জিয়া হক

জিয়া হকের কবিতাগুচ্ছ

শিশু বিভাগ


কহতব্য নয় এ মদীয় যন্ত্রণা
ভালবাসা বয়ে আনে কুকুর প্রস্তাবনা
লেজ যেভাবে বক্র এবং যেভাবে লেজ ব্যথা
স্তন্যপায়ী কুকুরশিশু জানে না কে পিতা
তেমন একটা জন্তু আমার হাড়ের ভেতর জাগে
আনুষ্ঠানিক পানমশালায় কান্না কান্না লাগে
হৃদয় যাদের পাতার মতো শীতপ্রবাহে ভিজে
নিজের সঙ্গে খন্ডযুদ্ধে শয্যাগত নিজে
এমন লোকই বলে, ‘বাবা, কোন জায়গায় লাগা?’
অজস্র লাল জলের মধ্যে নৈর্ব্যক্তিক থাকা-
আমি কেবল নানারকম নাট্য বলতে থাকি
ভিজে মানুষ বলেই শুধু— বুঝেছি, বাদবাকি?
খবরকাগজ পড়েন যারাই ভালো থাকতে পারে?
‘মাঝিসদৃশ তুমি কেন যাবে গো দরবারে?’
নৌকো আমার সজনে কাঠের, সমুদ্রে তার যাওয়া
ছদ্ম হাওয়ার বৃদ্ধ হাওয়ার প্রাচ্যদেশী হাওয়া
অসহায়ক, পাহাড় প্রমাণ বৃষ্টিতে দেয় নুড়ি

বারুইপুরের যাত্রী তবে যাচ্ছি শিলিগুড়ি

এ কি কোনো খামখেয়ালি কুকুরপনা খেলা?

আমার বাড়ি ভাঙছে কিন্তু শান্ত আমার জেলা


প্রথমেই আমাকে বলো তুমি কী কী হারিয়ে আজ এখানে অনুচ্চকিত মুখে প্রস্তাবনা নিয়ে এসেছো?

এখানে আঙুরফল মিষ্টান্ন নয়, তাই সকলেই
কমবেশি শেয়াল আর উপকথাকার। এইবার
বলো তোমার গল্প।

সেই হাভাতের গল্পটা জানেন যে বন্ধুর বদলে চেয়েছিল
নদী, অন্তত একটা শুকরভর্তি নর্দমা?

এগুলো বড় রোমান্টিক আর
ক্ষেত্রবিশেষে হাস্যকর ও শিশুখেলা।

তাহলে সেই গল্পটা জানেন নিশ্চয়ই যেখানে
এক হাভাতে নদী নয়, আকাশ নয়,
সবুজ নক্ষত্রের ঘাসভূমি নয়, চেয়েছিল
এক পেয়ালা ধান কেননা সে শুধু চাল চায়নি
তুঁষ আর খুঁদ তার দরকার ছিল।

এ আবার কেমন হাভাতে? তুমি কি চাও আমি
বারবার আশ্চর্য হয়ে যাই?

আপনি গল্প খুবই কম জানেন, শুধু জবা তুলেছেন
পরিচর্যা করেননি কোনো জবার।

আপনার ব্যধি কি দুরারোগ্য?

ওই যে দূরে ঢিবি দেখেন, ওটা শুধু মাটির স্তূপ নয়,
ওটা কবর, কে শুয়ে আছে জানেন ওখানে?

একটি ব্যতিক্রমী উত্তরের আশা রাখছি। বলুন।

আপনাকে হতাশ করাই আমার করণীয় আজ। তাই
ওখানে রয়েছে এক জাগ্রত কুকুরছানার দেবতা,
একদিন ভক্ত আসবে ওখানে,
থালাভর্তি হয়ে আসবে চালধান, প্রার্থনা, আঙুর।

বেশ মজার লোক আপনি।

অতীত বিক্রেতারা জ্ঞানী আর ভবিষ্যত নিয়ে যারা
কথা বলে, তারা নিজস্ব নারী নেই বলে
মৈথুনে হস্তনির্ভর। কুটির শিল্পী স্থানভেদে।


মুরাকামি
………….
আমি। যন্ত্রণা পাচ্ছি খুব। খুবই, হ্যাঁ।
সমুদ্রতটে কাফকা পড়তে পড়তে বুঝতে
পারছি আমার অপরাধগুলো কী ও কীভাবে
আমাকে মৃত্যুর, থাক, না না হত্যার, ওহো
ভিজে যাচ্ছে মন্ডল, এই মুখমণ্ডল,
কার্পণ্য করেছি কি বিলিবন্দোবস্তে?
সামাজিক হওয়ার কৌশল শেখার বিদ্যালয়—
যেতে চাই, না, কেউ আসুন, সেকি, হ্যাঁ
এই দুপুর, বসন্তের দুপুর থেকে অনুসন্ধানী
আত্মীয়রা কী করতে আসে?
যেদিন যন্ত্রণা, যেখানে খুব, আমি
বসি আততায়ীর মতো, হয়ত এ ধর্মভাব কোনো
পূজার্চনা, নামাজের মতো আত্মহত্যারোধী
সহযোগী চাই যে বৃষ্টির দিনে
আম কুড়িয়ে দেবে, পতনেও সহমর্মী হবে,
পুকুর থেকে তুলে আনবে অজানা বৃক্ষের ছায়া
তার খালি হাতে গাছ আছে ভেবে চুম্বন করিব


আমার হরিণী-কন্যা, বনপথে একা
……………………………………………..
গৃহস্থের গ্রামজীবন আমি কাটাবো অনেক
কন্যা তুলতে যাবে ফুল আর জবার খুশবাই
সে যাকে অনুমতি দেবে সে-ই তার নদীতে প্রবেশ
পুলিশেরা বাড়িতে ঘুমোবে, থানা হবে খুকির সাজঘর
অথচ সে আর সাজাবে না তার ভুরু ও পল্লব
এমনি এমনিই সে হয়ে যাবে কারোর ঘরণী
সোনালি জেওর যত পড়ে থাকবে পাঠের টেবিলে
নাকফুল সে হয়ে ফুটবে উঠোনে, একদিন
জঙ্গলে সে যাবে একা, হবে সন্ধ্যা, বাঘও আসবে সেই পথে
কিছু কিছু মতবাদ তার জানা আছে, আর
শরণাপন্ন নয় সে সহিংস সংঘের, তাই
অরণ্য ঘোরাবে বাঘ প্রদর্শক হয়ে
আমার কন্যা তাকে বিবাহেও বেঁধে আনতে পারে
আমার কন্যা পারে দত্তক নিতে ওই ব্যাঘ্রশাবক
কাটাবো জীবন আমি গেরস্তের মতোই শহরে


যেভাবে পদ্য লেখা হয়
….
যখন আমি কবিতা —কবিতাই লিখতে চেয়েছি
তখন হারিয়ে গেল আমার শব্দবোধ
নিজেকে লিখতে গিয়েছি যখন
তখন পেলাম শব্দের পাহাড়
সেই পাহাড়ে গুহা আছে, বনদপ্তর নেই,
বনমানুষেরা চাকরি করতে যাবে তাই
ঝর্নায় চুল ধুতে গেছে


একা নায়ক, বোকা নায়ক
………
আজ
বৃষ্টি হল বেশ
ভেঙে গেল
ঘুমকাতুরে
ভিতর প্রদেশ
কাদা হল খুব
পায়ের সঙ্গীত হয়
চপ্পলেরা চুপ—
থাকে না কোথাও
বড় ভিজে
কুকুরের ভিক্ষাপাত্র
বেজে ওঠে ব্রিজে
প্রশাসক আজ
চোখ মারে, ফেলে রাখে
টেবিলের কাজ
সেহেতু মুশকিল
মরে যায় স্বাভাবিক
বৃহৎ টেবিল
বসে শোকসভা
জড়ো হয় চুরি করা
অহেতুক জবা
যুবকেরা বৃদ্ধ হয়ে ওঠে
গাঁদা গাছে গাঁদা নয়
জবা যেন ফোটে
এমনই নির্দেশ
আজ
তবে
বৃষ্টি
হল
বেশ

Facebook Comments

Related posts

Leave a Comment