ঋপণ আর্য

ঋপণ আর্য’র কবিতাগুচ্ছ

শার্লক হোমস যেভাবে ওয়াটসন হয়ে ওঠে


– ভোগের সঙ্গে ব্যর্থতার সম্পর্ক কী হোমস?

— হাহাকারের

— ধর্ম তো কাউকে কোনো দিন হত্যা করেনি, হত্যা
করেছে ধার্মিক। ধর্মের ত্যাজ্যপুত্ররা। প্রথমে তারা ধর্ম
অর্থাৎ পিতৃহত্যা করেই মানুষ হত্যাকে আরো সহজ
করেছে, কী এক অতৃপ্ত বাসনা যেন! তাহলে কি ধর্মেই
ধর্মের শেষ?

— ধর্মের চেয়ে ধর্ম বড় হলেই এমন হয়! আমিও তোমার
মতো বুঝতে ব্যার্থ হই ওয়াটসন, ধর্মের সঙ্গে ধার্মিকের
চিরকাল এই বিশাল দূরত্ব কেন থেকে গেল!

— হারানোর দিবাস্বপ্নে খামতির হয়রানি ফুরোচ্ছে কই?
মাশুল গুনতে বসে তোমার সাথেও নিজেরে তো
ফারাক দেখিনে ওয়াটসন!
কীর্তি কি আদৌ এতটা ম্লান… যেন একমাত্র
অভাবগুলোই সর্বাধীক আপনজন হয়ে উঠেছে!
এমনই করেছে নিরুপায়
আজকাল মানুষ খুব অল্প টাকায় বিক্রি হয়ে যায়
অথচ যে টাকায় সে বিক্রি হয়
তাতে তার সংসার চলে না!

— এই যে মক্কেলটি দেখা কথাটারে এতই নিজের বানালো…
ভাইরালে মন গলা ফাটালো…মনে মনে বিষাক্ত হল…
আবার মিথ্যে প্রমাণ হল যেই পক্ষ বদলালো!
আচরণ এত কেন ঠুনকো?

— যেখানে সময় চাই, সেখানে সময় কই ওয়াটসন!
আমি-তুমি খুব কি বেশি এই ফারাকের?
নিয়মিত তুমি যার, সে কতটা পর্যবেক্ষণ পেল তোমার?
ধরো, নীচের হলঘর থেকে এই ঘরে আসবার সিঁড়িগুলো
কয়েকশো বার দেখেছো, অথচ
এখনও জানো না তার ধাপের সংখ্যা!

— যাকে অন্তরের অসামান্যে বসিয়ে ফেলেছিলে, তার
কিঞ্চিত ভুল ক্ষমার অযোগ্য হয়েছে। অথচ কেউ কেউ
ভুলের পাহাড় নিয়ে মাথায় চেপে বসে আছে,
তাদের তো কই ঠিক ততটাই
ক্ষমার অযোগ্য ভাবি না!

— কেন না ওয়াটসন
অন্তর তাদের শুরু থেকেই তাচ্ছিল্যে রেখেছে যে!
রোদকে তাচ্ছিল্যে রেখে যেভাবে পাতাবাহার বেড়ে
উঠতে দেখি… আমরাও সেই পাতাবাহার
যেখানে জঞ্জালের জয়!

উচ্চারণেই এই যে ওয়াটসন
রোদের সাথে রফা করে নিয়ে এলাম
সূর্যমুখী ফুলের বাগানে

কবি বলেন, ‘আমাদের প্রতিটা আনন্দই
শয়তানের সাথে রফা মাত্র’
এখন এগোতে গিয়ে সে কথা বেশ টের পাই!
আমিও সেই হৃদয়ের
যে হৃদয় নদীতে রাখা
তাই আমিও সমানে দুঃখিত

গাছে হোক, কাছে হোক
ফুলের ধারণায় নিজেরে আগলাতে চাই
ভিতরে ভিতরে
তবুও তো বসন্ত থেকে ঢের বেশি অনভিজ্ঞ আমরা
মৃতদের প্রেমে পড়ে থাকি

আমাদের ঘর এবং ঘরানা
অভিযোজনসহ প্রচলিত
অথচ আমরা ক্রমাগত ভেবে চলি,
এই ঘর একদিন
আমাদের কাছে প্রকাশ করা হবে

— কাকে কথা হারানোর বলছ হোমস?
জলবায়ু কি উসকায় স্মৃতি?
নাকি, স্মৃতি মোহিত জল বায়ুর অধীনে!

— ভেবে দেখো ওয়াটসন, ভ্রমণ কালের কাছে
আমাদের কী তুমুল সময় বিস্তার!
এক জায়গা আটকে থেকে তুমিও কি দেখোনি,
সময়ের দ্রুত ফুরানোকে! ধরে নাও বন্ধুবর,
একটানা তুমি এক জলের পটের ভেতর আটকে আছো!
জল ফুরচ্ছে তো নতুন জল এসে ঠিকই যাচ্ছে।
আসা যাওয়ার ব্যথা বাদে একদা দেখা গেল
কিচ্ছুটি নেই আর, সে ব্যথা অফিমখোর ঘুম চায়,
পরিস্থিতি বদলের অপেক্ষায়-আকাঙ্ক্ষায়
দ্রুত সময় ফুরতে চায়!
এর ফাকে কিন্তু মাঠ পুকুর রচনা করে
সাঁতার কাটা যেত
গাছের কথার সরক্ষণে থাকা যেত
আরও কত জনপথ হওয়া যেত…

— তবু কেন তুমিও হোমস আমার মতোই
ইরেজার খুঁজতে শুরু করে দিলে হে!
কই পরামর্শ তো দিলে না,
মন কেন এমন সহজেও স্বীকার করে,
‘কিচ্ছু করার নেই, কোথাও যাবার নেই!?’

— খিদে মেটানোর বিপ্লব বড় ঘুসখোর ওয়াটসন।
এসব ভেবেই ব্যর্থ হওয়া ভঙ্গি যত
সপাটে থাপ্পড় কষানো যদি যেত
যেভাবে দেওয়ালে আর গাছের বাকলে
জ্বালানির ঘুটেতে পাঁচটি অঙুল জেগে থাকে
না-পোড়া অবধি,
যেভাবে অরন্যদেবের ঘুষিতে
আঙটির খুলি চিহ্নের দাগ বসে যায় চামড়ায়।
শুধরে নেওয়ার আকাল হে,
বিকল্পটি তোমার মতোই কেন?
জাগিয়েই বা রেখেছ কেন বুরবকে?
ভাঁড়ই করেছো , বিপ্লবী করনি মোটেও।

Facebook Comments

Related posts

Leave a Comment