গালিব উদ্দিন মণ্ডল

গালিব উদ্দিন মণ্ডলের কবিতাগুচ্ছ

রুহুরোপন অথবা জন্মদিনের কবিতা

ভোরের বৃষ্টিতে ধুয়ে গেছে ঘাস । খুলে গেছে আঁতুড়ঘরের
জানালার ছিটকিনি । স্নানের পরে মায়ের থুতনির মতো এই
ফজরের আকাশ ।পায়রাছানার মতো ফুরফুরে হাওয়া ।

এক তাল মাটি থেকে এক-আদমের কারখানা । ডারউইনের
চ্যাপ্টার হারিয়ে যাচ্ছে-যাচ্ছে-এমন-দিনে নুহ তার নৌকায়
তুলে নিলেন রূপান্তরের সন্দর্ভ ।

 

দুই

ছিপছিপে এই ঝুমুর গানটি রাখো
অনেক দুরের ক্যারাভানটি তোমার
সব জয় করো , তৃষ্ণাটুকু
হাঁড়ির সরার গায়ে লেগে থাক

শালিক পাখির চোখের মতো এই
বিস্ময় একদিন আমরা পেয়ে যাব

ব্যাঙ্গাচি কেটে কেটে ফিরে আসছে খোলাম
উদোম গায়ের ঘুড়ি

পাট শাক খাওয়ার জিভটির মতো
স্থির এই ভেন্টিলেটরে
সেই দুটি চড়ুইবন্ধু আসবে
কথা যখন দিয়েছে আসবে

সবুরের জিভে মৌরিদানা রাখো ।

 

তিন

গামছায় বাতাসা আর মুড়ি।
বেড়িয়ে পড়েছ । তোমার পাঁজরের বামদিকের হাড়ে হৃল্লেখবীজ ।
তুমি এই জারুলগাছ তৈরি করছ , এই লিখছ জেহাদ
এই তুমি বায়োকেমিক্যাল মুছে দিয়ে এঁকে দিচ্ছ
হেরাগুহায় আলতামিরা ।
নালন্দার লাইব্রেরীতে কতকাল পরে হাওয়া এলো
কত যুগ পরে খোলা হল দক্ষিনের জানালা

 

চার

ডানারা যখন গুটি কেটে উড়ে যায় , আমরা
তার ভিতরে মাদুর পেতে বসি

মূলত একারণেই এই শীলিত এতেকাফ — রোঁয়া থেকে রঙ
বা শোক থেকে স্তব্ধতার স্তবে পৌছনোর গুহাপথে
পড়ে থাকে ডিমের খোলা ,পায়ের ছাপ ।

 

পাঁচ

গোধূলি কুড়নোর এই নেশা তোমার আর্কাইভকে
মেঘেদের সাইকেল র‍্যালির মাঝে বিশুদ্ধ বিষাদ দিয়ে যাচ্ছে

যানজট নেই , নেই ট্র্যাফিক পুলিশের আঙুল

যদি চিড়িয়াই না থাকে তো কেমন এই চিড়িয়াখানা—
এই বলে তুমি খুলে দিচ্ছ সাতটা দরজার শেকল
স্মৃতিভ্রংশ ঘটে গেছে এরকম আকাশে লাবণ্য ফিরে আসে ।

 

ছয়

আঁতুড়ঘর পোল্ট্রি ফার্ম নয়
এখানে দাইমায়ের দুধের দাম
জ্যান্ত হাতির দামের থেকেও মূল্যবান

জন্মদিনের কবিতা বলে যা চালানো হয়
কেকের ক্রিম মেখে তা কেবলই ক্যাবলা হতে থাকে
শরীরের বয়স যতই বাড়ে ,
রুহু ততই তার শৈশবে ফিরতে থাকে ।

 

সাত

হে মোহজন্ম
যদি পারো পদ্মপাতার জামায় জল বসিয়ে দেখাও
তোমার সব ক্যালমা ছুটে যাবে
ছুটেছ অনেক এবার তোমার ছায়া দরকার
এবার তোমার ফুড়ুৎ হবার দিন ।

 

আট

ম্যাজিক মোমবাতিটি কিছুতেই নেভানো যাচ্ছে না
মাটির উনুনে পায়েস ফোটার মতই এই হর্ষ

হর্ষবর্ধন , তুমি ভিক্ষু হতে পারো?

বাড়িয়ে নেওয়া জলের জমি , চিরকালই স্থলভাগের
সাথে সমতা চেয়ে এসেছে
কি হবে এই ভিটে মাটির বিবাদে

হর্ষ বেড়ে চলার মাঝে একটা রেগুলেটর থাক
আন্দাজ মত আনন্দ কমিয়ে বাড়িয়ে নেওয়া যাবে ।

 

নয়

অঙ্কখাতায় অতিবাহিত আলোকবর্ষগুলো জুড়ে ফেলার দায়িত্ব
তোমার কাঁধে এল । তুমি অঙ্কে কাঁচা নও , অন্য মনস্ক সারস ।
সেই যখন অন্ধকার থেকে প্রথম নূরটি জাহানে ঝরে পড়ছে,
তোমারও প্রথম জন্ম হল, দ্বিতীয় প্রজাপতি ।

Facebook Comments

Related posts

Leave a Comment