দিদিম নামের বাৎসরিক
বারোমাসের দানের কলসি। মাটির
ছায়ার ভরা ছোটোবেলার গ্রাম।
তখন তোমার রঙের বয়স ?
দেখা হয়েছে দাদাসোনার সঙ্গে ?
না না সে তো অনেক পরে। উঠোনে মা-বাবা
আমি ছিলাম সবার ছোটোবোন।
জংলা ঘাটে খেলার সঙ্গী সেই কবেকার শ্যাওলা ধরা পুকুর
তোমার জন্য বারোমাসের জল পাঠাল আজ…
প্রেতের যেন কী নাম ?
গোত্র কী যেন?
বলুন: শান্তি… শান্তি…
পুরোহিতের পাশেই রাখা খাট-বিছানা-বালিশ
তার ওপরে ঢেউ-এর মতো এই জীবনের রোদ্দুর—
নিজের চোখেই দেখছে নিজের পারলৌকিক কাজ !
এখন যত দুপুরবেলা
গ্রামের নাম বিরহী
সন্ধ্যাদিরা কেমন আছেন ?
সাধনা আর শিখার খবর নাওনি কতদিন ?
অঞ্জুদির বাড়ির মধ্যে বকফুলের গাছ
আঁজলা ভরা পুকুর…
পার্টি অফিস। মহিলা সমিতি।
আজকে মিটিং ভাঙল কখন রাজু?
ভাড়াটেদের বাচ্চাটা খুব ন্যাওটা ছিল তোমার
নাম কী? নারায়ণ !
নারান জানে দিদা এখন বড়ো মাসির বাড়ি।
অসুখ, তাই বিশ্রাম করছেন।
মাসি জানে মা নামে আর কোত্থাও কেউ নেই
স্নানের পরে জানলা খোলা। চুল শুকোচ্ছে রোদে…
মাসির সামনে তাকিয়ে আছে ছোটোবেলার দুপুর !
মাসির কাছে নালিশ
ওরাই এখন আপনজন। আমি তো কেউ নই।
হাসির আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিস?
পর্দা তুলে হাত নাড়ালাম দু-বার
দাদা রে আয়! এক্ষুনি আয়! কখন আসবি ?
বাইরে অঝোর হাওয়া…
বাটি ভর্তি মিষ্টি নিয়ে দিদিম বসে আছে।
শুকনো হাতের মধ্যে ভাসছে অথৈ কুড়ি টাকা।
পরীক্ষা না তো?
এই নে, কিছু খাস…
ছাদের টবে মাথা দোলায়
মোহর রঙের ঘাস।
আজও প্রতিবেশীর বাড়ি ঢুকল মেজো নাতি
হাসিরা তো কৃপণ নয় সবাই
হাসতেই থাকে।
হাসির শব্দ শুনতে পেলে পর্দা তোলে কেউ
কেউ না সে তো ছাই হওয়া কাঠ। কাঠের ওপর—
‘দাদা রে আয়, দাদা রে আয়’
কুঁকড়ে কুঁকড়ে পুড়ছে আমার আশৈশব আকাশ…
শাকের শতনাম
কতরকম শাকের নাম তোমার মুখে শোনা।
ঘিমের শাক। পাটের শাক। বেতের শাক। আরও…
নিজের হাতে রেঁধে সেসব থালায় বেড়ে দিতে
দুপুরবেলা সঙ্গে সাদা ভাত…
কী ভালো সেই খাওয়া !
এখন
আকাশ অব্দি আগুন…
কাঠের ভেতর পুড়ছে তোমার স্নেহ-রঙের হাত !
ওই কাঠে কি সে-হাত এখন রান্না করে ?
বসুধা তোর সবরকম শাকের নাম আজ
চিতায় জ্বলা হাওয়া…
দিদিমবাড়ি
নেই।
কেউ যে কেন মানছে না এই রোদ?
কেউ আসলে আমার
সবুজ রঙের বালক…
ঘর পেরিয়ে চলে যাচ্ছে তোমার গলার আওয়াজ…
আর কোনোদিন সে আমাকে আদরে ডাকবে না !