে তোলো মেরা প্যায়ার শালিমার আগ।
মানুষের গায়ে হাত লাগলে যেভাবে ছুঁচিয়ে নাও,
কুমারীর নখে ফু দিলে যে গোদার-উল্লাস;
সে আসলে তোমার নয়,হারামের।
ফস্টানি পৌষে গুড়জালের গন্ধে
পোয়াতি হয় মাথা,
মাথা ঘুম গয়া তো আমিই বিশ্বামিত্র,
তোমার নিপল তর্জনী।
অভিশাপ দেওয়ার আগেই তো দেখা-
মানুষ ভিখারী আর ঈশ্বরকে একই ভাবে  একহাতে প্রনাম করে।

 

(৬)
সবই তো দোরগোরায় রাখা-পুঁজিলাথ,ব্রাহীন আলো,গরম হাওয়ার মতন দ্রুত স্খলন।সান্দ্রাবস্থায় খুঁড়ে ফেলো শরীর,জমিনে তিন তরিকা তাস।
সান্ত্বনা শিখেছে গরীব।কপালের গায়ে হাত বুলিয়ে বলেছে- এই হওয়ার ছিল।
সিস্টেমে পড়ে গেলে সবাই কায়দা দেখায়,ডিপ্রেশন মাখায় ভাত।
কি হোলো তোমার?
ছোটো ছেলা হলে নাকি!
আমি টুক করে ডুব দিয়ে এসে আবার নরম করে কথার গায়ে কথা দিয়ে বানাবো আড়াই-ব্যঞ্জন।
অপেক্ষা কোরো- যতক্ষন না গলা ধরে আসে,ওষুধ ফুরিয়ে যায়,বরফ দেখানোর কথা তামিল করে খোদাবক্স।
কত কথা দাও না,মুখ ঘুরিয়ে নাও।
আমি পুঁটলি থেকে বার করে আনি কবেকার দেওয়া প্রমিস আর অসবর্ণ সংলাপ।
এতটা তুমি ভাবো নি!
এই যে কম্বলের ভিতর অন্য গন্ধ নিয়ে শহর ছেড়ে যেতে হবে তোমায়,
স্লিপার ক্লাসে উঠে আসবে দুপুরের ডাক;
গালে শ্বদন্ত ফসিল।

 

(৭)
পাতালে ভৈরব,হৃদিতে অর্কেষ্ট্রা,
হস্তমৈথুন সেরে যতবারই উঠেছি-
সামনে লাইফবয়।
কেমন খেলিয়ে তুলেছো বলো!
আঠা আঠা আঁশ,
চরপাটা ধী মেনটেইনড্  জালে।
ফেনা-দরদি শিশুও কোঁকায় লোকেদের লম্ফ-বিলাসে।
শুনেছি কেতাবি লোক খুব,
আড়ালে মৌজ,মস্তি করে;
হুড়কো দাও,আখাম্বা।
শালা,সোজা হয়ে দাঁড়াতে না পারে।
আমার তো হয়নি ওরম!
চোখ ভেজা,জলতল এক করা ন্যাকামি।
খালি একটু আধটু খসখস,
চুলকে নিলে বিন্দাস বিকেল।
এখানে শানিত বরফ,উঠে গেলে নিমরাজি মেঘ;
কয়ামত এ যা থাকবে তাই
মিরাকেল এ টেক্কা নামাবোই।

 

(৮)
সব পথ সোজা নয়,জানে মোবারক।
কৌতুহলী চোখ জানে টিভি-অন্ধ লোক বারি বারি কুড়িয়ে রাখে ভাঙা নখ।
ত্যাড়াব্যাড়া রাস্তা এসে দাঁড়ায় লোকটার সামনে,স্যাটা ভাঙা দৌড় যেখানে শেষ হয় সেখানে লখীন্দরের নোংরা চুলে বেহুলার আঙুল চলে সারারাত।
রাত সারা হয় না কারো কারো,নৌকায় আগুন‌ জ্বালায় তারা,
যে নদীর বুক বালি জমে ভারী হয়ে আসে,তারা বেলচা চালায় তাতে।
আমাদের বেহায়া আঙুল বোঝে মন ছুঁতে গেলে আঙুলের ডগা ছুলে নিতে হয়,
ছোলার কল ঠুকে নিলে আঙুলের বাবড়ি বেরোয়।
থোড়া হি বোঝে মত্তমাদী-যাকে সে বুক দেয়,ছুঁয়ে দেয় যার নর-কমন্ডলু,
সে তার মরদ নয়,নষ্ট হওয়া  আদিম গর্ভ।

 

(৯)
দিল্-এ রুস্তম, পান-এ বেগমবাহার;
এভাবে জল ছোঁন রাণী মৌমাছি আর তার                                                                পালোয়ান।
হোলি খেলা চাঁদ, জমি ছেড়ে বাড়ি করা জন,
ওভাবে রাস্তা পেরোন, বারে বারে অপদস্ত হোন।
নিগম-এ লোক চাই, পেটে রাখা পান্তা-হাত;
জল শুধু দূরে চলে যেতে চাওয়া ভালো থাকা-
হাত গলে হাপিস বালির সাগর।
রংবাজি করে বাড়ি ফেরা বাল-ভ্রাম্যমান,
হাঁপিয়ে ওঠা গাছ, হাতে পায়ে গত্তি,শূন্যস্থানে                                                                  বসান।
ঘেমে ওঠে নাও, এ জন্ম নাও।
পাল্টে দাও বালিশের ঢাকনা বা ঐ জাতীয়।
চৈতে খোঁড়া বন্দর, জবাবি ভাষনে নাভি-জল পেয়েছো রক্তিম। এরকমই চেয়েছিল নাবিক
আর তার অনুগত কম্পাস বাহিনী।
আঁশটে গন্ধে ঢাকা, মাছ নয়, ডলফিনের পা।
আমিতো বুক খুঁড়ি, চিত করে শোয়ানো যায় না?
বিল- এ দিল দরিয়া মাছ ও দানা পানি
কসুর মেনো না খোদাবৎ,
বেকসুর খালাস দিয়েছেন উনি।
কপ-কপ কাতলে দিয়েছেন তরিবৎ জল ও                                                                         ফেনা।
বিফলে যায়না সোনা এযাবৎ চেয়ার-ছলনা।
রাতে গোলাপি রিংটোন, কালো পাঁক-পাঁক জল। সুদে নেবো আঠারো ঊনিশ, দীর্ঘ রতি, অবিমিশ্র                                           আর না-পারা সকল।
দিনে স্বপ্ন দেখা দোজখের নানহা,
কিছুটা হাতলে টাঙানো, কিছুটা ধনধান্যে রাখা।
আমরা তো নাবাল সেয়ানা,কোনোটা যত্নে                                                                     করিনি।
ভিখারির যোনি জলে মেগে আনা পদ্মরাগ মণি।

 

(১০)
স্থির নয় আমাদের যাতায়াত,
চোরাচালানের দিনে কল টাইমের নির্ভুল উচ্চারণ।
ঢেমনি সুজাতা আজ চরু নয় অপরাহ্ন নিয়ে                                                যাবে কাঙাল-জন-এ।তোমারই তো বুকের স্টেশনে থেমে আসবে ফাস্ট-প্যাসেজ্ঞার, নেমে আসবে দেড় হাতি                                                                         বামন।
গলতায় পা দিয়ে আমাকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেন সোনাল রমনা।
এই তো পহলিবার শেষ আগুন ট্রাম লাইনে শুতে শুতে পুছে নেয়-
-“কদ্দুর যাবেন বাবু?”
বাড়ি ফেরার রাস্তায় কার্নিভাল শবাসীন।
-“আসুন আপনাকে ব্যাঙ্কের লকার ঘোরাতে নিয়ে যাই,কড়কড়ে কাগজের গন্ধ আর আমোদগেঁড়ে স্বভাব পাবেন”।
আমি তো সঞ্চয়ে আগুন রেখেছি আর ‘কী রেখে যাবো’এই আসান সওয়াল।
জবার ওত বড়ো পাপড়ি মুখে করে সেলফি তুললে পাগল ভাববে আমায়!
Facebook Comments

Related posts

Leave a Comment