ট্রেন যখন আলিপুরদুয়ার ষ্টেশনে থামল ঝড়ঝড়িয়ে বৃষ্টি হচ্ছে। বাইরে গাড়ি থাকার কথা। তানবীর তার জিন্সের পকেট থেকে ফোন বার করে ড্রাইভার রামচন্দ্র কে ফোন করলো। গাড়ি বাইরেই আছে, কিন্তু বৃষ্টি না ধরলে তার কাছে পৌঁছতে গেলে তারা কাক ভেজা ভিজবে। অক্টোবরের শেষের দিক, কলকাতার থেকে তাপমাত্রা এখানে বেশ কম। তারসাথে আবার বৃষ্টি। ষ্টেশনের শেডের ভেতরের একটা স্টল থেকে দু’কাপ কফি নিলো কিংশুক আর তানবীর। একটু বৃষ্টি ধরতে ষ্টেশনের বাইরে বেরিয়ে গাড়িতে উঠলো দু’জনে। গাড়িটা দুজনের জন্য বেশ বড়, একটা এসইউভি। ড্রাইভার ছাড়াও অনায়াসে ছ’জন বসা যায়। গাড়িতে উঠে ট্রলির চেন…
Read MoreDay: December 19, 2021
অভিজিৎ বেরা’র কবিতাগুচ্ছ
১ ম্যামথের সাদা দাঁত আর শৃগালির— পাতায় পাতায় বুনে যে উষ্ণীষ সে যাবে মৃত পুত্রের মাথায় যে বাজুবন্ধ সে পুত্রীর হাতায় তোল ওদের শোয়াও কবরে। যে খেজুরের বিষে ওরা মৃত— আর সে বৃক্ষে থাকে যে হুর ওকে দিও দাঁতে গাঁথা শকুনির মাথা। শান্ত কর শান্ত কর ওকে কে জানে আরও কত চাই ওর কচি কচি শিশুশব কাঁচা! ২ কপাল পড়তে পারি। যে বালক সামনে দাঁড়াল তার মুখে তাম্বুল সুপারি। তার কপাল পড়তে পড়তে— ভয়ে চোখ বন্ধ করি। সে শকট থেকে মুখটি বার করে। থুতু বাইরে পড়ে। বাইরে থাকা বিরাট কান্ডতে…
Read MoreExhibition of Sculpture by Trishit Mondal
Paintings of Nandini Talukder
আমেরিকা এক হিমায়িত চিৎকার
২০০৪ সালের কলকাতা বইমেলার সময় আমার বয়স ২৫, ছটফটে, রক্তে স্বভাবকবিত্ব, যেকোনও কথায় মিলিয়ে দিতে পারি অন্ত্যমিল, যেমনটা হয় বা হত নয়ের দশক ও তার অব্যবহিত পরের কফিহাউসতুতো কবিদের, একশ বছর আগেকার রিলকে কে নকল করে কবিতার আদর্শ স্থির করা, দূর মফস্বলের গ্রন্থাগারিক কবি, শহরের করণিক কবি, অধ্যাপক কবি কেউই আসলে কবিতার ২১ শতকের বিশ্বের সন্ধান দিতে পারছিল না, যদিও তাঁরা সকলেই সেই শতকের বাসিন্দা (নাকি নন, তাঁরা আরও বেশি করে ব্রত পুজো পার্বণ হাতে তাগা তাবিজ মা দিয়েছে আংটি)। বহু পরে বুঝেছি পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি আসলে শুধুই প্রাচীনে আস্থা রাখে,…
Read Moreআকাশ রায়ের কবিতাগুচ্ছ
মাস্টারমশাই যত না লিখি তার চেয়ে কাটাকুটি খেলি বেশি ঘুমাবো এবার,না কাটলে শূণ্য পাবো কীভাবে! ধুতির কোঁচড়ে মাস্টারমশাইয়ের ব্যর্থতা উঁকি দেয় প্রণামের অছিলায় দেখেছি কয়েকবার সত্যি বলছি স্যার-আমি কেটে গেছি শূণ্যে ভরিয়ে দিন আমায় তারপর সাদা খাতায় ফুটে উঠুক- এক অস্থির বালিকা যে প্রতিদিন জল দেয়,ছায়া দেয়,মাথায় মাখিয়ে দেয় পাহাড়িয়া ঝুরো মাটি সফলতা কি এতো সহজ মাস্টারমশাই? ভেবে দেখুন তো,পুণ্যের অহংকার বেশী নাকি শূণ্যের… সার্কাস শরীরে অজানা জ্বর, ভেবে দেখো আজ মিলিত হবে কিনা। বাতাস বেয়ে নেমে আসছে ধূসর সার্কাস।ট্রাপিজের দুপাশে তুমি আর আমি। আমাকে নির্বস্ত্র করে নাচাও তুমি।…
Read Moreযুগলবন্দীঃ কবিতা না ছবিতা
বহির্জগৎ আমাদের হৃদয়বৃত্তির রূপে রসে রঙে স্পন্দিত হয়ে অন্তরমহলে যে অপরূপ মানসজগৎ গড়ে তোলে তার পরতে পরতে জড়িয়ে থাকে আমাদের বিস্ময়, প্রেম আর কল্পনা। আমাদের সুখ দুঃখ, ভালো-লাগা, মন্দ-লাগা, ভয় ও আনন্দের রাগিণীতে বাজতে থাকে চিত্তবীণা। যখন সেই অন্তরবাসী অব্যক্ত ব্যথাটি নিজেকে ব্যক্ত করতে চায়, তখনই সেই সামান্য আমিটি হয়ে ওঠে কবি, শিল্পী বা আলোকচিত্রী। কিন্তু অন্তরের এই অপরূপ রাগিণীটিকে রূপের মাধ্যমে ব্যক্ত করতে গেলে বচনকে যেতে হয় অনির্বচনীয়তায়, ভাষাকে ভাষাতীতে, চিত্রকে কল্পচিত্রে। তো এই চিত্র হ’ল গতিশীল চায়ীর তারণ বর্ত্তমান থাকে যাতে, picture বা image অর্থে প্রচলিত। অস্তিত্ব…
Read Moreনিউটন – ৬
‘মার্ভেলাস টেলিস্কোপ অফ মিস্টার নিউটন’ ১৬৬৭-র বসন্তের মাঝামাঝি কেমব্রিজে ফিরে এলেন উলসথর্পের বছর পঁচিশের সেই যুবক। যুবকটি কি বুঝতে পারছেন যে তিনি একজন বিরল প্রতিভার অধিকারি? প্লেগ মহামারির আগের নিউটনের কাছে নিজের ঐশ্বর্য অনাবিষ্কৃত থাকারই কথা। কিন্তু আঠার মাস গৃহবন্দী দশায় যে-সমস্ত অভিনব ভাবনার, ‘গ্রাউন্ড ব্রেকিং’ আবিষ্কারের ভিত্তি স্থাপনের কাজ সেরে কেমব্রিজে এবার এলেন, তারপর নিশ্চয়ই নিজের বৈজ্ঞানিক সত্ত্বার অস্তিত্ব টের পেয়েছেন তিনি। কেমব্রিজে ফিরে এসে প্রথমেই, ইউনিভার্সিটির ব্যাচেলর গাউন ও দু-জোড়া জুতো বানিয়ে নিলেন নিউটন এবং বেশ কিছু প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কিনলেন। ওই সময় তাঁর হিসাবের খাতা (Fitzwilliam Notebook) থেকে…
Read Moreশৌভ চট্টোপাধ্যায়ের কবিতাগুচ্ছঃ
অনন্ত-গাথাঃ একটি অতিবাস্তব উপন্যাসের খসড়া ১ যখন সকাল তাকে, অন্ধকার সমগ্রতা থেকে, সহসা বিচ্ছিন্ন করে পর্দার ফাঁক দিয়ে, সকালের আলো যেভাবে ছেতরে পড়ল মেঝের ওপরে, যেন তাকে ডিমের কুসুম বলে ভ্রম হয়— তেমনি কমলা আর সামান্য আঁশটে গন্ধ, ঈষদুষ্ণ। ডিমের প্রসঙ্গ উঠলে, জন্মের কথা মনে পড়া স্বাভাবিক—ভাবো, সেই আলো, যোনির মাংস-ছেঁড়া, রক্তমাখা আলো, কী ভীষণ যন্ত্রণার, সদ্যোজাত শিশুটির কাছে, যা তাকে কাঁদিয়ে ছাড়ে! এবং, বাধ্য করে শ্বাস নিতে, মায়ের বুকের ওমে, অন্ধকারে ফিরে যেতে প্ররোচনা দেয়! যেন সেই কান্না থেকে মানুষের ভাষার সূচনা— ক্রমশ সমস্ত বোধ, বিপন্নতা, যন্ত্রণার গায়ে পৃথিবীর…
Read Moreধরে নেওয়া যাক ভ্যান গখ
ধরে নেওয়া যাক, ভ্যান গখ এই জন্মে এক কফি শপের মালিক। মালিক অবশ্য নাম কা ওয়াস্তে। সে কেবলই সুযোগ খোঁজে ছোট্ট টাউনটা ছেড়ে বেরিয়ে পড়তে। ওর যে কফিশপ সেটা বড় শহরের লাগোয়া আরেকটা শহর। নদীর এপার ওপার। ওর কাফেটা থেকে বেরিয়ে মিনিট কুড়ি সড়ক পথ ধরে এগিয়ে সেতু পেরলেই বড় শহর। সেতুর নীচ দিয়ে বয়ে গেছে মজে যাওয়া নদী। ধরা যাক, ভ্যান গখের নাম এই জন্মে অর্পণ সরখেল। অর্পণ সরখেলের নাম যে ভ্যান গখ সেটা অবশ্য সে নিজে জানে না। ওর খুব কাছের বন্ধু যেমন মহুল, জানে। প্রায় বছর তেরো’র…
Read More