সৌমনা দাশগুপ্ত

সৌমনা দাশগুপ্তের কবিতাগুচ্ছ

মার্জারস্বভাবী 

কোঁচকানো তামাকপাতা, শান্ত একটি পাইপ
নির্জন চেয়ারে রাখা আছে 
 
নাবিক ডেকেছে এক ধোঁয়ার প্রসবঘরে 
প্রপেলারে যাচ্ঞাচক্র, অহো পাঞ্চজন্য শাঁখ 
                     কী স্পর্ধা, কী স্পর্ধা
ব্যাঙাচিও ফাল পাড়ে, সে-ও এক স্প্রিং
ইশারায় আমিও নেচেছি কত কত 
কুড়িয়ে বেড়াই যতো হরির লুটের খই 
                     খুচরো বাতাসা 
 
দুপকেটে নুড়ি ভরে নেমে যাব আর্টেজিও কূপে
                ভাবি, আকণ্ঠ স্নান হবে আজ 
শ্রীমতী সমুদ্র এসে নাকে চোখে ঢুকে যাবে
নোনাবালি, জ্বলে যাবে কর্নিয়া 
 
রেটিনোপ্যাথির দিন। অন্ধ গায়ক গান গায় 
গান নয়, চোখ থেকে গড়িয়ে নেমেছে রক্ত 
                   হেঁটে যায় মীড়ে মীড়ে
 
পার করো আমারে দিনমণি
আমিও তো বেলা গেলে খুঁজে ফিরি জলসত্র 
 
আঁশের পর্দায় ঢাকা দিন 
দানা দানা ডিমে ঢাকা দিন
 
এ নক্ষত্র মার্জারস্বভাবী 
 
ঢেউটিনে ছাওয়া এক ঘর, রোদ ঠিকরায় 
 

অধীত রৌদ্রের কাছে

ঘুমের ভেতরে শুধু কাটাদাগ, ঝুঁকে আসা ক্ষতরেখা
                             চলকে উঠছে চোখ
 
ময়ূর এভাবে নয়, ময়ূর ওভাবেও নয় 
খুঁজে গেছ নীলরং, তার নানাবিধ মুড
স্যান্ডডিউনের পাশে আচমকা জেগে উঠে 
বন্ধ মুঠোর মধ্যে হঠাৎই পেয়েছ এক 
তুলোট কাগজে লেখা জন্মছক, হায়ারোগ্লিফিক কথামালা
 
অধীত রৌদ্রের কাছে নতজানু হয়ে আছে পরম খর্জুর
 
গুড়ি  মেরে এগিয়ে এসেছে সেই চিতা
প্ররোচনা, এসবই প্ররোচনা ছিল
 
মাংসাশী হাততালির ভেতর ভিজে যাচ্ছে 
ফলিত জীবনবিজ্ঞানের হাড়গোড়
             স্নায়ুজালিকার আঁকিবুঁকি 
 
হোক হোক পুষ্পবৃষ্টি হোক, হোক হোক মাংসবৃষ্টি হোক
 
দাঁতে দাঁতে ভরে যাক পাড়া
 
তোমার সে নতমুখী বেডরুম, দীঘল আয়না জুড়ে 
কে যেন পিচকিরি দিয়ে ছিটিয়ে দিচ্ছে রক্ত
কে যেন পিচকিরি দিয়ে ছিটিয়ে দিচ্ছে বমি আর পিত্ত
 
যকৃৎ রঙের দিন, যকৃৎ রঙের রাত
 
কে বাজায় এই ডুগডুগি, কে নাচায়
এমন উলম্ফনের ক্ষণে ছুঁড়ে দেয় 
তামার পয়সা, সিকি ও আধুলি
 
রেজগি চাই, রেজগি চাই
 
বরং চুল্লির ভেতর, বরং আস্ত চুল্লিটাই 
দেখছো না এই এত্তো বড়ো হাঁ
বুজবে না, বুজবে না, এই হাঁ আর বুজবে না
এই হাঁ আর বুঝবে না, বরং আস্ত চুল্লিটাই…

 

দাঁত-প্রকল্প

কোষে কোষে লতিয়ে উঠছে আগুন 
 
ফুলে ফুলে কাজলের গুমনামী 
ঝুলে আছে; যেমন ঝুলেছে মানুষেরা 
গাছ থেকে, কড়িবরগার থেকে, সিলিংফ্যানের থেকে 
 
একচোখো ঈশ্বরের মতন আমিও দিয়েছি তাকে 
বরষাঝালর, হাড়ের মেখলায় তাকে করেছি ঈশ্বরী  
 
ছোঁয়াছুঁয়ি খেলা, তখন কুমিরডাঙা খেলা
লাল লাল স্বপ্নেরা আমার জলকে নেমে 
আমারই দাঁতের নিচে পিষে যাচ্ছে কচি কচি স্বপ্ন 
 
ওরা সব ঘাস হয়ে ফুটে ওঠে আমার বাগানে  
ওরা সব দাঁত হয়ে ফুটে ওঠে আমার মাড়িতে
 
আমি তো ক্যানভাসার এক 
দাদের মলম, জড়িবুটি, বাঘনখ ফিরি করি 
 
আমার ভেতরে বসে পুতুল সাজায় কাঠুরিয়া  
ছিঁড়ে ফেলে ণত্ব-ষত্ববিধি, পঙ্‌ক্তি-বিভাজন   
সুষুম্নাবৃক্ষের গায়ে টাঙিয়ে দিচ্ছে লটকনা ফল 

 

 আদিখর্পর 

বারিষনখদন্ত ধারে ছিঁড়ে যাওয়া বাতাস
জোছনা-বিম্বিত শিলাপট্ট 
 
ম্যামথের বৃংহণ শুনে জেগে উঠি; দেখি  
লিখে চলেছেন তাঁর ঝালাইয়ের লোকগাথা 
                      আগুনের কারিগর 
 
ছাদ ফুঁড়ে উঠে আসছে গাছ। জাদুবইয়ের 
পৃষ্ঠা থেকে ছুটে আসে জঙ্গল। হাসছে, হাঁটছে
                            জড়িয়ে ধরছে
 
ওহে ওহে, এভাবে টেনো না
 
ছম্মকছল্লু এক রক্তের ধারা, তার তো ঝরনার স্বভাব
আমারও লেবু লংকার দিন ট্রালা লা লা… পিকনিক হবে না
তবে কড়াই চাপাই, জ্বেলে দিই আদিখর্পর 
 
কাঠবাদামের খেতে তারা সব শুয়ে আছে
             ফ্লেশটিন্ট কালারের অঙ্গরাগ
 
রাত্তির পাহারা দিচ্ছে দরজা। রাত্তির পাহারা দিচ্ছে ধনুকের ছিলা
 
বে-এক্তিয়ার পড়ে আছে মাতৃমুখী গাছ
 
শ্রীল শ্রীযুক্ত শ্রীমান কাকেরা সব, তারা সব ছ্যাপ ফ্যালে
গুয়ে-মুতে কী ভাসান ভাসালো! রান্না করো রান্না করো
বাপের নাম, মায়ের নাম ধুয়ে মুছে 
                   যা-হোক একটা কিছু সবজি চাপাও
 
খিদে, মহা মহা খিদে, এই হাঁ-মুখে বিশ্বরূপ
এ হাঁ-মুখে ধকধক করছে সময়। জ্বালাও, জ্বালাও 
                পুড়েঝুড়ে ছারখার হোক এই মুখ   

 

গোখুরার জিভ 

ট্রেন ছুটে যাচ্ছে গান ছুটে যাচ্ছে
আজ আর বাঁশি বাজিও না, বরং 
মুখে তুলে নাও এই গোখুরার জিভ
বাজাও তাহাকে সাপুড়িয়া 
 
তূণ থেকে ছুটে যাচ্ছে শুদ্ধ স্বর
তূণ থেকে ছুটে যাচ্ছে কোমল ধৈবত 
 
ফুঁ দাও বাতাসে বাতাসে 
হাওয়া হোক; শব্দের ছবি হোক 
 
একটি গোলাপ এসে ঢুকে যাক ঘরে
অহো গোলাপসুন্দরী, কালো রং; বেশ বেশ
 
নদীতে ভেসে যায় কার মুখ 
নদীতে ভেসে যায় কার মুখ 

Facebook Comments

Related posts

One Thought to “সৌমনা দাশগুপ্তের কবিতাগুচ্ছ”

  1. PANKAJ CHAKRABORTY

    চমৎকার লেখা।

Leave a Comment