সুমন সাধু

সুমন সাধুর কবিতাগুচ্ছ

 

হাউ আগলি ইউ আর

অভ্যাস ভেবে দু’হাতে বড়ো যত্ন করে তোমাকে সরাই। যার একটি হাত ‘শাস্তি’ গল্পের ‘মরণ’-এর মতো নিষ্পাপ। আর একটি ঋতুস্রাব মাসিক ঘোচায়। এখানে অল্পের চেয়েও দামী মাঘ মাস। বুকের কলিজায় লেখা এক মাঘে তো শীত যায় না। কত কত মাঘ গেল। মৃতপ্রায় হয়ে ঘুমিয়ে রইলে। ভেজা ডানা শুকোতে শুকোতে তোমার ছটফটানি। এ কথা মেনে নিলে তোমার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হবে না। বরং চলো, আরেকবার ডানা ছাঁটি। তোমাকে সরিয়ে ফেলি— যত্নে— যন্ত্রণায়।

 

স্ট্রেঞ্জ কাপল

ফ্রিদাকে দেখেছিলাম দরবেশে যুদ্ধ চলাকালীন। মাথায় গোলাপি ফুল। আঙুলে বাহারি আংটি। ঠোঁটে রক্তজবা। চিকন চোখ টিয়া রঙের। মধ্যরাতের ব্লুজে আক্রান্ত হওয়ার পর সমস্ত সম্ভাবনা উড়িয়ে তিনি ছিলেন ডায়েরির খসখসে পাতা। আজ শুধু তোমাকে শেষ করি। ডায়েরির পাতা ওল্টায়। আর দেখি তাতে কত রং, কত ছেঁড়া ছেঁড়া দাগ, কত রক্তের ফসল।

             প্রিয় ফ্রিদা, 

             তোমার খিদে পেলেই আমারও খিদে পেয়ে যায়। কত কত রাত এভাবে না খেয়ে কাটিয়ে দিলাম। তুমি খেয়েছ কীনা জানা নেই। এলোমেলো এসব চিন্তা আমাদের সন্তান। আমাদের গোপন সম্ভাবনাটুকু। তোমাকে আলতো ছুঁই। ব্লুজ শেষে আমাদের যোনিতাপ কঁকিয়ে ওঠে। যোনি— যন্ত্রণার, উদ্বেগের, সন্তান স্নেহের। উড়ে যায় বৃথা পুরুষাঙ্গের ক্যারিকেচার।

 

রিয়্যাল ওয়ার্ল্ড

সেইসব সবুজ ভর্তি দেওয়ালে হাওয়া লেগেছে। এমন হাওয়া, রিখটার স্কেলে হবহু মেপে নেওয়া যাবে। অক্ষরেখা থেকে সরে সরে দেওয়ালে ফাটল ধরে। দুই ভাগ দেওয়াল তখন মনের আয়না। গতজন্মের ক্ষতটি বেরিয়ে আসে ধীরে। দেখা যায়, আমাদের সর্বনাশ আর সবুজ রঙের মলাট দেওয়া হারানো খাতা।

 

নক নক, ওপেন দ্য ডোর

প্রিয়মুখ মনে পড়ার আগে দুইবার স্নান সেরে ফেলি। হাতে হাতে ফেনার মধ্যে নিজেকে ঘষি। বাথরুমের জানলা থেকে শুনি কাকপক্ষীর রা। দরজা ধাক্কার আওয়াজে যাদের ঘুম ভাঙে, তাদের জন্য তোলা থাক প্রথম চুম্বন। মাথাটি নত। প্রিয়মুখে কখনও জল শুকোয় না।

 

রেইন রেইন গো অ্যাওয়ে, কাম ব্যাক অ্যানাদার ডে

‘এখানে প্রস্রাব করা নিষেধ’- দেওয়ালে লেখা আছে বড়ো বড়ো করে। তার ঠিক নিচেই পেচ্ছাপের হলুদ হলুদ রেখায় নির্মিত সারিবদ্ধ গ্রাফিতি। যেন এইমাত্তর কেউ প্যান্টের চেন খুলবেন। কেউ সশব্দে থুঃ করে চট করে উঠে পড়বেন বাসে। শহরটা পাল্টাচ্ছে! কোন ছোটোবেলায় কেউ বলেছিল আসলে নিজে থেকে কেউ পাল্টায় না, সবাইকে পাল্টে যেতে হয়। আমরা দু’জন, যারা বন্ধু হতে পারিনি। বৃক্ষ হতে পেরেছি। যে বৃক্ষের নিচে একজন প্যান্টের চেন খোলা সহযোগে দেখে নিত নিচের ঊর্বর মাটি, শিকড়। হাঁ-মুখো আমি হুব্বার মতো দেখে ফেলতাম ওর কনুইয়ের পাশে জোড়া কালো আঁচিল। তার মুখ সদা বিষণ্ণ। বহুকালের ভেতর লুকিয়ে থাকত একফালি লম্বা একটা বেড়াল। তাকে মাছ দাও, কাঁটা দাও, দুধ দাও- এমন হম্বিতম্বি ছিল না কোনোদিনই। 

‘হোয়াট ডু ইউ থিংক অ্যাবাউট সেক্স’- চিঠি পেয়েছিলাম নভেম্বরে। তারপর কেউ আর হিসেব কষিনি। কৃষিনির্ভর জেরুজালেমের দেশে আমার গর্ভাবস্থা মাতৃভাষা বিকট চিৎকার করেছিল সেই বিকেলে। ককিয়ে ডেকে ফেলেছিল দু’টো কাক। এরকম পোড়া স্করপিয়ন শহরে তারপর আর চিঠি পাইনি এলোমেলো। পাড়ার কাকিমাদের শুকোতে দেওয়া শাড়ি ওড়ে শুধু, মিঠি সকালে শুধু গেয়ে ওঠে আরেকটা গান, মাছওয়ালা আর ভ্যান নিয়ে হাঁক দেয় না। কিন্তু তবু কী একটা শুধু শুধু শুধু… ককিয়ে কাঁদে কেউ। বুঝতে পারি না। 

যতবার বৃত্তের বাইরে কালো হয় আকাশ, ততোধিক পাল্টে যায় বন্ধুর বইয়ের প্রচ্ছদ। সেখানে হস্তাক্ষরে লেখা আছে, আমরা এরকমই থাকব। এরকম, অন্যরকম। আমরা বাঁঁচব, যে যার মতো। আশ্চর্যরকমভাবে বাঁচব। মরবও বারবার। 

কথা মতো মরি। বারবার মরে যাই। বাঁচিও। জন্ম আর মৃত্যুর বাইরে আশ্চর্য হাস্যকর তামাম দুনিয়া। যার রসবোধ চমৎকার। টাকা পয়সার অভাব নেই। বিয়ে থা করেনি। বন্ধু বলতে ওই হাতে গোনা। শখ বলতে লেখা টেখা৷ গাছ বলতে বাড়িতে শুকিয়ে যাওয়া টগর। আর পেচ্ছাপ পেলে কেউ একজন ছুটে পালায় ওই শুকনো দেওয়ালে। গ্রাফিতি। চেন খোলে। বাস ধরে। আর প্রিয় বৃক্ষের নিচে একটা করে ছায়া কমে যায়।

Facebook Comments

Related posts

One Thought to “সুমন সাধুর কবিতাগুচ্ছ”

  1. অরিত্র সোম

    খুব ভালো লাগল সুমন দা। বিশেষ করে শেষ লেখাটি, ফ্রিদা…

Leave a Comment