স্বপ্ন ও আয়ু
এক টুকরো স্বপ্নের ভেতরে দেখা গেল
আয়ু আমার বেশী নেই, অতএব
আমাকে আরও বেশী করে কাজ
দ্রুত করে ফেলতে হবে, না কি
আরও বেশী করে ঢুকে যেতে হবে
স্বপ্নের ভেতর? কেননা সেখানে আয়ুস্কাল
দ্রুত ফুরিয়ে আসছে, সেখানে সকালের তাড়াহুড়ো,
অন্যথায় চোখের বাইরে তো সব যে কে সেই,
স্রোতের পরে স্রোত বাজে বকা অনন্ত ঢিলেমি
চোখের খোলা বন্ধের মধ্যে যাতায়াত
আমাকে নিয়ে যাচ্ছে স্বপ্নটির শেষে,
রুমালের সাইজের স্বপ্নে সকলেরই
হাতের কাজগুলো সেরে নেবার তাড়া, কেননা
এখনও হাতের পুত্তলিটির ভেতরে প্রাণ ফুঁকে দেওয়া হয়নি
এখনও পিতা ও তাদের উর্ধতন আবছা পিতৃকুলের উপকাহিনী
কানের ওপর ঠোঁট রেখে জলীয় তার মনের ভেতরে
বিন্দু বিন্দু গুঁজে মিশিয়ে দেওয়া— হয়নি
স্বপ্নের আয়ুর থেকে বেশীদিন বেঁচে
আয়ুস্কালে দেখা একটিই স্বপ্নের দৈর্ঘ্যে
ঢুকে বেরিয়ে দেখাদেখি হয়ে গেলে সমাপন,
কে আগে শেষ হয়—
স্বপ্নের ভেতরের আয়ু না আয়ুর দৈর্ঘ্যে স্বপ্ন !
স্টিফেনহকিং -এর হুইলচেয়ার ঘেঁটে যা পাওয়া গেল
এভাবে একদিন প্রিয় কবিকে ভালোলাগার শেষ হয়,
নিজের শিশুর শুয়ে থাকা ভঙ্গীর চেয়েও নরম যার প্রতি একদিন,
সে পাতের গোড়ার হাড়ের উপমায় ফিরে যায়
প্রিয়তম কবি তখন টুপিটি চাপিয়ে অনেক লোকের রোদে বেড়াতে বেরোন,
অনেক লোকের ঢেউ আমাদের তরঙ্গের ওপরে ওপরে লাফানো পতঙ্গের অনুভূতি দেয়,
তাতে আমাদের সুড়সুড়ি লাগে, তাতে আমাদের পুনরায় বাঘ হতে ইচ্ছে যায়—
বাঘের কথাতে আসে একটি মাছির মতন হাসি, আমাদের গোঁফে গোঁফ হয়ে বসে,
উপমায় হাস্যে রোদে ও আলস্যে সব জীবজগত যুক্তির পাশ ঘেঁসে জড়ো হয়ে আসে
আমাদের নতুন লাইনের মুখে শুঁড় তুলে বসে থাকে, মাঝে মাঝে নাড়ে—
প্রিয় কবি আস্তে আস্তে নিজেকে হত্যার কুয়োয় নেমে যান
স্বভাবে একগামী লোক
স্বভাবে একগামী লোক দেবীর স্তুতি যথাযথ পারেনা,
সে সর্বদাই দুলাইন পিছিয়ে শুরু করে এবং
পুষ্প ছোঁড়ার কালে বেজায় গায় দৃঢ়তা তাকে কুন্ঠিত রাখে,
চন্দনের বাস ফিকে হয়, উপাচার পচে এলে তার উপাসনা পায়
যন্ত্রণায় যা যা বেঁকে গেছে, ভুলে ভুলে যা যা ফেরৎযোগ্য নয় আর,
সে প্রাণপণে তার দিকে প্রার্থনাটুকু ঠেলে ধরে,
কাঁসর ঘন্টা পঞ্চপ্রদীপের উন্মাদনায় তার অসহায় গভীরতা
ঘাম তেল বলে মনে হয় সকলের
আয়ত্তে কিছু লুপ্ত
আয়ত্তে কিছু লুপ্ত রেখা ছবি এসেছে,
যুক্তির ধাপ ছেড়ে (আমরা) তাতে আরও কিছু মানুষ বসাবো,
বিন্দু বিন্দু মানুষ, যেভাবে দূরের পাহাড়ে মনে মনে বসায় পর্যটক।
(আমাদের) দুহাত ভরে ডাকে এত সুহৃদ, যেন সে আলোর পৃথিবী
(এখান থেকে) একটি মাত্র ট্রেনের দূরত্ব আর নিয়ত বদলে যাচ্ছে
(নিজেদের) মিথ বানাতে বানাতে ছেড়ে রেখে আসা আছে কোথাও
বন্ধুরা মাঝেমাঝে হাতে করে ছোঁয়, মনে হলে দু-এক টুকরো কথা টথা বলে,
(আমাদের) অন্য অন্য রূপকথারা আমাদের ছাড়াই বড় হয়ে যাচ্ছে এদিকে
আয়ত্তে কিছু লুপ্ত রেখা (এসেছে),
যার ছবি ভাগ মুছে মুছে
চলে গেছে সেইসব দুঃখের মানুষদের কাছে
গুহাচিত্র
শুরুটা পরস্পরের গায়ে ছবি আঁকা দিয়ে হয়েছিল,
তারপর কলমের ধার বাড়তে বাড়তে আঁচড় —
ক্ষত থেকে কথা এঁকেবেঁকে বয়ে
ব্যথার পুঁটুলিখানি জন্ম নিল,
ক্রমে তার হাত হল পা হল
অপূর্ব চোখ হল হাঁটা হল,
ব্যথা পেকে টসটসে হল যখন তার মুখে এল কথা
খড়ের গোল্লার মতন সে
কী বিশাল কী শুকনো এক ধুধু-র মধ্যে দিয়ে
শুধু এদিক আর ওদিক ছুটে যায়,
তার বিশ্বাস হয় না,
কোনটা ঘুম আর কোনটা তার ঘুম থেকে ওঠা,
চরাচরময় নেই এসে তার একবিন্দু বুক জুড়ে বসে
সে নেই-ও বেশীক্ষণ থাকে না,
খেলা খেলা খেলা
পৃথিবীর রাস্তাঘাট জুড়ে তার খেলা
সাইকেল চালানো পাখি ধরা
ছড়িয়ে আছে যে!
এযাবৎ যত নীলকুঠি
পড়ে গেছে খরভূমি চাঁদের আড়াল
বোনের আঁচড় থেকে দাগ ভাই-এর আঁচড় থেকে রাগ
আঙুল লিকলিকে উঠে আছে এঁকে বেঁকে নদীর খাত
মৃত ও অনেক লাশের ধোঁয়ায়
একটি স্মৃতি রাখতে গিয়ে তার কাছে
সে গাছের বাড়বৃদ্ধি থেমে যায়
নিজেরই কথার গন্ধে এখন সে পালায়,
ঘুমের মধ্যে যদি বা চলে গেছিল বাগানে
সমস্ত গাছ রাতের ভয়ে কালো
সমস্ত পাতা এ ওর আড়ালে লুকোচ্ছে
মুখের ভেতরের স্বাদ নিয়ে পাশ ফিরেছে নদী
তুলিতে ফুল ভোরে কুড়াতে বকুল ভ্রমে পাথর
জলের করাল দাঁতে দিয়াছে পা, নবম শতক থেকে উঠে
কামুকের হাত তার কুল মান ধরে টেনেছে পাটায়
তারও বহুকাল পরে আইল ইংরেজ
জলের পাটায় বসি লিখে গেল নীলের হিসাব
এযাবৎ কামগল্পে যতো নীলকুঠি
ভাঙা ও আগাছা উপড়ে বনভোজ করবার
টান
অনেক দূরের গ্রহে কিছু প্রাণ ভাগাভাগি করে আছে,
এই বার্তা আসে বাংলা ভাষার কোলে,
মহাকাশ ধরার যে জাল তাতে
ধরা পড়ে গেছে এক মহিলা নক্ষত্র
ভাসমান বললে তরল লাগে
বা যদি ঝুলন্ত, দড়ি ও বাজিকর,
কোনওদিকে টান নেই যে পাথর
তাকে বদযুক্তি সবদিকে টানে
যে দূরত্ব বছরের হিসেবে মাপা হয়, তারও দূরে
শীত শীত শীতে ডুবে তারা অপেক্ষা করে,
নিজের মনে ওলট পালট খায়,
আর ভাবে, কখন কার মন একটুখানি ফাঁক হয়
কখন কে শব্দের আকারে ধরে তাদের কালো বিরাট শূন্য