দীপ শেখর চক্রবর্তী

এখনও মুখস্থ হয়নি তোমার স্বগত সংলাপ

১
কাকে কখন ছেড়ে আসা ভালো
কোথায়-
এসব প্রশ্নের ভেতর আরও লম্বা হচ্ছে তোমার শরীর
শরীরের ভেতরে একটাই দরজা বারবার খুলে
যায়
মাঝে মাঝে দেখা যায় শ্মশানের নদী
একেকদিন বাগানে জ্যোৎস্না 

দরজা বন্ধ করে দিতে গিয়ে দেখেছো তুমি
শরীর লম্বা হয়েছে অথচ
হাতদুটো অসাড় থেকে গেছে

অথচ জানো তুমি হাতের ভেতরে ক্রমাগত বড় হয়ে উঠেছে তোমার অপত্যস্নেহসমূহ...

২
একা থাকা ও নিঃসঙ্গতার মাঝখানের কিছু গান
কাঠের আসবাবের মাঝে গুছিয়ে রাখা থাকে
গানের শিকার প্রবণতাকে ভয় পেয়ে তুমি পাখির ছায়াটিকে রেখে দিয়েছো বন্ধ দরজার ওপারে
অথচ তুমি জানো তোমার দেহের ভেতর একটা লম্বা পাঁচিল দিয়ে পাখির ছায়া কাঁপিয়ে হেঁটে যায় রাতের বেড়াল
বেড়ালের ডাক জন্মের পর ওকে একা ফেলে লবনক্ষেতের দিকে চলে যায়
এমন দৃশ্যই বারবার ঘুরে ফিরে এসে তোমাকে বিভ্রান্ত করে
বেড়াল বিভ্রান্ত নয়,সে খেয়াল রেখেছে
তোমার দেহের ভেতরে কখন সব আলো নিভে গেলে জ্বলে উঠবে ওর আপাত নিরীহ দুটি চোখ
যেমন ও জানে ছাদে টাঙানো তোমার আপোসের শাদা শাড়িটা যে কোন মুহূর্তে নখের আঁচড়ে ছিঁড়ে ফালাফালা করে দিতে পারে
কোথা থেকে নেমে আসে এসব দৃশ্য?
কোথায় কোন আসবাবে একটা গান বেজে চলেছে?
শরীরের উত্তর-দক্ষিণ 
বেড়ালের ভেতরে কেবল আলোছায়া নিয়ে খেলছে তোমার শিকারে যাওয়ার সম্পর্ককাতরতা

৩
অনিচ্ছা সত্ত্বেও ভেতরে ভেতরে সকলে বহন করে নিয়ে চলেছি মৃত্যু
রাতের অন্ধকারে গাছেদের নীরব দৃশ্য আমাকে নিয়ে যায় সেই মোহের ভেতরে
বিপরীত লিঙ্গের সাথে ছোঁয়াছুয়ি খেলার আবেগে আমি সমস্ত মৃত্যুভার নামিয়ে রাখি দেহ থেকে,ধীরে ধীরে ছায়া নিভে যায়
অথচ জল থেকে জলের শব্দটুকু পৃথক করে আমি রাখতে চেয়েছিলাম সম্পর্কের অতলে
যে জল শব্দহীন তা বহুদূর যেতে পারে,চিহ্ন রাখে না
রাত্রির অন্ধকারে গাছেদের নীরব হয়ে থাকা আমাকে নির্দেশ দেয় সমস্ত শরীরের জানলাগুলো একে একে খুলে দিতে
যে যখন আমাকে স্পর্শ করে তার ভেতর দেখি চাঁদ,অনন্ত জ্যোৎস্না
একদিন সেই জ্যোৎস্নার ভেতরে নেমে আসতে পারবো আমি
একদিন তোমার প্রার্থনা ও আমার অবিশ্বাস মিলেমিশে নতুন ভাষার জন্ম দেবে
যে ভাষায় কথা বলে গীর্জার ধ্বনি, দুলে দুলে আকাশ পেরিয়ে যায়
সারারাত তোমার শরীর এই শরীরের ভেতরে খুঁজে চলে একফোঁটা জলের প্রবাহ,মৃত্যুচিহ্ন,গাছেদের চুপ করে থাকা।

৪
হয়,যা কিছু হওয়ার কথা নয়
যেখানেই যাই মনে হয় ফিরে আসা হল
অথচ সমস্ত ঘাসের মাঠ থেকে আমরা সরিয়ে নিয়েছি বিকেলের পা গুলো
বয়স বেড়েছে তবু যে কেন আকাশকে এত নীলাভ মনে হয়
বাতাবি লেবুর গাছ পার হয়ে সন্ধের গন্ধ এসে থমকেছে তোমার বুকের পাশেতে
স্তব্ধতার প্রথম পৃথিবী দেখা
স্তব্ধতার ভেতর একে একে খুলে ফেলা যেতে পারে সমস্ত জানলা
তবুও বন্ধ জানলার এপাশে অনন্তের এক বোধ বলে যায় যেটুকু আমরা গাইতে পারি না সেটুকুই গান
যেটুকু আমরা বোঝাতে পারি না  সারারাত পাশাপাশি শুয়ে বাড়িটির চিহ্ন খুঁজে চলে
চিহ্নের ভেতর লেখা থাকে তোমার কথাটি
জানলা খুলে দেওয়ার সমস্ত ক্ষমতা সেই কবে হাতের ভেতর শুকিয়ে গিয়েছে তবুও স্তব্ধতার গান শুনে মনে আছে
এখনও এক পথ ঠিক জেগে আছে কোথাও
এখনও কোন আয়নার ভেতর অন্ধকারে তোমার মুখ ভেসে ওঠে
আলোর জন্ম হয়

৫
আমাকে নিয়ে চলো এইসব অস্থিরতা থেকে দূরে
সমাপ্তিকে এক একটা রঙ দিয়ে চিহ্নিত করে রাখো
জল সহজ শব্দ নয়
যতক্ষণ তুমি বুকের ভেতরে একটি পিঁপড়ের ডুবে যাওয়া দেখে ভাসিয়ে দিয়েছিলে পাতা
পাতার ওপরে তার ছায়া যত বড় হয়
তোমার স্তনবৃন্তকে আমি মঠ বলে চিনি
তবু শুধু ধ্যান নয়
হেমন্ত রোদের খড়িমাটি মঠের প্রাচীরে আলপনা এঁকে দিয়ে যায়
দেখো,আলপনার ভেতরেতে সুখের চিহ্নসমূহ,মৃত্যুর মুগ্ধতা,দোতারার স্পর্শ সমস্ত ঘুমিয়ে রয়েছে 

 ৬
বিচ্ছেদের নিয়মগুলো ধীরে ধীরে এক হয়ে যায়
সেতুবন্ধন ও সেতুভাঙা,ভোরবেলা মশারির দড়ি ছিঁড়ে গিয়ে তোমাকে আরও স্পষ্ট করে তোলে
ঘরের হাঁটার শব্দ শুনতে তুমি আজও কান পেতে থাকো ঘরের মেঝেতে?
দুপুরের দেওয়ালের ভেতর কী রেখে চলে গেছে কথা ভাঙা কথা?
কতটুকু ঘর?কতটুকু ঘরের মতো?
কীভাবে তফাৎ করবে যখন ভেতরে ভেতরে তুমি জানো
এখনও মুখস্থ হয়নি তোমার স্বগত সংলাপ

পোশাক বদল,নতুনকে জানার বেদনা তার হাসির মতো উজ্জ্বল মঞ্চের আলো নিভিয়ে দিয়েছে।

৭
এখনও রূপকথা আছে
তাই পিতা মাতার মাথা পেতে শোওয়ার ঘর থেকে
তুমি নির্বাসিত
নির্বাসনের চিহ্নসকল পড়ে আছে,অন্ধ তুমি তাই
এখনও গান গেয়ে ভিক্ষে করো
কে ভিক্ষে পায়?তোমার গান?
কে ভিক্ষে পায়?তোমাকে দয়া করে যে দু-টাকা ছুঁড়ে দিলো 
 তার অবহেলা?
ভিক্ষে পায় শুধু দৃশ্য
বাতাস অথচ পাগলিনীর সাথে অবৈধ রমণের পর সন্তান জন্ম দেয়
তার ভেতর পুড়ে পুড়ে মরেছে ক্ষমতা,প্রতিশোধ,কামনা পাহাড়ের শীর্ষ 
ভিক্ষে দিয়েছিল যারা তাদের ছায়া বিন্দু রেখে সে তীর মেরে চিনিয়েছে নিজের প্রস্তুতি
তুমি তাকে কতদিন আটকাবে?রেখে দেবে আড়ালে?
গোপনে ভালোবাসা শেখাবে?
তোমারই হাত পেরিয়ে বহুদূর সভ্যতার ভেতর চলে গেছে নিজস্ব সহ্যক্ষমতা 

নির্বাসন, নির্বাসন ভাঙে 

স্তব্ধতার ওপার থেকে দুটি বিকেলের শব্দ এসে মাঝে মাঝে এসে বসে কথার ভেতরে
কপাট খুলে গেছে জীবনের অনেক গভীরে


ছেলে ফিরে এসে বসেছে প্রতিহিংসা জয় করে পিতার ছায়ায়।

৮
তুমি সেখানেই ছিলে বিকেলের জানলাগুলো শক্ত করে বন্ধ করার মতো নির্মমতা হাতে নিয়ে
শস্যভার ও অন্ধকার ভাগাভাগি নিয়ে

তুমি সেখানেই আছো

মাঝে মাঝে তোমার ছায়া গিয়ে বসে নতুন গাছেতে

দুয়েকটি মনোরম,নতুন ডাক,ডাকের স্তব্ধতা-সমস্ত ডাকের নিয়মগুলো অভ্যাস হয়ে যায়

গাছ কেটে ফেলে মানুষ সহজে। 

Facebook Comments

Related posts

Leave a Comment