রুম্মানা জান্নাত

রুম্মানা জান্নাত-এর কবিতাগুচ্ছ

`মিস করি` সিনট্যাক্সের বাইরে, তোমাকে

২৮
তোমার শৈশব দেখতে ইচ্ছা করে।
পেন্সিলের ভাঙা নিব, কবুতর খুঁজতে থাকা বিকাল আমি কল্পনা করেছি৷

ওই পুরানা গড়ের মাঠ আমার বহুবার দেখা৷ তোমাকে লিখেছি, একটা ছবি হয়ে থাকা শাপলার বিলে কখনোই যাওয়া হয় নি আমার৷

আজ পাশাপাশি থাকার সত্যতা জানি। সন্দেহও৷ জানি, তোমার না তাকানোর ভঙ্গিমা কত যুগ ভারি।

তোমার বড়শিতে গেঁথে থাকা বৃষ্টির মাস, বেদেনির মুখ- আমাকে আচ্ছন্ন করে। তরুণ হয়ে আসা মুখ, ভাঙা স্বর আমি শুনতে পাই।

মনে হয়, তোমার ছেলেবেলা থেকে একটা বাতাস এসে আমাকে ছোট্ট হলুদ ফুলের মতো দোলায়—

 

২৯
আজ শহর এমন আলো হয়ে আছে যেন আমরা পাহাড়ের দেশ থেকে বনফুল এনেছি৷ মেঘের দানার মতো বিকাল, তিনটা কুকুর সার ধরে ঘুমিয়ে আছে—আমাদের প্রথম দেখা হওয়ার মতো বাতাস এখন— মোড়ের গাছটায় নতুন পাতা!

কোন কথা বলবো না। হলুদ বাড়িটা আরেকটু হলুদ হয়ে চেয়ে থাকবে। আমাদের পাশাপাশি হাঁটা এতই সহজ দৃশ্য আজ যেমন— আমরা বড় হয়েছি কেবল সকাল হলে জানালার পর্দা সরাবো বলে৷,
এভাবেই টুকটাক লিখব। যখন তোমাকে লিখি, গলির রাস্তা আর জানালার বর্ণনা দিলেও একটা প্রেমের দৃশ্য তৈরি হয়!

 

৩১
কিছু লিখবো ভেবে প্রতিদিন জেগে উঠি, হয়তো এমন নয়। বাইরে সবজিওয়ালার চিৎকারে ঘুম ভেঙে যায়৷ হকারের ডাক, ময়লার গন্ধ, পাগলের গোঙানি চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে৷

একদিন রাস্তা পার হয়ে অনেকদূর হেঁটে গেলাম। মনে হলো অন্য কোন জীবন সেখানে। ওপাশের আলো কিংবা বিষন্নতার সাথে এদের কোন সম্পর্ক নেই৷ আমরাও শুধু একটা বিকালই শালবনে কাটিয়েছিলাম। শুকনা পাতা আর পুরানা একটা দেয়াল ভালো লেগেছিল।

যে দিনগুলো তারিখ ভেবে দাগ টেনে রাখি তা আমার প্রিয়, সেখানে হলুদ মাগরিব আছে, তুমি আছো আর ছেলেবেলায় কুড়িয়ে পাওয়া আশ্চর্য সাপের মণি—

 

৩৪
যখন কোনো পুরাতন গান শুরু হয় আমার সেই রাতটার কথা মনে পড়ে। তখন রোজার মাস আর অনেকটা আষাঢ়ের শেষের দিক। মানুষ জাগছিলো বৃষ্টির মধ্যে আলো ফেলে। তোমার কথা ছোট ছোট ঢেউ হয়ে ভেসে উঠছিলো। একটা কাঁঠাল গাছের নীচে আমি বসে আছি৷ পাতা থেকে থেমে থেমে পানি ঝরছে। মনে রাখার মতো কোন ভাষাই আমরা শোনাতে পারছিলাম না কাওকে। শুধু আমার চারপাশ নিঃশব্দে সুবহে সাদিক হয়ে উঠছে!

তারপর অনেক আড়া জঙ্গল হেঁটে এলাম আমি। তার কিছু কিছু তোমাকে দেখালাম৷ মরা বাঁশপাতার রঙ, বরজের রোদ। আর যেভাবে দিন হয়, কোন দুর্ঘটনা ছাড়াই রাতগুলোও শেষ হয়ে যাচ্ছিলো৷

আমরা কেবল ভাষা খুঁজছিলাম নিজেদের জন্য বা এমন কিছু যা অনেকদিন মনে রাখা যায়, যার মধ্যে একটা মেহেদি ফুলও শব্দ করে ঝরে পড়ে!

সেই রাতগুলো, যা কখনো লিখে রাখা যাবে না। বিশেষত্বহীন, দূর্বোধ্য, অল্প কামনার দিকে হেলে পড়া রাতগুলো আমাকে প্রতিদিন ভাঁপ ওঠা ভোরের দিকে নিয়ে যায়—

 

ভাই

খুব ঘটনাবিহীন দিন আজ, শুধু দূর থেকে ভাইকে দেখেছি। এত দুরত্বে আমার শুধু কমলা রং প্রিয় হয়ে ওঠে। আর ফ্যাপসা ঘুমের দুপুরে তল্লা বাঁশের ডাক বেঁকে যায়।

কখনো হঠাৎ বিদেশী আকাশ দেখি। শাদা উইন্টার ফল। সামান্য ঝড়ে যার আয়ু কেঁপে ওঠে, তাকে বলতে ইচ্ছা করে—ক্যালেন্ডার না থাকলে আমরা হেঁটে হেঁটে কোনদিকে যেতাম—?

গোরের মতো ঠান্ডা আলো হয়ে আছে সকাল। কারো মৃত্যুর থেকে বেশি মনে পড়ে জলচকি। পাটিতে বিছানো নামাজ।

ছুটি নেই। মোড়ে মোড়ে কেবল জং ধরা টিকেট কাউন্টার দেখি। আজ দ্বিধাগ্রস্থ দিন—

ভাই হারানো দুপুরে ভাইয়ের বয়স মনে পড়ে।

 

অবসেশন

পাগলটা দেয়ালের দিকে মুখ করে কাঁদে।
আমাদের এমনই ধারনা।

প্রতিরাতে যখন অন্ধকার সকালের দিকে সামান্য ঝুকে যায়, কোন হকারের ডাক নাই, অন্ধ ফকির গান থামিয়ে চলে গেছে—একটা দরুদ জানালা ভেদ করে, ময়লা পিলার ধরে নেমে আসে—বেড়ালের জোড়া ঘুম, রাস্তার ফাটল পার হয়ে যায়।

দরজা টেনে দিই। নীচু স্বরে চেয়ে থাকি।
বলি, ‘ মায়া হয় ‘!

Facebook Comments

Related posts

Leave a Comment