লেখা ও লেখক আসলে আমরা সারাজীবন ধরেই হয়ত এক একটা দিবাস্বপ্নের মধ্যে কাটাই। নিজেদের মনের মধ্যেই স্বীকার করতে পারি না বাস্তবতাকে। কারণ বাস্তবতার সংজ্ঞা বড়ই ক্ষণস্থায়ীত্বের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু আমরা কার্যকারণ সূত্রে না বাঁধলে অস্বস্তিতে পড়ে যাব নিজেরাই। ফলে একসাথে আমাদের মনে হয় অনেকগুলো জীবন চলতে থাকে। এই অনেক জীবনের মধ্যে আমরা নিজেদের হারিয়ে ফেলি। ওই যে স্বীকৃতির কথা, ভালোবাসার কথা, – এসব তো সামাজিক লেবেল। যতই আপনি মহান কবি হোন না কেন, এই সামাজিক লেবেলের ভূত আর তার সঙ্গে ক্ষমতার কৌশলের ক্লেদ আপনাকে তাড়া করবেই। এগুলি মনকে আরও তিক্ত,…
Read MoreCategory: জার্নাল
বিপন্ন বিস্ময়গুলি – পর্ব ৫
সমর্পণ নিজেকে কারো কাছে এবং কোনও কিছুর কাছে সম্পূর্ণ সমর্পণ করে দেওয়া খুব কঠিন কাজ। সমর্পণ করে দিলেই তো আর হল না, মনে মনে বিশ্বাস রাখতে হবে, নিজেকে বারবার বলতে হবে, যে আমি সমর্পিত। কিন্তু এই সমর্পণের অর্থ কী? আত্মবিলুপ্তি? আত্মলীন হয়ে যাওয়া? কবিতা লেখার সময়ে তো ঠিক এই কাজটিই ঘটে। কারণ কবিতা তো নিজেকে লেখার জন্য কবির মধ্যে দিয়ে প্রকাশিত হয়। কবি কেবল একজন আধার মাত্র। আর কিছু নয়। যখন অপ্রত্যাশিত স্পর্শের মতো, কবিতা আসে সেই কবির কাছে, তখন সে আত্মসমর্পণ-ই করে। লেখা হয়ে যাওয়ার পরে হয়ত, তার ‘আমি’…
Read Moreটু স্যার, উইথ লাভ
রেস্পেক্টেড স্যার, চিঠির তো একটা সাব্জেক্ট হয়? পড়িয়েছিলেন তো? কী লিখব? পিছু ফেরা? হিসেব নিকেশ? না স্যার, ওটা ব্ল্যাঙ্ক থাকুক। ফিল ইন দ্য ব্ল্যাঙ্কস। ওপারে গিয়ে দেখা টেখা হবে স্যার? সেসব হয় নাকি? আমি তো মেট্রোর দরজাটা জানি। একবার বন্ধ হয়ে চলতে শুরু করলে তার দরজা অন্তত সেই স্টেশনে আর থামবে না। তাই … হাত তুলতাম। একটা, অনেকগুলো। রেড ফ্ল্যাগ ধরা ছবিগুলোর মতো। আপনি পড়া ধরতেন। পড়া মানে ইতিহাস। ইতিহাস মানে ম্যানচেস্টারের সুতো, শিল্প বিপ্লব কিংবা চটকল ধর্মঘট। অবনী স্যার। অবনী। আধেকলীন হৃদয়ে আমি পড়াশুনোর কাছাকাছি কিছু একটা ঘাঁটি অবসরে।…
Read Moreবিপন্ন বিস্ময়গুলি – পর্ব ৪
ভোগ ও ত্যাগ কাঁপতে কাঁপতে যখন হাজির হলাম ক্যাম্পের মধ্যে, আমার তখন শরীরের উপর কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। একে, টানা ১৪ কিলোমিটার চড়াই অতিক্রম করে এসেছি। ৬০০০ ফুট থেকে টানা ১৬০০০ ফুটে। তার উপর টানা বৃষ্টি। ভিজে গেছি। খাইনি। আর ঠিক তখন জলদগম্ভীর গলা- ‘এখানেও এসে গেছেন?’ চেয়ে দেখি, চেনা মুখ। ‘কী অবস্থা!’ সঙ্গে সঙ্গে কিছু ওষুধ আর গরম চা। বসলাম এক জায়গায়। জামাকাপড় পাল্টালাম। হেমকুণ্ড সাহিবে গেলেই আপনি পাবেন গরম গরম খিচুড়ি। সেই খিচুড়ি খেয়ে একটু ধাতস্থ হয়ে ভালো করে চারিদিকে তাকালাম। আমি একটা স্বতন্ত্র ক্যাম্পে শুয়ে আছি। চারিদিকে অক্সিজেন…
Read Moreবিপন্ন বিস্ময়গুলি – পর্ব ৩
অভিজ্ঞতাগুলি ক্রমে… শুকনো পাতার স্তূপ্ বললেই মনে পড়ে যায় গ্রীসিয়ান আর্নের কথা। একটি অসামান্য জায়গা ছিল- হার্ড মেলোডিজ আর সুইট, বাট দোজ আনহার্ড আর সুইটার। আমার এক মাস্টারমশাই ছিলেন, পিএম বলে ডাকতাম। পুরো নাম পার্থ মুখোপাধ্যায়। একবার পড়ানো হয়ে গেছে। বসে আছি তাঁর সল্ট লেকের বাড়ির ছাদে। পাশে ঘুরঘুর করছে তাঁর দুই সন্ন্যাসী কুকুর। তিনি হঠাৎ বলে উঠলেন- জানো, এই লাইনটা, বোল্ড লাভারস ক্যান্সট নেভার নেভার দাউ কিস- এই ব্যাপারটাকে ঠিক কিছু দিয়েই ধরা যায় না। আমরা বৃথাই এসব পড়ি। পড়াই। কিন্তু যা বাজে অন্তরে তা মনে হয় আরও বেশি…
Read Moreবিপন্ন বিস্ময়গুলি – পর্ব ২
অপ্রত্যাশিতের এই স্পর্শ পাওয়ার জন্য জগতের কাছে সবসময় হাত পেতে বসে থাকতে যে হয়, সেটিই আসল সত্য। মানে, অপেক্ষাই আসলে প্রধান। মিলন নয়। ধরা যাক দুজন মানুষ একে অপরকে ভালোবাসে, তারা একে অপরের জন্য অপেক্ষা করছে। প্রতিদিন প্রতি মুহূর্ত তাদের অপেক্ষা আর ফুরোচ্ছে না। এই না ফুরোনো অপেক্ষাই হল প্রেম। মিলন তো ক্ষণিকের। অপেক্ষাই চিরকালীন। এ প্রসঙ্গে একটি দৃশ্য ও একটি গল্প মনে পড়ছে। আমি বসে আছি দেউরিয়া তালে। সারা রাত ধরে অপেক্ষা করেছি দেউরিয়া তালের ধারে একটি তাঁবুতে। সূর্য উঠবে। পাহাড়ে সূর্যোদয়ের উলটো ছায়া পড়বে দেউরিয়া তালের জলে। দেখব।…
Read Moreবিপন্ন বিস্ময়গুলি – পর্ব ১
আমি নিজেকে সবসময় উপলক্ষ্য ভাবি। এই যে কবিতা লিখি, আদৌ আমি কি লিখি? না কি আমি কেবলমাত্র লেখার আধার হয়ে থাকি? ঈশ্বরের কথা জানি না। প্রকৃতির কথা কিছুটা জানি। দর্শন হোক বা বিজ্ঞান, সঙ্গীত হোক বা কবিতা- কোনওকিছুই আমরা নতুন করে তৈরি করছি না, ইংরিজিতে ইনভেন্ট যাকে বলে, যা করছি, তা হল ডিসকভারি, মানে খুঁজে পাচ্ছি। খুঁজে পাচ্ছি, তার কারণ, আমাদের মধ্যে কেউ না কেউ কোনও না কোনও ভাবে খুঁজে চলেছে। প্রশ্নটা হল, কী খুঁজে চলেছে এবং কাকে খুঁজে চলেছে। আমাদের সমস্ত অসীমেরও ধারণার অতীত এই মহাবিশ্বে নিজস্ব সীমার মধ্যেও…
Read Moreকবিতাযাপনঃ ‘এবার আপনারা যে যার মতো বন্দুক তুলতে পারেন…’
শান্তিনিকেতন আর বোলপুর লাগোয়া তবে দুয়ের মধ্যে ধাতুগত পার্থক্য আছে । শান্তিনিকেতন অভিজাত, আন্তর্জাতিক । বোলপুর নয় । ট্রেন বোলপুর স্টেশনে থামে, তারপর বোলপুরকে পেছনে ফেলে শান্তিনিকেতনের দিকে চলে যাওয়া । তবু বোলপুরে শান্তিনিকেতনের হাওয়া পাক খায় – বিষাদের, সংস্কৃতির, কবিতার । শান্তিনিকেতনের সঙ্গে সাবেকি সংযোগ থাকলে যতটা আলো পাওয়া যায় বোলপুর থেকে উঠে আসা বিষাদ ততটা আলো সবসময় পায় না । বোলপুরকে খুঁজতে হয় তার আত্মপরিচয় – শান্তিনিকেতনকে ছুঁয়ে থাকে, তবে জানে বোলপুর শান্তিনিকেতন নয় । স্টেশনে অবশ্য লেখা থাকে বোলপুর(শান্তিনিকেতন),সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠায় শান্তিনিকেতন শান্তিনিকেতনই । ছেলেটি বোলপুরের – বিষাদের,…
Read Moreকবিতাযাপনঃ জেরক্সওয়ালা
সবাই যে চাকরি পাবে তা তো নয় । তবে সবাইকেই খেতে হবে । কে কীভাবে জোটাবেন তাঁর খাবার তাঁকেই ঠিক করতে হবে তা । তিনি ঠিক করেছিলেন জেরক্স করবেন । জেরক্স করে যা হয় তাতেই চলে যাবে বিধবা মা আর ছেলের । মুর্গি কাটা সম্ভব হয়নি তাঁর পক্ষে । শেওড়াফুলিতে তখন অনেক মুর্গিওয়ালা । একজনের পর আরেকজন গজিয়ে উঠছেন । খুলছে এস টি ডি আর আই এস ডি বুথ । ফোনে কথা বলার নেশায় আস্তে আস্তে মজে যাচ্ছে পাড়া । পাড়ার মোড়ে মোড়ে বসে পড়ছে্ন মুর্গিওয়ালা । একটা আয়তকার খাঁচা…
Read More