বটুক মহারাজ

পটচিত্রের অকপট কাব্যগুলি

পট ও ভূমিকা

প্রতিশোধ না প্রতিজ্ঞা- কে বড় ? প্রতিজ্ঞা মানেই সে যেন সম্মানীয়। কোথায় যেন তার একটু পায়া ভারী। অথচ প্রতিশোধ স্পৃহা নৈব নৈব চ… একদম ভালো নয় । কিন্তু যদি প্রতিজ্ঞা হয় প্রতিশোধেরই? তাহলে কী সম্বোধিবে তারে? হে মহান … হে মাননীয় বলিয়া? এই সিদ্ধান্ত সঙ্কটেই কি কুঁচকে উঠেছে স্বনামধন্য রাজনীতিবিদ অর্থনীতিবিদ চাণক্য কৌটিল্যর ভ্রু যুগল? এই যে বিশাল সাম্রাজ্য বিস্তার, পশ্চিমে পুরো সিন্ধু উপত্যকা( বর্তমানে হিরাট কান্দাহার ,বালুচিস্তানের অংশগত) থেকে পূর্বেবঙ্গ (আসাম ও বাংলা দেশ), উত্তরের সীমানা হিমালয় থেকে দক্ষিণে কলিঙ্গ ( বর্তমানে ওড়িশা ও অন্ধ্রপ্রদেশের অংশ বিশেষ) এতেও কি নন্দ বংশের বিরুদ্ধে তার প্রতিশোধের প্রতিজ্ঞা পূর্ণ হয় নি? নিশ্চয়ই হয়েছে। তবে? এই চিন্তার ভাঁজ অপমানিত ব্রাহ্মণ চাণক্যর নয়, এ চিন্তা প্রতাপশালী সম্রাট চন্দ্রগুপ্তের ক্ষুরধার বুদ্ধিসম্পন্ন প্রধানমন্ত্রী চাণক্যর। এ চিন্তা অপমানের প্রতিশোধের নয়, এ চিন্তা প্রতিজ্ঞার শেষ লড়াইয়ের। প্রতিজ্ঞার স্থায়িত্ব নিয়ে। প্রতিশোধকে টপকে যাচ্ছে প্রতিজ্ঞা। প্রতিশোধের সঙ্কীর্ণতা পেরিয়ে প্রতিজ্ঞার বিস্তার । এই সাম্রাজ্যের কোনে কোনে ছড়িয়ে দিতে হবে এই প্রতীজ্ঞার দৃঢ় প্রত্যয়, গেঁথে দিতে হবে স্থায়িত্বের মজবুত ভিত। তার জন্য চাই পুঙ্খানুপুঙ্খ খবর। সাম্রাজ্যের প্রতিটি অংশ থেকে, প্রতিটি ক্ষেত্র থেকে তুলে আনতে হবে হিংসা বিবাদ বিদ্রোহ নগরজীবন গ্রাম্যজীবনের সুখ দুঃখ ঘর গেরস্থালির খবরাখবরগুলি। প্রকৃত চিত্রগুলি। নচেৎ সিদ্ধান্তে ভুল হয়ে যেতে পারে। শত্রুর অবস্থান নির্ণয়ে ভুল মানে রাষ্ট্র পরিচালনায় চূড়ান্ত ব্যর্থতা ও রাষ্ট্রের সমূহ বিপদ। অতএব ডাক পড়লো কুড়ি জন বিশ্বস্ত বিশেষ লোকের। তাঁরা সকলেই চিত্রশিল্পী, তাঁরা সকলেই মুখে মুখে গান বাঁধতে পারেন, রাজার গোপন নির্দেশে ছড়িয়ে পড়ল সাম্রাজ্যের খাঁজে খন্দরে, এ প্রায় ৩০০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দের কথা। অতঃপর একে একে গোপনে উঠে আসতে লাগল সাম্রাজ্যের আভ্যন্তরীণ কথা ও চিত্রগুলি। চড়া দামে কিনে নিতে লাগলেন বিচক্ষণ প্রধানমন্ত্রী।
কারা এই চিত্রকার গোষ্ঠী? কোথা থেকে এদের আগমন ? পুরাণ বলছে এরাও দৈব শক্তি সম্পন্ন, এরাও অষ্টম গর্ভের সন্তান ।

ব্রহ্মবৈবর্ত পুরান

ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ অনুযায়ী দেবশিল্পী স্বয়ং বিশ্বকর্মা ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং তাঁরই অভিশাপে স্বর্গের সঙ্গীত পটীয়সী অপ্সরা ঘৃতাচী, মন্মথ নামক গোয়ালার ঘরে তার কন্যা প্রভাতী (পার্বতী) নামে জন্মগ্রহণ করেন। বিশ্বকর্মা গঙ্গার ধারে তপস্যারতা ঘৃতাচীকে দেখে মুগ্ধ হয়ে যান। ঘৃতাচীও বিহ্বল হয়ে পড়েন। আসলে এ যে পূর্ব নিরধারিত মুগ্ধতা বিনিময়। অবশেষে তাদের বিবাহেই ইহজন্মের পরিণতি। দেবশিল্পী বিশ্বকর্মারঔরসে ঘৃতাচীর গর্ভে একে একে নয় দক্ষ শিল্পীর জন্ম হয়।
১) মালাকার ২) কর্মকার ৩)শঙ্খকার ৪)কুবিন্দকার (তন্তুবায়ী) ৫) কুম্ভকার ৬) কংসকার ৭) সূত্রধর ৮) চিত্রকার ৯) স্বর্ণকার।
অর্থাৎ এদের মধ্যে এই চিত্রকার হল অষ্টম গর্ভের সন্তান অর্থাৎ এরা জন্মগত শিল্পাচার্যের পরম্পরাবাহী গোষ্ঠী। তবে শুধু দৈবশক্তি নয় পদে পদে বিভিন্ন বাধাও যে অষ্টম গর্ভের প্রাপ্য । এদের কপালেও জুটেছে ভয়ংকর দৈব অভিশাপ। স্বয়ং মহাদেবের অভিশাপে এরা সমাজ চ্যুত। কোনোদিন কোনো জাত-কুল বলে তাদের কিছু থাকবে না,তাদের ঠাঁই দেবে না কেউ। তারা অচ্ছুত । আসলে তারা কোনো নিয়ম মানে না।তারা তাদের মতোই। তাদের নিয়ম-নীতি তারা নিজেরা। তারা জীবন যাত্রা থেকে চিত্রাংকন কোনো ক্ষেত্রেই কোনো নিয়মের ধার ধারে না। নিজেদের খেয়াল খুশিতে মিশিয়ে দেয় নিজস্ব রং আর রেখা। চলাফেরা থেকে চিত্রাংকন এই ব্যাতিক্রম ব্যভিচার বলে চিহ্নিত হলে সমাজপতি ব্রাহ্মণদের কোপে অভিশাপ নেমে আসে তাদের উপরেই। তারা পতিত। তারা নির্বাসিত।
“ ব্যতিক্রমেণ চিত্রাণাং সদ্যশ্চিত্রকরস্তথা।
পতিতো ব্রহ্মশাপেন ব্রাহ্মণানাঞ্চ কোপতঃ।।”
অথচ এই অভিশাপইএঁদের রক্তে অ্যান্টিবায়োটিকের কাজ করেছে। কোষে কোষে রক্তকনিকায় তৈরী করেছে প্রতিরোধ ক্ষমতা। বরং এঁদের রং তুলি নির্ভর করেই এগিয়ে গিয়েছে প্রাচীনতম বিভিন্ন ধর্মমতগুলি। কাল’কে অতিক্রম করে ইতিহাসের শুধু সাক্ষী নয়, প্রামাণ্য দলিল তাঁদের কাজগুলি । কালক্রমে সাজালে –

১.বিশ্বের প্রাচীনতম ধর্মগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ধর্ম জৈন ধর্ম। তার শেষ তথা চব্বিশতম তীর্থঙ্কর মহাবীর –এর উপদেশাবলী সমৃদ্ধ ধর্মীয় গ্রন্থ“ কল্পসুত্র”-এর মধ্যেও এই চিত্রকারদের উপস্থিতি অর্থাৎ খৃষ্ট জন্মেরও ৫০০ বছর আগে বা আজ থেকে প্রায় ২৫০০ বছর আগেযে ধর্মের যাত্রা তার আদর্শ, দর্শন, প্রথা এসবের বিবরণে এঁরাই একমাত্র সহায়।

২.ঐ একই সময়ে (৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ(চিত্রকারদের একাধিক কীর্তির উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে পুরী, কোনারক, শোনপুর। সব চেয়ে উৎকৃষ্ট মানের নিদর্শন নিয়ে আজও উজ্জ্বল রঘুরাজপুর গ্রাম।

৩. গৌতম বুদ্ধের (৫৬৩ -৪৮৩ খৃষ্ট পূর্বাব্দআবির্ভাব থেকে তার প্রতিটি জীবন(চিত্রেরছবিকে ফ্রেম বন্দী করেছে এই চিত্রকাররা।

( একশোটি জাতকের গল্পের ছবি সমন্বিত বুদ্ধের পটচিত্র )
       তিব্বতে প্রাপ্ত ১৩০০-১৪০০ খ্রীষ্টব্দে অঙ্কিত

সেইসব ছবির ঐতিহাসিক গুরুত্ব আজ অপরিসীম। অথচতাদের শিক্ষা, তাদের জীবনের মান উন্নয়ন নিয়ে সমাজের মাথা ব্যথা কোনো কালেই ছিল না। তারা লোকালয়ে ঘুরে ঘুরে হাতে পটচিত্র ও মুখে পটের গান নিয়ে জনসাধারনের মনোরঞ্জনের আপ্রাণ চেষ্টা করে গ্যাছে দু’ মুঠো খাওয়ার জন্য। মানুষের দান সম্বল ছিল তাদের ক্ষুন্নিবৃত্তি নিবারণের জন্য। আর পরবর্তীকালে এই ছবি ও গানই হয়ে উঠেছে লোকশিক্ষার প্রধান মাধ্যম।ধর্মকথার আড়ালে মানব ধর্মেরপ্রধান গুণাবলীর প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধিতে জাতক কাহিনির চিত্ররূপ এই চিত্রকারদের কালজয়ী সৃষ্টি যা পরবর্তী সময়ে ছড়িয়ে পড়ে জাভা , শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, তিব্বত, নেপাল, চীন প্রভৃতি দেশে। এখনও জাতকের গল্পে তাদের অনুকরণেই যেন প্রাণ পায় যাবতীয় অলংকরণ।

৪। মৌর্য সাম্রাজ্যের( ৩২২ – ২৯৮ খৃষ্ট পূর্বাব্দ) প্রথম সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের প্রধান মন্ত্রী ও কিংবদন্তী অর্থনীতিবিদ চাণক্য কৌটিল্য তার বিশ্বস্ত চিত্রকার মারফত সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অংশের ও ঘটনার সচিত্র বর্ণনা গোপনে সংগ্রহ করতেন ও শত্রু অবস্থান নির্ণয় করতেন অর্থাৎ প্রতিটি চিত্রকার ছিলেন এক একটি ইনফরমার উইথ স্পাই ক্যাম ।

৫. সম্রাট অশোকের কলিঙ্গ বিজয়, বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ, বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার ও প্রসারের প্রতিটি ফুটেজ ( ২৭৩-২৩২ খৃষ্টপূর্বাব্দ) ফ্রেম বন্দী করেছে এই চিত্রকার গোষ্ঠী।

৬. ২০০ খৃষ্ট পূর্বাব্দ থেকে প্রায় শুরু হয় অজন্তা গুহা নির্মাণের কাজ চলে প্রায় ৭০০ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত। লোকচক্ষুর আড়ালে চিত্রকারদের এই গুহা অভিযান শিল্পের প্রতি নিষ্ঠার এক চূড়ান্ত অধ্যায়।

৭ মহর্ষি পতঞ্জলি রচনাতেও ( ২০০ খৃষ্ট পূর্বাব্দ ) চিত্রকার গোষ্ঠীর নিঃশব্দ পদচারনা দেখা যায়।( ২০০ খৃষ্ট পূর্বাব্দ )

৮. প্রাচীন ইতিহাসের সবচেয়ে সমৃদ্ধ সময় গুপ্ত যুগেও ( ৩২০-৫৫০ খৃষ্টাব্দ) চিত্রকারদের যাত্রা অব্যহত। কালিদাস রচিত ‘অভিজ্ঞানশকুন্তলম” ও “মালবিকাগ্নিমিত্র’ তার প্রামাণ্য দলিল।

৯. অতঃপর ৭০০ খৃষ্টাব্দে বাণভট্ট রচিত ‘হর্ষচরিত’, ৮০০ খ্রিষ্টাব্দে বিশাখা দত্তের ‘মুদ্রারাক্ষস’ ইলোরা গুহা চিত্র নির্মাণে, ১০০০-১৩০০ খৃষ্টাব্দে চালুক্যরাজ কর্তৃক জৈন ধর্মীয় গ্রন্থাবলীর নকল ও প্রচার, মহম্মদ ঘুরির ভারত আক্রমণের ফল স্বরুপ চিত্রকারদের উপর ইসলামিক প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। মুঘল সাম্রাজ্যেও ( ১৫২৬-১৭০৭ খৃষ্টাব্দে) তাদের সগৌরব উপস্থিতি আকবরনামায়, গাজী পটের আবির্ভাবে, ইংরেজ আমলেও (১৭৬৫-১৯০০ খৃষ্টাব্দে) তাদের আঁকা সাহেব পটে তারা আছে। এভাবেই চিত্রকাররা ছিল চিত্রকাররার থাকবেই।

সময়, কাল, যুগকে অতিক্রম করে তারা ছড়িয়ে পড়েছে উড়িষ্যা, বিহার, ঝাড়খন্ড, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে, বাংলার – মেদিনীপুর,পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূম, ২৪ পরগনা, অধুনা বাংলাদেশের ঢাকা, রাজশাহী, ময়মনসিংহ।
এই বিংশ শতাব্দীতে এসেও তাদের নিজস্বতা একই রকমের। তাদের জীবন যাত্রার মান এখনও খুব একটা হেরফের হয়নি, যদিও ইদানীং কিছুটা সচ্ছলতা ফিরছে। তাদের শিল্পকলা দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতে ভারতীয় ঐতিহ্য হিসেবে কদর পেয়েছে । ঐ অভিশাপই তাদের স্বাতন্ত্র্য রক্ষায় হয়ে দাঁড়িয়েছে রক্ষাকবচ। এখনও মেদিনীপুর জেলার পিংলায় মাটির রাস্তা ধরে হেঁটে গেলে চোখে পড়ে রাস্তার দুধারে ছোটো ছোটো মাটির বাড়ি, আর তার দেওয়ালে দেওয়ালে ছড়িয়ে রয়েছে তাদের নিজস্ব কারুকাজগুলি। দেওয়াল বেয়ে উঠেছে তাদের চিত্রিত লতাপাতা । তাদের ঐ প্রাণবন্ত সবুজ রঙের সাথে মিশে যাচ্ছে গাছের ফাঁক গলে নেমে আসা টুকরো টুকরো রোদ। ভিতরে উঁকি দিলেই চোখে পড়ে অন্ধকার। ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অভাব অথচ তার মধ্যেই ছবি এঁকে চলেছে কোনো চিত্রকার। সে হয়তো ঐ পরিবারের গৃহবধূ। আর তাকে রং গুলে দিচ্ছে তার সহকারী তার আট- নয় বছরের ছেলে। পরনে হাফ প্যান্ট, আদুল গা। নয়তো ফ্রক পরে কোনো বালিকা, ভবিষ্যতের চিত্রকার। হাতে সদ্য প্রস্তুত টাটকা রঙের বাটি, শিখে নিচ্ছে প্রকৃতি থেকে তুলে নেওয়া রঙের সমাহার, অতি যত্নে, কাগজে মোড়া বা কৌটোয় তুলে রাখা তাদের সহস্রাব্দ প্রাচীন রঙের বিপ্লবগুলি। প্রতিটা রং যেন এক একটা বিস্ফোরক। আর এই বিস্ফোরণের রসদ নিয়ে এখনও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে গোটা ষাটেক পরিবার। আর তাদের রংবেরঙ-এর মাটির বাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পশ্চিম মেদিনীপুরেরগ্রাম – ‘নয়া’। সত্যিই নয়া-ই বটে। এরা চিরকালীন নয়া, এরা চিরকালই নতুন। এদের রং হাজার হাজার বছর পেরিয়েও ‘নয়া’ থেকে যায়। পুরাতন হওয়া যাদের ইতিহাসে নেই। প্রতিটা মাটির বাড়িতেই রঙে রঙে লেগে আছে হাতছানি। আয় আয়… আধ খোলা দরজা দিয়ে উঁকি দিতেই –পবিত্র নিষ্পাপ দৃশ্যে কিশোরী এক মাটির দাওয়ায় ডুবে আছে নিজস্ব রঙে … কী নাম তোমার ?
– পারুল চিত্রকর
– বাবা মা ?
– বাবা চন্দন চিত্রকর , মা পুতুল চিত্রকর কোলকেতায় হস্ত শিল্প মেলা হতিছে না ? উখানে গেছে …
– পড়াশুনা করো না ?
– হুম পড়ালিখা করি তো … এইটে পড়ি …মাঝে মাঝে এগুলা করি…
নজর চলে গেল হাতের কাজে, আহা বন্দী হয়ে গেলাম যেন। নজরবন্দী শব্দটার নতুন উপলব্ধি। ছবিগুলোর কাছে নজরবন্দী হয়ে গেলাম নিজেই। নিজেই নিজের নজরকে ফেরাতে পারছি না। এতটুকু একটা মেয়ের তুলিতে কি অসম্ভব প্রত্যয়। আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রঙের মোড়ক আর কৌটোগুলি।কাগজের মোড়ক খুলতেই বেরিয়ে এল তেজস্ক্রিয় হলুদ , লাল ,সবুজ , নীল , কালো এবং সাদা।একেবারে টাটকা সতেজ অথচ সম্পূর্ণ ভেষজ এক্সপ্লোসিভ। এক্সক্লুসিভ নিতে ঝলসে উঠছে ক্যামেরা । গাছ গাছালির রস, সবেদা, বেলের আঠা, তেঁতুল ইত্যাদি) বিভিন্ন প্রকৃতিজাত গুঁড়ো ওদের বিপ্লবের হাতিয়ার আদি ও অকৃত্রিম জৈব রসায়নে আমাদের অভূতপূর্ব প্রকৃতি-পাঠ। নিশ্চুপে ভরে নিচ্ছেওরা রঙিন কার্তুজগুলি– প্রকৃতি থেকেই। আবার মিশিয়ে দিচ্ছে তাদের পটের প্রকৃতিতে।

আকাশে, কৃষ্ণগাত্র জলে ছড়িয়ে পড়ছে অপরাজিতার নীল।মাটিকে ফিরিয়ে দিচ্ছে মাটি থেকেই উদ্গত হিংচে শাক বা শিমের সবুজ । ফুলকেও সাজিয়ে দিচ্ছে ফুলের নিজস্ব রঙে। কখনো পুঁইমেটুলি বা জাফরান বীজ থেকে জন্ম নিচ্ছে লাল । উনুনের পোড়া মাটি চুন সহযোগে।খয়েরকে ওরা খয়েরী নামে ডাকে ।পুড়ে পুড়ে ভুসুম মাটিও হয়ে উঠছে সাদা ওদের আন্তরিকতার অধ্যাবসায়ে । শুধু রং নয় এই পারুলের মত হবু চিত্রকাররা ছোট থেকেই রঙের সাথে মিশিয়ে নিচ্ছে নিজেদের পরম্পরা। যুগ যুগ ধরে অর্জিত রঙের কলাকৌশল,রঙেরবাটিতে মিশিয়ে নিচ্ছেআড়াই হাজার বছরের ঐতিহ্য। বুঝে নিচ্ছে ঐতিহ্যের ধারক ও বাহকের দায়িত্ব। শুধু পড়াশোনা নয়, পাশাপাশি রঙে রেখায় নিঃশব্দ অনুশীলন তারস্বকীয়তা রক্ষার। শুধু তার নয় তাদের সকলের। আবহমানতার।

(ক্রমশঃ)

Facebook Comments

Related posts

Leave a Comment