শ্রীদর্শিনী চক্রবর্তী

শ্রীদর্শিনী চক্রবর্তী’র কবিতাগুচ্ছ

বর্ষার লেখা

আকাশে প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয়, তবুও আষাঢ় তুমি
ইদানিং হারিয়েছ পুরাতন গ্লোরি।
শহরে কদমের ফুল এখন বাড়ন্ত আর
বিরক্ত মুখের কাছে হেরে যাচ্ছে সুখী বর্ণমালা।
তাও এই বিকেলের নিজস্ব গহ্বরে ফিরে
ঠুমরির বিলাসিতা করি আমি ক্লান্ত নাগরিক –
দেশ যে রাগের নাম তাকে ভাঙা যায়নি এখনও।

 

বুগেনভিলিয়ার ডাল পাতাশূন্য পুঁতে দিয়ে অপেক্ষায় আছি
গোলাপি দুপুরের।
কাঁটার স্পর্শে যে ব্যথা – বলে দেয় কিছু তবু হল – তার।
এ ঋতু টুকরো থেকে গাছ হয়ে ওঠার কথায়
সম্ভাবনার মত মায়া ছড়িয়েছে মাটিময়।
তুমি তাকে ভালোবাসো –
অপেক্ষা করো দুটি-একটি সবুজ কুহকের
মৃত্যুময় ঋতুর মধ্যে এইসব জন্মবৃত্তান্ত
সমস্ত ক্ষতের উপরে ঢেলে দেয় ছায়ার প্রলেপ।

 

ঘুম থেকে উঠে দেখি অবিরাম ঝরে পড়ছে কাঙ্খিত বারিশ,
ঘরে ঘরে দেখো আজ খিচুড়িদিবস।
অথচ নিকট অতীতে সেই পুড়ে যাওয়া ঘরগুলি
অবিরাম ভিজে যায় – অগণিত ফেরানো পিঠের দিকে দ্যাখে
যতই ধোয়ামোছা হয় ছাই অনর্গল উঠে আসে – কিছুতে থামেনা।
ফোড়ন ছাপিয়ে আসে পোড়া মানুষের গন্ধ
আমারও রান্নাঘরে গা গুলিয়ে ওঠে।

 

অতিবৃদ্ধ আষাঢ়ের গায়ে মাঝে মাঝে খেলা করে
কাঁচা রোদ – শরতপ্রতিম।
সে বিস্মৃত হতে চায় শ্রাবণের মত তার অঝোর যৌবন কিছু নেই
কদমফুলেরও মন আজকাল বিমুখ হয়েছে।
বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠের কিছু ফেলে যাওয়া নিম্নচাপ
নিতে নিতে ক্লান্ত যখন
রথের মেলায় দ্যাখে অক্লান্ত মোটরবোট
ঘুরে যাচ্ছে গামলার স্রোতে।
সে বুঝে গিয়েছে এই সীমাবদ্ধ জলই আসলে
ওর প্রাপ্য – সমুদ্রসমান।

 

কাকভেজা রাত্রির গায়ে কে যেন ছড়িয়ে দিয়েছে
সদ্যফোটা বেলিফুল, হাসনুহানার ইতিকথা।
ঘ্রাণ এসে ছুঁয়ে দিচ্ছে আমারও শরীর –
স্থানে স্থানে রোম-ফুল ফুটে উঠছে আমারও বাগানে
স্বার্থপর দৈত্যের মত কী যেন দারুণ বিষাদ
ছোট ছোট ইচ্ছেগুলির খেলাধুলা এইখানে নিষেধ করেছে।
ফুলগুলি ফুটে আছে –
ঘ্রাণ খেলা করে যাচ্ছে ইতিউতি ভাঁজগুলি ধরে।

Facebook Comments

Related posts

One Thought to “শ্রীদর্শিনী চক্রবর্তী’র কবিতাগুচ্ছ”

  1. ঈশিতা ভাদুড়ী

    শ্রীদর্শিনী, খুব ভালো কবিতা

Leave a Comment