পলাশ দে

পলাশ দে’র কবিতাগুচ্ছ

 

ভবঘুরে

অন্ধ বাদ দিই উৎসব থেকে? – হুঁ
তাহলে রংপেন্সিল আর ছুঁচোলো করছি না – হুঁ
অপমান কী করবো! কদমগাছের নীচে
ঝিম মেরে থাকবে চিরকাল?

পেরেছি পেরেছি পেরেছি
পাতার মুকুট ধরতেই পারেনি
চিরকাল প্রস্তুত থেকেছি ভ্রম ও একাকীত্বে
ভেবেছে পাল্টামার, ভেবেছে গেরিলা

ভাবছো তুমি, এই তো আর কী চাই এক ভবঘুরের

 

 

উড়োজাহাজ

যে কোনো ভ্রমণের এক পাগল থাকে
খুব ধীরে ভেদ করতে যাই সে এক বর্ণনার উপাখ্যান
একঘেয়ে, বিরক্ত সমেত মাটি থেকে ওইইই দূরে আমরা তখন নিজেই পানকৌড়ি

বাকল সরিয়ে দেখি
নিঃসঙ্গ খামচে দেখি
টেনে হিঁচড়ে দেখি লোকাল নদী

খেলা থামিয়ে ছুটতে ছুটতে ওপরে তাকানোগুলো নেই

 

 

 

প্রেমিক

তোমার গ্রাম খুঁজতে গিয়ে এক বৃষ্টিগলি পড়ে
গানের দ্বিতীয় কলি গুনগুন করার আগেই থমকে যায় কেউ
ভাঙা মন্দিরের চাতালে ঝিম ধরে আছে মনদস্যু

এই সব পেরিয়ে যেতে হচ্ছে
বেগুন আর পাটশাক ছড়ানো হয়েছে মাঠে
নেই কীটনাশক
বিকেলের আগে ছাতার আসে ফিঙে আসে মেঘে পা ঝুলিয়ে
দোল খায় মণ্ডলবাড়ির নতুন বউ
মেলা বসেছে মাঠে হাটে ভিনদেশে …

গোধূলি বাতাস ডানদিকে রেখে তোমার গ্রাম এরপর
কাক ঠোকরানো তালপাখার পাশে ভেজা গন্ধের দরজা
যে ক’বার জরায়ুর উত্তেজনায় খুলেছিল
আমি সেই পূর্বাভাস হই সেই সেই আষাঢ়স্য পয়লা ফোঁটা …

 

 

 

স্বীকার

আকাশ আর হাওয়ার রক্তপাত সামলাতে সামলাতে
খেয়াল করিনি তুমি কখন ভেজা চুলে
জল দাও তুলসীগাছে
রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসা ধোঁয়ায়
নেশা হওয়ার বদলে আমি বনফুলের দিকে ছুটে যাচ্ছি

ভুল হয়ে গেছে বিস্তর ভুল হয়ে গেছে

মাটি কীভাবে শক্ত হয় অথবা নরম
সকল ঢেউ কেন ছেড়ে চলে যাচ্ছে নৌকো

তুমি খিদে আর অক্সিজেন কোলে
অপেক্ষা করে রয়েছ
মায়া এবং জোয়ার দিয়ে বাঁচিয়ে রাখছ দেহ
আমার জন্য

ভুল হয়ে গেছে রাগরাগিণী ভুল বেজেছে এতদিন আমার

 

 

 

অন্তঃসত্ত্বা

নিভৃত, বলি আমি, ওই অন্তঃসত্ত্বা হচ্ছে বৃক্ষ
মৌসুমী ফিরে গেলে আগে পিছে নোনতা ভেজা ভেজা
ঘোর লাগে মৃত্তিকায়, শিকড়ের সে কী উল্লাস
ফল হবে ফুল হবে অন্ধ ফিরবে কার দিকে আবার

নিবেদন, বলি আমি, আঁজলায় পাঁজর বেরিয়ে আসে
এসো না এসো না উফ্ …তবু
প্রতি মন্ত্রে তুমি
রুষ্ট হন পিতামাতা বিরূপ হচ্ছে দেব ও সন্যাসী

সে ফল মনুর আর
ফুল যায় ঈভের কাছে

পরবর্তী খিদের দিকে জগৎ তাকিয়ে থাকে

Facebook Comments

Related posts

Leave a Comment