বৈশাখী মিত্র

বৈশাখী মিত্র’র কবিতাগুচ্ছ

হে হরিণশিশু

১.

ক্ষিতিপদ্মাসনে তোমার চন্দনগন্ধ রেখে আগুন জ্বেলেছি
সন্ধিপুজোর কমলের মতো ফুটে উঠেছে শরীর
বৃষ্টিমাসের জলে কাদার আশ্লেষে ফুটে উঠেছে চারা
আঙুল থেকে খুলে যাচ্ছে কুশাঙ্গুরি !
তোমার গ্রীবাভঙ্গির কাছে নত হয়ে বসি
দু-একটা স্ফুলিঙ্গের আগুনে ফুটো হয়ে
যাক গরদ
স্তুতি করি মৃত্যুর, এসো

 

 

২.

তোমার মতো ঐন্দ্রজালিক দেখেছি স্বপ্নে
শ্বেত মর্মরে বলিদানের রক্ত সে মুছে দিয়েছিল মন্ত্রে
আকাশ থেকে কবুতর পেড়ে তার দম্ভের বুক
শূন্য করে প্রজাপতি উড়িয়েছিল, হাততালি!
তুমি মরুপ্রদেশে গমক্ষেত বুনেছো
তন্ত্রীর মেদসুতোয় বাজিয়েছো ভৈরবী
একশো শিখায় পুড়ে গেছে আমার নাভি

 

৩.

ঝুরো মৃত্তিকা হয়ে কেঁচোদের পেটে ঢুকে যাই
নাহয় লেপ্টে নাও তোমার কাষ্ঠল বুকে
এমন ঝিমধরা শ্যাওলা জলতল আর ভালোলাগে না
লাল শিমুলের পাপড়িগুঁড়োর মতো ধুলো
অমূল্য ভেবেছি, গৌরাঙ্গ !
এখন শ্যাওলা আঙুল সবুজ নখের ভেতর মোহফুল
ফুটে আছে চতুর্দশীর মতো ছমছমে জঙ্গম
শুনেছি মৃত্যুর আগে চাঁদ উন্মাদ হয়ে যায়

 

 

৪.

দারুমূর্তিতে এসে বসো
তোমার অধিষ্ঠানের পায়ে মাথা রাখি
এত শ্বেত রেখেছি ধমনী ছেনে,
পুষ্প ছেনে
তোমার তাম্রকুন্ডে।
অস্তরাগের মতো লাল পদ্মের
হিংসার মতো সবুজ মৃণাল
ছেড়ে উদ্যত হলে মরালগ্রীবা ছিন্নে
শব্দ হয়ে বসো নিঃশব্দ পত্র পল্লবে তৃণে

প্রেম হয়ে এসো দারুব্রহ্ম

 

 

৫.

নোঙরে ধরা পড়ে আছে মেরুদন্ড
সহস্র বালিয়াড়ি উপত্যকা।
সমুদ্রের আশ্লেষে ছিঁড়ে গেছে শিরা
উত্তপ্ত ঝোড়ো পালের মতো অভিমানী ঠোঁট
জবাকুসুমসংকাশ নাচে ঢেউয়ের চূড়ায়
অলৌকিক রাত শেষে।
একটানা স্তব্ধতার আলো
মাছনৌকার মতো দূরগামী, অথচ
হাত থেকে খুলে গেলে সময়
নক্ষত্রের আয়ুরেখা বদল হয় !

 

 

৬.

কাঁচাহাতে খুলে ফেলেছো এ কেমন জলাধার
চাঁদের দুধে সেঁচে যাচ্ছে মাটিজমাট।
ধান্য বসুন্ধরা তোমাকে আগলে নিতে চায়,
নিবিড়
কাঁসার থালায় মাছের মুড়ো জুঁইফুলের মতো অন্নে
কাঁচা হাতে খুলে ফেলেছো প্রপাত
কোরকসন্ধানী ঢেউ
ঘুরপাকের মূর্ছনায় তোমাকে হে হরিণশিশু
একবার গিলে নিচ্ছি
একবার ভাসিয়ে দিচ্ছি রক্তাল্পতা রঙে…

Facebook Comments

Related posts

Leave a Comment