বঙ্কিমকুমার বর্মন

বঙ্কিমকুমার বর্মন এর কবিতাগুচ্ছ

বঙ্কিমকুমার বর্মন এর কবিতাগুচ্ছ

১.
শূন্যময় কত কিছুনা এই দুটি হাতে । ছায়াসম্ভবা দীর্ঘ প্রাচীর জড়িয়ে ধরে বিন্দু মাত্র ধ‍্যানে । জলস্তর ছুঁয়ে থাকে সব আশ্চর্য আশ্রয়ে । তুলে ধরুক নদীর ভাষা অদৃশ্য সমর্থন । আমিও চেয়েছি তার যাপনচিত্রে সরল কক্ষপথ । কিছু শ্রাবণের আবদার ফেরায়নি বরং ঢের দিয়েছে আশ্রয় । কত কিছুই সারল‍্যে জিহ্বায় বসতি গড়ে ।

খোলামেলা বারান্দার যাপন চাষ লম্বালম্বি ভাবে শুয়ে পড়ে আমার ভেতর, ঘুমনোর ভান করে । আর পোড়বাড়িটা ঝুলে থাকে পৃথিবীর কোনো নবীন দৌড়ের শিকড়ে ।

 


অবশেষে তোমাকেই ভাবি দূরত্ব বাজিয়ে । কতটা ডুব দিলে পেয়ে যেতে পারি কেজি কেজি বিশ্বাসের হাঁড়ি । আর পাথরের ভাবনার এলোমেলো নিঃশ্বাসের চাবি আমাকে খুলে দিতে পারে গুছানো সুখের ঘর ।

ক্লান্তির পায়ে রাখি যত দুর্বার পথ । শূন্যপরিধি ভেঙে গড়ি স্নেহময় গাছপালার মৌন নিবাস । তোমাকে লিখি শত শত প্রাতঃভ্রমণের নিবিড় সূর্যোদয় । দোষ দিই শুধু নিজেকে না জানতে পারা আমি একজন্ম ধূ ধূ বালিয়াড়ি ।

 


মুহূর্তের ডানায় গজিয়ে ওঠে যে ভবিষ্যৎ , আমি তাঁর গ্রাম‍্য তরুণ যাচ্ছেতাই রথ । এই তো রেখে গেল বনপথে স্নিগ্ধ পরিপাটি । আমি ভ্রাম্যমাণ ঢের তেমন আদতে স্নায়ুর রসিক ঘর । এখানে কোনো তাড়া নেই ফিরবার । যথা গান বিছানো হয় বিস্তারিত আকাশের বৈভবে । বৈভব এলোমেলো পা রাখে বিস্তৃত অরণ‍্য রোদনে ।

ঢুকে পড়ছে আগামীকালের ফাঁকা মাঠ চতুর বিছানায় । ফসলে ফসলে আলোর কারবার । স্বয়ংশাষিত হয়ে উঠছি বারবার বাক্সতোরঙ্গে ।‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌ তবুও অস্পষ্ট হয়ে উঠছে একা রাত্রির শশ্মান ।

 


অনেকটা বিরতির পর লেগে আছে নিমফুলের মধু । শেষে আমিও দাবিদার গৃহহীন ঢেউ । কঠিন প্রশ্নে আঁচল খুঁটে নিই । অধিক পরিমাণে আকাশ জমেছিল ধূলোর সারমর্মে । স্নানদৃশ্যের গোড়ালি পেরোলেই দূরের শহরে যাব একাকী । আকাঙ্ক্ষার ঘোলা জলে হয়তো কিশোরবেলা ছিপ ফেলেছে বেশি ।

একক অভিজ্ঞানে ভিজেছে লোমহর্ষক সন্ধ্যারাতের আলো । কিছু দুঃখ থাকা জরুরী জীবনের দলিলে । দূর্বাঘাসের স্বাক্ষর খুলে দেয় স্বপ্নের নীড় । ‌ তুমুল অবলম্বনে জ্বেলে যাও ইচ্ছামৃত্যুর গান । আগুন ডেকে নাও ঈষৎ রুপালি পর্দায় ।

 


কিংবা সাদা অহংকার ততটা বাক‍্যকুট নয় । যেভাবে খসে পড়েছিল লোভীর শিকার । উপাখ্যান থেকে সরে এসে দু’হাত বাড়িয়ে দিয়ে গত জন্মের পাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি । ছিটকে পড়েছি দশ দিকে । ততটা পদব্রজে চৈত্রমাস নেওয়া হলো না । জল শব্দে ছুঁয়েছি উদার হাওয়া।

কালো জল আলিঙ্গনে উঠে আসে সমূহ সম্ভাবনায়। কাছেই রয়েছি অপ্রস্তুত প্রাকৃতের বয়ঃসন্ধিতে । শোনাবে পাঁচিল নিঃশব্দে যাযাবরের সান্নিধ্য লাভের ইতিহাস দু’হাতের মুঠোয় । বস্তুত ছুঁয়ে থাকুক কাঠিন্যে ধবলতার চরম দেশ ।

 


ব‍্যর্থতার গায়ে ডুবে আছে হলুদ ঘর । এই ঘরে বহুদিন নির্বোধ শুয়েছিল চুপিচুপি । অবশেষে ভাগ‍্যরেখার কাছে বন্ধক রেখে দিন গুণছে আগামীর । কোথায় উড়ে চলে এত অনামী বন্দর । যাদের কোনো পথের চিহ্ন নেই শরীরে । এসেছে ভিখিরি ঝোলার পরাজয় । কারা মুকুটের উল্লাস পড়ে শেষ দ‍্যাখছে চাঁদের অস্ত । কোনো প্রণামি নেই । ঝাঁকে ঝাঁকে নৌকার অবসাদ ঘিরে ধরে ।

দু-পাশে স্থির ইচ্ছে মৃত্যুর ঢেউ । আমি বরং অন্ধকার চষে জঙ্গল থেকে ঘনঘোর অপূর্ণতাকেই বসিয়েছি পাশে । অর্জিত পানা পুকুরের মুখ সে-ই ভোরের দরজায় কড়া নাড়ে । প্রথা ভেঙে সে-ই তার ভেদ নিদ্রাহীন প্রহরের গুহার দেওয়ালে । এই যথেচ্ছ অস্তিত্ব ঠুকে ঠুকে পাথরে আগুন জ্বালাও নারী । পোড়া কাঠ ও হৃদয় নিয়ে জিতে যাও কলঙ্কের পরেও ।

 


অপূর্ণতাকেই আমার বড়ো আবিষ্কার মনে হয় । যার কোনো চাওড়া বুকের অবিশ্বাস নেই । সঞ্চয়ে নেই কোনো দূরত্বের রঙ । শুধু পৃথিবীর আবিষ্কৃত প্রেমজলে ডুব দিতে দিতে অগ্রসর হই নবীন ধারায় । এ কী হলো শান্ত গভীর পদতলে, আমার রচনাবলীর মধুবেলা ।

এই তো খুলেছে পথ চিঠির শেষে । ভাঙা রাত্রির আখ‍্যান আমার বুক ফালাফালা করে । বিশ্রাম — এই ভয় । উঠে এলো নির্জন বাঁক আস্তে করে পালক লাগিয়ে । কত না সরল পা শিশিরে ভিজে। ভিজে থাকা – এই অভিপ্রায় ।

Facebook Comments

Related posts

Leave a Comment