১।
মায়ামেঘ – ১
ছায়া ঘনাইছে…
ঘরে ঘরে যেটুকু অন্ধকার ঢোকে, তার ফাঁকে ফাঁকে
ফাঁক গলে বিচিত্র ছবি এসে পড়ে — থুক করে ফেলে যাওয়া
দেওয়ালের গায়ে গায়ে লাল পিক এভাবে সম্মান করে নাক চেপে
চলে যাওয়াদের, সবটুকু দাঁত বার করে ছোপধরা, যতক্ষণ না মাড়ি
গাল ব্যথা হয়ে ফের হাসি থেমে আসে। এমতি ঘনায় ছায়া
বাড়িঘরে যেটুকু দেখা যায় তার চেয়ে বেশী চোখ রাস্তায় রাস্তায়
আলো খোঁজে, কলকাতার পুজো — পুঁজ হয়ে সাদা সাদা আলো রঙ
জ্বলে ওঠে বাজনায় বাজনায়; ঢাকে যে দাঁতন পড়ে সে দাঁতের
ঠিকানা মেপে নেবে সাদা হওয়া হাড়ে। এনামেল উঠে এসে খটখটে
তবু থালা পেতে খেয়ে নেওয়া যায় দুটো মুড়ি, যেমন যা জুটে যাবে
এমতি গভীর মায়া।
অন্ধে বোজে চোখ — বধিরে প্রপঞ্চ পায়…
২।
মায়ামেঘ – ২
মায়া বড়, এ গভীরে যত ধারা আছে
সব মিলে একখানি সরোবরে ক্ষণে ক্ষণে শ্যাওলা জমায়
ঘাই মেরে ডুবে যান অবতার;
তারপর টান পড়ে। ছিপে বাঁধা জান টেনে উথালপাথাল
এক বুক খিদে নিয়ে এক পেট জল ফেঁপে ওঠে, কেঁপে ওঠে বারেবারে।
হায়া বড়। ছায়া থেকে আলো খুলে ফের
সাবধানে বঁড়শি ডোবাও। প্রাচীন মাছের যেন ধাঁধা লাগে,
ধীরে ধীরে সয়ে আসে এককসঙ্গম।
পাতা ঝরে এসময়, জল ভিজে ওঠে। দূরত্বে দীর্ঘতর
কায়াবাঁধ ফেলে রেখে কে বা একা চলে যায়…
মায়া বড়
৩।
এলোমেলো করে দে মা
অনিচ্ছের শিরায় শিরায় আগুন রেখে ঘরে এসে বসি।
ঘর গাছের একতলাতে। পাতা ওড়ে, পাতা পড়ে, জ্বলে যায়।
জল এনে ফেলে দেখি জ্বলে ওঠে আরও,
ধোঁয়া হয়ে হয়ে মেঘ জমে সন্ধ্যের ধুনো দেওয়া শেষ হলে
পাত পড়ে। পাতে পাতে মাংস, ভাত —
বাসমতী চাল। গন্ধ উঠে খিদে ছড়িয়ে যায় মন্দ পেটে পেটে
খিদে ছাড়িয়ে যায়। একসময়
হাত পা ধরে আসে। এবার আয়েশ করে কামড় বসালেই…
আশ মেটে না। যত যত পারো থালা ভরে ভরে
রান্না করা, আধসেদ্ধ এঁটো আঠা আঠা হয়ে লেগে ঘরেদোরে
…পাতা উল্টে যায়। খোলা পাতে মোম জ্বেলে ভাতসরা ফেলে কে
উঠে গেছে সিঁড়ি ধরে। ভিজে দাগ হাওয়ায় শুকায়
৪।
আপনা মাংসে বৈরী
প্রতিকৃত্য, প্রাতঃ, অতিকৃত্য রতি
অকার্যে বৃতা হও অনিবার্য সতী
ঘর পুড়বে। দিল পে আগ
জ্বালিয়ে দেওয়া ধুনোর গোড়ায়
রেখে যাওয়া পুরোনো খোলস
তালাবন্ধ করে গেলে সুফী সঙ্গদোষ
সহজ সাধনে আসে যে শূন্যে, নাম তার
শবরী দাও যদি আপনা মাংসে বৈরী —
সুখাতীত দায় নিয়ে হরিণী হারায়…
৫।
সাধন
বহুধা সাধন শেষে পড়ে থাকে একা
পা, পদছাপ, অনন্ত ধুলো
ধুলিবিন্দু নিবিড় কত বাঁধে চিহ্ন,
দাগ মাত্র বালুপথে
আজ রয়ে যায়, আগামী ধূপজ ধূম
শতধা, অঙ্গী হয় সন্ধ্যায়
সঙ্গিনী, যে বা রজকিনী, তুলসীতলে
ধুয়ে আনে আমিখানি, গ্রন্থি গ্রন্থি গাঁথে —
আজনমকাল জুড়ে আমিতে টাঙায়