পূর্বা মুখোপাধ্যায়

পূর্বা মুখোপাধ্যায়ের কবিতাগুচ্ছ

শীত

এখন আমরা সব ভুলে ভুলে যাই।
বয়স হয়েছে। কোনও হুটোপাটি নেই।
রয়েসয়ে গল্প হয়। তারিয়ে তারিয়ে।
এ ওর সমস্যা বুঝি,সমাধান চাই।
আমাদের যৌথ সমস্যা নেই কোনও।
আমাদের শীতকাতরতাগুলি ঘুমন্ত এখন
বেলা-অবেলার অঙ্ক ভুলে গিয়ে, মুগ্ধ তন্দ্রাতুর
সূক্ষ্ম সুতোর কাজে সেজে ওঠে পশমিনা দিয়ে।

দূর

রুপোলি জুলফির দিকে তাকিয়ে নির্লজ্জ চোখ বলেছে আমায়
রোদের ঝালর দেখছি, অন্য কিছু নয়
বিদ্যুৎ এলাকা ছেড়ে চলে গিয়ে স্বীকার করেছে,
সে এই রোদের খুবই দূরাত্মীয় হয়।

ইশারা

চিত্রার্পিত ভাষা। এক তুমুল বাইসন।
আমার কীলক লিপি। রক্তে লেখা খিদে।
যে পালায় স্বপ্নে তাকে বাস্তব অক্ষরে
ক্ষুধামান্দ্য লেখে হাত। সামাজিক হাত।
হাতে ফুটে ওঠা শান্ত নিয়তিরেখায়
লিপিকুশলতাটুকু, অপূর্ব সুবিধে।

 

ঝোঁক

পাণ্ডিত্য ঝাঁপিতে সাপ

আমি রজ্জু দেখে ভাবি শূন্যেই টাঙাবো
হাতে লাঠি, মাথে কলসি, কটা চুলে কমলা ফিতে বেঁধে
এক পা এক পা করে, এধার ওধার হেঁটে যাব…

কখনও বলবো না কার বিষথলি ছিঁড়ে ফেলতে চাই।

আমি বেদেনীর মেয়ে, শূন্যে হেঁটে যাই
যা কিছু মুদ্রা পাই, স্বল্প উপার্জন।
সর্বস্ব শব্দের নেশা নগদে পূরণ করবো বলে
রজ্জুতে সর্পের ভ্রম হল না, এমনকী মরতে বসিনি ছোবলে।

 

ছাই

সারল্য আগুন। সেই আগুনের উড়ন্ত পাখার
পালক কুড়িয়ে চুলে গাঁথি, মাথা খাক হয়ে যায়
বিভূতি এক্সপ্রেস, তুমি কার কাছে আমায় নিয়ে যাবে?
আমি তো প্রত্যক্ষভাবে তাকে চাই, মহিমাকিরণে
চতুর্দিক আলো করে বিভূতিভূষণ অবয়ব
আলোকবর্ষের পারে ফুটে আছে… অথচ আমার
তাকে চাওয়া মানে রন্ধ্রে রন্ধ্রে বেজে খাক হয়ে যাওয়া
বিভূতি এক্সপ্রেস তুমি আমায় নিজের মধ্যে টেনে নিয়ে চলেছ কোথায়?
অন্ধকারে ঘাটেঘাটে জ্যোৎস্না মেখে ফুটে ওঠে সিঁড়ি সিঁড়ি সিঁড়ির ধারণা…

দিনগুলি ছাই হয়ে যায়।

Facebook Comments

Related posts

Leave a Comment