জাগরী বন্দ্যোপাধ্যায়

লিন্টেল তাক ও বাঙ্গালির কোক-শাস্ত্র

এক নম্বরঃ গাছের সঙ্গে দূরে যাবার গল্প বলার সময় ভারি শরীরের নারীদের দাঁতে দাঁত লেগে তারা ফিট পড়ে আর বালিকাদের পিঠে ধড়ফড় করতে থাকে ডানা । এই টুকু মনে রাখলেই চলবে । ওহ হ্যাঁ আর দু নম্বর হলঃ তিনটে কাঠবেড়ালির মধ্যে একজন থাকবেই যে কিনা অসাধারণ সাহসী আর কৌতূহলী । একটু বেশীই ।

 
‘৭০ সাল নাগাদ কোলকাতার পাকা বাড়িগুলোর লিন্টেল বরাবর ঘরের ভেতর বাগে যে বাঙ্কের মত তাকগুলো বানানো হত, আর তাতে তুলে রাখা হত শীতকালীন ওম-শোম, ঠাকুরের নকুলদানার কাচের হরলিক্স শিশি, আর কিছু চেতন-অচেতন বিস্কুট ও মোয়াপাতি , সেই তাকগুলোতেই একটু বেশি সাহসী কাঠবেড়ালিটি বারান্দার একপাল্লার দরজা খোলা পেলে তারতোর বেয়ে উঠে যেত সেই বাগে । তাকগুলির কোন ব্যক্তিগত নিরাপত্তার বালাই ছিলোনা। কোন বিশেষ সম্ভ্রম বোধও না । ফ্যাশফ্যাশে মনখারাপ রঙা পুরানা শাড়ি কুঁচি দিয়ে তাদেরকে নেঙটি পরানো হত , তার উপরদিকে আধ হাত তো নিচে দেড় বিত্তা ফাঁক । ভাবলে আশ্চর্য লাগে এই কথা , যে এই সকল ঢাকনি শাড়িগুলো কেনা হত কবে ? কিছু বটগাছ থাকে না , যাদের দেখেই মনে হয় এর কোনদিন ছোটবেলাটা ছিলই না ! ঠিক যেমন পাখিটি হাগিয়াছিল , বীজটি পড়িয়াছিল , আর দুটি পাতা একটি কুঁড়ির সঙ্গে সঙ্গেই বেরিয়ে এসেছিল মোটা মোটা ঝুরি,আর কাশতে কাশতে গয়ের তুলতে তুলতে সদ্যজাত গাছটি কার্নিশ কে বলেছিল , “আর ভায়া …জীবন…” । মানুষেরও হয় জন্মেই ওরম ঝুরি-নামা বোধশোধ । মানুষেরও হয়। এইসকল শাড়িসমুহের তেমনি অবস্থা । তারা যেন কোনদিন নতুন নতুন গন্ধ নিয়ে দোকানে দোলেনি , আর সেখান থেকে কেউ তাদের , ” বউদি একদম খাঁটি ভয়েল , হাতে নিয়ে দ্যাখেন একবার ! কেনা দাম ! ” ইত্যাদি বলেনি , তাদেরকে যেন কোন দোকানি গছায়নি কোন খদ্দেরকে , কোন ডবকা মাগির গায়েও যেন তারা ওঠেনি কোনদিন । ওই স্যাতলানো , পুরোনো তেঁতুলের মত ভুষো গন্ধ-ওয়ালা শাড়ির ঝোলা ঢাকনিটি বোনা হয়েছিল , এই বাড়ি , এই তাক ঢালাই করার অনেক আগে । কোণে রাখা দাদুর চৌরপঞ্চাশিকা , আর নিত্যকর্মপদ্ধতির সঙ্গে ছাপা হয়েছিলো এই শাড়ির কিছুটা , আবার ছোড়দিমনির হলদে হয়ে যাওয়া যে ছবিটায় ছোড়দিমনি কালো তিনকোনা টুপি পরে, পাশটাশ করে হাতে ডাঙ্গশের মত রোল করা কাগচ নিয়ে ছবি তোলালো , সেইদিন বোনা হয়েছিলো এই শাড়ির আরও খানিকটা। ধরুন পেরায় সাড়ে ২৩ শতাংশ মত। আবার জেটি-মনি যেদিন নতুন বউ এর গন্ধওয়ালা মেরুন তাঁত পরে টলমল পায়ে তেপায়ায় উঠে তুলে রাখছিল নিজের বাপের বাড়ি থেকে নিয়ে আসা গোপাল রঞ্জন মিত্র মজুমদার এর “ভারতের দর্শন কথা , পাশ কোর্স “, ও বাকি বি এ পাশ করার সময়ের বইগুলো এবং ইত্যাদি। আর সেই তুলে তুলে রাখা… তুলে তুলে রাখা আধবোজা চোখে ভীষণ তৃপ্তি নিয়ে দেখছিল জাল জাল গেঞ্জি পরা জেটুমনি , আর বেগুনভাজা মুড়ে নিচ্ছিল লুচি দিয়ে , আর লুচির তেল লেগে যাচ্ছিল হাতে , আর সেই তেল তেল বেগুন-বিচি হাত কষে মুছে দিতে ইচ্ছে করছিলো জেটি-মনির পেটের উশুমকুশুম মেদে , চুলোয় যাক গোপাল-রঞ্জন মিত্র মজুমদার , … আর নতুন জেটি-মনি আরেকটু বেশি সময় নিয়ে নিয়ে পুস্তক তুলছিলেন ঢালাই তাকে । কারণ তেনার পেটে যুগপৎ এসে লাগছিলো নতুন বরের চোখ , তেল তেল ভাব , আর অঘ্রানের শীত । সেইদিন , সেইদিন বোনা হয়েছিল ওই শাড়ি ঢাকনির বাকি ৩৩% । রমণসম্ভবা বাকি ৩৩% । এরম আরও কত আছে ।

কাঠবেড়ালির এসকল জানার কথা লয়কো , যে একদিন এ আকালের দেশে পাওয়া যেতো ভয়েল নামের এক মহামহিমময় শটিকা । বিন্নি ভয়েল , সিয়ারাম ভয়েল, বম্বে ডাইং ভয়েল নাম নিয়ে তারা নানা ছবি বার করতো মনোরমা , অমৃতবাজার পত্রিকায় । সেই বিজ্ঞাপনের পাতায় থাকতে থাকতেই তাদেরকে কাচা ধোওয়া শুরু হত —বারবার বারবার । অনতিবিলম্বে তাদের গায়ে গুটি গুটি সুতোর দলা উঠে যেতো , সাক্ষাৎ নোংরা ময়লার অবতার রূপে আঁশ ছিটিয়ে ছিটিয়ে তারা সেঁটে থাকতো শাড়ির সর্বাঙ্গে । বিশ্বাস করা যাক আর নাই যাক এ সমস্তই কিন্তু ঘটতো ওই , ওই বিজ্ঞাপনের পাতায় থাকাকালীন-ই । আর পরবর্তী বউঝি রা ” ভয়েল গায়ে তুলতে ঘেন্না করে বাবা , আমায় যা দেবে দাও, কিন্তু ওই জিনিস লাখ টাকা দিলেও…” জাতীয় বাণী দিতে থাকেন কমন কুয়ো-পাড়ে , এ ওকে বলেন , “ঢঙ্গিস্য ঢঙ্গী! ” সেকালে এইট অব্দি সমস্কেত্য ছিলো কিনা , তাই “সম্পর্কে ষষ্ঠী” । আর এই সকল গোলতানির মধ্যে সঞ্চরিনি লতা দের মা -কাকিমাশাশুড়িরা এসে পড়তেন, খুঁটে খুঁটে বিব্লিংগুলি তুলতে তুলতে বলতেন, ” এট্টু যদ্ন করে পল্লেই আর দুটো দিন বেশী পরা যেতো খন ” । কিন্তু ভয়েল শাড়ির সুতো গোল্লা গুলির আবির্ভাব ও কুটকুটানি অমোঘ, দৃশ্যতও বড় খারাপ । এই সময়গুলিতেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হত উপরি-উল্লিখিত শাড়ি ঢাকনিটির বাকি অংশ’র । বয়ন বুননে তা, সময় তো লাগবেই !

এরই মধ্যে দলের ভিতর যেটি সবচেয়ে বোকা , সেই কাঠবিড়ালনিটির আরেকবার অবাঞ্ছিত গর্ভ হয়ে যায়। দলের চটপটে জন নিয়মিত দ্রুততায় সংগ্রহ করে নারকেল গাছের আঁশ , চটের ফেঁসো , চিবিয়ে থেঁতো করা সুতি কাপড়ের তুলো তুলো ভাব । ওই লিন্টেল তাকের এক কোনাতেই জড় হতে থাকে সেসব । কংক্রিট তাকটির চিন্তা হতে থাকে আসন্ন শীতে আশু অতিথি শিশুগুলির জন্য । ঘটনাচক্রে প্রসবাদি কার্যের অদর্শনীয় থাকবার যে প্রবল সামাজিক চাপ , তার ফেরে পড়ে তাকটি বুঝতে পারে তার ঢাকনিটি কার্যত সম্পূর্ণ নয় । একরকম আধ-ন্যাংটাই বলা চলে । সংশ্লিষ্ট সকলেরই প্রবল ভাবনার ফাঁকে কে বা কারা সেই লিন্টেল তাকের বহির্গতরে লিখে দিয়ে যায় চীনের চেয়ারম্যানের সঙ্গে “আমাদের” অমোঘ অটল সম্পর্ক ও ভাব ভালবাসার কথা । কেলেঙ্কারি কাণ্ড ! দেওয়াল কিছুতেই ভেবে পাচ্ছেনে এই বাক্যাংশটি তে “আমাদের” কথাটি ঠিক কোন মাত্রা অধিকার করে আছে ? যারা লিখেছে তাদের ? না যেখানে লিখেছে , তাদের ? দেওয়ালের এপারের আমাদের ? নাকি দেওয়ালের ওপারের আমাদের ? প্রসঙ্গত উল্লেখ্য ছোটমনি, পম, বড় আই, জেটি-মনি কিম্বা কাঠবেড়ালিদের এমনিতেও কোন চেয়ারম্যান ফ্যান দরকার হয়না । অতএব এসব প্রলাপ অন্য কোন “আমাদের” মাথাব্যথার খন্ডিতাংশই হবে ভেবে মোটামুটি সব্বাই স্থির করল ।

কাঠবেড়ালির ছানারা আসি আসি করছে, এরকম এক ভয়ঙ্কর সময়ে চটপটে কাঠবেড়ালিটির মাথায় উৎকট রকমের স্বার্থ চিন্তা খেলে গেল । যেকোনো সোশিও – পলিটিকাল পরিস্থিতির একটা নিজস্ব চাপ থাকে আর তাছাড়াও সামনেই আসন্ন শীত , দলের উচক্কা মাগিটি প্রসবকাতরা , তদুপরি এরই মধ্যে কিচকিচ করে শোনা যাচ্ছে বসন্তের বজ্রনির্ঘোষ … এমতাবস্তায় মাতা-মস্তিষ্ক ঠিক রাখতে পারাটাই এক সমিশ্যে । ঘোর সমিশ্যেতে পড়ে বাস্তবিক বুদ্ধিটি খুইয়ে দেখা গেল বুদ্ধিমান গিয়ে ঠ্যালা মেরেছে বুড়ি-আই-র সঞ্চয়িতা প্রকল্পে । বিস্তারিত বললে বলতে হয় , যে সেকালে হরলিক্স কেনা হত আলে-কালে । হাম বসন্ত , টাইফাস জ্বর , কিম্বা সদ্য ছেলেপিলে হলে বাড়ির প্রেমময় বাবা অথবা স্বামীরা একটি বোতল হাতে করে ঘরে ঢুকতেন , কখনো পরপর দুটি তিনটিও আসতো নেহাত দুঃসময়ে পড়লে । তা সেই বোতল শেষ হইবামাত্র অধীর আগ্রহে অপেক্ষারত কাম্মা , জেই-মনি ও মা-দের দঙ্গল লাফ দিয়ে পড়ে বোতল টি অধিকার করতেন ও কলতলায় আ-ছিপি আকণ্ঠ ভিজিয়ে রাখা হত বেশ কদিন । সেসব আসমানি দিন, বোতল এর পাছাটি ভারি , কণ্ঠার কাছে কাচের বুটি তোলা তোলা , আর টিনের প্যাঁচওয়ালা ডেয়ো ঢাকা । সে এক দিন গেছে মশায় ! যাই হোক যথাবিহিত শুদ্ধিকার্যের পরে তাদেরি একজন মোয়া কদমা বাহিত হয়ে উঠে গেছিলেন লিন্টেল তাকের পরে । কাঠবেড়ালি খায় না এমন জিনিস নেই, তাই ঠেলাঠেলি করতে গিয়ে কাচের শিশি হেলে পড়লো, মাধ্যাকর্ষণ আজকের ধম্ম নয়, যুগযুগ ধরে চলে আসছে । সে কারো বাপের সম্পত্তি না হবার দরুন এক্ষেত্রে মাতমের শব্দ হয় । বুই-আম্মা ও আই ছুটে আসেন এবং কুচিয়ে পরা মিলের থান সন্তর্পণে উঁচিয়ে ধরে সেই কুঁড়ে, অতি চালাক, বোকা, ও গর্ভিণী রোডেন্টগুলির নির্বাসন দণ্ড ঘোষণা করেন । মুস্কিল হল, এইসব প্রাচীন ও পরিপক্ব কার্যনির্বাহী আধিকারিকেরা সংবিধান বা সংসার যেখানেই অবস্থান করুন না কেন , যে কোন বিস্ফোরণের দশ হাত দূরে দাঁড়িয়ে বলে দেবার ক্ষমতা রাখেন তার ঋতু, সময়, সম্ভাব্য ব্যবহৃত ফ্লোরা ও ফনা, বলে দিতে পারেন যে এ কাজ তলে তলে কদ্দিন ধরে চলছে, কদ্দিন ধরে তারা এই পরিকল্পনার নীল ছাপছবি বানাচ্ছে , এবং সেই অনুপাতে পরবর্তী সাবধানতা ও সাংবিধানিক শাস্তির মাত্রা ঠিক করা হয়। তো, কংক্রিট তাকের কোণের দিকে জড়ো করা আঁশ পুটুলি, দড়ির ফেঁসো ও তুলোর পাঁজ ঝেঁটিয়ে বিদেয় করা হল । এইখানেই টেনে আনা যায় এ গল্পের প্রথম ডিক্লেরেশনটি। অর্থাৎ কিনা গাছের সঙ্গে দূরে যাবার গল্প বলার সময় নারীদের দাঁতে দাঁত লেগে ফিট পড়ার কথাটি। আমাদের আসন্ন প্রসবা মাদিটিরও তাইই হল। তুলোর নুটিগুলি সদ্য হারিয়ে সে নিয়মিত সময়ভেদে হাহাকার ও ফিট পড়তে লাগলো । কংক্রিটের বাঙ্কটি আরেকবার অন্তরের সঙ্গে অনুভব করলে বড়সড় একটি গা-ঢাকনির প্রয়োজনীয়তা। কিন্তু সমস্ত ভয়েল শাড়িদের খরচা করা হয়ে গেছিলো, বদলি বাসুউউউউউউন ও ন্যাকড়াচোকড়ার প্রাকৃতিক প্রয়োজনে, সুতরাং আশু কোন উপায় দেখতে না পেয়ে তাকটি হাল ছেড়ে দিল, এদিকে যথেষ্ট পরিমাণ জনসমর্থন না পেয়ে এবং গণমাধ্যম উৎকট রকম পোঁদে লাগায় কাঠবেড়ালিরাও বাধ্য হয়ে আন্ডারগ্রাউন্ড হল, এতো চুপিচাপি যে জানাও গেলনা কখন! স্বাভাবিকভাবেই তাকের লজ্জাবরনির দরকারবোধটির-ই আর দরকার রইল না, এমন সময় ছোটমনি ( বি-এ পাশ ও উঁচু দাঁত সম্বলিত বাড়ির আইবুড়িটি ) , ওই জোব্বাওয়ালা ছবির কপি বিলিয়ে বিলিয়ে, আর পাছা ছাড়ানো চুলের গোছার যদ্ন নিতে নিতে বোধ হয় দস্তুরমত হাঁপিয়ে উঠেছিল, তা বাদে কেবল একটি সাধারন যুক্তিবোধ ও ভদ্রস্থ ঢাকনির অভাবে কাঠবেড়ালিদের এহেন অপমান, ও লোকক্ষয় হয়ত তার মনেও পাওয়ার স্ট্রাকচার সংক্রান্ত কিছু ডিপ্রেশন এর জন্ম দিয়ে থাকবে! কিছু ভয়েল শাড়ি অথবা তাকের গা-ঢাকনি কোনো একটার অভাব মেটাতে তাই ছোটমনি উঠে গেছিল ঘরের সিলিঙ এর কাছাকাছি। তার দেহখানি সিলিং ও মেজের মাঝখানে ত্রিশঙ্কু লিন্টেল তাকটির সুমুখে বেশ জবরদস্ত একখানি মানুষ পরমান লজ্জাবস্তর হয়ে হালকা হালকা দুলতে আছিলো। লিন্টেল তাক খুশি হবে কিনা ভাবছে , অম্নি সবাই সাব্যস্ত কল্লে যে ছোটমনির ভয়েল ও অন্যান্য শাড়িগুলি গরীব দুঃখী দের দান করে দেওয়া হবে, আত্মহত্যার মড়া বলে কথা ! তার মানে , ছোটমনির শাড়িগুলিকে সিলিয়ে কুঁচি ফেলে তাদের একপাশ দিয়ে পাটের দড়ি চালিয়ে তাদের ঝুলিয়ে লম্বা করে দিয়ে লিন্টেল তাকের কোন উপগার করা যাবেনে । অগুলান অপঘাতের মড়ার শাড়ি বলছি না বারবার ! ‘৭০ সালের শেষদিক থেকেই ঘরের মনিষ্যি দের যুক্তিবুদ্ধি বলে আর কিছু বাকি ছিলোনা, শেষাশেষি এসে তো একেবারে বারোয়ারি ধুমুল ! কলকেতার কিছু পূজামণ্ডপ আলোয় – আলোকময় হয়ে উঠল বটে কিন্তু ওদিকে গাঁ -ঘরের লোকেদের কাছে সব কিছু ঘুলিয়ে মুলিয়ে সে এক অবেবস্থা! কারণ হিসেব মত , মড়ার হোক , ঝড়ার হোক , নিজের পোঁদের ট্যানাচর্চা পুরোপুরি থাকলে তবে গিয়ে লোকে দান ধ্যান করে । শহুরে নিয়ম নেজ্যসগুলো তো কোনোদিনই সোজা কথার লোক নয় তাই দেখা গেল বহু বটব্রেক্ষ ও এই তালে বেনামে ঢাকা-পরদা কিনতে ছুটছে, এমনকি দেদার কিনেও ফেলছে ! সত্যি বলতে কি ছোটমনি শুধুমুধুই ঝুলতে গেল । ভয়েলের ট্যানাগুলো না লাগল হোমে না লাগল যজ্ঞে । তবে ৭০ পার হবার পর শোনা গেছিলো রহস্য অন্যত্র , কেবল শাড়ি-ঢাকনি ও কাঠবেড়ালিদের প্রতি সহমর্মিতা অপ্রতুল দেখেই যে মনের দুঃখে দামড়ি ও কাণ্ড করেছিল, তা লয়কো । আসলে রোজ ওই মোটা ঘন চুলের গোছা পলা পলা তেল ঢেলে ঢেলে, আঁচড়ে, ক্ষার জল করে করে, নিত্যি নতুন পাত্তরপক্ষের সামনে মেলে ধরে ধরেও শুনতে হচ্ছিলো যে মাগীর ওই চুল ছাড়া আর কিছু নেইকো । সে বড্ড হাঁপ্যে গেসলো নাকি ! তবে সেসব পরের কথা। আপাতত লিন্টেল বাঙ্ক একসঙ্গে ভর-পোয়াতি কাঠবেড়ালি, তুলোর পাঁজ, দড়ির নামাবলী, ছোটমনি, গাছের কোটরের গল্প … সব সব্বস্য একসঙ্গে হারিয়ে বড্ড পাগলপারা হয়ে উঠেছিল, বেশ ক’দিন বড় দুঃখী নির্জন কাটিয়েছিল, এই সুযোগে হঠাৎ একদিন খেয়াল করে দেখল ওই সময়টির ফাঁকে তুতু আর বিল্টের চুলগুলো সব বেড়ে-বুড়ে কান ঢেকে দিয়েছে, তারাও অমনি সেগুলি ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে বয়ঃসন্ধির বগ মার্কা ঠ্যাং বের করে পিড়িং পিড়িং করে পাড়া টহল দিয়ে বেড়াচ্ছেন । কেরমে ছোটমনির কথা আর কারু মনেও রইলো নাকো, আর তালে তালে অমনি দেওয়ালের গায়ে লেখা ” বন্দুকের নল ই ক্ষমতার উৎস ” এটি ও চুনকাম করে ঢেকে দিতে অবেবস্তা রইল নে । তবে কি অই “নল” কথাটি এট্টু হাল্কা হয়ে জেগে ছিল চুনের পোঁচের তল দিয়ে, আর ঠিক সেই নলের ডগাতেই, পাখপাখালি ধরুন আর কিছু পারুক না পারুক হাগতে পারে একটি রাশ … তো সেই “নল” কথাটির ডগাতেই কী করে জানি এসে জুটলো এক অশ্বত্থ গাছ, ডালডোল মেলে কদিনের মধ্যে আস্ত জঙ্গল মহল হয়ে উঠল ! সামান্য দেহ-ত্যজ্য ক্বাথ থেকে কী কাণ্ড ! স্বাভাবিক ভাবেই লিন্টেল তাক ব্যস্ত হয়ে ভাবতে থাকে যে বাইরে থেকে টানছেই বা কিসে আর ভেতরের দেওয়াল সরু সরু চুলের মত ঢুকেই বা আসে কী ! অই শিকড় চিনতে পাল্যে না সে । ভারি চিন্তিত ও একলা হয়ে পড়েছিল দিনগুলো, তাই বছর আষ্টেক পরে তুতু ঝপ করে এক মেয়ে এনে ঘরে তুললে । এতদিন পরে একটা ঘটনার মত ঘটনা ঘটায় ছোটমনি সিলিং এর কাছে আবির্ভূতা হয়ে বললেন , ” তা বলে ওই অতোবড় মাই-ধুকুড়ি !” বুই-আম্মার শ্মশান পোড়া চেহারাখান ঠাকুরের আসনের পাশ থেকে বলে উঠল, “ছ্যাঃ ছ্যাঃ থুঃ থুঃ ” । কিন্তু অবাক হয়ে দেখা গেলো প্রায় প্রতি রাতেই পায়রার মত হাঁই হাঁই করে দু মিনিটের লাগালাগি ভেন্ন রাত কাটানো তুতুর পক্ষে নিতান্ত অসম্ভব । তাদের খাটের ধাপুরধুপুর শব্দে পাশের ঘরে বিল্টের পাজামা রোজ ঘটাঘট সাদা সাদা খেসকুটে দাগে ভরে উঠতে লাগলো । এসব কোন কথাই অজানা রইল না জেটি-মনি ও ছোট কাম্মার , বরং বিল্টের শিগগির শিগগির চাগরি-বাগরি কিছু একটা না জুটলে যে তাঁকে এইভাবে ছেলের নরকস্য ধুয়ে পাগলেই জীবন কাটাতে হবে তা শুনে শুনে বাদরুম ও কলতলার পরান ভেরে এলো । বলা বাহুল্য জেটি-মনিও এইট অব্দি সমস্কেত্য পড়েছিলেন কিনা !

যাই হোক পাড়ায় নতুন কাঠবেড়ালি আর আসেনি এবং গাছের থেকে দূরে দূরে থাকার বিটকেলে পরিস্থিতিগুলি আজকালকার মাগীরা পসিটিভলি ম্যানেজ করে থাকেন অর্থাৎ কিনা কেবল স্বপ্নেই ফিট পড়ে থাকেন । এমতাবস্থায় লিন্টেল তাক এট্টু সরে থাকাই সঙ্গত বোধ করছিল, কারুর কোন ডালের হাঁড়িতে কাঠি দিতে যায়নি … অথচ একেবারে বিনা প্ররোচনায় সেইদিনের একটা ছুঁড়ি, উপাসনা না কি নাম … আরে তুতুর মাগ … সে এসে একখানা সোফার ঢাকনির মত মোটা কাপড়ের একধারটিতে
প্লাস্টিকের রিং পরিয়ে পরিয়ে তাকের ঘুনসি দড়ির মধ্যে ঢুকিয়ে ঢুকিয়ে ঝুলিয়ে দিলেন । আর সেসব পরানোর সময় পোঁদ-পাকা তেনার দেওর , ” বৌদি ঐ ফুটো টা বাদ পড়ে গেল যে ওখানেও ঢোকাও ! ”
” ঈশ! অসভ্য ! এক মারবো !”
” কেন খারাপ কি বললাম ? সব ফুটোয় ঢোকায় না বুঝি ?” ইত্যাদি চোরাগোপ্তা ভাষার খাবলাখাবলি চলতে থাকে । তা অন্যায্য বলা যায় না কারণ প্রতি রাতে বৌদির মচরমচর কোঁকানি, ও শেষ পাতের ” আরেকটু আরেকটু…উঁউঁউঁ …” ওই দেওরকেই শুনতে হয় কিনা তিন ইঞ্চি গাঁথনির ওপার থেকে ! বেলাবেলি সেই “আরেকটু”র লেক্সিকাল দায়িত্বটুকু অব্দি যদি সে না নেয় …তবে সে কেমন দেওর ! এতে কেউ কিছু মনে করেনা, কেবল লিন্টেল তাকের দম আটকে আসে । কারণ ওই মোটা কাপড় ! হাওয়া সরে না । না ভেতরে না বাইরে । মোয়া নাড়ুর জায়গায় কোহিনূর এর প্যাকেট থাকে পেতে রাখা খবরের কাগচের নিচে । প্রথমত হাত বাড়ালেই পাওয়া যায়, দ্বিতীয়ত নাগালের বাইরে কারণ বাড়ি ভর্তি চ্যাং ব্যাং । উত্তরকালে এই মাই-বউদি ( পাড়ার ছেলেরা এ নামেই ডাকতো আড়ালে) খড়গপুর চলে গেলে পর জেই-মনি আর মেজ-মনি এ ঘরটায় শুতে আসতো । ঘুমনোর আগে রোজ বলাবলি করত যে এবার আরেকটা দেওয়াল আলমারি না হলেই নয় কারণ বউমা আবাগীদের প্রত্যেকের বাপের বাড়ি থেকে দেওয়া দানের বাসুন, মিক্সি, টোস্টার, নন ইস্টিক তাওয়া আদি, বিয়েয় পাওয়া একধরনের মৃদু গোলাপি আলো দেয়া বেডসাইড ল্যাম্প যা জ্বালিয়ে বউকে লাগাত … অই ২০০০ থেকে ২০০৫ এর মধ্যে বিয়ে হয়েছিল এমত মধ্যবিত্তরা। ওই সময় নাগাদই আমাদের লিন্টেল প্রথম শোনে গ্যাংটক ইয়ুম্থাম ও লাছুং ধাম এর কথা । দার্জিলিং বা দিঘা পুরীর তখন বাজার গেছে । তা এই এতো সব প্রস্থ প্রস্থ জিনিস এবং স্মৃতি গুছিয়ে পর্যবেক্ষণে না রাখলে যে ঘুম আসেনা এ কথা জেই-মনি আর মেজ দুজনেই স্বীকার করলে । এই পর্যন্তই ছিল । এই পর্যন্ত ভালই ছিল কিন্তু দেখা গেল ভাল থাকা সবার কপালে নেই। তাই ইউনিক ফার্নিচার এর দিলীপ একদিন এসে ঘ্যাঁচর ঘোঁচর ঘটাপটা করে লিন্টেল-তাক কে আস্টেপৃষ্টে প্লাই-মাই দিয়ে ঢেকে চলে গেল । খণ্ডে খন্ডে আলাদা খুপরো করে চাবির খোন্দল বানিয়ে যার যার বউমার নামে নামে তুলে রাখা হল। এই সময়েই অনেকদিন পর, হাজির হলেন ছোটমনি, ” সেই যদি কাঠকুটো দিয়ে ঢাকলে, তাইলে আমার শাড়িগুলো কি দোষ করেছিল শুনি ” এ কথা বলতে বলতে ন্যায্য অভিমানে তাঁর বিদেহী মুখটি টসটস কত্তে লাগলো । ভয় পেলে জেই-মনির পায় পেচ্ছাপ । তা তিনি ননদের পরলৌকিক অভিমানে ভয় পেয়ে বাদরুমের দিকে পা টি বাড়িয়েছেন কি বাড়াননি, তাঁকে এক দশাসই হাঁক দিলেন তাঁর মৃতা শাশুড়ি, বুই আম্মা । যেনার কিনা পিন্ডিজলে বহুদিন ধরে নিত্যসেবা চলছে অর্থাৎ অসন্তোষের কোন কারণ রাখেনি তেনার ছেলে বউমারা ।
তাই আপাতত বাঙালি প্রতিভাউদ্গত পরিচালকের লংশটে ছোটমনি দড়ি ধরে ঝুলছে, আর ক্লোস-আপ-এ জেই-মনির এক পা চৌকাঠের এদিকে ও আরেক পা চৌকাঠের ওদিকে রেখে ছড়ছড় করে মুতে ফেলছেন ।

৭০ থেকে ২০১০ অব্দি এই শট ফ্রিজ করলুম, আর অবশেষে ঢুকে পড়লুম লিন্টেল তাকের পেটে । দরজা টেনে দিলুম ভেতর থেকে । এবার বেগুন-বিচি খেলা যাক ।

বিঃদ্রঃ প্রথমত, এই লেখায় “আর , এবং , প্রভৃতি , কারণ ” -র মতো গরীব গুরবো অব্যয়, বললে পেত্যয় যাবেন না, পচুর । গাছপালা ও কাঠবেড়ালিদের থেকে বহুদিন দূরে থাকার এই হল জাজ্বল্য ফল ।
দ্বিতীয়ত, মধ্যে মধ্যে বুড়ো শিব-তলা ঘুরতে আসা খড়গপুর, হায়েদেরাবাদের তিন্নি মিন্নি কচি মামুনিরা যাতে করে গাছপালার বিরহের স্বপ্ন দেখে ভয় না পায় ও তাদের পিঠে কাঁধে ডানার কুঁড়ি-গোটা না ওঠে , সেদিকে তাদের মায়েদের কুলুপতালুপ ও বাপেদের খোঁদল -চাবি কড়া নজর রেখেছে ।

 

Facebook Comments

Related posts

Leave a Comment