চাংরু হো – তরুণ দ্বিভাষিক কবি ও অনুবাদক। লেখেন মাতৃভাষা চাইনিজ ও ইংরেজিতে। জন্ম চিনদেশের এর সাংহাই শহরে। বর্তমানে আমেরিকার অ্যালাবামা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়েটিভ রাইটিং এ মাস্টার্স পড়ছেন। ছদ্মনাম সিহো হো নামেই মূলত লেখা ও অনুবাদের কাজ করে থাকেন। চারটি অনুবাদের বই প্রকাশ পেয়েছে। তার কবিতা প্রকাশিত হয়েছে ‘পিপল সে’ এবং অন্যত্র। মূল মান্দারিন ভাষায় লেখা কবিতাগুলির ইংরাজি করেছেন কবি নিজেই। কিছু কবিতা সরাসরি ইংরাজিতে লেখা হয়েছে। সেখান থেকে বাংলায় অনূদিত হল।
রচনাকালঃ ২০০৪-২০১৫।
উপহার
আজকের উপহার
এই গাছের চোখগুলো
যা আমাকে ধীর গভীর একটা জগত এনে দেয়
পার্সিমন এর পাতা পড়ে, শরৎ ফুরোয়
মাটি, সময়ের একটা গল্প শোনায়
জল থেকে উড়ে যায় পাখিরা, যেন
খুব স্যাঁতস্যাঁতে এক স্বপ্নকে তড়িঘড়ি বিদায় জানায় তারা
তাঁবু থেকে বেরিয়ে আসে একটা লোক
তার পাইপ পড়ে থাকে গতকালের মতোই
মাটিতে পায়ের আমন্ত্রণ
স্মৃতিকে বাতাস দীক্ষা দেয়
নৈশভোজ
নীচে তলদেশে
টানেলের ভেতর নৈশভোজ অনুষ্ঠিত হয়
মিহি নরম চাঁদের আলো দিয়ে
বাঁশি সেলাই করে কারিগর
একটা কাঠের টেবিল, লম্বা ও অমসৃণ,
লাগানো হয় সকালের শিশির, পদ্মমূল,
মৃদুধ্বনি দিয়ে। তার ওপর হামাগুড়ি দিয়ে সময় হাঁটে।
চা তার পাতায় ফিরে যায়। অন্ধকারে
একটা সুর অব্যাহতি নেয়। যাদুকর
হয়ে যায় একটা কালো পাখি। ডানাহীন।
মৃদু আর চাপা জলজ আগাছারা,
নড়াচড়ার সাহস করে না।
একটা পদ্মের জন্য অপেক্ষা করে ওই পাতাদের ভীড়।
কোরাস
জলের কোরাস মানে
যেকোনো একটা নদী কিংবা সোঁতা
নিজেরই ছায়াকে টানতে টানতে
আমি ভবঘুরের মতো ঘুরি
অদ্ভুত সব কাঁটাচামচে হোঁচট খাই আমি
অভিভূত এবং শ্রবণশক্তিহীন
তারা এক প্রাচীন উপজাতি
এক অস্পষ্ট ইশারা বাতাসকে সান্ত্বনা দেয়
অকথ্য যন্ত্রণার ভেতর ঢুকে যায়
গুল্মলতার ফল
আজ হোক বা কাল আমি ওদের সঙ্গে যোগ দেবো
যেমনভাবে ছায়া আলোর পর্দা তুলে দেয়
ওরা মোমের আলো গোণে আর গুণতেই থাকে
ছুটন্ত জল আর সময়ের প্রতিচ্ছবি হয়ে ওঠে তারা
আর হোঁচট খাবো না আমি
সেই সন্ধের ভেতর যখন রাস্পবেরি পেকে উঠেছে
পরিচিত সুরগুলো শিশুটিকে ডেকে আনে ফের
ত্যাং এর সারিতে যে কিনা একটা শাদা পদ্ম চুরি করেছিল
যদিও পদক্ষেপ থমকে দাঁড়ায়
জীবনের প্রথম তুষারের দিকে নিয়ে যায় তারা
নিশ্চুপে
একটা কোরাস গান হয় নীরবতার ভেতর
দোল
অতীত আসলে একটা হাওয়া, ঠিক এইখানে,
একটা টুপটুপ ট্যাপকল, পুরনো জানলা, সমুদ্দুর।
আমি তোমাকে স্বপ্নের ভেতর খুঁজে পাই
তোমাকে পাই প্রত্যেক খেইহারানো পঙক্তির ভেতর।
নারীসুলভ সক্ষমতা, যৌবন
আর আমার পুড়তে থাকা চুলের নিশ্বাস
আমি একবিন্দু জল ছিনিয়ে নিই। ছুটন্ত জলধারা।
তুমি জানালায় ছায়া দাও। বৃক্ষটি।
বেড়ে ওঠার ধ্বনি হয়, কিছু খাপছাড়া
কিছু ঘনবদ্ধ, একটা মিথ,
কিশোরীবেলার ছায়া দোল খাওয়ার মতন
জানলা থেকে দূরে দূরে যায়
সমুদ্দুরের দিকে, অনন্ত আকাশের দিকে
যেখানে আমি উড়বো।
ফেরি
এখন আমি বুঝতে পারি, যখন বাচ্চা ছিলাম, বেড়াতে কতটা ভালোবাসতাম আমি
যখন রাস্তার ঘোলাটে আলোকবাতি
আর বাতাস এত নরম যে ধরাই যায় না
সমুদ্র একটা বিরাট বড়ো স্বপ্ন
মেঘাচ্ছন্ন রোববারগুলোতে
আমার বাবা একটা ফেরিনৌকোর সঙ্গে হাত মেলাতেন
এক ঘাট থেকে আরেক ঘাটের মধ্যে আমরা ঘুরে বেড়াতাম, নেমে যেতাম না
কিংবা পিছু নিতাম না বেলাভূমিতে চলে আসা ঢেউগুলোর
আমি তখন কেবলমাত্র শিখেছিলাম কীভাবে নড়বড় না করে হাঁটতে হয়
তখনও বৃষ্টির আগে কথা বলতাম পিঁপড়েবাহিনীর সঙ্গে
এক কন্যা তার বাবার সঙ্গে সমুদ্রযাত্রায় যেত, যতক্ষণ না একটা অনাম্নী হাত এসে
সেই সব জল আর রাস্তার ওপর চাপিয়ে দিত বিরতির পোশাক
হুইসল এর শব্দ পোকামাকড় আর আমাকে ডাকত
উচ্চ, তীক্ষ্ণ এবং পুরুষালি
দ্রুত ফিরে যেতে যেতে আমি একটা গান রেখে আসতাম
ক্যাপ্টেনের দাড়ি নড়ত ঘনঘন
একটা ত্যাং কবিতায় একটি ছেলে একটা শাদা পদ্ম চুরি করেছিল
আমি নীল ঢেউকে সেটা ফেরত পাঠাই
সে আমার প্রথম বন্ধু যে শব্দের মধ্যে বাস করে
প্যান এর মতো, সে বড়ো হয় না বুড়ো হয় না
আমি ঢেউয়ের দিকে তাকালাম আর আমার সঙ্গে কথা বলল তারা
স্বপ্নের উপরিতলে ছোট্ট ছোট্ট ঢেউ
সকাল আসবে এবং আমাদের কপালে চুমু খাবে
পাপড়ি উঠবে জেগে আর ভেসে যাবে ফের
নৌকার গোলুইতে বাবা আমাকে সাহায্য করতো
উঁচু আর ছিমছাম, প্রত্যেক একাকী রাস্তার মতো
সাদা পোশাকে কেউ উটের পিঠে সওয়ার
শিশুর নীলাভ বিছানায় কত অবয়ব নেচে নেচে যায়
আমি হাসছিলাম –হাতটা শিথিল করে বাবা যখন ঠিক সেই মুহূর্তের ছবি তুলল
বাবার ভয়কে আঁচ করেছিলাম আমি
ঠিক তিনটের সময় বাতাসের ঠান্ডাকে আমি অনুভব করলাম
ঠিক যেমন কোনো ভ্রমণার্থী করে থাকেন।