তাপস বিশ্বাস

তাপস বিশ্বাসের কবিতাগুচ্ছ

 

দাগ

 

এইখানে দাঁড়ালে
ছোট হয়ে আসে সহজের জনপদ।
ডানা কাটা বিন্দু যেমন
দু’পাশ থাকে না, আমি থাকে।
স্বমেহন থাকে।
আত্মার চাতুরির মতো শীত থাকে।

এই যে পা চিনে চিনে উপায়ের শৃঙ্গ হল
এই যে সম্মোহন জমে জমে বাদাম হল

তোমার শেখানো ভাষায়
নিজেকে কামড়ের অদ্ভুত দাগ হল

 

 

ডার্করুম

 

ফিল্মে ফুরোচ্ছি যেন আবার।
যেন ফিরেও আসছি।

চকমকি গানের মতো যেন এও এক বিনিময়।

সুতোয় চোখ ভুলে ঝুলে আছি যেন।
নিষিদ্ধ হয়ে আছি।
যেন চোখেরই অবশিষ্ট কোনও রং।

তুমি থেকে থেকে আসছ এমন এক অন্ধতা নিয়ে
যার নিজস্ব কোনও ডার্করুম নেই।

 

প্রশ্ন

 

এখন ‘বন্ধ’ শব্দের মাস। অহেতুক সবুজ
দিগন্ত বরাবর গাছেদের শেষ স্বপ্নের মতো গেছে।
তুষের মলাটের ভিতর ফাঁপা স্মৃতিবীজ।
দুধের আকাশ দেখে তবু সে নাচে।

পাকিয়ে উঠেছে হাওয়া হাওয়ারই মতো।
ক্ষত ফেলে মাঠ উঠে গেছে একমুঠো গ্রামে।
পুরনো কুয়াশার মতো তুমিও তো চিনে নিতে পার
পায়ের গোছ দেখে দেখে

বল তো,
কেউ কি তখনও তোমার থেকে অর্থহীন দূরে?

 

 

বাড়ির ভাষা

 

ওলটানো নখের মতো জন্ম।
খেতখামারের ভিতর দিয়ে যাওয়ার মতো করে শিকারি হয়েছি।
এখন বাড়ি খুঁজছি।
এমন একটা বাড়ি যার ভাষায় জেগে ওঠা, ঘুমনো
হাগা-মোতা, খাওয়াদাওয়া, সঙ্গমের একটাই ভঙ্গিমা হবে।
এমনকি তুমি ছেড়ে যেতে চাইলেও
পুরনো শিকারি নয়, বাড়িটার মতো করে বলবে।

খেতখামারেই আছি। এখনও বাড়ি পাইনি। তোমাকেও।
অথচ হাওয়ায় ভাষা ওড়াচ্ছি ওলটানো নখের জন্মের মতো।

 

 

উই

 

কাকতাড়ুয়া। নকল চোখ। নিজেকে ছেড়ে এগোতেই পারি না।
উপরন্তু বাড়ি প্রসব করব, এই ভাবনাতেই মাথা ভারী থাকে।
বেশি দূর গেলে ফেটে গিয়ে কি থেকে কি গজিয়ে যায়
সেই ভয়ে মাথায় হাঁড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি।
দূর থেকে পা টিপে টিপে দেশ-বিদেশের গল্প আসে। ওস্তাদের মতো।
যুদ্ধ-বিবাদ-ধর্ম-পাশা আর গণহত্যার চটাস্‌ চটাস্‌ শব্দে
তারা মাথা বাজায়।
কলহবিমুখ আমি। ভীষণ ভয়ে ডাকি না-হওয়া বাড়ির বাসিন্দাদের।
ঢিবি ফাটিয়ে রস মুখে নিয়ে নেমে যেতে যেতে ওরা আমায়
কিছুটা দৃষ্টি দিয়ে যায়।

 

 

অন্ধকারের কথায়

 

এইসব অন্ধকারের কথা বলে ভাবো আমাকে সহজেই পাপী বানানো যায়।
এমন বানানো যায়, যেন উদাসীন বিসমিল্লা সাজিয়ে দিচ্ছেন আমায়।
আমার উপর দাঁত মাজার আর মুখ ধোওয়ার সর পড়ে গেছে।
সুখী সুখী অতিথিরা আসবেন এবার। নাচ শুরু হবে। মৃদু নাচ।
ঠিক ততটুকু, যতটুকু খোদ বিসমিল্লা চান।

অন্ধকারের কথার ভিতর এক ধরণের ক্রোধ শুকোতে দেওয়া থাকে।
হাওয়ায় ছড়ানো বিষের মতো। ছোঁয়াচে।
এমন ছড়ানো যায়, যেন ঘর বন্ধ করে গজিয়েছে এই ছায়া
তার রোদ কেন বাইরের কেউ পাবে?

 

 

স্বার্থ

 

আমাকে দেখলেই জন্মায় এক হিস্‌ হিস্‌ গাছ।
ফণা তোলে। দু’পায়ে জড়িয়ে যায়। যেন দেখার আগে
বিষ পাহারা দেওয়া ছাড়া কোনও কাজ ছিল না তার।

একদিন ভাবনায় সাপকে গাছ পরিয়েছিলাম।
ভেবেছিলাম গরলকে সবুজের দিকে গড়িয়ে দেব।
ভেবেছিলাম, আমি, সাপ আর গাছ – আমাদের পাশে
মাটিতে না-ফোটা জীবনচক্র ঠিকই গজিয়ে যাবে।

অথচ যেন আমাদের চেনাশোনা হয়নি কখনোই।
মাটি লাগেনি শরীরে।
সাপের শিকড়, গাছের চেরা জিভ, আমার পা
সরে গেছে জীবনের নির্দেশে।

মাটিতে নয়, সে নির্দেশ চেয়ে থাকে
আকাশের চেয়ে উঁচু কোনও এক ধারণার দিকে।

 

 

শূন্য

 

এসব জলেরই রঙিন কারুকাজ। শব্দে নেই,
তবু অতিরিক্ত যাতাযাত শুনি।
ঘাড়ে কাঁধে বিলাপের মতো গজিয়ে উঠেছে নদী।
স্রোতের পাথর ঘষেমেজে চকমকি গড়িয়ে দিয়েছি।
ভেবেছি রোদের স্বচ্ছ বমি পেলে জ্বলে উঠবে নাকছাবি।
এতখানি জল দেখে থমকে যাওয়া তোমার পৃথিবী
দাঁড়িয়ে যাবে রিসর্টের জানলায়।
দেখবে অপবাদ মাথায় নিয়ে একটা নদী কীভাবে
দূর পাহাড়ের মাথা থেকে ঝাঁপ দিচ্ছে জলশূন্যতায়

 

Facebook Comments

Related posts

Leave a Comment